What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

জ্যৈষ্ঠ কেন মধুমাস নয় (1 Viewer)

শব্দের রয়েছে বিচিত্র রকম অর্থ, বিচিত্র রকম প্রয়োগ। তবে অনেক অর্থ, অনেক প্রয়োগ অভিধান সমর্থন করে না। শব্দের উৎস, অর্থ আর প্রয়োগ-বৈচিত্র্য নিয়ে আমাদের এই আয়োজন...

yg5tHb1.jpg


অফিসে বসেও মোটা মোটা বই ঘাঁটাঘাঁটি করেন বলে তার নাম হয়ে গেল সৈয়দ ঘণ্টন। সৈয়দ অবশ্য তার নামেরই অংশ। তবে আসল নাম সরিয়ে কবে 'ঘণ্টন' যুক্ত হয়ে গেল, সেটা সৈয়দ ঘণ্টনের নিজেরও মনে নেই। আজ অবশ্য দুপুরে খাওয়ার পর ঘণ্টন সাহেব টেবিলে বই নিয়ে পড়ে ছিলেন না। তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের নাম নিয়েই ভাবছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখ গিয়ে পড়ল সোজা নিচের রাস্তায়। সেখানে ঝুড়িতে করে এক লোক বসেছে কালো কালো জাম নিয়ে। কালো কালো জাম, তবে কালোজাম নয়। সৈয়দ ঘণ্টন একটু অবাক হলেন। কারণ, ঢাকা শহরে যেখানে–সেখানে এখন আর জাম বিক্রি হতে দেখা যায় না। দেরি না করে তিনি দ্রুত তিনতলা থেকে নিচে নামতে শুরু করলেন।

সৈয়দ ঘণ্টন বেশ দ্রুতই জামওয়ালার কাছে চলে এলেন। তার মনে হচ্ছিল, বেশি দেরি করলে জাম হয়তো পাওয়া যাবে না। এক কেজি কিনলেন একটু চড়া দাম দিয়েই। তবু সান্ত্বনা, এমন মজার দেশি ফল, এখন গ্রামেও সহজে পাওয়া যায় না। ফল কিনে আবার অফিসের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যাবেন, দেখলেন, গেটের দারোয়ান পত্রিকা ভাঁজ করে বাতাস খাচ্ছে। গরম তো কম পড়েনি! তবে অর্ধেক ভাঁজ করা পত্রিকার একটা শিরোনাম দেখে তিনি আরেক দফা অবাক হলেন। বড় এক বাটিতে জামের ছবি; আর ওপরে বড় হরফে লেখা 'চলছে মধুমাস'। যা বোঝার বুঝে গেলেন সৈয়দ ঘণ্টন। তিনি দারোয়ানের কাছ থেকে পত্রিকাটি চেয়ে নিয়ে তিনতলায় উঠলেন।

3iOGMmG.jpg


নিজের টেবিলের নিচে জামের প্যাকেটটি রাখলেন। তারপর পত্রিকা খুলে মধুমাসের রহস্য বুঝতে সংবাদটি পড়তে শুরু করলেন। বিশেষ প্রতিবেদকের সূত্র ধরে লেখা হয়েছে, 'এখন মধুমাস চলছে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু হরেক রকম মৌসুমি ফলে বাজার সয়লাব।' প্রতিবেদক সুযোগ বুঝে জসীমউদ্‌দীনের কবিতার দুটি লাইনও তুলে দিয়েছেন, 'পাকা জামের মধুর রসে/ রঙিন করি মুখ'।

সৈয়দ ঘণ্টনকে হাসতেই হলো। প্রতিবেদক কবিতার লাইনে ভুল করে বসেছেন। হবে 'পাকা জামের শাখায় উঠি/ রঙিন করি মুখ'। আর সবচেয়ে বড় কথা, এখন তো মধুমাসই আসেনি। পাশের টেবিলের বক্কর সাহেব এতক্ষণ সিটে ছিলেন না। দুপুরে খাওয়ার পর তিনি অফিসের এ–ঘরে সে–ঘরে চক্কর দেন। চক্কর শেষে নিজের ঘরে ফিরে, সৈয়দ ঘণ্টনকে দেখে বললেন, 'একা একাই হাসছেন যে!'

