What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঘর সাজাতে কাচে আঁকা ছবি (1 Viewer)

t4M1H35.jpg


নিজেকেই হোক আর নিজের প্রিয় গৃহকোণই হোক, একটু অন্য রকমভাবে সাজাতে আমরা সব সময়ই সচেষ্ট থাকি। ঘরের দেয়াল তো কত কিছু দিয়ে কত রকমভাবেই সাজানো যায়। কিন্তু হিজিবিজি-এলোপাতাড়ি একগাদা ছবি আর ওয়াল পিস দিয়ে দেয়াল ভিড় করে ফেললে তা আসলে মোটেই রুচিকর দেখায় না, তা সে ওয়াল হ্যাঙ্গিংগুলো যতই দামি আর বিদেশ থেকে আনা হোক।

I5839nu.jpg


গ্লাস পেইন্টিংয়ের জন্য আলোর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ

বসার ঘর, শোয়ার ঘর, এমনকি যেসব করিডর বা সিঁড়িঘরে পর্যাপ্ত আলো পড়ে, সে জায়গার দেয়ালগুলো অভিনব সব গ্লাস পেইন্টিং দিয়ে সাজানোর ধারণাটি এখন সারা বিশ্বে খুব জনপ্রিয়। গতানুগতিক প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও কাচের পটে আঁকা হাল আমলের ফ্যাশনেবল পপ আর্ট বা কয়েকটি মিনি পোর্ট্রেটের সমন্বয় করে যেকোনো দেয়ালকে দেওয়া যায় এক নতুন মাত্রা। ঘরের বাতি ও জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলো কোন দিকে কীভাবে পড়ে, তার সঙ্গে সংগতি রেখে গ্লাস পেইন্টিং নির্বাচন করলে ও সেমতো সঠিক স্থানে সাজালে ঘরে নয়নাভিরাম একটি আবহ তৈরি হয়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এই কাচে আঁকা ছবি সবার কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এর আছে অত্যন্ত প্রাচীন ইতিহাস।

হাজার বছরের পুরোনো এই শিল্পের বিকাশ ইউরোপীয় দেশগুলোতেই প্রথমে ঘটেছিল বলে জানা যায়। নবম শতকে জার্মানিতে উদ্ভাবিত এই গ্লাস পেইন্টিংয়ের কদর সতেরো শতকের দিকে একেবারে আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। তখন চার্চ, ক্যাথেড্রাল, চ্যাপেলসহ বিভিন্ন খ্রিষ্টধর্মীয় স্থাপনায় জানালার কাচে করা থাকত রঙিন আঁকিবুঁকি। সে কাচ চিত্রে বিভিন্ন বিমূর্ত শিল্পকলানির্ভর নকশার সঙ্গে সঙ্গে বাইবেলের গল্পের বিভিন্ন দৃশ্য চিত্রায়িত করা হতো জনসাধারণের কাছে ধর্মের বাণী পৌঁছে দিতে। বিভিন্ন রঙিন কাচের অংশ তাপ দিয়ে রাঙিয়ে বা ঝালাই করে পাশাপাশি সাজিয়ে এ কাজগুলো করা হতো। একে মূলত স্টেইন্ড গ্লাস আর্ট বলা হয়।

Wa82sQX.jpg


ষোলো শতকে এনামেল পেইন্ট আবিষ্কার হলে গ্লাস পেইন্টিং উৎকর্ষ লাভ করে

ষোলো শতকে যখন বিচিত্র রঙের এনামেল পেইন্ট আবিষ্কার করা হলো, তখন কাচের চিত্রশিল্পের উৎকর্ষ একেবারে শিখরে উঠে গেল। এরপর ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদি ইউরোপীয় দেশে গ্লাস পেইন্টিংয়ের বহুল প্রচলন ঘটে। ভ্যাটিকান সিটির বিভিন্ন প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনায় গ্লাস পেইন্টিংয়ের মোহময় সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছরই অনেক পর্যটক ভিড় করেন সেখানে। এ ছাড়া প্রকৃত তুলির কারুকাজে কাচের পটে আঁকার ধারণাটি কিন্তু চীন দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

প্রথম দিকে পাশ্চাত্য ধারার কাজ হলেও অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে রিভার্স গ্লাস পেইন্টিংয়ের কায়দায় আঁকা চীনা শিল্পীদের অপূর্ব সব প্রাকৃতিক দৃশ্য আর ইতিহাসের গল্পগাথা আঁকা কাচচিত্র সবার কাছে খুব সমাদৃত হয়ে উঠল। আমাদের উপমহাদেশেও কিন্তু এই চীনের সমসাময়িক সময়ে গ্লাস পেইন্টিংয়ের বেশ প্রচলন ঘটে। বহু প্রাচীন জমিদারবাড়ি ও রাজপ্রাসাদে জমিদার ও রাজরাজড়াদের কাচে আঁকা পোর্ট্রেট দেখা যায়। তবে ধারণা করা যায়, ঔপনিবেশিক ইউরোপীয়দের দ্বারাই এর প্রসার ঘটে আমাদের এ অঞ্চলে। বিভিন্ন স্থানীয় ফোক আর্টেরও কাচে আঁকা রূপ খুঁজে পাওয়া যায় ভারতের বিভিন্ন জায়গায়।

