What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অটিজমে ওষুধ (1 Viewer)

tN4Bcab.png


অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার একটি স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা, যেখানে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে এবং চারপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হয় আর বারবার একই ধরনের সীমাবদ্ধ আচরণ করতে দেখা যায়।

অটিজমের সাধারণ বৈশিষ্ট্য

জন্মের পর শিশুর ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো বোল না বলা কিংবা পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা না করা। ১৬ মাসের মধ্যে কোনো একটি শব্দ বলতে না পারা। শিশুর বয়স বেড়ে যখন ২৪ মাস, তখনো দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারা কিংবা ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারার পর আবার ভুলে যাওয়া। এমন শিশুদের দিকে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বয়সোপযোগী সামাজিক আচরণ করতে পারছে না, নাম ধরে ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না, সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে, পছন্দের বা আনন্দের বস্তু বা বিষয় অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারছে না, অন্যের বলা কথা বারবার বলা বা বারবার একই আচরণ করছে। আবার শব্দ, আলো, স্পর্শ ইত্যাদি বিষয়ে কম বা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, একটি নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করছে, নিজেকে আঘাত করার প্রবণতাও দেখা যায়।

এ ছাড়া অটিজমের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এমন শিশুর মধ্যে খিঁচুনি, অতিচঞ্চলতা, বুদ্ধির স্বল্পতা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, আচরণজনিত সমস্যা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে।

কীভাবে হতে পারে চিকিৎসা

  • শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য শিশুর মা-বাবাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তাঁরা বাড়িতে শিশুর আচরণের পরিবর্তন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
  • স্কুলে ও বাড়িতে শিশুকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া ও শিশুকে সামাজিক রীতিনীতি শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। যে কাজটি সে ভালো পারে বা যে বিষয়টিতে তার উৎসাহ আছে, সে বিষয়টির দিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হয়।
  • শিশুর ভাষাশিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
  • তবে প্রয়োজনে রোগলক্ষণ অনুযায়ী কিছু ওষুধ ও থেরাপি (অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি) প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

ওষুধের অপপ্রয়োগ নয়

অটিজমের পরিচর্যায় থেরাপি আর প্রশিক্ষণের গুরুত্ব খুব বেশি হলেও কখনো কখনো কিন্তু ওষুধ প্রয়োগেরও প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু অটিজম পরিচর্যায় ওষুধের প্রয়োগ নিয়ে রয়েছে নানা অপপ্রচার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস।

অটিজম পরিচর্যায় বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত দিকনির্দেশনায় প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের দেশে অনেক অভিভাবকই সন্তানকে ওষুধ খাওয়াতে ভয় পান, কেউ কেউ আবার অন্য অভিভাবককেও ওষুধ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন, নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়ান। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জুজুর ভয় দেখিয়ে অটিজমের বৈশিষ্ট্যকে আরও জটিল করে তোলেন।

কখন ওষুধ দিতে হবে আর কখন দিতে হবে না, তা নির্ভর করবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের ওপর। নানাজনের কথায় কান না দিয়ে চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখা উচিত।

কখন ওষুধ প্রয়োগ করা জরুরি

ওষুধ অটিজমের পরিচর্যার সহায়ক পদ্ধতিমাত্র। মূল পরিচর্যা কিন্তু প্রশিক্ষণ, শিক্ষা আর বিভিন্ন থেরাপি। ওষুধ প্রয়োগ করার অর্থ এই নয় যে ওষুধ খেলে শিশুর অটিজমের সব বৈশিষ্ট্য চলে যাবে বা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে কখনো কখনো ওষুধ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে ওঠে। অনেক সময় ওষুধ ছাড়া প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বা থেরাপি প্রয়োগই করা যায় না।

অটিজমের পরিচর্যায় যেসব ক্ষেত্রে ওষুধ জরুরি ও কার্যকরী বলে প্রমাণিত সেগুলো হচ্ছে—

  • অটিজমের সঙ্গে যেকোনো সহযোগী সমস্যা (কোমর্বিডিটি) থাকলে ওষুধ দিতে হয়। যেমন খিঁচুনি, অতিচঞ্চলতা, বুদ্ধির স্বল্পতা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, আচরণজনিত সমস্যা, আগ্রাসী আচরণ, রেগে যাওয়া, টিক ডিসঅর্ডার, ঘুমের সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা।
  • অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর এমন কোনো আচরণ, যা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, যাকে বলে চ্যালেঞ্জিং বিহেভিয়ার। যেমন নিজেকে আঘাত করা, মেঝেতে মাথা ঠোকা, নিজের হাতে দাঁত দিয়ে আঘাত করা, অভিভাবককে আঘাত করা, অন্যকে দাঁত দিয়ে আঘাত করা, নিজের চুল আগ্রাসীভাবে ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি।
  • খিটখিটে মেজাজ বা ইরিটেবিলিটি কমানোর জন্য ওষুধ প্রয়োগের নির্দেশনা রয়েছে।
  • অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন শিশু বা ব্যক্তি যখন তার আচরণগত সমস্যার জন্য নির্ধারিত প্রশিক্ষণ বা থেরাপি নিতে অপারগ বা নিজের দৈনন্দিন কাজগুলো করতেই পারছে না, তখন ওষুধ প্রয়োগ করে তাকে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হয়, নিজের কাজগুলো করার জন্য সক্ষম করার চেষ্টা করা হয়।

অটিজমের ওষুধ নেওয়ার ক্ষেত্রে

  • অটিজম বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ওষুধ গ্রহণ করুন। অন্য কারও পরামর্শে বা নিজে নিজে দোকান থেকে কিনে নয়। কারণ, একেক শিশুর বৈশিষ্ট্য একেক রকম।
  • ওষুধ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আর ব্যাখ্যা গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
  • ওষুধ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকুন। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়া কারও কথা, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুজব এড়িয়ে চলুন।
  • মনে রাখবেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ওষুধের সহজাত বৈশিষ্ট্য। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে ভীত না হয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন।
  • ওষুধ গ্রহণের সময় চিকিৎসকের কাছে ওষুধের কার্যপদ্ধতি ও সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানা আপনার অধিকার। চিকিৎসকের কাছ থেকে সেগুলো জেনে নিন।
  • এই ওষুধগুলো খুব অল্প মাত্রায় শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করুন। নিজে নিজে মাত্রা কমাবেন না, বাড়াবেন না।
  • বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আগের সব চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেখান এবং অতীতে কোনো ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে তা জানান।
  • কোনো ওষুধ খেলে নিয়মিত রক্ত বা অন্যান্য পরীক্ষা করতে হবে কি না, জেনে নিন।
  • ওষুধগুলো দীর্ঘ মেয়াদে খুব ধীরে কাজ করে। তাই ধৈর্য ধরুন। চিকিৎসকের কাছে স্পষ্ট করে জেনে নিন কত দিন ওষুধ খেতে হবে আর কত দিন পরপর সাক্ষাৎ করতে হবে।
  • ওষুধ প্রয়োগের পর কতটুকু ইতিবাচক বা নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে বা কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তা লিখে রাখুন ও পরবর্তী সময়ে সাক্ষাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জানান।

* ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ | সহযোগী অধ্যাপক, চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top