What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রঙিন বিটে সুস্বাস্থ্যের হাতছানি (1 Viewer)

C7NtwJY.jpg


আমাদের দেশে বহু বছরে ধরে সমস্ত সবজিবাজারে, এমনকি ঝাঁকা মাথায় ফেরিওয়ালার কাছেও বিট পাওয়া যায়। তারপরও এই বিট আমাদের কাছে মোটামুটি স্বল্প ব্যবহৃত আর অল্প পরিচিত হয়েই রয়ে গেল। একমাত্র বিশেষ দাওয়াতে বা বিয়েবাড়িতে মিক্সড সালাদের সঙ্গেই এ দেশে বিট খাওয়া হয়। অথচ বিশ্বব্যাপী সর্বত্র বিট একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি। কাঁচা, রান্না করে বা বেকিংয়ে ব্যবহার করে এই সুমিষ্ট সুস্বাদু সবজি বহু রকম উপাদেয় উপায়ে খাওয়া যায়। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দেখতে গেলে বিট বা বিট রুটের আছে অনন্যসাধারণ সব উপকারিতা।

LVnHBM1.jpg


স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দেখতে গেলে বিট বা বিট রুটের আছে অনন্যসাধারণ সব উপকারিতা

বিট রুটের পরিচয় ও ইতিহাস

বিট আসলে একধরনের মূলজাতীয় সবজি। অর্থাৎ বিটগাছের মূলই হচ্ছে এর প্রধান খাদ্যোপযোগী অংশ। সাধারণত, এই বিটের মূল গাঢ় বেগুনি-লাল বর্ণের হয়ে থাকে। বিটের চোখজুড়ানো লাল রং আসলে বিটালাইন বা এন্থোসায়ানিনযুক্ত রঞ্জক পদার্থেরই অবদান। কিন্তু পৃথিবীতে হলুদ, সাদা, এমনকি বহুরঙা বিটরুটও পাওয়া যায়। অসম্ভব রসাল এই প্রধানত বেগুনি-লাল বিটে জলীয় অংশ অনেক বেশি। তাই খোসা ছিলতে বা কাটতে গেলেই একেবারে ছলকে রক্তবর্ণ রস বেরিয়ে আসে।

বিট মিষ্টি স্বাদের হয়। সেই সঙ্গে মিষ্টি আলুর মতোই খুব অন্য রকম একটা মেটে ফ্লেভার পাওয়া যায় বিটে। বিট থেকে বিভিন্ন দেশে চিনিও উৎপাদিত হয়। এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদে, সেদ্ধ বা বেক করে, বিভিন্ন অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে স্যুপ, স্টু, স্টার ফ্রাই, সস বানিয়ে ইত্যাদি মজার মজার কায়দায় খাওয়া যায়। বিটের পাতাও শাকের মতো ভেজে খেতে খুবই উপাদেয়।

4lxcIdk.jpg


হলুদ বিট, ছবি: উইকিপিডিয়া

এই বিট রুটের আছে লম্বা ইতিহাস। জানা যায়, পশ্চিম আফ্রিকা ও এশিয়ার সাগরতীরের দেশগুলোয় বুনো বিট এমনিতেই জন্মাত। এর পাতাই মূলত খাওয়া হতো। এরপর রোমানরা বিটের মূলকে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ইতিহাসে আছে, ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধকালে যখন ফ্রান্সে আখের চিনি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা এল, তখন নেপোলিয়নের নির্দেশে বিট থেকে চিনি উৎপাদনের সূত্রপাত হয়েছিল। পরে আমেরিকাতেও এর প্রচলন ঘটে।

বিটের স্বাস্থ্যগুণ

বিটের আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী এবং আমাদের শরীরকে ডিটক্স করা বা বিশুদ্ধীকরণের পরীক্ষিত ক্ষমতা। তবে এই বিটালাইন পর্যাপ্ত পরিমাণে পেতে আমাদের বিট যতটা সম্ভব কম সময় ধরে রান্না করতে হবে। কাঁচা খেলে এর গুণাগুণ পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি।

বিটের গুণাগুণ বলে শেষ করা কঠিন। মূলত, এর অনন্য স্বাস্থ্যগুণের সঙ্গে এতে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস নামের অভিনব ধরনের পুষ্টি উপাদানগুলোর ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্যকর উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া এই ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসগুলো আমাদের দেহ-মনের বিকাশ, বৃদ্ধি আর সুস্থতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিট থেকে পাওয়া ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট বিটালাইন আমাদের জন্য অতি উপকারী। এর আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী এবং আমাদের শরীরকে ডিটক্স করা বা বিশুদ্ধীকরণের পরীক্ষিত ক্ষমতা। তবে এই বিটালাইন পর্যাপ্ত পরিমাণে পেতে আমাদের বিট যতটা সম্ভব কম সময় ধরে রান্না করতে হবে। কাঁচা খেলে এর গুণাগুণ পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। আর বিট রান্না করতে মোটেই এর পানি ফেলা যাবে না।

