What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

sA0L4qz.jpg


আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোলের (ইউআইসিসি) উদ্যোগে প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর এই বিষয়ের প্রতিপাদ্য 'আই অ্যাম, আই উইল বি' (আমি আছি এবং থাকব)। দিবসটি পৃথিবীর সব জনগোষ্ঠীকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে। মূল লক্ষ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও ক্যানসার সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ব্যক্তি ও সরকারগুলোকে উদ্বুদ্ধ করে লাখ লাখ মানুষের ক্যানসারজনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করা। এবারের স্লোগানের মাধ্যমে ক্যানসারের বিরুদ্ধে একটি গঠনমূলক সাহসী উদ্যোগ সৃষ্টি করবে।

ক্যানসার কী?

সাধারণভাবে ক্যানসার প্রাণঘাতী ও মারাত্মক জটিল রোগ, যা সঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসা না পেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু ডেকে আনে। বৈজ্ঞানিকভাবে বলা যায়, যখন শরীরের কোনো স্থানে অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বৃদ্ধি হয়ে চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হয়, তখন ক্যানসার রূপ ধারণ করে এবং রক্তনালি ও লাসিকানালির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে মানুষকে অকালমৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

চিকিৎসাপদ্ধতিগুলোর মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও অন্যান্য আধুনিক চিকিৎসার ফলে রোগ নিরাময় করা সম্ভব।

সুনির্দিষ্ট কোনো কারণে ক্যানসার হয় না। এটা সৃষ্টিতে একাধিক কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও প্রধানত বংশগত ও পরিবেশগত কারণকেই মূলত দায়ী করা হয়।

বংশগত

বংশগত কারণে সাধারণত যেসব ক্যানসার হয়, তার মধ্যে স্তন ক্যানসার, বৃহদন্ত্রের ক্যানসার, শিশুদের চোখের ক্যানসার, কিছু কিছু কলোরেক্টাল ক্যানসার ইত্যাদি।

পরিবেশগত

পরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

ক. ভৌত কারণ: যেমন এক্স-রের, গামা রে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ইত্যাদি।

খ. রাসায়নিক পদার্থ: যেমন ধূমপানের ধোঁয়ায় বিদ্যমান ক্ষতিকর পদার্থ (কারসিনোজেন), রঞ্জক পদার্থ, অসম্পূর্ণভাবে পোড়া আমিষ, শর্করা বা চর্বিজাতীয় খাদ্য ইত্যাদি।

গ. ভাইরাস: কিছু কিছু ভাইরাস ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী, যেমন: হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, এপেস্টেইন বার ভাইরাস ইত্যাদি। জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী করা হয় হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসকে। লিভার ক্যানসার হেপাটাইটিস বি ও সি দ্বারা হয়ে থাকে। আবার এপেস্টেইন বার ভাইরাস দ্বারা গলার ক্যানসার ও লসিকাগ্রন্থির ক্যানসার হয়।

ঘ. অন্যান্য: এ ছাড়া কিডনি বা পিত্তথলির পাথর থেকেও ক্যানসার হতে পারে। সার্ভিক্স বা বোনের ক্রনিক ইনফেকশন থেকে জরায়ু ও বোনের ক্যানসার হয়। রাসায়নিক বা কেমিক্যাল এজেন্ট, যেমন এনিলিন ডাইয়ে মূত্রথলির ক্যানসার হয়। খাদ্যে ব্যবহৃত ফরমালিন (পচনরোধক পদার্থ) স্টমাক বা পাকস্থলীর ক্যানসার সৃষ্টি করে। চুলের কলপের ব্যবহারে স্কিন ক্যানসার হতে পারে।

গঠন

কোটি কোটি কোষের সমন্বয়ে মানবদেহ গঠিত। এই কোষের কেন্দ্র হলো নিউক্লিয়াস, যার ভেতরে থাকে ক্রোমোজোম। জিন থাকে ক্রোমোজোমের মধ্যে এবং ডিএনএ থাকে জিনের মধ্যে। এই জিন সাধারণত বংশের ধারা রক্ষা করে, শরীরের বৃদ্ধির সামঞ্জস্য, গঠন, চুল, চোখের রং—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এই জিনের সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকারিতার জন্যই মানুষ ছোট থেকে বড় হয়। আবার একপর্যায়ে বৃদ্ধি হওয়াও থেমে যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী কোষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে যে জিনগুলো ভূমিকা পালন করে, তার মধ্যে একটি জিন প্রটোঅনকোজিন। এই প্রটোঅনকোজিন ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ, যেমন: ভাইরাস, রাসায়নিক পদার্থ (কার্সিনোজেন) ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অনকোজিনে রূপান্তরিত হলে সে কোষের বৃদ্ধি অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকে।
আবার অপ্রয়োজনীয় কোষ সৃষ্টিতে বাধাদানকারী আরেক ধরনের জিন আছে, যার নাম ক্যানসার সাপ্রেসর জিন। মূলত, এই সাপ্রেসর জিনের কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় হলেই ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

