What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রতিকৃতি এঁকে অনলাইনে মোরছালিনের আয় (1 Viewer)

RoVjR0N.jpg


কৃষিবিদ বাবা মো. মোশাররফ হোসেন ১৯৯৮ সালে লন্ডন থেকে মেয়ের জন্য রংতুলি কিনে এনেছিলেন। সেই মেয়ে এখন ছবি এঁকে দেশ–বিদেশে সম্মাননা পাচ্ছেন। বন্ধু-স্বজনের জন্মদিনসহ প্রিয় ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে প্রতিকৃতি (পোর্ট্রেট) এঁকেই তিনি শুভেচ্ছা জানান। শুধু তা–ই নয়, অনলাইনে শিশুদের ছবি আঁকা শিখিয়ে, টি-শার্টে পোর্ট্রেট এঁকে বা শুধু পোর্ট্রেট বিক্রি করে মাসে গড়ে আয় করছেন ৩০ হাজার টাকার বেশি।

সনদে তাঁর নাম মোরছালিন লাভলী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোরছালিন আহসান নামে পরিচিত। রংপুরেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা, শ্বশুরবাড়িও সেখানে। স্বামী মাহবুবুল আহসান এবং অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে জারা জেনিতা আহসানকে নিয়ে তাঁর সংসার।

MpKq5n3.jpg


মোরছালিনের আঁকা ছবিতে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস

মোরছালিন বললেন, 'ছোটবেলায় বাবা বাক্স ভর্তি করে চক আনতেন। কালো মেঝে ছিল আমার ক্যানভাস। নতুন পাঠ্যবই পাওয়ার পর গল্প-কবিতা পড়ার আগে বইয়ের বিভিন্ন ছবি দেখে দেখে আঁকতাম। মা বলতেন, আমি আগে আঁকা শিখেছি, পরে পড়া শিখেছি।'

a4KWNES.jpg


মোরছালিনের আঁকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও বরেণ্য চিত্রকর এস এম সুলতানের প্রতিকৃতি

চারপাশে নানান কষ্ট-যন্ত্রণার মধ্যে মানুষের হাসিমুখ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলায় যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না। কোনো মানুষের মুখে আলোছায়ার হাতছানি আর হাসি থাকলেই তা আঁকতে ইচ্ছা করে। এমনটাই মনে করেন মোরছালিন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে গ্রাফিকস ও প্রিন্ট মেকিং বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন মোরছালিন। শিশুদের ছবি আঁকা শেখাচ্ছেন ১৯৯৮ সাল থেকে। একটি সিরামিক প্রতিষ্ঠানে নকশাকার হিসেবে কাজ করেছেন। চারুকলার শিক্ষক হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে কাজ করেছেন। সম্প্রতি রংপুরের ইমেজ অ্যাডভান্সড টিচার্স ট্রেনিং কলেজে চারু ও কারুকলা বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আর পাশাপাশি অনলাইনে শিশুদের ছবি আঁকা শেখাচ্ছেন। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করা নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইন গ্রুপ হার-ই ট্রেডের মাধ্যমে মোরছালিন অনলাইন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকার শিক্ষার্থী বেশি।

t1HJBlh.jpg


সত্যজিৎ রায়, প্রতিকৃতি: মোরছালিন লাভলী

মোরছালিন জানালেন, শিশুদের ছবি আঁকা শেখানো আর বড়দের আঁকার মধ্যে অনেক তফাত। চাকরি, সংসারসহ নানা কাজে দীর্ঘ ১৫ বছর পোর্ট্রেট আঁকা বা নিজের কাজগুলো থেকে দূরে ছিলেন। ২০১৫ সালের দিকে আবার পোর্ট্রেট আঁকা শুরু করেন। ২০১৮ সাল থেকে আবার দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শুরু করেন।

