What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নিছক ফ্লু না করোনা (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by bal6al to join our community. Please click here to register.
XhDdJOo.jpg


শীতে প্রতিবছর ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি ও জ্বর হয়। মৌসুমি জ্বর, কাশি বা ফ্লু এই সময়ের খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তবে চলতি বছর করোনার আতঙ্ক ঘিরে রেখেছে সবাইকে। জ্বর, কাশি ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে এখন দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি। তাহলে এখন এমন উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন? কী করে বুঝবেন এটি সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লু, নাকি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ?

ফ্লু ও করোনায় মিল যেসব উপসর্গে

  • দুটিই ভাইরাসজনিত রোগ। সংক্রমণ ছড়ায় পরস্পরের সংস্পর্শে। একজনের শরীর থেকে সর্দি ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম দুটোই।
  • সময়মতো সচেতন না হলে বা বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়ার দিকে বাঁক নিতে পারে দুটিই। বিশেষ করে যাঁরা বয়োবৃদ্ধ ও যাঁদের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা কম, তাঁদের জন্য ফ্লু বা করোনা দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ।
  • ফ্লু ও করোনা দুটিই কিছু সাধারণ সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। মুখে মাস্ক পরা, হাঁচি–কাশির আদবকেতা মেনে চলা, বারবার হাত ধোয়া ও অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে দুটিই প্রতিহত করা সম্ভব।

ফ্লু ও করোনার অমিল

  • ফ্লু ও করোনা দুটিই ভাইরাসজনিত অসুখ হলেও দুই রোগের ভাইরাস সমগোত্রীয় নয়। ফ্লু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণে হয়, আর করোনা হয় করোনা গ্রুপের ভাইরাসের কারণে। আর ফ্লুর তুলনায় বেশি সংখ্যক মানুষের তীব্র জটিলতা বা জীবনসংশয় দেখা দিতে পারে করোনার কারণে।
  • করোনাভাইরাস ছড়ায় দ্রুত, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের তুলনায়। ফ্লুর বেলায় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২-৩ দিনের মধ্যে অসুখ দেখা দেয়। করোনাভাইরাসের বেলায় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। আবার করোনার একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এতে আক্রান্তের একটা বড় অংশই একেবারে উপসর্গহীন থাকতে পারে। বিশেষ করে অল্পবয়স্ক শিশু–কিশোর বা তরুণদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হলেও তা তেমন লক্ষণ প্রকাশ না করেও থাকতে পারে। তবে এরা লক্ষণহীন হলেও সংক্রমণ বিস্তারে ভূমিকা রাখে।
  • ফ্লুর ক্ষেত্রে জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যেতে পারে, ওষুধের কাজ শুরু হলে তা নামতেও শুরু করে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে জ্বর প্রবল হলেও নামতে চায় না সহজে। ওষুধও কাজ করে না। আবার কারও কারও জ্বরই থাকে না।
  • ফ্লু বোঝার জন্য কোনো আলাদা করে পরীক্ষার দরকার পড়ে না। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত করতে পলিমারেস চেইন রি–অ্যাকশন বা পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।
  • ফ্লুর জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক অনেক আগে থেকেই রয়েছে। করোনাভাইরাস রোধে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক সম্প্রতি উদ্ভাবন হয়েছে, তবে তা এখনো আমাদের দেশে দেওয়া শুরু হয়নি।
  • ফ্লু–জনিত নিউমোনিয়া শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য জটিল পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। কিন্তু কোভিড নিউমোনিয়া সাধারণত শিশুদের জন্য তেমন মারাত্মক আকার ধারণ করে না, যদি না সেই শিশু আগে থেকেই অসুস্থ রোগাক্রান্ত বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
  • সাধারণ ফ্লুতে প্যারাসিটামল, বিশ্রাম আর পুষ্টিকর খাবার ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে করোনায় আক্রান্ত হলে অক্সিজেন থেরাপি, এন্টগুয়ালেন্টসহ নানা ধরনের পর্যায় বুঝে চিকিৎসার দরকার আছে।

