What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

এ সময়ে শ্বাসতন্ত্রের যত্ন (1 Viewer)

vKuzAPV.jpg


শীতের সময়ে ধুলাবালি বেড়ে গিয়ে আমাদের যাঁদের অ্যালার্জি বা অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাঁদের কষ্ট বেড়ে যায়। অনেকেরই সারা বছর ধরেই হাঁচি-কাশির সমস্যা থেকে যায়। যাঁদের এ সমস্যা, তাঁদের শীতের সময় একটু বাড়তি যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

অ্যালার্জি

2DCkSsb.jpg


ফুলের পলেন অ্যালার্জি বাড়াতে পারে

হাঁচি, কাশি, নাকে পানি, চোখে পানি, চুলকানো সমস্যা এদের বেশ কাহিল করে দেয়। ধুলাবালি, ডাস্ট মাইট, পলেন, ঠান্ডা বাতাস বা ধোঁয়া সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই বোঝেন না, যাঁদের ইমোশনাল প্রবলেম থাকে, তাদেরও এটি বেশ ঝামেলা করে। শরীরে চুলকানি বা একজিমাও হতে পারে।

শীতের দিনে সোয়েটার বা উলের পোশাক, শুষ্ক আবহাওয়া, গরম পানির গোসল—এসবই সমস্যাটিকে বাড়িয়ে তোলে।

C4oSGyz.jpg


উলের পোশাকও সমস্যা বাড়ায়

গ্রামের দিকে ফসলের পলেন, ফুলের পলেন, গাছের পলেন, ঘাসের পলেন অবশ্যই অ্যালার্জি বাড়িয়ে তোলে।

খুব সহজে আরাম পাওয়ার জন্য আরামদায়ক পরিষ্কার সুতির কাপড় পরা, তার ওপর সোয়েটার সমাধান হতে পারে। অবশ্যই গোসল করবেন অল্প গরম পানিতে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোসল সারবেন। তারপর ভেজলিন বা এই জাতীয় লোশন মেখে নিলে আরাম পাবেন। আর ওষুধ হিসেবে হিস্টাসিন নয়। হিস্টাসিন বেশি সময় কাজ করে না, সঙ্গে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে আসে। তবে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে এমন অ্যান্টিহিসটামিন খেতে হবে। স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রেও এ সময় প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।

n1EMU61.jpg


আরামদায়ক পরিষ্কার সুতির কাপড় পরা বাঞ্ছনীয়

যাঁদের যেসব খাবারে অ্যালার্জি আছে, সেসব খাবার বর্জন করতে হবে। গণহারে সব বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু যে খাবারে অ্যালার্জি, তা বাদ দিলেই হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষ করে ধুলা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই মাস্ক পরে নেবেন। পুরোনো কাপড়-চোপড় ঘাঁটাঘাঁটি করার সময়ও সতর্ক থাকবেন, কাপড়ের লিন্টে অনেকের সমস্যা হয়।

আর ঠান্ডা বাতাস, ধুলা, ধোঁয়া থেকে দূরে থাকার জন্যও মাস্কের বিকল্প নেই। আপনার উপসর্গ না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার মোড়ের চিকিৎসকই এ সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট। সিভিয়ার কেসে অ্যালার্জিস্ট, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ দেখাতে হতে পারে।

অ্যাজমা

3djHI8P.jpg


ধুলা ও ধোঁয়া থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা জরুরি

অনেকেরই এ সময় অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে গিয়ে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। অনেকেরই ভুল ধারণা আছে, অ্যাজমার ইনহেলার একবার শুরু করলে সেটা সারা জীবন ব্যবহার করতে হয়।

প্রথমত, এটি ভুল ধারণা। দ্বিতীয়ত, অ্যাজমা ক্রনিক কন্ডিশন। মানে রোগটিই এমন, যত্ন না নিলে অনেক দিন ভুগতে হবে। প্রতিবছর, এমনকি সারা জীবন ভুগতে হয়। আর তার চিকিৎসাই হচ্ছে ইনহেলার। বিভিন্ন ধরনের ইনহেলার আছে। অ্যাজমারও রকমফের আছে। আমি সাধারণ একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অ্যাজমা অ্যাটাক হতে পারে। যেকোনো ভাইরাল সর্দি-কাশিও অ্যাজমার সমস্যা সৃষ্টি করে দিতে পারে। তাই প্রথমেই অ্যালার্জির যত্ন নিন। সাধারণ সর্দি-কাশিও অবহেলা করবেন না। এই সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে অ্যাজমা, নিউমোনিয়া থেকে শুরু করে কমপ্লিকেশনে মৃত্যুও হতে পারে।

অনেকের দৌড়ঝাঁপ বা এক্সারসাইজ ইনডিউসড অ্যাজমা থাকে। তাদের অবশ্যই দৌড়াদৌড়ির আগে রেসকিউ ইনহেলার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।

যাঁদের অ্যাজমা আছে, তাঁরা অবশ্যই গরম পোশাক পরিধান করুন, ঠান্ডা বাতাস, সিগারেট, পারফিউম পরিহার করে চলুন। যাঁদের অলরেডি ইনহেলার আছে, তারা শ্বাসকষ্টে, বুকে চাপ বোধ হলে বা হুইজিং ( বাঁশির মতো শব্দ) হলে রেসকিউউ ইনহেলার শুরু করুন যদি জানেন, কীভাবে তার ব্যবহার করতে হয় তবেই।
অন্যথায় শিগগির পাশের ডাক্তার দেখিয়ে জেনে নিন আপনার কী প্রয়োজন। কী কী ওষুধের প্রয়োজন, কত দিন এবং কীভাবে কোন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কারণ, অ্যাজমার প্রকারভেদ এবং তার সিরিয়াসনেসের ওপর নির্ভর করে কী কী ওষুধ লাগবে।

