What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সুপ্তির সন্ধানে (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
সুপ্তির সন্ধানে - by pinuram

HHu3Nkd.jpg


গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, সম্পূর্ণ ভাবেই লেখকের চিন্তাধারা এবং মস্তিস্ক প্রভুত। গল্পের চরিত্র নামকরন, চরিত্র চিত্রায়ন, ঘটনাবলি ইত্যাদি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। জীবিত অথবা মৃত কোন ব্যাক্তির সাথে কোন মিল নেই। কেউ যদি কোন নাম, চরিত্র, ঘটনার সাথে মিল খুঁজে পান সেটা নিতান্তই কাকতালীয়। এটা শুধু মাত্র একটা প্রেমের গল্প নয় এটা একটা ভালোবাসার গল্প, ভালো তে বাস করার গল্প। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য গল্প তাই বলে রগরগে যৌনতা একদম নেই এই গল্পে!

পর্ব এক (#1-#1)

মন দিলে আর মন নিলে,
আমি তো তোমার চিরদিনের হাসি কান্নার সাথী।
দু চোখে আমার অশ্রু তোমার, আমার যত সুখ সবই তো তোমার।
জীবনে তোমার হাসি টুকু রেখে, কান্না যা কিছু ছিল সবই তো নিলাম।
সেদিন থেকে, যেদিন তুমি, মন দিলে আর মন নিলে।।

মাথাটা একটু ব্যাথা ব্যথা করছিল বিকেল থেকে। ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অনেকক্ষণ টেবিলের ওপরে মাথা নিচু করে ছিলাম। বৃষ্টি হলেই আমার মন ভীষণ বিষাদে ভরে যায়। আমার বন্ধু অনির্বাণের ডাকে শেষ পর্যন্ত টেবিল থেকে মাথা উঠিয়ে ক্লাস ছেড়ে বেড়িয়ে এলাম। আকাশ গুড়গুড় চড়চড় করছে। যেকোন সময়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামবে। আর দেখতে দেখতে নেমেও গেল। আমি আর অনির্বাণ দৌড় লাগালাম বাস স্টান্ডের দিকে। বাস স্টান্ডে বেশ ভিড়। দৌড়ে গেলেও বৃষ্টিতে দুই জনেই একটু ভিজে গেলাম। শেডের তলায় লোকজন ভর্তি। সবাই বৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতে ঢুকে পড়েছে ছোট বাস স্টান্ডের শেডের নিচে। রাত বেশ হয়ে গেছে। আমি বাসের জন্য দাঁড়িয়ে নই, এই অনির্বাণের জন্য রোজদিন আমাকে দাঁড়াতে হয়। ও বাসে না ওঠা পর্যন্ত আমার মাথা খায়। বাস স্টান্ডের পাশেই আমার বাইক পার্ক করে রাখা। অনির্বাণ বাসে ওঠার পরেই আমি বাইকে করে বাড়ি ফিরি। যদিও আমার বাড়ি ফেরার বিশেষ তাড়া নেই। কেউ আমার জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করে বসে থাকে না। বাঙ্গুর এভিনিউ পোস্ট অফিসের পেছনে একটা ফ্লাট বাড়ির দোতলায় একা একটা বেশ বড় ফ্লাটে থাকি। বিগত পঁচিশ বসন্তে অনেক কিছুই দেখলাম এই পৃথিবীতে।

অনির্বাণ দুটো সিগারেট ধরিয়ে একটা আমার হাতে দিয়ে বলে, "কি রে অফিসে কিছু হয়েছে নাকি?"

