বাসের টিকিটে আঁকা ছবি
ইমতিয়াজ ইসলাম ছোটবেলায় 'জার্নি বাই বাস' রচনা লিখেছেন কি না, জানা হয়নি। তবে এই শিরোনামে একটি শিল্পকর্ম তৈরি করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তিনি। প্রতিযোগিতার নাম 'সোভেরিয়ান এশিয়ান আর্ট প্রাইজ ২০২১'। তিনটি বিভাগে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গ্র্যান্ড প্রাইজ উইনার, ভোগ হংকং উইমেনস আর্ট প্রাইজ উইনার এবং পাবলিক ভোট প্রাইজ উইনার। সবশেষ বিভাগটিতে বিজয়ী হয়েছেন শিল্পী ইমতিয়াজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতক শেষ করে ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করতে গিয়েছিলেন তিনি। কলকাতার বাসযাত্রা বেশ উপভোগ করতেন। প্রতিদিন বাসে যাওয়া–আসার পথে আশপাশে যা দেখতেন, সেগুলোই বাসের টিকিটে এঁকে রাখতেন।
টিকিটে আঁকা ছবিগুলো খুব চেনা। কেউ বাসের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ সিটে বসে ঝিমাচ্ছেন। ছবির ওপর যেসব বাক্য লেখা, সেসবও চমকপ্রদ। যেমন—'বয়স যদি তিন, পুরো ভাড়া দিন'। কিংবা 'টিকিটটা দেখান', 'পকেটমার হইতে সাবধান', ইত্যাদি। এসব লিখে ও এঁকে দারুণ এক চিত্রকর্ম তৈরি করেছেন ইমতিয়াজ ইসলাম। নাম দিয়েছেন 'জার্নি বাই বাস'।
পড়াশোনা শেষ করে ইমতিয়াজ ইসলাম এখন নালন্দা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি বলেন, 'শখের বশে আমার টিকিট জমানোর অভ্যাস আছে। কলকাতার লোকাল বাসে দেওয়া টিকিটগুলোও আমি সংগ্রহ করতাম। এরপর মনে হলো, বাসে যাওয়া-আসার পথের গল্পগুলো টিকিটের ওপর আঁকা যায়।' এভাবে বেশ কিছু টিকিটের গায়ে ছবি এঁকে ফেলেন ইমতিয়াজ। মাথায় আসে নতুন ভাবনা। সব টিকিট একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে বানিয়ে ফেলেন একটি বাসের অবয়ব, পেছনে কলকাতার মানচিত্র। ইমতিয়াজ জানান, পুরো চিত্রকর্মটি বানাতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় এক বছর।
ইমতিয়াজ ইসলামের 'জার্নি বাই বাস'
হংকংভিত্তিক দাতব্য সংস্থা সোভেরিয়ান আর্ট ফাউন্ডেশন ২০০৩ সাল থেকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের তরুণ শিল্পীদের জন্য সোভেরিয়ান এশিয়ান আর্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এবারের প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত ৩০টি চিত্রকর্মের মধ্যে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে ইমতিয়াজের কাজ স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রজ শিল্পী তৈয়বা বেগমের প্রাথমিক মনোনয়নের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শিল্পী ইমতিয়াজ ইসলাম, ছবি: সংগৃহীত
চূড়ান্ত পর্বের ৩০টি ছবিই নিলামে তোলা হয়েছিল। ইমতিয়াজ ইসলাম বললেন, '১৫ হাজার ডলারে আমার ছবিটি কিনে নিয়েছেন জন স্যামুয়েল নামের এক চিত্র সংগ্রাহক।' প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী, ছবি বিক্রির টাকার একটি অংশ শিল্পী পাবেন, বাকিটা খরচ হবে দাতব্য কাজে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে ইমতিয়াজ পাবেন ১ হাজার ডলার (প্রায় ৮৫ হাজার টাকা)। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য শিল্পী তৈয়বা বেগমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইমতিয়াজ বলেন, 'পুরস্কার পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। সামনে আরও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা পেলাম।'