What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other চার্লি চ্যাপলিন, কমেডিয়ানের কোট গায়ে এক বিপ্লবী (1 Viewer)

'আই অলওয়েজ লাইক ওয়াকিং ইন দ্য রেইন। সো নো ওয়ান ক্যান সি মি ক্রাইং'।
মানুষটা নাকি বৃষ্টিতে কাঁদতে ভালোবাসত। যাতে কেউ তাঁর চোখের পানি দেখতে না পায়। চার্লি চ্যাপলিন কখনোই তাঁর চোখের পানি কাউকে দেখাতে চাননি। সেটা সফলভাবে গিলে ফেলে কেবলই হাসাতে চেয়েছেন। চ্যাপলিনের মতে, যে দিনটি হাসা হলো না, সেদিনটি বৃথাই গেল। তাই তিনি জীবনভর হাসিয়েছেন। আর দর্শকও হাসতে হাসতে কখন যে কেঁদে ফেলেছেন, টের পাননি। হাসাতে হাসাতেই তিনি কষে চড় লাগিয়েছেন পুঁজিবাদের গালে। হাসাতে হাসাতেই তিনি দেখিয়েছেন বৈষম্য আর বঞ্চনার শুষ্ক বাস্তবতাকে।

OFFTohZ.jpg


চার্লি চ্যাপলিন, ইনস্টাগ্রাম

এই যেমন 'সিটি লাইট'স সিনেমায় দেখা গেল শহরের নতুন উন্মোচিত বিশাল, উঁচু স্থাপত্যের কোলে পথের কালিঝুলি মাখা অনাড়ম্বর মানুষের জড়সড় দারিদ্র্য। এই দুয়ের মাঝে যে বিশাল ফাঁক, চার্লি কমেডির মাধ্যমে সেটাকে যেভাবে কটাক্ষ করেছেন, আর কেউ কোনো দিন তা পারেনি। সে এক বৈপ্লবিক মহাকাব্যের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়! কমেডি করতে করতেই চ্যালপিন এক ফাঁকে বিপন্ন মানুষের দুঃখের কথা যেভাবে ঢেলেছেন, তা অনবদ্য। তাই চ্যাপলিন কেবল কমেডিয়ান নন, তিনি শিল্পী; মহান শিল্পী। যিনি হাসাতে হাসাতে বিদ্রোহ আর বিপ্লব করেছেন।

HoH93ZC.jpg


কোথায় নেই চ্যাপলিন, ইনস্টাগ্রাম

হাসি শেষে নিজের অলক্ষ্যে বিভ্রান্তিতে ঢুকে পড়া দর্শক গালে হাত দিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছেন, এই কী হলো! সে রাতে ঘুমের একটা ভাগ দিতে হয়েছে ভাবনাকে। শিল্পের ভেতর দিয়ে যে প্রেমপত্র তিনি লিখেছিলেন, সেই প্রেমপত্র আজও পড়া শেষ হয়নি বিশ্ববাসীর। আজ সেই মহান শিল্পীর জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তিনি হতেন এক শ বত্রিশ। অবশ্য তাঁর মতো শিল্পীর বেঁচে থাকার জন্য এ বড় ক্ষুদ্র সংখ্যা।

ohhFVGY.jpg


লাইমলাইট সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৫২ সালের এই ছবিটি যুক্তরষ্ট্রে মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। কেননা, ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যাপলিনকে নিষিদ্ধ করা হয়। ইনস্টাগ্রাম