সিগারেটে একটা টান মেরে উত্তর দিলাম, "হ্যাঁ শালা ওই হারামি এইচ আর। একটা সি এল নিয়েছিলাম তাই নিয়ে শালা, পয়সা কাটবে বলছে। বলছে এই মাসের ছুটি সব নাকি আগেই নিয়ে নিয়েছি।"

বছর তিনেক আগে, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজ থেকে ফিসিক্সে স্নাতক হয়ে পার্ক স্ট্রিটে একটা মোটামুটি কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে চাকরি করি। যা মাইনে পাই তাতে আমার বেশ চলে যায়। চাকরি বদল করব তাই কাঁকুড়গাছির একটা কম্পিউটার ইন্সটিটিউট থেকে কম্পিউটার শিখি। সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস, সোম বুধ শুক্র, সন্ধ্যে সাতটা থেকে আটটা। অফিসের পরেই আমাদের ব্যাচ। অনির্বাণের বাড়ি এক নম্বর গেট। আমার মতন বয়স, বাবার কাপড়ের দোকান সেখানেই বসে। এখন বিয়ে করেননি। কপাল আমার মতন ফুটো, প্রেম করার জন্য এখন কোন মেয়ে জোটেনি। বাস গুলো আসছে, ভীষণ ভিড়। ধিরে ধিরে অনেকে বাসে চেপে যাওয়ার পরে বাস স্টান্ড বেশ খালি হয়ে যায়। একটা কুকুর এক কোনায় কুঁকড়ে কন্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে রয়েছে। সিগারেট প্রায় অর্ধেক হয়ে এসেছে।

আমি অনির্বাণকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি রে বাঁড়া, বাড়ি যাবি না নাকি?"

অনির্বাণ আমার দিকে চোখ টিপে বলে, "দাঁড়া বাল, যাবো বাড়ি।" ভুরু নাচিয়ে কোন একদিকে ইশারা করে গলা নিচু করে বলে, "মাল দেখছি।"

ওর দৃষ্টি অনুসরন করে তাকালাম। অদুরে দাঁড়িয়ে এক ভীষণ সুন্দরী, উদ্ভিন্ন যৌবনা তন্বী রূপসী ললনা। পরনে ঘিয়ে রঙের চাপা সালোয়ার কামিজ, বুকের ওপরে ওড়না মেলে ধরা। বৃষ্টির ছাঁটে নিজেকে বিশেষ বাঁচাতে পারেনি। আমাদের এই কম্পিউটার ব্যাচের সব থেকে সুন্দরী মেয়ে, অনুস্কা ব্যানারজি। দেখা হয় ক্লাসে তবে বিশেষ কথা হয়নি কোনদিন ওর সাথে। জানি না কোথায় থাকে, জানি না কি পড়ে, শুধু জানি নামটা। ব্যাচে আরো মেয়ে আছে কিন্তু রূপসী অনুস্কা অনন্যা। অন্যদের থেকে ভীষণ আলাদা। বিশেষ কথা বলে না কারুর সাথে। ওর পেছনে সবাই ওকে ভীষণ নাক উঁচু বলে। তাই আমিও কোনদিন আগ বাড়িয়ে কথা বলিনি ওর সাথে। যখনি ক্লাসে আসে, রোজ দিন ভিন্ন ভিন্ন পোশাক পরে আসে আর প্রত্যেকটাই বেশ দামী বলেই মনে হয়। কোনদিন সালোয়ার কামিজ, কোনদিন স্কারট ব্লাউজ, কোনদিন ফ্রক। ফ্রক আর স্কারট কোনদিন ওর হাঁটুর ওপরে থাকত না। এক নয় হাঁটু পর্যন্ত না হলে তার নিচে পর্যন্ত লম্বা হত ওর স্কারট আর ফ্রক গুলো। অনুস্কা বসত একদম সামনের চেয়ারে আর আমি আর অনির্বাণ বেশির ভাগ সময়ে পেছনের দিকেই বসতাম। ওইভাবে অনুস্কাকে "মাল" বলে সম্বোধন করাতে আমার একটু রাগ হল। আশেপাশের লোকজন যেন চোখ দিয়েই অনুস্কাকে খুবলে খাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে, দেখেও বেশ রাগ হল। অস্বস্তি ভাব আয়ত্তে রাখার জন্য সিগারেটে বেশ কয়েকটা বড় বড় টান দিলাম।