কোন কোন উপসর্গে সতর্ক হবেন

জ্বর: কোভিড হলে প্রথমে গায়ে জ্বর বা মৃদু জ্বর ৯৯-১০১ ডিগ্রি থাকে। এরপর সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে, প্রবল এই জ্বর নামতে চায় না সহজে।
কাশি: অনবরত শুকনা কাশি, কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম করোনার সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা গেছে। ফ্লুর মতো হাঁচি, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া ততটা দেখা যায় না এতে।
শ্বাসকষ্ট: করোনার সংক্রমণের এক মারাত্মক উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। করোনাভাইরাস শরীরে ঢোকার পর বংশবিস্তার করতে করতে যখন ফুসফুসে পৌঁছায়, তখন ফুসফুসের থলিতে ছিদ্র হয়ে তা তরলে পূর্ণ হয় ও নিউমোনিয়ার সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। লক্ষণ শুরুর ৮ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। আবার কারও শ্বাসকষ্ট তেমন তীব্র অনুভূত না হলেও রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা কমতে থাকে। একে হ্যাপি হাইপক্সিয়া বলে। মানে রোগী নিজে না বুঝলেও তাঁর শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়।
স্বাদহীনতা: কোভিডের একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে দেখা দিয়েছে স্বাদহীনতা বা খাবারের স্বাদ–গন্ধ চলে যাওয়া। অনেকের কেবল এই একটি উপসর্গ থাকে।

কী করবেন

যদি সর্দি-কাশি ও জ্বর দেখা দেয়, আপনার করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস বা ঝুঁকি না থাকে এবং আপনি যদি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় না থাকেন (ফুসফুস, হার্ট, কিডনি, লিভারের অসুখ বা কোনো অসুখ, ওষুধের কারণে শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে না যায়), তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বিশ্রাম নিন। তবে কোভিড আছে কি নেই, পরীক্ষায় তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকুন। অর্থাৎ, বাড়ি থেকে বের হবেন না। বাড়ির অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। পুষ্টিকর হালকা খাবার খাবেন। হালকা গরম পানি পান করবেন পর্যাপ্ত। দরকার হলে জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খাবেন। সর্দি-হাঁচি-কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাবেন। হাঁচি-কাশির সময় পরিষ্কার রুমাল বা মাস্ক ব্যবহার করবেন। শিশু, বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বাদের থেকে দূরে থাকবেন। আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা ভালো থাকলে কিংবা বড় কোনো রোগবালাই না থাকলে ফ্লু হোক বা মৃদু কোভিড, এর মাধ্যমেই ভাইরাসকে কাবু করা যাবে।
সাধারণ ফ্লু ভাইরাস যদি ১০০ জনকে সংক্রামিত করে, তার মধ্যে ১৫-২০ জনের অবস্থা জটিল হয়। বিপদ হয় দু-এক জনের। বাকি ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষের সাধারণ উপসর্গ হয় আর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা নিজের নিয়মেই কমে যায়। তাই উদ্বেগের কিছু নেই।
কিন্তু কাশি-জ্বর বা করোনাভাইরাসের অন্যান্য উপসর্গ থাকলে, করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার বা জনসমাগমে সম্প্রতি গিয়ে থাকলে এবং আপনি যদি ঝুঁকিপূর্ণদের তালিকায় পড়েন, তাহলে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করান। রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করা যেতে পারে। তারপর যদি দেখা যায় উপসর্গ কমার বদলে বাড়ছে, জ্বর বাড়ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, রক্তচাপ কমে মাথা ঘুরছে, রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে বা প্রচণ্ড রকম দুর্বল লাগছে যে বাথরুমেও যেতে পারছেন না, তাহলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন।
মনে রাখবেন, করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলেও জ্বর যদি পাঁচ-সাত দিনেও না সারে, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে, তাহলেও হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। কারণ, ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে করোনার পিসিআর পরীক্ষা ফলস নেগেটিভ আসতে পারে। তবে বুকের এক্স–রে বা সিটি স্ক্যান দেখে তা অনেকটাই ধারণা করা যায়।

ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top