What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও তারুণ্যের ‘স্ফুলিঙ্গ’ (1 Viewer)

mfeTyg7.jpg


তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে সাবজেক্ট ভেরিয়েশন আছে। একটার সাথে আরেকটা সহজে আলাদা করা যায়। প্রত্যেকটি ছবির মধ্যে নতুন জিনিসটা আছে। 'স্ফুলিঙ্গ' (২০২১) তাঁর নতুন ধরনের চলচ্চিত্র।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন ছবি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হচ্ছে। কাজের মতো কাজ কয়টা হচ্ছে জিজ্ঞাসা থেকে যায়। 'স্ফুলিঙ্গ' মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে তারুণ্যের ফ্রেমে বেঁধে পরিবেশন করা হয়েছে। দৃষ্টিকোণ অনেকটাই নতুন এবং নির্মাণেও তারই ছাপ আছে।

'স্ফুলিঙ্গ'-কে ইংরেজিতে 'sparkle' বলা হয়। লোহার কাজ যারা করে মানে কামারেরা তাদের কাজের সময় লোহার সাথে লোহার ঘর্ষণে 'অক্সি অ্যাসিটিলিন শিখা' জ্বলে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। স্ফূরণ ঘটে আগুনের সেগুলোই স্ফুলিঙ্গ। তারুণ্যের শক্তিকে এভাবে আগুনের মতো করে ভাবা হয়েছে এ ছবিতে।

ছবির স্টোরি টেলিং এসেছে একটা ব্যান্ড দলকে ঘিরে। এখানেও তৌকীর আহমেদের গল্পের নতুনত্ব আছে। মূলত ব্যান্ড দলের মধ্যে একটা দারুণ তারুণ্যশক্তি কাজ করে বিশেষ করে উঠতি ব্যান্ড যারা প্রতিষ্ঠিত হতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমনই একটি ব্যান্ড দলকে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর মাধমে তুলে ধরা হয়েছে। শ্যামল মওলা, মম, হাসনাত রিপন-রা সেই ব্যান্ডদলের সদস্য।

ছবির নির্মাণশৈলীতে দ্বৈত স্টোরি টেলিং দেখানো হয়েছে। গল্পের ভেতরের গল্পটা না বলাই থাক তবে এটুকু বলা যায় দ্বৈত স্টোরি টেলিং-এ সমানভাবে ট্রিটমেন্ট করে ছবি এগিয়ে নেয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। মুক্তিযুদ্ধকে বর্তমান তারুণ্যের ভেতরের শক্তিতে রূপান্তর করার বিষয়টি ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি করা এখন অনেকের কাছেই একটা ছেলেখেলা হয়ে গেছে যেন যেখানে তাঁর জীবন ও কর্মের শিল্পসম্মত পরিবেশনা থাকে না। তৌকীর আহমেদের হাতে বঙ্গবন্ধুর পরিবেশনা যতটা শিল্পসম্মত হয়েছে এমনটা অনেকেই পারেনি। তাঁকে জানা ও বোঝা সর্বোপরি ফিল করতে পারার (বিশেষ করে ৭ মার্চের ভাষণ) যে গুরুত্ব এ দিকটি 'স্ফুলিঙ্গ'-তে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট ছিল। এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছুটা অন্যভাবে কাজ হয়েছিল গত বছরের 'বেঙ্গলি বিউটি' ছবিতে।

oMivscb.jpg


তারুণ্যের অন্যতম শক্তি প্রেম সেই প্রেমের জুটিতে শ্যামল মওলা ও পরীমণি ছবির অন্যতম প্রাণ। তাদেরকে দেখে মনে হবে বোধ হয় একসাথে বেশ কয়েকটি ছবি করে ফেলেছে দুজনের বোঝাপড়া এত ভালো। শ্যামল তো ভালো অভিনেতাই পরীমণি যে দিন দিন দৃষ্টি কাড়ছে সমালোচকদেরও সেটা সামনের দিনগুলোতে আরো পরিষ্কার হবে যদি তার ছবি সিলেকশন 'স্ফুলিঙ্গ'-র মতো হয়। মম-র চরিত্রটি অন্যতম সেরা বিশেষত তার ক্যারিয়ারে নতুন চরিত্র তো বটেই। তার অভিনয়টাও চরিত্রের চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী পারফেক্ট। রওনক হাসান, আজাদ আবুল কালাম তাদের স্বাভাবিক অভিনয় করেছে। হাসনাত রিপনের সম্ভাবনা অনেক সামনে। ফখরুল বাশার, আবুল হায়াত, শহীদুল আলম সাচ্চু-রা ছবির বাড়তি শক্তি।

পলেটিক্যাল প্র্যাকটিস স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বর্তমান বাংলাদেশে যেভাবে চলে তার একটা নমুনা ছবিতে আছে। এটা খুব সাহসের কাজ হয়েছে তৌকীরের জন্য। ছবির মান এ অংশটির জন্য অনেকটাই বেড়েছে।

'মাথার ভেতরে প্রেম আছে তো? কবিতা আর মুক্তিযুদ্ধের জন্য দরকার প্রেম' এ সংলাপটি সেরা ছিল ছবির। ছবির গানে 'তোমার নামে' কথা, সুর, গায়কীতে সেরা, 'বুঝি না' রোমান্টিকে দারুণ আর বঙ্গবন্ধুর গানটি বিষয়ভিত্তিকভাবে ভালো। অন্যান্য কালজয়ী গানের ব্যবহার ছবিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।

নেগেটিভ দিক বললে সেকেন্ড হাফ কিছুটা মন্থর ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনেকটাই একরকম। তবে ছবির প্রত্যাশার ক্ষেত্রে এগুলো বাধার সৃষ্টি করেনি।

'স্ফুলিঙ্গ' তৌকীর আহমেদের সাবজেক্ট চয়েজে সম্পূর্ণ নতুন একটি ছবি। ডেডিকেশন নিয়ে ফিল করানোর চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস ও নেতৃত্বকে তারুণ্যের মাধ্যমে। 'মাথার ভেতরে প্রেম আছে তো' এই সংলাপটি দিয়ে শেষ করা ভালো, বলে রাখা ভালো তাদের জন্য যারা মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে পুঁজি করে সস্তা নির্মাণের ছবি বানিয়ে সুবিধা পেতে চায় তারা যেন এসব গুরুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের আগে ঐ 'প্রেম'-টা মাথার মধ্যে রেখে করে তাহলে কেউ টু শব্দটিও করবে না।

রেটিং – ৮/১০
 

Users who are viewing this thread

Back
Top