বিটের আরেকটি খুব ভালো গুণ হলো এতে ক্যালরি কম থাকে। অথচ এতে মানবদেহে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। বিটে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, ফোলেট, পটাশিয়াম, আয়রন ইত্যাদি। পানি ও আঁশের পরিমাণ যথেষ্ট হওয়ায় হজম ভালো রাখা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে বিট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিট খাওয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কাঁচা বিটের কার্যকারিতা বেশি পাওয়া গেছে। এতে থাকা নাইট্রেট লবণ রক্তনালিকে প্রসারিত করতে পারে বলেই এমন প্রভাব দেখা যায়। এ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসে। তবে সে ক্ষেত্রে নিয়মিত কাঁচা বিটের রস পান করে ভালো ফল পাওয়া যায়।

EDbLw97.jpg


বিট আমাদের প্রাণশক্তি ও কাজের উদ্যমকে বাড়িয়ে তোলে

বিট আমাদের প্রাণশক্তি ও কাজের উদ্যমকে বাড়িয়ে তোলে। দেহে অক্সিজেনের কার্যকরী ব্যবহারে বিটের ভূমিকা আছে বলে দৌড়বিদ ও অন্য খেলোয়াড়েরা নিয়মিত বিট খেয়ে থাকেন থাকেন। আবার এর বিটালাইন নামক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কিডনিসহ আরও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রদাহকে কমাতে পারে বলে অনেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী মনে করেন।

বিভিন্ন গবেষণায় গিঁটে বাত বা আর্থ্রাইটিসের ব্যথা উপশমে বিট জুসের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে। এক কাপ বিটরুটে প্রায় ৩.৪ গ্রাম আঁশ আছে। তাই বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের প্রদাহে নিয়মিত বিট খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। বিটের নাইট্রেট উপাদান মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিয়ে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন: ডিমেনশিয়া, স্মৃতিভ্রংশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে খুবই ভালো ফল দিতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণা চলছে।

বিটে থাকা প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ক্যানসার সৃষ্টিকারী কারসিনোজেনের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষকেরা প্রমাণ পেয়েছেন।

এ ছাড়া চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, টিউমার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে বিটের জুড়ি নেই। বিভিন্ন প্রমাণিত গবেষণায় উঠে এসেছে, বিটের বেটানিন নামক রঞ্জক পদার্থ টিউমার কোষগুলোকে উত্তেজিত করে তোলা এনজাইমগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। এই ইতিবাচক ফলাফল ক্যানসার গবেষণার ক্ষেত্রেও প্রচুর সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে। বিটে থাকা প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ক্যানসার সৃষ্টিকারী কারসিনোজেনের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষকেরা প্রমাণ পেয়েছেন।

আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় বিট

মাঝেমধ্যে না খেয়ে একেবারে নিয়মিত খেলেই বিটের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যায়। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিট অন্তর্ভুক্ত করা খুবই প্রয়োজন। এটি কাঁচা বা সামান্য ভাপিয়ে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায় এমনিতেই বা অন্য সবজির সঙ্গে। পানি ঝরানো টক দই, হমুজ (humus), মেয়োনেজ, গার্লিক সস, বার্গার বা শর্মার সসে বিট বেটে বা ব্লেন্ড করে মেশালে অদ্ভুত সুন্দর রং আসে। খেতেও সুস্বাদু হয়।

BkrZGoN.jpg


কাঁচা খেলে বিটের গুণাগুণ পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি

তাজা বিট সবজি কুরুনিতে মিহি করে কুরিয়ে চিপে ছেঁকে পানি মিশিয়ে তৈরি করা যায় মজাদার আর অসম্ভব রকমের পুষ্টিকর বিট জুস। জুসার দিয়েও এই জুস বানানো যায়। একটু বিটলবণ আর লেবু মিশিয়ে অথবা এমনিতেই এই জুস রোজ পান করলে পাওয়া যাবে বহু উপকারিতা। আর বিটের পাতা সামান্য রসুন-মরিচে হালকা ভেজে শাকের মতো খেলে তা থেকে পাওয়া যায় আরও সব ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা কিনা চোখের জন্য খুবই উপকারী।

আমাদের জন্য বিট খুব অপরিচিত কোনো সবজি নয়। এর অতুলনীয় স্বাদ, চোখজুড়ানো রং আর অনন্য সব স্বাস্থ্যগুণের কথা মাথায় রেখে আমাদের বেশি বেশি বিট খাওয়ার প্রচলন ঘটাতে হবে। আমাদের মাটি ও জলবায়ু বিট চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী হওয়ায় বিট চাষের প্রসার বাড়লে আমাদের কৃষিক্ষেত্রেও উন্নতি সাধন করা হবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top