সুন্দরীদের থেকে একটু নিজেকে বাঁচিয়েই চলি বরাবর। দেখতে শুনতে বিশেষ ভালো নই, গায়ের রঙ শ্যাম বর্ণ, নাকটা আমার একটু ভোঁতা বললেও খারাপ ভাবি না। চোখে চশমা। গালে তিন দিনের না কাটা খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ভর্তি। মাথার চুল উস্কস্খুস্ক। নাকের নিচে অসমান গোঁফ। তবে আমি বেশ লম্বা চওড়া।

আমার সাথে চোখা চুখি হতেই কয়েক পা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে থেমে গিয়ে ভদ্রতার খাতিরে একটু হাসি দিল। চোখ মুখ দেখে বোঝা যায় যে ওর ওইভাবে একা একা দাঁড়াতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। ওর আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দেখেই অনির্বাণ হাহা করে উঠল আমার কাঁধ চেপে।

আমি ওকে থামিয়ে বললাম, "যা শালা তুই বাড়ি যা।"

আমার কানে কানে বলল, "কেন বাল, তুই একা একা এখানে ঝারি মারবি নাকি?"

বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে। আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, "না রে, এবারে বাড়ি যাবো।"

অনির্বাণের বাস চলে আসাতে ও বাসে উঠে গেল। আমিও আমার বাইকে উঠতে যাবো তখন দেখি অনুস্কা আমার দিকেই এগিয়ে এসেছে। আমার ব্যাগ থেকে একটা শুকনো কাপড় বার করে বাইকের সিট মুছতে মুছতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কি ব্যাপার। তাকিয়ে দেখলাম, লজ্জা ঢাকতে বুকের কাছে ব্যাগ চেপে ধরেছে। অনুস্কার অবস্থা দেখে বেশ খারাপ লাগলেও আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাইনি, কার মনে কি আছে, কে কি ভাবে নেবে ভেবেই চুপ করে ছিলাম। দেখা রোজদিন হলেও সেদিন ওর রূপ প্রথম লক্ষ্য করলাম। পিঠের দিকটা অনেকটাই ভিজে গেছে। চাপা কামিজ ভিজে ত্বকের সাথে লেপটে গেছে। আদিম কাঁচের বালির ঘড়ির মতন দেহবল্লরির আকার। তীব্র আকর্ষণীয় নধর দেহপল্লবের গিরিখাদ ভাঁজ সুউচ্চ শৃঙ্গ উপত্যকা অতি সুন্দর ভাবেই পরিস্ফুটিত আমার চোখের সামনে। মাথার বাম দিক ভিজে গেছে। ঘন কালো লম্বা চুলের অনেকটাই ভিজে গেছে। পিঠের ওপরে বেনুনিটা যেন কালো ময়াল সাপের মতন। ভুরু জোড়া চাবুক, পদ্ম কুড়ির মতন নয়ন জোড়া, চোখের পাতা গুলো বেশ বড় বড়। কয়েক গোছা ভেজা চুল ওর বাম গালের ওপরে লেপটে গিয়ে ওর নরম গোলাপি গালের ওপরে আদর করছে। নাকের ডগায় এক ফোঁটা বৃষ্টির জল। আধ আলো আঁধারে হীরের টুকরোর মতন জ্বলজ্বল করছে। ফর্সা মরালী গর্দানে চোখ পড়তেই বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। গলায় পাতলা একটা সোনার হার জ্বলজ্বল করছে। ফর্সা ত্বকের সাথে বেশ মিলিয়েছে সোনার হার। কাজল কালো চোখের ভাষায় একটা কাতর অনুরোধ।

আমি বাইকে উঠতে যাবো। আমার দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে আমাকে বলল, "প্লিজ, একটু দাঁড়িয়ে যাবে?"

