What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ত্বকচর্চায় ভেষজ মার্জনি (1 Viewer)

VvsTSyV.jpg


শস্যের মৌসুমে গ্রামের উঠান থাকে ব্যস্ত। ধান উড়িয়ে, রোদে শুকানো শস্য ঘরে তুলে, ধুলাবালু আর খড়কুটো মেখে মেয়েরা যখন খিড়কিপুকুরে গোসল করতে যায়, তখন প্রায়ই সঙ্গে নিয়ে যায় ধুন্দুল বা ঝিঙের খোসা। তারা গা ডলে গোসল করে, কখনো সহমর্মী একজন আরেকজনের পিঠও ঘষে দেয়। গাত্র মার্জনের এই স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস চলে আসছে স্মরণাতীত কাল থেকে। শহুরে মানুষও ব্যবহার করে এই খোসা, যার সঙ্গে যোগ হয়েছে সাইসাল, টেরি ক্লথ আর সামুদ্রিক স্পঞ্জ। অধুনা সুপার মার্কেটে গা মাজার জন্য কিনতে পাওয়া যায় নানা রকম মার্জনী, প্রায়ই যার দুদিকে থাকে দুরকম ঘষুনি—এক পিঠ কর্কশ, আরেক পিঠ মোলায়েম। যেমন ধুন্দুলের খোসা আর টেরি ক্লথ। টেরি ক্লথ নরম তোয়ালে-জাতীয়, লুপ করা সুতি বস্ত্র। ধুন্দুলের খোসা ছাড়াও মার্কেটে পাওয়া যায় সাইসাল আর প্রাকৃতিক স্পঞ্জ।

প্রতিনিয়ত আমাদের ত্বকের ওপর ধুলাবালু, তেল ছাড়াও জমে ওঠে অসংখ্য মৃত কোষ, যেগুলো চামড়ার ওপরকার রন্ধ্র বন্ধ করে স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। সপ্তাহে বার দু-এক এসব পদার্থ ঘষে উঠিয়ে দিলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, নতুন করে বডি অয়েল তৈরি হয়, লিম্ফ ফ্লুইডের চলাচল বাড়িয়ে দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে দেয় এবং প্রসাধন নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে ত্বকের ওপরিভাগ। শুধু হাত দিয়ে গাত্র মার্জন করা যথেষ্ট নয়, এর জন্য চাই ধুন্দুলের খোসা, সাইসাল, সামুদ্রিক স্পঞ্জ প্রভৃতি।

cgW0a5T.jpg


বহুল ব্যবহৃত ধুন্দুলের খোসা। সূত্র: DHgate

শহরে এসব মার্জনির আগমন ঘটলেও আদিবাসীদের অনেকে এখনো ব্যবহার করেন তাঁদের নিজস্ব কোমর তাঁত থেকে তৈরি করা গামছা-জাতীয় শক্ত কাপড়। পা ঘষার জন্য মাটির নিচে থেকে তাঁরা একসময় সংগ্রহ করেছেন ফসিলকৃত গাছপাথর বা পেট্রিফায়েড উড। শহরে গাছপাথরের পরিবর্তে আমরা পাই আগ্নেয় লাভা থেকে তৈরি ঝামা অর্থাৎ কালো রঙের পিউমিস স্টোন বা অত্যধিক তাপমাত্রায় পুড়ে ঝামা হয়ে যাওয়া পোড়া ইটের টুকরা।

mGxIBuB.jpg


প্রাণিদেহ থেকে প্রস্তুত সামুদ্রিক স্পঞ্জ। সূত্র: অর্গানিক ওয়ার্কস্

গাত্র মার্জনি হিসেবে ধুন্দুল ও ঝিঙের খোসার ব্যবহার সুপ্রাচীন। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই দুটো ফলই লুফ্‌ফা বা লুফা নামে পরিচিত, যে শব্দটি এসেছে আরবি লিফ্‌ থেকে। লুফফা এশীয় বর্ষজীবী গাছ হলেও প্রায় ৪০০ বছর আগে উদ্ভিদবিদেরা মিসরীয় অঞ্চলে এর চাষাবাদের খবর পেয়ে নামকরণ করেন লুফফা ইজিপটিয়েকা। আর উঁচু শির থাকার কারণে ঝিঙের নাম হয়েছে লুফফা একিউট্যাঙ্গুলা।

দক্ষিণ আমেরিকা, ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে আরেক ধরনের লুফ্‌ফা পাওয়া যায়, যা দেখতে অনেকটা মাদলের মতো ছোট আকারের, যার গায়ে কাঁটা হয়। এর ফল পরিণত হলে নিচের দিকে ছিদ্র হয়ে বীজ ঝরে পড়ে, যাকে উদ্ভিদের এক ধরনের বিসরণ প্রক্রিয়া বলা যায়। এই মাদল শসা (Luffa operculata) বা মাদল ঝিঙের ভেতর থেকে যে জাইলেমের জালি পাওয়া যায়, তা বেশ শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী বলে এগুলো ব্যবহৃত হয় হেঁশেলে থালাবাসন ধোয়ার কাজে। সে কারণে এর সাধারণ নাম হয়েছে ডিশ রাগ্।