GRhA7JS.jpg


অনেক সময় দুটো ভিন্ন ইনহেলার লাগে, স্টেরয়েড লাগে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ কমাতে, তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক ওষুধ লাগে। তাই যদি দেখেন সমস্যা কমছে না, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ইনহেলার নিয়ে বলার আরও একটি কারণ হচ্ছে, এটিই প্রধান চিকিৎসা অ্যাজমার। আর এটি ব্যবহার না করার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসের ভীষণ সমস্যা হয়ে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

তাই সঠিক চিকিৎসাতেও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে নিকটস্থ হাসপাতালে চলে যেতে বিন্দুমাত্র দেরি করবেন না। অক্সিজেন লাগতে পারে, মনিটরড চিকিৎসা লাগতে পারে। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে পৌঁছানোর আগেই পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুব্যবস্থা করুন। শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা আপনার হৃদযন্ত্র মানে হার্টের ওপরও চাপ প্রয়োগ করে। তাই সময়েই সাবধান হোন।

সিওপিডি

শ্বাসতন্ত্রের যে রোগটি নিয়ে না বললেই নয়, তা হচ্ছে সিওপিডি। সিগারেট যাঁরা খান, তাঁদের মোটামুটি প্রত্যেকেই এ রোগে ভুগবেন। কেউ অল্প বয়সে, কেউ বয়সকালে। আর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বাড়তেই থাকে। এঁদের মোটামুটি সারা বছরই চিকিৎসায় থাকতে হয়। তবে কখনো কখনো যখন শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসাব্যবস্থার পরিবর্তন হয় রোগের ওপর। তাই কোনোভাবেই অবহেলা করবেন না।

অনেকেরই সারাক্ষণ ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারও লাগে। তাই বয়সকালে ভীষণভাবে শ্বাসকষ্টে ভুগতে না চাইলে সিগারেট আজই ত্যাগ করুন।
সিগারেট ছাড়া সহজ নয় অবশ্যই। তবে অসম্ভবও নয়। এ ব্যাপারেও আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

pYOBvlU.jpg


অভিভাবকদের ধুমপানের কারণে সন্তান পরোক্ষ স্মোকিংয়ের শিকার হচ্ছে

সিগারেটের আরেক সমস্যা হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসার। শুধু যিনি সিগারেট খান তাঁরই নয়, তাঁর কারণে তাঁর পরিবার, সন্তান পরোক্ষ স্মোকিংয়ের শিকার হচ্ছে, আর তাঁর কারণে একই সমস্যায় ভুগতে পারে। তাই শুধু নিজের নয়, পরিবারের জন্য হলেও সিগারেটকে না বলুন।

সিগারেটের জন্য শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কারের সমস্যা হয়, শ্বাসতন্ত্রে যে ব্রাশ আছে তাকে সিলিয়া বলে, সিগারেট এদের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

সাইনাসের প্রদাহ

pzXwFvx.jpg


শ্বাসতন্ত্রের আরও যে রোগের কথা না বলতেই হয়, তা হচ্ছে সাইনাসের প্রদাহ বা সাইনোসাইটিস। বেশির ভাগ লোকই ভোগেন এতে। অ্যালার্জি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সবকিছুই সাইনাসের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি কোভিড রোগীদের ৯৯ শতাংশ এই প্রদাহে ভোগে।

এর চিকিৎসাও মাল্টিডিসিপ্লিনারি। অনেক ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক লাগে। চিকিৎসকের পরামর্শে অবশ্যই ওষুধ খাবেন। অনেকের ক্রনিক মানে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়, সে ক্ষেত্র নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ দেখাবেন অবশ্যই। অনেক ক্ষেত্রে সার্জারিও লাগে।

ব্রংকাইটিস

এটিও শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ। চিকিৎসা অনেকটাই অ্যাজমার মতো, সঙ্গে আনুষঙ্গিক চিকিৎসা আছে। যদি এরও যথাযথ চিকিৎসা না নেন, ভুগতে হতে পারে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস।

অ্যাজমা, সিওপিডি কন্ট্রোলে না থাকলে অবশ্যই শ্বাসতন্ত্র বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলবেন। অনেক সময়ই তাঁদের সঙ্গে ঘন ঘন দেখা করতে হতে পারে, সে ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা করবেন না।

যাঁদের এসব শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা আছে, শুধু তাঁরাই জানেন, বাতাসের মূল্য! যখন বাতাসের মধ্যে থেকেও শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে যায়, তার কষ্ট একজন আপাত সুস্থ মানুষ কখনোই বুঝতে পারবেন না। আর এটি শুধু শারীরিক কষ্টই নয়, তার পরিবারও এ ক্ষেত্রে ভোগে; কারণ এর ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি আর খরুচেও। তাই শ্বাসতন্ত্রের যথাযথ যত্ন নিন।

সিগারেট না বলুন

pUZml3m.jpg


সিগারেট পরিহার করা বাঞ্ছনীয়

কোভিডের কারণে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ আরও কঠিন হয়ে গেছে। সাইনোসাইটিস, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, সিওপিডি ফ্লেয়ারআপ হচ্ছে। নিউমোনিয়ার সঙ্গে শ্বাসতন্ত্রে রক্ত জমাট বেঁধে (যাকে ডাক্তারি ভাষায় পালমোনারি এমবোলিজম বলা হয়) শ্বাস নেওয়াটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই সতর্ক হোন! ভালো থাকুন। মাস্ক পরুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধ করুন।

লেখক: ফ্যামিলি মেডিসিন ফিজিশিয়ান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top