গলাটা শুনে মনে হল প্রভাতী বাঁশির সুর। বাইকে উঠতে গিয়েও থেমে গেলাম। ছোট উত্তর দিলাম, "আচ্ছা ঠিক আছে।" সেই প্রথমবার সামনা সামনি কথা।

কয়েকটা লোক দেখলাম আমাদের দিকে, বিশেষ করে অনুস্কার দিকে জঘন্য লিপ্সা মাখা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে। মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেল ওদের চোখের নজর দেখে। লোকটার চোখের ওপরে কটমট করে চোখ রাখতেই লোকটা অন্যদিকে নজর সরিয়ে নিল। হয়ত সেটা আন্দাজ করতে পেরেছিল অনুস্কা, তাই অল্প মাথা নুইয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানালো। বুঝতে পারলাম, বৃষ্টির রাতে একা একা এত সুন্দরী মেয়ে ফাঁকা বাস স্টান্ডে নিশ্চয় নিজেকে ভীষণ অসহায় ভাবছে। কি আছে, না হয় আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করা যাবে। আমার অদুরেই দাঁড়িয়ে হোক অনুস্কার একাকীত্ব কাটবে অন্তত। দ্বিতীয় সিগারেট বার করতে যাবো, দেখি অনুস্কা নাকে হাত দিল। টিয়া পাখির মতন টিকালো নাক। নাকে হাত দেওয়ার সময়ে লক্ষ্য করলাম, ডান দিকে ঠোঁটের ওপরে একটা ছোট তিল আছে ওর। ওর নাক ছোঁয়া দেখে হেসে ফেললাম আমি। সিগারেট আবার প্যাকেটে ঢুকিয়ে দিলাম।

অনুস্কা মিহি গলায় আমাকে বলল, "এই তো একটা খেলে এখুনি আবার?"

মাথা নাড়ালাম, "না এই দেখো আর নেই।" বলে দুই হাত ওর দিকে দেখালাম।

বৃষ্টি থেমে গেছে, আমি আর অনুস্কা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি বাস স্টান্ডে। লোকজন অনেক কমে এসেছে। অনেক বাস এলো অনেক বাস চলে গেলো। ভেবেই পেলাম না কোন বাসে উঠতে চায়। জিজ্ঞেস করব কি করব না সেটা নিয়েই দ্বিধায় পরে গেলাম। জিজ্ঞেস করলে হয়ত ভাববে, একা পেয়ে হয়ত গায়ে পরে আলাপ করতে যাচ্ছি।

শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, "তুমি চাইলে আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে ড্রপ করতে পারি।"

মৃদু হেসে না সূচক ভাবে মাথা নাড়ায় অনুস্কা, "না না অত কষ্ট করতে হবে না।" মুচকি হেসে বলে, "আমাকে নিতে আসছে।"

হা পোড়া কপাল, সারথি ছিল তাও আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। যাক তাই সই। অন্তত এই সুযোগে এই সুন্দরীর সান্নিধ্য একটু পাওয়া যাবে।

আমি অনুস্কাকে জিজ্ঞেস করলাম, "এত রাতের ব্যাচ কেন নিয়েছ?"

অনুস্কা উত্তর দেয়, "কলেজ থাকে। তারপরেই আসি।" একটু চুপ করে থাকার পরে, ডান হাত দিয়ে ডান কানের ওপর থেকে চুলের গোছা সরিয়ে ফর্সা কানের লতি আমার চোখের সামনে উন্মুক্ত করে আমাকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার দেরি হচ্ছে না তো?" ফর্সা কানের লতিতে ছোট একটা হলদে রঙের দুল।

দেরি তো হচ্ছে বটে। বাড়ি গিয়ে প্রেসার কুকারেই ডালে চালে বসাতে হবে। তাও ভদ্রতার হাসি দিয়ে বললাম, "না না ঠিক আছে। তোমার সারথি না আসা পর্যন্ত আমি দাঁড়াচ্ছি।"

অনুস্কা আমাকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কোথায় থাকো?"