KlF5MC7.png


থালাবাসন মাজার কাজে ব্যবহৃত মাদল ঝিঙে। সূত্র: সিডস্ ফর অল

প্রায় ২০০ বছর আগে সাইসাল চাষ শুরু হয়েছে আফ্রিকার কেনিয়ায়, লন্ডনের কিউ গার্ডেন থেকে সেখানে বুলবিল বা পত্রকন্দ পৌঁছার পর। এরপর তানজানিয়া সাইসাল চাষে অগ্রসর হলেও বর্তমানে ব্রাজিলই এর প্রধান রপ্তানিকারক, যার উৎপাদন বছরে প্রায় ১৩ হাজার টন। সাইসাল দিয়ে শুধু বডি স্ক্রাবার নয়, আরও অনেক কিছু তৈরি হয়, যার মধ্যে রয়েছে নানা জাতের দড়ি, দামি কার্পেট, বিভিন্ন রকম পাত্র এমনকি ডার্ট বোর্ড। আগে কাদামাটি এবং পরে এলম কাঠ দিয়ে ডার্ট বোর্ড তৈরি করা হতো।

সমস্যা হলো, খেলাতে চোখা ডার্ট নিক্ষেপের পর কাঠের বোর্ড সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হতো ছিদ্র বন্ধ করার জন্য। কিন্তু সাইসাল কম্প্রেস করে নির্মিত ডার্ট বোর্ড আর ভেজানোর দরকার পড়ে না। নিক্ষিপ্ত ডার্টগুলো ফাইবারের ভেতর অনায়াসে গেঁথে যায় এবং খুলে ফেলার পর বিক্ষত ডার্টবোর্ড আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।

71UdIrf.png


সাইসাল গাছ (আগাভি সিসালেনা-Agave sisalana। সূত্র: জর্জ অ্যালেন

সাইসালের পাতা এক থেকে দেড় মিটারের মতো লম্বা হয়। ৭ থেকে ১০ বছরের জীবদ্দশায় এর থেকে প্রায় ২০ বারে ২০০ থেকে ২৫০ পাতা কেটে নেওয়া হয় গাছের গোড়া থেকে। এরপর ডিকর্টিকেশন মেশিনে পাতা থেঁতলে জলে ধুয়ে বের করা হয় প্রতি পাতা থেকে হাজারখানেক আঁশ। এই আঁশ আমাদের দেশের পাটের মতো ছড়িয়ে শুকোনো হয় রোদে ফেলে।

সামুদ্রিক স্পঞ্জ গাত্র মার্জনের জন্য একটি অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক জিনিস। এর ভেতর অনেক ধরনের মিনারেল ও এনজাইম থাকার কারণে কখনো ব্যাকটেরিয়া, মোল্ড বা ফাঙ্গাস ধরে না। এতে খুব সুন্দর ফেনা হয়, গন্ধ হয় না এবং বহুকাল টিকে থাকে, কৃত্রিম স্পঞ্জের মতো খসে পড়ে না।

শত শত বছর ধরে বিতর্ক হয়েছে, এই স্পঞ্জ আদতে গাছ নাকি প্রাণী। এদের বৃদ্ধি গাছের মতো, ক্লোরোফিল না থাকলেও এদের খাদ্য গ্রহণের রীতি গাছের সঙ্গে অনেকটা মেলে, প্রাণীর মতো নার্ভ, ব্রেন বা পরিপাকতন্ত্র এদের নেই। প্রাচীন গ্রিকরা এর নাম দিয়েছিল জুফিতান; যার অর্থ আধা প্রাণী আধা গাছ। আড়াই শ বছর আগে এটাকে স্থান দেওয়া হলো প্রাণিজগতে কিছু প্রাণিজ বৈশিষ্ট্য দেখে। এই গাছ প্রাণীর মতো অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং দিনে গড়পড়তা দুই মিলিমিটার করে অগ্রসর হতে পারে। সি-স্পঞ্জ দিনে তার দেহের ২০ হাজার গুণ বেশি পানি শুষে নিতে পারে, যার ভেতর থেকে খাদ্যস্বরূপ সংগ্রহ করে নেয় প্ল্যাঙ্কটন, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি।

cNgS3qu.png


সাইসাল ফাইবার থেকে তৈরি সাইসাল স্ক্রাবার। সূত্র: মেডহার্ট

হাজার পাঁচেক প্রজাতির মধ্যে মাত্র ডজনখানেক স্পঞ্জ আমাদের ব্যবহারে আসে। সব সমুদ্রের তলদেশেই স্পঞ্জ পাওয়া যায়, এমনকি অন্ধকার গুহায়ও। নানা জাতের মধ্যে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সি-স্পঞ্জ আটলান্টিক স্পঞ্জের চেয়ে নরম ও উত্তম। বছর দশেকের মতো দীর্ঘজীবী স্পঞ্জ ১০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সমুদ্রের তলদেশে এই স্পঞ্জকে দেখতে মনোহর রঙিন কোরালের মতো লাগে। বাইরে কঠিন মোড়কের মধ্যে থাকে নরম স্পঞ্জ। এসব স্পঞ্জ সংগ্রহের জন্য বিশেষ এক শ্রেণির ডুবুরি আছেন, যাঁরা এমনভাবে কেটে নেন গোড়া থেকে, যাতে এটা আবার বেড়ে উঠে বিস্তৃত হতে পারে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top