১৯৯৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের বার্ষিক চিত্রকলা প্রদর্শনীতে অংশ নেন। ২০০১ সালে জাপানে দ্বিতীয় সমসাময়িক নবীন চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এরপর ২০১৮ সালে কলকাতায় আন্তর্জাতিক জলরং কর্মশালা এবং যৌথ চিত্র প্রদর্শনী, একই বছর বাংলাদেশে তৃতীয় আন্তর্জাতিক শিল্প উৎসব টিউন অব আর্ট ফোকাস বাংলাদেশ এবং বাঁধন পঞ্চম আন্তর্জাতিক যৌথ চিত্র প্রদর্শনী, শ্রীলঙ্কায় তৃতীয় আন্তর্জাতিক যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতেও অংশ নেন। পরের বছর ইতালিতে ফ্যাব্রিয়ানো আন্তর্জাতিক যৌথ জলরং চিত্র প্রদর্শনী, সুইজারল্যান্ডে আইডব্লিউএস আন্তর্জাতিক জলরং চিত্র প্রদর্শনী এবং কলকাতায় বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনী, নেপালে আন্তর্জাতিক যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নেন। নেপালের প্রাপ্তি ছিল 'সেরা ১০ চিত্রশিল্পী অ্যাওয়ার্ড ২০১৯' অর্জন করা। গত বছর বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নেন। চলতি বছরে পেয়েছেন মাদার তেরেসা সাইনিং পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২১।

H9NLFCe.jpg


হুমায়ূন আহমেদ, প্রতিকৃতি: মোরছালিন লাভলী

মোরছালিন ফেসবুকে নানান পোর্ট্রেট ও অন্যান্য ছবি দিয়ে রোজনামচা লিখে রাখেন। জলরঙে সাদা ফুলের শুভ্রতা, ফ্যামিলি পোর্ট্রেট, কফি পেইন্টিং, স্বামীর পোর্ট্রেট, লাফিং ফেস বা হাসিমুখের সিরিজ, প্রিয় বন্ধুদের স্কেচ...এভাবে চলছেই। শাশুড়ি বা অন্য শিল্পীদের পোর্ট্রেট এঁকেই তিনি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা বা শুভেচ্ছা জানান। জীবনে অনেক পোর্ট্রেট আঁকলেও নিজের এবং মা–বাবার পোর্ট্রেট কখনো আঁকা হয়নি। বাবা মারা গেছেন। তবে ছবির মাধ্যমে মেয়ে নানান স্বীকৃতি পাচ্ছে, তা দেখে গিয়েছেন।

মোরছালিন নারী হিসেবে ছবি আঁকতে গিয়ে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হননি। এ ক্ষেত্রে তিনি পারিবারিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন। বিয়ের আগে মা–বাবা ও অন্য ভাইবোনেরা পাশে ছিলেন। আর বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি বিশেষ করে স্বামী মাহবুবুল আহসানের কথা উল্লেখ করে বললেন, 'ছবি এঁকে সংসার চালাতে সমস্যা হয় না। প্রয়োজনের সময় বাসার কাজ সবাই ভাগ করে নেন। স্বামী ঘরের মধ্যে কাজ করতে যাতে সমস্যা না হয়, তাই আলাদা করে স্টুডিও বানিয়ে দিয়েছেন। অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার টুকিটাকি সমস্যার সমাধানও তিনিই করে দেন।

করোনায় অনেকে কাজ হারালেও মোরছালিন জানালেন, তাঁর কাজ থেমে নেই। দেশের বাইরে থেকেও অর্ডার পাচ্ছেন। পোর্ট্রেট আকারভেদে ৪ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজারের বেশি টাকায় বিক্রি হয়। টি-শার্টে নিজের পোর্ট্রেট এঁকে নেন অনেকে। তবে ছবি আঁকার বেশির ভাগ উপকরণই ঢাকা থেকে কিনতে হয়। তাই করোনাকালে উপকরণ শেষ হয়ে গেল কি না, সে চিন্তায় থাকতে হয়।

মোরছালিন বড় একক চিত্র প্রদর্শনী করার স্বপ্ন দেখছেন। নিজের চারুকলা একাডেমি ডালপালা মেলে বড় হবে, স্বপ্নের তালিকায় তা–ও আছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top