সৈয়দ ঘণ্টন বললেন, 'দেখেছেন, পত্রিকায় সংবাদের শিরোনাম দিয়েছে—চলছে মধুমাস।'

'এতে সমস্যা কী? আম–জাম–লিচু মানেই তো মধুমাস!' এরপর বক্কর সাহেব পান–খাওয়া দাঁত বের করে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হাসতে বললেন, 'বাংলা মাস কোনটা কখন আসে, একটাও ঠিকমতো বুঝতে পারি না। বোঝেনই তো, শীতকালেও কেমন ঝুম বৃষ্টি হয়; আর বর্ষাকালে আকাশে সহজে মেঘই জমে না! তবে জ্যৈষ্ঠ এলে ঠিক বুঝতে পারি। জ্যৈষ্ঠ তো একা আসে না। সঙ্গে নিয়ে আসে পাকা পাকা...'

'পাকা আম–কাঁঠাল দেখে জ্যৈষ্ঠ বুঝতে পারেন, ভালো কথা। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাস আর মধুমাস কি এক হলো? মধুমাস মানে জানেন?' এই বলে সৈয়দ ঘণ্টন তাঁর টেবিলের ওপরে থাকা বাংলা অভিধান খুলে দেখালেন।

TJcjZyK.jpg


অভিধান দেখে বক্কর সাহেব ধাক্কা খেলেন। সেখানে লেখা রয়েছে, মধুমাস মানে চৈত্র মাস। 'চৈত্র মাস!' প্রায় চিৎকার দিয়ে উঠলেন বক্কর সাহেব, 'চৈত্র তো ঠা ঠা রোদ পড়া শুকনা মাস। ওটা আবার মধুমাস হয় কীভাবে?'

সৈয়দ ঘণ্টন বোঝানোর ভঙ্গিতে শুরু করেন, 'বসন্ত এলেই প্রকৃতিতে একটা বড় পরিবর্তন দেখতে পাবেন। গাছে গাছে রংবেরঙের ফুল ফোটে; কোকিল কুহু কুহু স্বরে ডাকতে থাকে। মানুষের মনেও তখন প্রণয়ের ভাব জাগে।'

'তো?' বক্কর সাহেব ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না।

সৈয়দ ঘণ্টন বলতে থাকেন, 'বৈষ্ণবপদের নাম শুনেছেন? বিদ্যাপতি–চণ্ডীদাসরা রাধা আর কৃষ্ণকে নিয়ে হাজার হাজার বৈষ্ণবপদ লিখেছেন। এসব কবিতার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে তাদের প্রেমলীলা। বৈষ্ণব কবিতায় প্রেমরসের আরেক নাম মধুর রস।'

BVcqFYf.jpg


মডেল: মারিয়া নূর

বক্কর সাহেবের চোখ এবার বড় বড় হয়ে যায়, 'চৈত্র মাসের মধু ফলের মধু নয়। এটাই বলতে চাচ্ছেন তো?'

'আমি নিজে কিছুই বলতে চাচ্ছি না। বলছি, মধ্যযুগ বা আধুনিক যুগের কোনো কবিও জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস বলেননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গানে আছে, "প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস/ তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ..."। বুঝতে পারছেন, চৈত্র মাস কত ভয়ংকর মধুর? তবে...' কথা শেষ করার আগে সৈয়দ ঘণ্টন খোলা অভিধানটা বন্ধ করলেন।

'তবে?'

'তবে, শব্দ কিন্তু সব নিয়মকে অগ্রাহ্য করে নতুন অর্থও ধারণ করতে পারে। আমরা যেভাবে সবাই মিলে জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস বলছি, ভবিষ্যতের অভিধানও মধুমাস বলতে জ্যৈষ্ঠকেই নির্দেশ করতে থাকবে। প্রথম প্রথম অবশ্য অর্থের অপপ্রয়োগ হিসেবেই দেখাবে।'

* তারিক মনজুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক
 

Users who are viewing this thread

Back
Top