উত্তর দিলাম, "বাঙ্গুরে।"

অনুস্কা একটু আশ্চর্য হয়েই বলল, "ওহ তাই নাকি? আমার বাড়ি নাগেরবাজার, কাজিপাড়া।"

আমি যেন একটু সাহস পেয়ে গেলাম, "একদম বাড়ির কাছে তো। চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।"

হাঁহাঁ করে উঠল অনুস্কা, "না না, থাক তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।"

মনে মনে ভাবলাম, হ্যাঁ, তোমার সারথি, তোমার বয়ফ্রেন্ড আসছে আমার সাথে কেন যাবে।

বেশ কিছু পরে আমাকে জিজ্ঞেস করল অনুস্কা, "তুমি কেন এত দেরির ব্যাচ নিলে?"

আমি উত্তর দিলাম, "অফিস থাকে তাই।"

চোখ বড় বড় হয়ে গেল অনুস্কার, "আচ্ছা তুমি চাকরি কর?"

আমি হেসে বললাম, "কেন বিশ্বাস হচ্ছে না নাকি? আমি কি চাকরি করতে পারি না।"

লজ্জায় পড়ে গেল একটু অনুস্কা, "না না সেটা নয়।" কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, "তাহলে চাকরির জন্য তুমি কম্পিউটার শিখছ।"

আমি মাথা দোলালাম, "হ্যাঁ। নিজেকে একটু এনহ্যান্স না করলে আর চলছে না।" মাথা চুলকে বললাম, "এই চাকরিতে একটু সমস্যা হচ্ছে তাই ভাবছি চেঞ্জ করব।"

মাথা দোলায় অনুস্কা, "ওহ আচ্ছা। তোমার অফিস কোথায়?"

আমি উত্তর দিলাম, "পার্ক স্ট্রিটে একটা কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে আছি।"

আবার মৃদু মাথা দোলায় অনুস্কা, "ওহ আচ্ছা।"

আবার আমরা দুইজনে চুপ। কথা যেন শেষ হয়ে গেছে। কিছু পড়ে নিজে থেকেই বলল আমাকে, "আমি বেথুনে, সেকেন্ড ইয়ার। ইংলিশ অনার্স।"

বেশ কিছু পরে একটা বাইকে করে একটা ছেলে এলো। হেলমেট পরে থাকায় ছেলেটার চেহারা দেখতে পেলাম না।

অনুস্কা বাইকটা দেখে আমার দিকে হাত নাড়িয়ে মৃদু হেসে বলল, "থ্যাঙ্কস বুধাদিত্য।"

বাইকে উঠেছে দেখে আমিও সিগারেট প্যাকেট থেকে একটা সিগেরট বার করলাম। আমিও ভদ্রতার খাতিরে একটু হাত নারালাম ওর দিকে। অনুস্কা আমার দিকে হাত নাড়িয়ে বাইকের পেছনে উঠে বসে পড়ল। উঠে বসেই ছেলেটার পিঠে চটাস চটাস করে কয়েকটা চাঁটি মেরে দিল। দূরে ছিল তাই ওদের কথা আমি আর শুনতে পারলাম না। বাইক ছেড়ে দিতে আরো একবার আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল অনুস্কা। আমি সিগারেট শেষ করে বাইকে উঠে বাড়ির দিকে যাত্রা করলাম। ওদের বাইকের পেছনে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না আমার। তবে সারাটা রাস্তা কানের মধ্যে বারেবারে প্রতিধ্বনিত হয় একটা মিষ্টি আওয়াজ, "থ্যাঙ্কস বুধাদিত্য।"

