What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ভিন্ন চোখে মুক্তিযুদ্ধ (1 Viewer)

mpI3wdv.jpg


দেশের প্রথম থ্রিডি চলচ্চিত্রই মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হয়ে থাকল। এখানে একসাথে দুটি নতুন ইতিহাস যোগ হলো। প্রথমত, 'অলাতচক্র' দেশের প্রথম থ্রিডি ছবি আবার থ্রিডি প্রযুক্তিতে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ছবি। হাবিবুর রহমান পরিচালিত।

প্রাথমিকভাবে আরো একটি তথ্য যোগ করা দরকার 'অলিতচক্র' সাহিত্যভিত্তিক ছবিও। সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ এখন কমে গেছে। কমার জোয়ারে নতুন একটি যোগ হওয়াটা ভালো খবর। আহমদ ছফা-র কালজয়ী উপন্যাস থেকে একই নামে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। আহমদ ছফা রচিত 'অলাতচক্র' উপন্যাস ১৯৮৫ সালে সাপ্তাহিক 'নিপুণ' পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। ছফা উপন্যাসটি মাত্র ১২ দিনে লেখা সম্পন্ন করেন।

শাব্দিক অর্থে 'অলাত' হচ্ছে 'আগুন।' 'অলাতচক্র'-র অর্থ দাঁড়ায় আগুনের চক্র বা অগ্নিবলয়। মূলত মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ের একটা আবহ রাখতেই নামটি এভাবে নির্বাচন করেন ছফা। ছফা উপন্যাসটিকে কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখেছেন। যে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম নিয়ে আমরা গর্ব করি তার পেছনে ভারতীয় যে সহযোগিতা ছিল তাকে ছফা একটু ভিন্নভাবে যৌক্তিক দৃষ্টিতে দেখেছেন। যে স্বাধীনতার সংগ্রাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়েছিল ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত সেখানে ভারতীয় কোনো সহযোগিতা ছিল না। তখন দেশের মানুষ নিজেরাই সংগ্রাম করেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে সেটা যখন ভারত-পাকিস্তানের একটা বিষয় চলে এলো তাতে ভারত কোনো না কোনোভাবে এটিকে তাদের সংগ্রামও বলতে চাইবে যেহেতু পাকিস্তানের সাথে তাদের বিরোধ ছিল। আহমদ ছফা মূলত এই পয়েন্টেই উপন্যাসটিকে ভিন্ন চোখে দেখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম কি শুধুই আমাদের সংগ্রাম হতে পারত না! কেন ভারত এখানে যুক্ত হলো বা আমরা যোগ করালাম। অনেকের কাছে হয়তো বিষয়টা ভারতবিরোধী মনে হবে কিন্তু মোটেও তা নয়। ছফা বলতে চেয়েছেন আমরা যে সংগ্রাম অনেক আগে থেকেই শুরু করেছি সেটার পরিণতি পর্যন্ত কেন ইতিহাসটা শুধুই আমাদের হলো না! তাঁর এই আফসোসটাই উপন্যাসটিকে ভিন্ন দর্শন দিয়েছে। এর পাশাপাশি শরণার্থী শিবিরে মানুষের আশ্রয় নেয়া, একজন মুমূর্ষু রোগী, একজন তরুণ দেশপ্রেমিক, ডাক্তার এসব নিয়েই আবহ তৈরি করেছেন।

mx0FElm.jpg


উপন্যাসের এই দর্শন ও প্রেক্ষাপট থেকে 'অলাতচক্র' ছবিকে ভিন্নভাবে দেখানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ কোনো যুদ্ধ ছাড়াই শুধু আলোচনায়, চর্চায় মুক্তিযুদ্ধের আবহ তুলে ধরা হয়েছে। এটাও অন্যভাবে মুক্তিযুদ্ধের উপস্থাপন হয়েছে।

চরিত্রায়ণে, নির্মাণে খুবই ন্যাচারাল ভঙ্গি রেখেছেন পরিচালক হাবিবুর রহমান। স্বাভাবিক চলাফেরাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। লিউকেমিয়ার মুমূর্ষু রোগীর চরিত্রে জয়া আহসান বরাবরের মতোই অসাধারণ অভিনয় করেছে, আহমেদ রুবেলের ভারী দরাজ কণ্ঠের মায়া যথারীতি ছিল এবং তার অভিনয়ও ন্যাচারাল, আজাদ আবুল কালাম তার স্বভাবসুলভ ব্যক্তিত্ববান অভিনয় দেখিয়েছে। অন্যান্য চরিত্রগুলোও ঠিকঠাক।

'সেই প্রথম জেনেছিলাম নারীর লাশ ভাসে উপুড় হয়ে আর পুরুষের চিৎ হয়ে' জয়া আহসানের মুখে এ সংলাপটি অন্যতম সেরা ছিল। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তার তায়েবা চরিত্রের ভূমিকা উপন্যাস ও ছবির শক্তিশালী চরিত্র। আহমেদ রুবেলের ডায়েরি লেখার ভূমিকাটি মূলত মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলের একটা অংশ।
– ভাতে কি তেলাপোকা?
– তুমি না খেলে না খাও অন্যের রুচি নষ্ট করছ কেন?
কত স্যাক্রিফাইস ছিল স্বাধীনতার জন্য এরকম কিছু দৃশ্যই তার প্রমাণ।

ছবিতে সাংস্কৃতিক একটা আবহ আছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গান সাথে মুনীর চৌধুরী-র মাস্টারপিস নাটক 'কবর' এর মঞ্চায়ন এগুলো দেখার মতো ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বল।

Fz76F3K.jpg


ছবির পোস্টারে জয়া আহসান-কে আয়নায় মুখ দেখতে দেখা যায়। আয়নায় একটা প্রজন্মকে নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করার সময়টাও এসেছে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলভাবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে এবং যারা অপসংস্কৃতি বা বিদেশি সংস্কৃতিতে অন্ধ হয়ে দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতিকে ছোট করে তাদের জন্য জরুরি বর্তমানে। 'অলাতচক্র' মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ কাজটি করুক।

রেটিং – ৭.৫/১০
 

Users who are viewing this thread

Back
Top