What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আজ প্রাণ খুলে হাসার দিন (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by mobinabdul to join our community. Please click here to register.
মহামারির আঘাতে জর্জরিত এই পৃথিবীতে এখন সবাই চায় দুঃখ আর দুশ্চিন্তা ভুলে ক্ষণিকের জন্য হলেও হাসি–আনন্দে মেতে উঠতে। তাই ১৯ মার্চ 'লেটস লাফ ডে' বা হাসি দিবসটিকে কিন্তু মোটেই হালকাভাবে নেওয়ার জো নেই।

3LvzZQ2.jpg


সুকুমার রায়ের ছড়ায় দেখা যাওয়া সেই কিম্ভূতকিমাকার রামগরুড়ের ছানা ছাড়া হাসতে বোধ হয় কারোরই মানা নেই। পাখির পেছনে ছোটা শিশুর খিলখিল হাসি, প্রিয়তমার ঝরনাধারার মতো কলকল হাসি আর বন্ধুদের আড্ডায় এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়া হাহা অট্টহাসি—সব কটি হাসি খুবই স্বতন্ত্র, অত্যন্ত বিশিষ্ট। হাসি তো আনন্দেরই মনখোলা বহিঃপ্রকাশ। কৌতুকবোধ আর মজার অনুভূতিগুলোই বাঁধভাঙা বল্গাহারা হাসির স্রোতে বেরিয়ে আসে অন্তর থেকে।

c4jR7Z5.jpg


মজার অনুভূতিগুলোই রূপান্তরিত হয় হাসির স্রোতে

হাসির পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা যুগে যুগে গলদঘর্ম হয়েও একেবারে সোজাসাপ্টা ব্যাখ্যা কেউই খুঁজে পাচ্ছেন না। কী দেখলে বা শুনলে অথবা কী ঘটলে যে কে কখন হো হো করে হেসে উঠবে, তা কেউ বলতে পারে না। একেক মানুষের জন্য অট্টহাস্য উদ্রেককারী উদ্দীপক একেবারেই আলাদা। সামনে কেউ কলার খোসায় পা পিছলে আলুর দম হলে কারও বেদম হাসি পাবে। আবার তার ঠিক পাশের মানুষটিই ভ্রু কুঁচকে ভাবতে পারে, একটা মানুষ ব্যথা পেল বলে হাসছে সে! এ কেমনতর মানুষ রে বাবা।

তাই তো হাসি বেঁচে যাঁদের রুটিরুজি চলে, সেসব কৌতুকাভিনেতা, রম্য সাহিত্যিকেরা যারপরনাই দুশ্চিন্তায় থাকেন, দর্শক-শ্রোতা বা পাঠক হাসবেন কি না, তা ভেবে। কারণ, একই কৌতুক শুনে যেখানে একদল লোক হেসে গড়িয়ে পড়ছে, আবার আরেক দল লোকের হয়তো হাসিই পেল না সে কৌতুক শুনে। মজার কিছু দেখলে বা শুনলে নিউরনের কারসাজিতে আচমকা এই যে হাত–পা ছুড়ে, গা দুলিয়ে, দাঁত বের করে, মুখ বাঁকিয়ে অদ্ভুত হা হা হো হো শব্দে প্রতিক্রিয়া হয় আমাদের, চিন্তা করে দেখলে কিন্তু সে ভারী এক অদ্ভুত ব্যাপারই বটে।

pT6taZ6.jpg


হাসির উদ্দীপনা ছড়িয়ে আছে জীবনের সবখানে

হাসির উদ্দীপনা ছড়িয়ে আছে জীবনের সবখানে। শুধু জহুরির চোখ আর সমঝদার ও উৎসুক মন থাকা চাই সে উদ্দীপনায় সাড়া দিতে। প্রকৃতিতে পাখপাখালি, কুকুর–বেড়ালসহ অন্যান্য পশু এমন সব মজার কাণ্ডকারখানা ঘটায় যে না হেসে পারা যায় না। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটালেও অত্যন্ত হাসি–আনন্দে বিভোর থাকা যায়। ছোট শিশুদের তো 'টুকি' খেললে, কাতুকুতু দিলে, মজার কোনো ছড়া শোনালে বা এমনিতেও হুটোপুটি, লাফালাফি করলে, অর্থাৎ সবকিছুতেই হাসি পায় খিলখিল করে। হাসি জিনিসটাই এমন সংক্রামক যে আশপাশে এমনি পথ চলতে কেউ জোরে হেসে উঠলে তার সঙ্গে গলা মেলাতে ইচ্ছা করে, নিদেনপক্ষে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোণে।