সুইজারল্যান্ডে 'চ্যাপলিনস ওয়ার্ল্ড' বলে একটা জাদুঘর আছে। পুরো জাদুঘরটি চ্যাপলিনের স্মৃতিতে ঘেরা। এই এখানে নড়াচড়া করছেন চ্যাপলিন! আবার ওখানে চুলোর হাঁড়িতে জুতা সেদ্ধ করে, প্লেটে বেড়ে, কাঁটা চামচ দিয়ে খাচ্ছেন চার্লি। জুতার ফিতাকে চামচের সঙ্গে নুডলসের মতো পেঁচিয়ে, পেরেকগুলোকে চিকেন ফ্রাইয়ের হাড্ডির মতো আয়েশ করে চুষে চুষে খাচ্ছেন। 'দ্য গোল্ড রাশ' সিনেমার এই অসাধারণ দৃশ্য যে দেখেনি, সে যে কী দেখেনি, তা সে জানে না! কিন্তু এই দৃশ্য শেষে স্বতঃস্ফূর্ত হাসির মাঝেই হু হু করে মনের কোণে উঁকি দেবে একটা প্রশ্ন, এ কী ক্ষুধা!

s2i240p.jpg


স্ত্রী উনার সঙ্গে চ্যাপলিন, ইনস্টাগ্রাম

আবার কোথাও ঝড়ের কবলে পড়া জাহাজের কেবিনের মেঝেতে টলমল করে হাঁটছেন। স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন ওরফে চার্লি চ্যাপলিনের এসব কীর্তি কারখানা দেখে সুকুমার রায়ের কবিতার সেই গোমড়ামুখো রামগরুড়ের ছানাদেরও হাসি চেপে রাখা কঠিন, খুব কঠিন। হাসিয়ে কাঁদিয়ে ফেলা চ্যাপলিন চ্যাপলিনই। তাঁর তুলনা তিনিই। তিনি এক অস্থির ভবঘুরে, সিটি লাইটস ছবিতে অন্ধ ফুলবিক্রেতা মেয়ে যখন দৃষ্টি ফিরে পেয়ে যে ভবঘুরেকে আর চিনতে পারে না, সেরকম একজন।

x6bc3tf.jpg


দ্য কিড সিনেমায় মার্কিন অভিনেতা জ্যাকি কুগানের সঙ্গে চার্লি, ইনস্টাগ্রাম

চ্যাপলিনের ১২৭তম জন্মদিনে জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। লেক জেনেভার কাছে করসিয়ার সার ভেভে গ্রামে এই জাদুঘরটা ছিল চ্যাপলিনের বাড়ি। এখানেই কেটেছে তাঁর জীবনের শেষ ২৫ বসন্ত। ব্রিটিশ এই কিংবদন্তি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে কুড়ানো তুমুল জনপ্রিয়তাকে সঙ্গী করে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেই দেশ কত চেয়েছে চ্যাপলিনকে নাগরিকত্ব দিতে। তিনি নেননি। চ্যাপলিন কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে চাননি। পরে যুক্তরাষ্ট্র একসময় 'কমিউনিস্ট' বলে 'গালি দিয়ে' চ্যাপলিনের জন্য তার দরজা বন্ধ করে দেয়। তাই বাকি জীবন কাটানোর জন্য চ্যাপলিন বেছে নিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডকে।

tM8b6bk.jpg


চ্যাপলিনের শোবার ঘরের দেয়ালে তাঁর বিভিন্ন বয়সের ছবি, রয়টার্স

কেবল অভিনেতা চ্যাপলিনই নন, জাদুঘরের অর্ধেকটাজুড়ে চ্যাপলিন, তাঁর স্ত্রী উনা ও আট সন্তানের ব্যক্তিগত জীবনের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জাদুঘরের আরেক অংশ হলিউডের স্টুডিওর আদলে নির্মিত। এখানে হাঁটতে পারবেন 'ইজি স্ট্রিট' চলচ্চিত্রের রাস্তায়। দেখতে পারবেন 'দ্য গ্রেট ডিক্টেটর' সিনেমার সেই নরসুন্দরের দোকান। ১৯১৪ সাল থেকে চ্যাপলিনের রুপালি পর্দার জীবন শুরু হয়। চ্যাপলিনের ছেলে মাইকেল বলেছিলেন, জাদুঘরে এসে মনে হচ্ছে এটি যেন তাঁদের বাড়ি। এখানে এসে তিনি তাঁর ছেলেবেলা খুঁজে পেয়েছেন। চ্যাপলিনপুত্র আরও বলেছিলেন, বাবাকে সব সময় তাঁরা ছটফটে দেখেছেন। এই জাদুঘরটিও যেন তাঁর বাবার মতোই ছটফটে।

