জেনারেশন জেড বা এ সময়ের টিনএজ মেয়েদের চুলের স্টাইলে প্রথম পছন্দ হিসেবে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে 'উলফ কাট'। টিকটক, ইউটিউবে ঘুরছে এমন লাখো ভিডিও। হলিউডের তারকা থেকে শুরু করে আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার তরুণীরা স্যালনে ভিড় জমাচ্ছেন চুলে এই ট্রেন্ডি কাট দিতে। বাসায় বসেও খুব সহজে চুলে উলফ কাট দেওয়ার ভিডিও শেয়ার করছেন অনেকে।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
আগে জেনে নেওয়া যাক, ট্রেন্ডি স্টাইল উলফ কাট আসলে কী? ষাটের দশকের পপস্টারদের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া মুলেট বা কপালের উপরিভাগ ও পাশের চুল ছোট রেখে পেছনের চুলে কয়েকটি লেয়ার দিয়ে বড় রাখার স্টাইলই আদতে উলফ কাট। তবে ফ্যাশন হিস্ট্রিয়ানদের মতে, গ্রিক কবি হোমার খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে তার মহাকাব্য 'দ্য ইলিয়াড'-এ সে সময়ের যোদ্ধাদের এমন ধারার চুল রাখার বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, 'যোদ্ধাদের কপালের ওপর চুল ছোট করে ছাঁটা, পেছনের চুল বড় রাখা'।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ট্রেন্ড হঠাৎ এত জনপ্রিয়তা পেলো কীভাবে? প্রথম কথা হচ্ছে, বর্তমান অনলাইনের জমানায় যেকোনো স্টাইল হঠাৎই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বিশ্বজুড়ে লকডাউন ও পোস্ট–লকডাউনের সময়ে ঘরে বসেই কাটাতে হচ্ছে চুল। স্যালনে গিয়ে চুল কাটার অভ্যস্ততায় আসছে পরিবর্তন।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
সুতরাং সহজে কাটা যাবে ও চেহারার লুকেও আসবে নতুনত্ব, এমন একটি স্টাইল পছন্দের তালিকার শীর্ষে যেতে বেশি সময় লাগার কথাও নয়। তৃতীয়ত, সবচেয়ে শক্ত যুক্তি হলো, এটি একটি জেন্ডার ব্লেন্ডিং স্টাইল। এই ট্রেন্ড মূলত জেনারেশন জেড বা এ সময়ের টিনএজারদের কাছেই বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর এ প্রজন্ম বেশি ঝুঁকছে জেন্ডার ব্লেন্ডিং ফ্যাশন ও লাইফস্টাইলের দিকেই। তাই ছেলেদের এই হেয়ার স্টাইল মেয়েরাও গ্রহণ করছেন এবং হালকা বা গাঢ় মেকআপে নিজেকে মেলে ধরছেন ভিন্ন লুকে।
২০২০ সালের মধ্যভাগ থেকেই উলফ কাটের প্রসার দেখা যাচ্ছিল। বর্তমান সময় পর্যন্ত উলফ কাট লিখে পিন্টারেস্টে খোঁজার পরিমাণ বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। টিকটক ও ইউটিউবে উলফ কাটের কয়েক লাখ ভিডিও দেখা হয়েছে ১০০ মিলিয়নের বেশিবার। শুধু টিকটকেই এখন পর্যন্ত উলফ কাট হ্যাসট্যাগ জুড়ে দেওয়া হয়েছে ৮০.৭ মিলিয়ন ভিডিওতে। এসব ভিডিওর বেশির ভাগেই দেখা যায়, ঘরে বসে কীভাবে একজন চুলে দিচ্ছে উলফ কাট বা উলফ কাটের টিউটরিয়াল কিংবা এই স্টাইলের সঙ্গে কোন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
মেকাপে নিজেকে লাগবে অন্যরকম!
আমেরিকান জনপ্রিয় পপ তারকা বিলি আইলিশ তাঁর চুলে রেট্রো ও ফাংকি কালার ব্যবহারের জন্য পরিচিত। মার্চের শুরুতে নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যাল্ডেলে বিলি আইলিশ নিজের চুল ব্লন্ড কালার করে উলফ কাটের একটি ছবি পোস্ট দেন। ছয় মিনিটেই সেই ছবিতে পড়ে লাখের বেশি লাইক।
স্যালনে না গিয়ে বাসায় বসেই চুলে যদি কেউ উলফ কাট দিতে চান, তবে তাঁর জন্য সহজতম পদ্ধতি হলো কপাল ও কানের ওপরকার এবং পেছনের সব চুল সমানভাবে ধরে মাথার ওপর খাড়া করে ইউনিকর্ন পনিটেইল স্টাইলে বাঁধুন। তারপর হাতে একটা ধারালো কাঁচি নিয়ে পনিটেইলকে সোজা করে ধরে পছন্দ অনুযায়ী একটু ওপরে বা নিচে, মানে বড়–ছোট করে সমানভাবে কেটে ফেলুন! বেশি লেয়ার করতে চাইলে কেটে ফেলার পর পনিটেইলের বাকি অংশে অল্প করে জিগজ্যাগভাবে কাটুন। এবার বাঁধা চুল ছেড়ে দিয়ে মাথার চারপাশে চুল ছড়িয়ে দিলে দেখবেন কয়েকটা লেয়ারে সামনে ও পাশে ছোট হয়ে গেছে এবং বড় থাকছে পেছনের চুল।
ছয়ভাবে দেওয়া যায় উলফ কাট। এক. উফল কাট উইথ ডিপ মুলেট বা পেছনে তুলনামূলক বড় রেখে উফল কাট। দুই. উলফ কাট উইথ লাইট লেয়ার বা প্রায় একই লেয়ারে ছোট করে উলফ কাট। তিন. কার্লি উলফ কাট। চার. এক্সট্রিম উলফ কাট বা সামনে–পেছনে বেশ এলোমেলো করে কাটা। পাঁচ. উলফ কাট উইথ শর্ট হেয়ার বা বয় স্টাইলে ছোট করে উলফ কাট। ছয়. সফট উলফ কাট বা হালকা করে স্বাভাবিক উলফ কাট।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
লিঙ্গ ভেদাভেদ মানতে না চাওয়াটা জেনারেশন জেড বা এ সময়ের টিনএইজ প্রজন্মের মানসিকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেই ধারণা থেকেই এ সময়ের হেয়ারস্টাইল হিসেবে উলফ কাট এতটা জনপ্রিয়।