এই হাসির ওপরেই নির্ভর করে বিশ্বব্যাপী দাঁড়িয়ে আছে কোটি কোটি টাকার কমেডি ইন্ডাস্ট্রি। দম ফাটানো হাসির ছবিতে চার্লি চ্যাপলিন, রবিন উইলিয়ামস, জিম ক্যারি সবাইকে হাসিয়েছেন, হাসাচ্ছেন। টেলিভিশনের কিংবদন্তি কমেডি শো থ্রি স্টুজেস আর মিস্টার বিনের হাস্যকর সব কাণ্ডকারখানা দেখে হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসে।

N7jXQaR.jpg


টেলিভিশনের কিংবদন্তি কমেডি শো থ্রি স্টুজেস, ছবি: উইকিপিডিয়া

BDqfHQC.jpg


মিস্টার বিন, ছবি: উইকিপিডিয়া

আমাদের উপমহাদেশে ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, উৎপল দত্ত, মেহবুবের মতো কমেডি কিং। আমাদের দেশেও টেলি সামাদ, রবিউল, দিলদার, এ টি এম শামসুজ্জামানসহ আরও অনেক অভিনেতাই তাঁদের অসম্ভব রসাল পর্দা উপস্থিতির মাধ্যমে লাখো মানুষকে হাসিয়েছেন সিনেমা হলে আর টিভির সামনে।

msjmhSb.jpg


ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, ছবি: উইকিপিডিয়া

হুমায়ূন আহমেদের 'বহুব্রীহি' নাটকের পর্বগুলো যতবার দেখা যায়, ততবারই হাসি পায়। এখন এই মহামারিকালে টেলিভিশনে কমেডি শোগুলোর জনপ্রিয়তা অসম্ভব রকমের বেড়ে গেছে বলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান বা মঞ্চের কৌতুকাভিনেতাদেরও অসামান্য অবদান রয়েছে পৃথিবীর মানুষকে প্রাণ খুলে হাসাতে। আবার রম্যসাহিত্য তো সাহিত্যের জনপ্রিয় ধারাগুলোর একটি। ইংরেজি সাহিত্যে পি জি উয়োডহাউস বা এভেলিন ওয়াহের মতো বিশ্বসেরা রম্যসাহিত্যিককে আমরা পেয়েছি।

hspp8Ux.png


হুমায়ূন আহমেদের 'বহুব্রীহি' নাটকের একটি দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

আবার আমাদের শিবরাম চক্রবর্তীর রম্যরচনা, সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা, সুকুমার রায়ের অগুনতি ননসেন্স পোয়েট্রি, নারায়ণ দেবনাথের অনবদ্য কমিক সিরিজ 'নন্টে ফন্টে'র কথা মনে হলেই সোডার বোতলের মতো ভসভসিয়ে হাসি উঠে আসে ভেতর হতে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি পত্রিকাতেই রম্য পাতা রাখা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মিম বা বিভিন্ন হাসির কনটেন্ট ও ছবি হাজারেবিজারে লাইক শেয়ার হয়। তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা উচিত, যেন হাস্যচ্ছলে বা নিজেরা মজা করতে গিয়ে কারও মনঃকষ্টের কারণ আমরা না হই। কারণ, দায়িত্বশীল হাস্যরসই প্রকৃত আনন্দের হাসি ফোটায় সবার মুখে।