iQOgTbW.jpg


প্যারিসের রাস্তায় বাড়ির দেয়ালে চ্যাপলিন, ইনস্টাগ্রাম

কেবল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডই নয়, প্যারিসের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আপনি থমকে দাঁড়িয়ে চোখাচোখি হয়ে যেতে পারে চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে। দেয়ালে আঁকা চার্লির মুখচ্ছবি। কখনোবা বাড়ির দরজায় বা বিলবোর্ডে চার্লি চ্যাপলিন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুঁ দিলে দেখবেন, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে শাড়ি, গয়না, কুশন, চাদর, পর্দা এমনকি কানের দুল আর গলার লকেটেও চার্লি চ্যাপলিন! প্রায়ই বাংলাদেশের শিল্পকলার মঞ্চে নামেন চার্লি চ্যাপলিন।

bMZhsu6.jpg


১৯১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটে অসংখ্য মানুষ দেখতে এসেছিল চার্লি চ্যাপলিন কে। তখন তোলা ছবিটি, ইনস্টাগ্রাম

যুক্তরাষ্ট্রে এক বড় করে আয়োজিত 'যেমন খুশি তেমন সাজো' প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়া প্রথম ১০ জনের ৯ জনই চার্লি চ্যাপলিন সেজে এসেছিল! রাশিয়ার এক ভক্ত নভোবিজ্ঞানী তাঁর আবিষ্কৃত উপগ্রহের নাম রাখেন ৩৬২৩ চ্যাপলিন! আর এদিকে জাঁদরেল চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ লুক গদার চ্যাপলিনকে তুলনা করেছিলেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সঙ্গে, লেখক বুদ্ধদেব বসু শেক্‌সপিয়ারের সঙ্গে আর চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক সের্গেই আইনস্টাইন আরিস্তোফেনিসের সঙ্গে। তাহলে ভাবুন, যাঁকে কমেডিয়ানের মোড়কে চেনে লোকে, আসলে কী নন তিনি। বিশ্বাস করুন বা না করুন, চ্যাপলিনকে সম্মানজনক অস্কার দেওয়া হয়েছিল। আর সেটা দেওয়া হয়েছিল তাঁর সিনেমায় দুর্দান্ত মিউজিক কম্পোজ করার জন্য, সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য।

bYFbLZC.jpg


চার্লি চ্যাপলিনের এই ছবিটি দ্য সার্কাস সিনেমার সেট থেকে তোলা। ১৯২৬ সালে এই সিনেমার সেটে আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। ৯ মাসের মতো পিছিয়ে যায় সিনেমার কাজ। নতুন করে সবকিছু বানিয়ে শুটিং শেষ করে ১৯২৮ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। ইনস্টাগ্রাম

আফগানিস্তানেও আছেন চার্লি চ্যাপলিন। দীর্ঘদিন যুদ্ধে বিপর্যস্ত আফগানদের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্বটা কাঁধে নিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী করিম আসির। আত্মঘাতী হামলা, বোমা বিস্ফোরণ, অস্ত্রের ঝনঝনানি আর রক্তাক্ত মানুষের আর্তনাদ দেখা করিম চার্লির মতোই দুঃখী এক যুবক। ঠোঁটের ওপর ছোট্ট একটু গোঁফ নিয়ে তিনি স্টেজে ওঠেন নিজের পায়ের চেয়ে বড় সাইজের জুতা, ঢিলেঢালা ট্রাউজার আর কোট পরে। মাঝেমধ্যেই সঙ্গে থাকে একটা লাঠি। কে বলবে, ১৯৭৭ সালের ক্রিসমাস ডেতে সুইজারল্যান্ডে মারা গেছেন চার্লি চ্যাপলিন! করিম আসিরকে বলা হয় আফগান চার্লি চ্যাপলিন... সারা বছর রাজধানী কাবুলের বিভিন্ন স্টেজে উঠে লোক হাসান তিনি। কে বলে চ্যাপলিন নেই!

