করোনা প্রকোপে ঘরে বন্দী না থাকলে চারুকলা থেকে সদ্য স্নাতক পাস করা প্রাণ হয়তো তাঁর ক্যাম্পাসের আশপাশেই খোঁজ করলেই পেয়ে যেতেন হরেক রকমের উপহারসামগ্রী। কিন্তু কী আর করা, বাধ্য হয়েই ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অন্য সবকিছু খোঁজার মতো শুরু করে দেন উপহার খোঁজা।
অন্তর্জাল আজ আক্ষরিক অর্থেই বিরাট বাজার। সবকিছু আপনি হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবেন। বর্তমান কালে অনেক তরুণ উদ্যোক্তাই নিজেদের সৃষ্টিসম্ভারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। মূলত আগে পোশাকসামগ্রী ফেসবুক মার্কেটপ্লেস বা এফ-কমার্সে অগ্রাধিকার পেলেও বর্তমানে পোশাক ছাড়াও অলংকার, বিশেষায়িত গৃহসজ্জার সামগ্রী, অনুষঙ্গ, বিশেষায়িত দেয়াল কিংবা দরজার পোস্টার ইত্যাদি এমনকি জন্মদিন কিংবা বিশেষ দিন উদ্যাপনের জন্য সাধারণ এবং বিশেষায়িত সামগ্রী, খাদ্যদ্রব্যও এখানে সুলভ।
এমন কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং চলমান কোভিড পরিস্থিতি এই অনলাইন কেনাবেচাকে কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দিয়েছে। কেবল ব্যক্তি–উদ্যোগ নয়, দেশের শীর্ষ লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোই ক্রেতাদের আরও কাছে পৌঁছে কেনাকাটাকে সহজ করতেই মূলত জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককেই বেছে নিয়েছেন।
মূলত ১৮-৪৫ বছর বয়সী ক্রেতারাই ভিড় করেন এই ই-মার্কেটপ্লেসে, যাঁদের মধ্যে পুরুষ-নারী উভয়ই আছেন। তবে এই মার্কেটপ্লেসের গণ্ডি শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ঢাকার বাইরের অনেক ব্যক্তি–উদ্যোক্তাই নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের পেজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে যাচ্ছেন। এমনই একজন উদ্যোক্তা রাজশাহীতে বসে নিজের তৈরি হ্যান্ডমেড নিজের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করে আসছেন।
এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ বর্তমানের পোশাকের ধরনেও এনেছে পরিবর্তন। আগে তৈরি পোশাকের একধরনের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে ধুয়ে ফেলা যায় এমন হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। মূলত নিজের পছন্দমতো কাপড়ের ধরন এবং ডিজাইন পছন্দ করে ডিজাইন করিয়ে নেওয়ার সুবিধাই এই হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাককে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
অলংকারের ধরনেও বর্তমানে বেশ পরিবর্তন দেখা যায়। বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের এ রকম কিছু পেজে ঘুরে দেখা যায় মূলত কাঠের কিংবা পিতলের আকারের ওপর বিশেষায়িত পেইন্ট করিয়ে অনেকেই পছন্দমতো অলংকার তৈরি করছেন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী। সুতি কিংবা লিনেন শাড়ি এবং কামিজের সঙ্গে এসব গয়না বর্তমানে তরুণদের বেশ ভালোই আকৃষ্ট করছে, যা তাঁদের ফ্যাশনে যোগ করছে মাত্রা।
এ ছাড়া অনেকগুলো উপহারসামগ্রী একত্রে একটা বিশেষায়িত বাক্সে, কিছুটা ভিন্নভাবে মোড়কীকরণ করে দেওয়াটাও আজ অনেক চোখে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো বাক্সে কোনো মুহূর্তের ছবি, কিংবা বিশেষায়িত নোট প্যাড স্থান করে নেয়, যাতে হয়তো কোনো প্রিয় গান কিংবা গল্প, উপন্যাসের লাইন লেখা থাকে, অথবা হালের জনপ্রিয় ডুডল অথবা কার্টুন শোভা পায়।
এই 'ই-উপহার' সামগ্রী গ্রাহকের কাছে সহজেই পৌঁছে দিতে পর্দার অন্তরালে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে বিভিন্ন ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান। দূরত্ব এবং অভ্যন্তরীণ শহরভেদে, প্রথাগত কুরিয়ার সার্ভিস থেকে শুরু করে উদ্যোক্তাদের নিজস্ব কিংবা তৃতীয় পক্ষ ডেলিভারি সার্ভিস একই শহর এবং দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে এই ই-উপহারসামগ্রী।
তাই অদূর ভবিষ্যৎ নয়, বর্তমানেই আপনার কোনো প্রিয়জনকে কোনো স্মরণীয় দিন কিংবা মুহূর্তকে উদ্যাপনের জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন এই ই-উপহার। এভাবে অতএব দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভবে ভরিয়ে দেওয়া সম্ভব শূন্যতা।