হাসি আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত সহজাত ব্যাপার হলেও এর আছে অনন্য সব উপকারিতা। ইংরেজিতে তো প্রবাদই আছে, লাফটার ইজ দ্য বেস্ট মেডিসিন। প্রাণ খুলে হাসলে হৃদযন্ত্র আর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মনখোলা হাসি হাসলে যে কারও দুশ্চিন্তা আর মানসিক অবসাদ দূর হয়ে যায়। কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমিয়ে আনতে জোরে জোরে স্বতঃস্ফূর্ত হাসির কোনো জুড়ি নেই, এমনটাই বিজ্ঞানীরা বলেন।

VVoBahR.jpg


চা–কফি খাওয়ার মতো চনমনে অনুভূতি জাগায় হাসির তোড়

চা–কফি খাওয়ার মতো চনমনে জেগে ওঠা অনুভূতি জাগায় হাসির তোড়। চেহারার ফেসিয়াল মাসল বা পেশিগুলো হাসির ফলে নড়েচড়ে সজীব সতেজ হয়ে ওঠে। প্রাতর্ভ্রমণের সময়ে আজকাল অনেক হেলথ ক্লাবের সদস্য ও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষেরা লাফটার থেরাপির শরণাপন্ন হন শরীরটাকে ভালো রাখতে। পার্কে দল বেঁধে ছন্দে ছন্দে সাতসকালে হা হা করে হেসে উঠছেন সবাই—এ দৃশ্য এখন খুব দুর্লভ নয় কোনো দেশেই। ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা তো এমনও বলছেন যে একবার হইহই করে হেসে উঠলে শরীরে যে আন্দোলন ঘটে, তাতে ৮ থেকে ১০ ক্যালরি পর্যন্ত ক্ষয় হয়ে যায়। তাই এ নিয়ে হাসাহাসি না করে হাসি ব্যাপারটিকে আসলে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তবে অবশ্যই জীবনে হাস্যরসের অবতারণা ঘটিয়ে।

মজার ব্যাপার হলো, প্রচলিত ধারণার বিপরীতে গিয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন গবেষণাকর্মে দেখিয়েছেন, মানুষ ছাড়াও হনুমান, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং, বানর আর গরিলাও কিন্তু হেলেদুলে বেশ অট্টহাসি হেসেটেসে পেটে খিল ধরিয়ে ফেলতে পারে। রীতিমতো 'টিকল এক্সপেরিমেন্ট' বা কাতুকুতু পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ইঁদুরজাতীয় প্রাণীও হাসতে পারে শব্দ করে। তবে সে শব্দ মানবকর্ণে পৌঁছায় না তা 'সুপারসনিক' মাত্রার বলে। হাসি নিয়ে আছে অগুনতি ছড়া, কবিতা।

582X0A6.jpg


আজ সবাই হেসে কুটোপাটি হওয়া যাক

গানের কলিতে মায়ের হাসি, শিশুর হাসি আর প্রেয়সীর হাসির কথা বারবারই এসে যায়। আজকের দিনে হাসি দিবস বা 'লেটস লাফ ডে' কবে থেকে উদযাপিত হওয়া শুরু হলো, সে কথা সঠিক জানা নেই। তবে এই অজুহাতে পরিবারের সবাই মিলে 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' বা চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'গোল্ড রাশ' দেখে প্রাণ খুলে হাসা যেতে পারে। অথবা একাই নিজের ঘরে হেসে কুটোপাটি হওয়া যাক না নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'টেনিদা'র গল্পগুলো বারবার পড়ে। কারণ, ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে হাসি-আনন্দের কোনো তুলনাই নেই। তাই গোমড়া থোরিয়াম হয়ে না থেকে প্রাণ খুলে হাসুন। কারণ, হাসিতে মুক্তা না ঝরলেও হৃৎপিণ্ড ঠিক থাকে বলে শোনা যায়।
 
ফোরামে অনেক কিছুই আছে শিক্ষনীয় আমি এক সময় নিজেই মনোযোগ দিতাম না।ধন্যবাদ এডমিন মডারেটর
 

Users who are viewing this thread

Back
Top