TatBEq2.jpg


চ্যাপলিন স্টুডিওতে পোষা কুকুরের সঙ্গে, ইনস্টাগ্রাম

চ্যাপলিন তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তাঁর কাছে সৌন্দর্য মানে নর্দমায় ভেসে যাওয়া একটা গোলাপ ফুল। এই যে বীভৎস দ্বন্দ্ব থেকে সৃষ্টি হওয়া সৌন্দর্য, এখানেই বাস্তবতার সব নিষ্ঠুর দরজা খুলে যায়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দুঃসহ শৈশব বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছেন। যেখানে তাঁর মাতাল বাবা, মাকে নির্যাতন করত ছোট্ট চ্যাপলিনের সামনেই। একসময় সেই বাবা মাকে ছেড়ে যায়, তাতে সামান্য সময়ের জন্য হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন চ্যাপলিন। কিন্তু কতক্ষণের জন্য? পরেরবার খিদে লাগার আগপর্যন্ত!

2Q9pcEV.jpg


কুশনের কভারে চ্যাপলিন, ইনস্টাগ্রাম

মা কখনো সস্তা নাটকে অভিনয় করতেন, কখনো সেলাই করতেন, কখনোবা মা–ছেলে মিলে ভিক্ষা করতেন। কখনো নরম নিষ্পাপ হাতে দিব্যি চুরি করতেন। এর মাঝেই অসুখে পড়ে ভুগে মারা যান মা। আর চার্লি চ্যাপলিনের তাঁর নির্বাক কমেডি নাড়া দিতে থাকে সমগ্র ইংল্যান্ডকে। তাই তো তিনি বলেছেন, সত্যিকারের কমেডি তখনই করা যায়, যখন নিজের সব দুঃখ, বঞ্চনা সফলভাবে গিলে ফেলা যায়। নর্দমায় ভেসে যাওয়া গোলাপের দ্বন্দ্বের উৎস লুকিয়ে আছে তাঁর ছেলেবেলায়। দিন শেষে চার্লি চ্যাপলিনের কমেডি আর কমেডি থাকে না, হয়ে ওঠে সত্যিকারের ক্লেদাক্ত বাস্তবতা। মকারিরূপে দর্শকের সামনে খুলে খুলে পড়ে বাস্তবতার দেয়ালে সাঁটা ভণ্ডামির একেকটি ইটের টুকরা। হাসিতে হাসিতে কখন যেন বেদনায় ভারী হয়ে ওঠে বুক। তুমুল হাসি অপ্রস্তুত হয়ে যায়, কখন যেন চোখ ভিজে গেছে!

jjE3WJi.jpg


দ্য গোল্ড রাশ সিনেমার সেটে চার্লি চ্যাপলিন, ইনস্টাগ্রাম

চার্লি চ্যাপলিন কমেডিয়ান নন, অভিনেতা নন, সব ছাপিয়ে তিনি মহান শিল্পীর ঢিলেঢালা কোট গায়ে এক তুখোড় বিপ্লবী। যিনি হাসির ঝা চকচকে খোলসে ছুড়ে ছুড়ে ফেলে গেছেন তীব্র কঠিন বাস্তবতার হাহাকারকে। সেই মোড়ক এখনো দর্শক একটু একটু করে খুলছেন আর চড়ছেন মনের আনন্দ-বেদনার নাগরদোলায়। সেই মোড়কের ভাঁজ খুলতে খুলতে দর্শক এখনো একটু একটু আবিষ্কার করছেন মহাবিশ্বের একজন চার্লি চ্যাপলিনকে। যে বুকের ভেতর সমস্তটা নিয়ে প্রেমিকার হাত ধরে টলমল করতে করতে রাস্তায় হাঁটছে। হাঁটছে তো হাঁটছেই, তার শেষ নেই কোনো।

ztyKJv0.jpg


চার্লি চ্যাপলিন, ইনস্টাগ্রাম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top