ভিআইপি রোড থেকে বাঙ্গুর এভিনিউতে ঢুকতে যাবো, হটাত করেই মনে পড়ল, হয়ত এই রাস্তা দিয়েই গিয়ে যশর রোড ধরেছে। মনে মনে হেসে ফেললাম সেই কথা ভেবে। বাড়ির দরজা খুলতে যাবো, শুনতে পেলাম আমার ফোন বাজছে। দরজায় তালা খুলে ফোন উঠালাম। ওইপাশে থেকে ভেসে আসে এক মিষ্টি সুর, যার কন্ঠস্বর না শুনলে আজও রাতে ঘুম আসে না আমার। আমার দিদা।

দিম্মা স্নেহের বকুনি দিল আমাকে, "এত দেরি করলি কেন? দুই বার ফোন করলাম।"

আশি বছর হতে চলল, মাথার চুল সব সাদা হয়ে গেছে, একটু ঝুঁকে চলে তবে আজও আমার কাছে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী মহিলা। মা অনেক ছোট বেলায় ইহলোক ছেড়ে, আমায় ছেড়ে চলে গেছেন। বাবার কথা মনে পরে না আর, মনেও করতে চাই না। মধ্যমগ্রামে আমার মামা বাড়ি, সেখানেই মানুষ হয়েছি। ছোট বেলা থেকে হস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করেছি, এমন কি কলেজ ও হস্টেলে থেকেই করতে হয়েছে। ছুটিতে মামার বাড়িতেই যেতাম। মা গত হওয়ার পরে সেটাই ছিল আমার বাড়ি। মা মরা ছেলেকে আমার মামিমা, প্রভাতী দেবী নিজের ছেলের সাথে আমাকেও কাছে টেনে নিয়েছিলেন। মায়ের ভাগের টাকা দিয়েই দিম্মা আর মামা বাঙ্গুরে আমার জন্য এই ফ্লাট কিনে দিয়েছিলেন। মামিমা ছাড়তে চায়নি প্রথমে তবে চাকরি পাওয়ার পরে বাড়ি ফিরতে মাঝে মাঝে অনেক রাত হয়ে যেত। পার্ক স্ট্রিট থেকে মধ্যমগ্রাম অনেক দুর। দিম্মা মামা খেয়ে নিলেও মামিমা আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকতেন দেখে আমার খুব খারাপ লাগত। তারপরে একদিন আমি মামাকে বললাম যে আমি কোলকাতার দিকে একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকতে চাই। সেই নিয়ে বেশ কয়েকদিন বাড়িতে বেশ কান্নাকাটি শোরগোল হল। আসলে আমার মামাতো দাদা, প্রবালের বিয়ে হওয়ার পরে মামা মামিও একটু একা হয়ে গেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে বাঙ্গুরে মামার এক বন্ধু তার ফ্লাট বিক্রি করার কথা বলেছিলেন মামাকে। তালধারিয়ার দিকে বেশ কয়েক বিঘা ধানা জমি ছিল, মায়ের ভাগের জমি বিক্রি করে দিয়ে এই ফ্লাট কেনা হল তখন।

আমিও চেয়ারে বসে জুতো খুলতে খুলতে কানের নিচে রিসিভার চেপে উত্তর দিলাম, "আরে বৃষ্টি পড়ছিল তো তাই দেরি হল।"

দিম্মা আমাকে বলল, "শনিবার পারলে বাড়ি আসিস। প্রবাল আসবে।"

আমিও মুচকি হেসে দিম্মাকে বললাম, "তোতাপাখি আসছে নাকি?"