RlpH7Qc.jpg


আমাদের দেশে গ্লাস পেইন্টিংয়ের ধারণাটি বেশ নতুন

আমাদের দেশে গ্লাস পেইন্টিংয়ের ধারণাটি বেশ নতুন। এ দেশে ইউরোপীয় স্টেইন্ড গ্লাস টেকনিকে গ্লাস পেইন্টিংয়ের কারিগর খুব বেশি নেই। টাইলসের মতো বা বড় আকারে কাচে মেশিনে পেইন্ট করা কিছু ইন্টেরিয়র সামগ্রী স্বল্প পরিসরে আমদানি করা হয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদেশ থেকে আনা বিভিন্ন গ্লাস পেইনে পেইন্টিং করা থাকে আগের থেকেই। বিভিন্ন বিলাসবহুল বাড়ি বা স্থাপনায় জানালা বা ঘরের সিলিংয়ে ব্যবহার হয় এগুলো। তবে কাচের পটে অ্যাক্রিলিক পেইন্ট ব্যবহার করে আঁকা ছবি দিয়ে ঘর সাজানোর ধারণাটি এখন ক্রমেই আগ্রহ বাড়াচ্ছে আমাদের।

পেশাজীবী শিল্পীদের পাশাপাশি যেসব শখের আঁকিয়ে গ্লাস পেইন্টিং ডেকোরেশনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন এ দেশে, দিশা'স রোড ব্লকের স্বত্বাধিকারী সায়কা শাহরিন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে উঠে এসেছে গ্লাস পেইন্টিংয়ের নানা দিক। তিনি জানালেন, সাধারণত পাঁচ মিলিমিটার পুরুত্বের ভালো মানের কাচ মাপমতো কেটে তাতেই তিনি কারুকাজ করেন। পরে তা পছন্দমতো ফ্রেমে বাঁধিয়ে নেওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে কাচচিত্রের উপযোগী অ্যাক্রিলিক পেইন্টের অপ্রতুলতা একটি বড় বাধা এখানে।

yvTQUXX.jpg


দিশা'স রোড ব্লকের স্বত্বাধিকারী সায়কা শাহরিন

তারপরও অ্যাক্রিলিক পেইন্টের সঙ্গে গ্লিটার, জেলসহ বিভিন্ন মিশ্র উপাদানের সংযোগ ঘটিয়ে, ১০টি বেসিক রংকে মিলিয়েমিশিয়ে কাচের পটে তিনি এঁকে যান একের পর এক অপরূপ ছবি। এ কাজে তুলির পাশাপাশি শিল্পীদের ব্যবহৃত একধরনের ছুরির মতো অনুষঙ্গ খুবই কাজে লাগে। একেকটি পরিপূর্ণ কাচচিত্র সম্পন্ন করতে ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা লেগে যায়। গ্লাস পেইন্টিং করতে অত্যন্ত ধৈর্য প্রয়োজন। প্রতিটি ধাপের পর আবার বাতাসে শুকানোর জন্য সময় দিতে হয়। তাপ প্রয়োগ বা বেকিংয়ের মাধ্যমে গ্লাস পেইন্টিংকে ট্রিটমেন্ট করা স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। তাই আঁকা শেষে সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে তার ওপরে একধরনের পানিরোধী স্বচ্ছ স্প্রে দ্বারা একটি প্রতিরক্ষা আবরণ দেওয়া হয়।

এখন অনেক শিল্পী দেয়ালে ঝোলানোর ওয়াল পিসের পাশাপাশি ফুলদানি, ল্যাম্পশেড, মোমবাতির শেড, এমনকি শৌখিন পানপাত্রেও গ্লাস পেইন্টিং করছেন।

শখের আঁকিয়েরা এ দেশে অনেকেই এখন গ্লাস পেইন্টিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। আর আমরাও ঘর সাজাতে একটু অন্য রকম কিছুর সন্ধানে থাকি বলে ঘরে ঘরে কাচচিত্র জায়গা করে নিচ্ছে শৌখিন সাজসজ্জার উপকরণ হিসেবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের এই অনন্যসাধারণ শৈল্পিক গ্লাস পেইন্টগুলো খুবই সুলভে পাওয়া যায়। ছোট ছোট পপ আর্ট বা পোর্ট্রেটের কাচচিত্রগুলোর বিক্রয় মূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু। আর বড় আকৃতির ২৬ থেকে ৩০ বর্গইঞ্চির পেইন্টিংগুলো দিশা'স রোড ব্লকে ফরমাশ দিলে পাওয়া যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।

xwp8yZP.jpg


ঘরে ঘরে কাচচিত্র জায়গা করে নিচ্ছে শৌখিন সাজসজ্জার উপকরণ হিসেবে

তবে কাচচিত্রের শিল্পমূল্য ও শিল্পীর প্রচেষ্টাকে বাজারে কম দামে পাওয়া প্রিন্ট চিত্রের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। এখন অনেক শিল্পী দেয়ালে ঝোলানোর ওয়াল পিসের পাশাপাশি ফুলদানি, ল্যাম্পশেড, মোমবাতির শেড, এমনকি শৌখিন পানপাত্রেও গ্লাস পেইন্টিং করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন শিল্পীর করা গ্লাস পেইন্টিংয়ের অপূর্ব সব নমুনা দেখতে পাওয়া যায়।

cTW6njo.jpg


আমাদের দেশে গ্লাস পেইন্ট সুলভে পাওয়া যায়

কাচচিত্র সজ্জায় সঠিক আলোর ব্যবহারে সাধারণ একরঙা দেয়ালে আসে এক অন্য রকম মনোরম অনুভূতি। তাই বর্তমান সময়ে স্বপ্নের ঘর অন্য রকম করে সাজাতে গিয়ে আমাদের খাবার টেবিলের সংলগ্ন দেয়ালে বিভিন্ন ফলের আলাদা আলাদা কাচচিত্র রাখা যায় বা বসার ঘরের বড় দেয়ালটি চেরি ফুলের বাগানের গ্লাস পেইন্টিংয়ের গোলাপি আভায় সাজিয়ে নেওয়া যায় খুবই সুন্দরভাবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top