উপসর্গ

ক্যানসারের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই। আর পাঁচটা সাধারণ অসুখের মতোই জ্বর, দুর্বলতা, কাশি ও ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। যেমন:

  • অনেক দিন ধরে শরীরের কোনো অংশে চুপচাপ উপদ্রব হীনভাবে ছোট কোনো টিউমার বা চাকা হঠাৎ বড় হচ্ছে, ব্যথা হচ্ছে এমন মনে হলে সতর্ক হতে হবে এবং ক্যানসার কি না নিশ্চিত হতে হবে।
  • শরীরের ছোট একটি তিল হঠাৎ বড় হচ্ছে, গাঢ় কালো রং হচ্ছে, চুলকাচ্ছে কিংবা ব্লিডিং হচ্ছে—এমনটি মনে হলে সতর্ক হতে হবে।
  • খুসখুসে কাশি হচ্ছে, চার থেকে পাঁচ সপ্তাহের বেশি হয়ে যাচ্ছে, ভালো হচ্ছে না—চিকিৎসা নিন, সতর্ক হোন।
  • কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমে যাচ্ছে। ৪০ বছরের অধিক বয়সে এমনটি মনে হলে সতর্ক হবেন। পাকস্থলীর ক্যানসার এমনটা হতে পারে।
  • মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাচ্ছে, ব্যথা হচ্ছে, শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কিংবা মলত্যাগের অভ্যাসের হঠাৎ পরিবর্তন হয়েছে। এমনটি হলে সতর্ক হতে হবে। কেননা, এসব লক্ষণ রেক্টাম ক্যানসারের।
  • বয়সের কারণে নারীদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে, নতুন করে আবার ব্লিডিং হচ্ছে—এমনটি হলে জরায়ুর ক্যানসার হতে পারে।
  • ব্রেস্টে বা স্তনে চাকা, বিশেষ করে বয়স ৪০ বছর কিংবা তার ওপরে হলে সতর্ক হোন। স্তন ক্যানসারের লক্ষণ এগুলো।
  • হাড়ে ব্যথা হচ্ছে, ফুলে গেলে, হঠাৎ পড়ে গিয়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে, এমন হলে সতর্ক হোন।
  • পোড়া ঘা ভালো হওয়ার পর আবার হয়েছে, শুকাচ্ছে না, এগুলো স্কিন ক্যানসারের লক্ষণ।
ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্যও বটে

ক্যানসার একটি কঠিন রোগ। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা জানি না কেন এ রোগ হয়। আমরা যা জানি, তা হলো এমন কিছু ব্যাপার, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন:

  • ধূমপান, (সিগারেট, বিড়ি, হুঁকা) জর্দা, আপাতা, গুল, খইনি ইত্যাদির ব্যবহার
  • মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে ও অনেক বাচ্চা নেওয়া
  • শিশুদের বুকের দুধ কম দেওয়া
  • তৈলাক্ত খাবার, রংযুক্ত ফাস্ট ফুড, লাল মাংস ইত্যাদি খাওয়া
  • বিভিন্ন জীবাণু ও ভাইরাসজনিত রোগ, যা খাদ্য, পানীয় ও রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়।
ক্যানসারমুক্ত থাকতে চাইলে আসুন এসব থেকে দূরে থাকি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যা করতে হবে, তা হলো:
  • শাকসবজি, ফলমূল বেশি করে খান
  • ওজন সীমিত রাখুন
  • প্রতিদিন কিছু হাঁটুন ও হালকা ব্যায়াম করুন
  • পরিবেশগত ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
  • ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকুন
  • যেকোনো সাধারণ রোগের লক্ষণ দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান, যাতে রোগের শুরুতেই ক্যানসার নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, অনকোলোজি, ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top