What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মানুষের আত্মিক সম্পর্ক বিকাশে মাতৃভাষা (1 Viewer)

4jWdK8Y.jpg


মাতৃভাষার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আত্মিক। মানুষ জন্মের আগেই এই ভাষার সঙ্গে তার পরোক্ষ পরিচয় হয়ে যায়। তাই মা-সন্তানের মতোই নিবিড় হয় মাতৃভাষার সম্পর্ক। এই ভাষা শুধু যোগাযোগ বা মনের ভাব প্রকাশকে সহজ করে এমনই নয়, এই ভাষার প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী। শিশুর মানসিক বিকাশের শুরু থেকে একদম চূড়ান্ত পর্যায়ের ব্যক্তিক বিকাশে থাকে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

dHlUcVr.jpg


জন্মের পর থেকে সাধারণ দৃশ্যপটে শিশুর সবচেয়ে আপন তার মা, মায়ের সঙ্গেই কাটে সবচেয়ে বেশি সময়। তাই মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে বন্ধন তৈরি হয়, ঠিক একই বন্ধন তৈরি হয় মায়ের মুখের ভাষার সঙ্গেও। শিশুর প্রথম বুলি থেকে প্রথম বর্ণপরিচয়। বড় হওয়ার প্রতিটি ধাপেই থাকে মাতৃভাষার সম্পৃক্ততা। তাই শিশুর প্রথম পাঠ্যসূচি এ ভাষায় হলে তা শিশুর জন্য পড়ালেখাকে সহজ করার পাশাপাশি তার মধ্যে পড়ালেখার প্রতি বাড়তি আগ্রহও দেখা যায়। নিজের ভাব ও চিন্তাধারাকে মাতৃভাষায় যত সহজে প্রকাশ করা যায়, অন্য ভাষায় প্রকাশ তত সহজ নয়। এর পেছনে আরেকটি বিষয় আছে তা হলো অন্য ভাষা রপ্ত করার প্রক্রিয়া। যেকোনো স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার মানুষই অন্য কোনো বিদেশি ভাষা শিখতে মাতৃভাষার সাহায্য নেয়।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মাতৃভাষার ওপর দখল অনেকাংশেই মানুষের বিদেশি ভাষা রপ্ত করার ক্ষমতা ও সেই ভাষার সাবলীলতার ব্যাপারে পূর্ব ধারণা দেয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমরা যতই ইংরেজিতে বুলি কপচাই, মনে মনে কিন্তু একবার হলেও বাংলা থেকে কিছু শব্দ, কিছু ভাবকে ইংরেজিতে রূপান্তর করি। বেশির ভাগ মানুষকে তাদের বিদেশি ভাষায় কথা বলার কৌশল জিজ্ঞেস করলেই এই ধরনের উত্তর মেলে। যতই 'ওয়াটার' বলি না কেন, পানি বলার মধ্যেই যেন সব প্রশান্তি। তাই অন্য ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্যও মাতৃভাষার সঠিক ভিত্তি তৈরি হওয়ার গুরুত্ব সীমাহীন। তাই হুট করে বিদেশি ভাষায় শিশুকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা একদমই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

WqmjQKJ.png


নানা ভাষা, ছবি: উইকিপিডিয়া

মাতৃভাষা শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তার জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। তাই মাতৃভাষায় লেখা বই ও সাহিত্য খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। আবার ধরুন নিজের দেশ ও সংস্কৃতি, এর সাহিত্য ও সমাজ—এসব বিষয়ে বিশদ ও সূক্ষ্ম ধারণা পেতে নিজের ভাষায় লেখা বই-ই সবচেয়ে ভালো উৎস। এই জন্যই শিশুর সুস্থ বিকাশ ও তার নিজের বিচার-বুদ্ধির সঠিক প্রকাশে তার সঙ্গে মাতৃভাষার সহজ ও সাবলীল সম্পর্ক তৈরির ভূমিকা অনস্বীকার্য। সামাজিক যোগাযোগ থেকে যৌক্তিক উপস্থাপনা মাতৃভাষায় এইগুলো সহজ হয়ে গেলে তা শিশুকে ধীরে ধীরে আরও পরিপূর্ণ বিকাশের পথেই এগিয়ে দেয়।

এই কারণেই বর্তমান সময়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিশুদের বিকাশ নিশ্চিতকরণে তাদের প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষা যুক্ত করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে, যাতে প্রতিটি শিশুর সর্বোচ্চ বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় জাতি-বর্ণ-ধর্মনির্বিশেষে।

l5lYSHu.jpg


'জানেন ভাবি, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না'—এই ধরনের কথা বলে নিজের মা ও মাতৃভাষার সঙ্গে শিশুদের দূরত্বকে যতই রোমান্টিসাইজ করা হোক, বাস্তবিক ক্ষেত্রে তা কেবলই শিশুর জন্য ক্ষতিকারক। মাতৃভাষার সঙ্গে এই দূরত্ব শিশুদের মানসিক দৈন্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক ক্ষেত্রে। তাই প্রত্যেক অভিভাবকের অবশ্যই জানা উচিত মাতৃভাষার গুরুত্ব। মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে একজন মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ কোনো দিন সম্ভব নয়। তাই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে মাতৃভাষার গুরুত্ব ঠিক তার সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মতোই।

* লেখক: মাহজাবিন রশীদ লামিশা | শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top