প্রবালদা আমার মামাতো দাদা। আমার থেকে তিন বছরের বড়। দুর্গাপুর আরই কলেজ থেকে ইলেক্ট্রিকাল নিয়ে পাস করে ডিভিসিতে চাকরি করে। দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে প্রবালদার। বেশ মিষ্টি সুন্দরী বউদি, সুরঞ্জনা। বিয়ের পরে দুর্গাপুরেই একটা বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষিকার চাকরি করে। ভীষণ গল্প করতে আর কথা বলতে ভালোবাসে। আদর করে আমি বউদিকে তোতাপাখি বলে ডাকতাম। আর বউদিও আমাকে খেপানর জন্য গেছো বাঁদর বলে ডাকত। গেছো বাঁদর নামটা বেশ বড় তাই ছোট করে গেছো বলে ডাকত। দিম্মা, মামিমা প্রভাতী দেবী, ছাড়া এই তোতাপাখির সাথেই যা একটু গল্প করি, তা ছাড়া আমার জীবনে আর কোন মেয়ের আগমন ঘটেনি।

দিম্মাও হেসে ফেলল, "শনিবার আসবে ওরা।"

আরও কিছুক্ষন দিম্মার সাথে গল্প করে ফোন রেখে দিলাম। বাড়িটা আর আজকাল খাঁখাঁ করে না। একাকীত্ব সয়ে গেছে। জামা কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে প্রেসার কুকারেই ডালে চালে বসিয়ে দিলাম। রাত অনেক হয়েছে। টিভিতে রাতের খবর শুনতে শুনতে খাওয়া সারলাম। টিভিটা বেশ পুরানো, তবে আমার চলে যায়। সকালে কাজের মেয়েটা এসে ঘর ঝাড়ু মোছা করে গেছে। রান্নার জন্য একটা লোক রেখেছিলাম, কিন্তু কয়েক মাস সেই রান্না খেয়ে আমার আর পোষাল না তাই ছাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপরে নিজেই হাত পুড়িয়ে যা পারি তাই রান্না করি। আর মাঝে মাঝে ছুটি পেলে মামাবাড়িতে গেলে দিম্মা বেশ ভালো খাওয়ায়। প্রবালদার যখন বিয়ে হয়নি, তখন আমার বাড়িতে প্রবালদা আর আমি অনেকবার বসে মদ গিলেছি। তাছাড়া মাঝে মাঝে, কলেজের বন্ধুরা আসে বাড়িতে তখন একটু আধটু মদ খাওয়া হয়। মদের আসর ছাড়া বাড়িতে আর কেউ আসে না। কারণ আমার বাড়ি ফাঁকা, কেউ নেই মাথার ওপরে যে আমাদের শাসন করবে। তবে আমার বেশি মদ পছন্দ হত না তাই একা একা কোনদিন মদ খেতাম না। ওই কালে ভদ্রে বন্ধুরা এলেই তবেই মদের আসর বসত।

যথারীতি দুই দিন পরে কম্পিউটার ক্লাসে অনির্বাণের সাথে দেখা। সারাটা ক্লাসে অনির্বাণ আমার মাথা খেল, এই বল না কি হল। কথা হল ওর সাথে? কোথায় থাকে? কি করে? হাজার প্রশ্ন। আমি হেসে ওকে বললাম, ভাই ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। অহহহ, করে ঠোঁট উলটে একটু ভাঙা হাসি দিয়ে চুপ করে গেছিল। যথারীতি অন্য সব দিনের মতন বাসস্টান্ডে দাঁড়িয়ে অনির্বাণের সাথে একটা সিগারেট খেতাম তারপরে বাইকে চেপে বাড়ি। এই ভাবেই দেখা হল বেশ কয়েক সপ্তাহ। বাস স্টান্ডে অনুস্কার সাথে দেখা হত। চোখে চোখে একটু কথা হত আমার সাথে, ভালো আছো? মাথা দুলিয়ে উত্তর হত, হ্যাঁ। আমাদের সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই আমার দিকে অল্প হাত নাড়িয়ে সেই বাইকের পেছনে উঠে চলে যেত। একদিন অনির্বাণ আশাহত মর্মাহত হয়ে আমাকে বলল, যাহ্‌ শালা সব সুন্দরী গুলো এক এক করে হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top