What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review আধিপত্য ও অসহায়ত্বের কুল থ্রিলার (1 Viewer)

pFq7TpW.jpg


ওয়েব ফিল্ম – তাকদীর
প্ল্যাটফর্ম – হইচই
পরিচালনা – সৈয়দ আহমেদ শাওকী
অভিনয় – চঞ্চল চৌধুরী, মনোজ প্রামাণিক, সানজিদা প্রীতি, রিকিতা নন্দিতা শিমু, সোহেল মণ্ডল, ইন্তেখাব দিনার, পার্থ বড়ুয়া প্রমুখ।
মুক্তি – ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

ওয়েব প্ল্যাটফর্ম হইচই বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব ফিল্ম 'তাকদীর।' মাল্টিস্টারার এই ওয়েব ফিল্ম ইতোমধ্যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আলোড়ন তুলেছে। বিজয়ের মাসে এবং বছর শেষের হিট কনটেন্ট হয়ে থাকল।
'তাকদীর' পরিচালনা করেছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকী। তিনি 'বায়োস্কোপ'-এর 'অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প' সিরিজের 'কথা হবে তো' নাটক দিয়ে আলোচনা তৈরি করেছিলেন। নাটকটি খুব প্রশংসিত হয়েছিল। তাঁর নির্মাণের হাতও যে আছে প্রমাণিত ছিল নাটকটিতে।
'তাকদীর' শাব্দিক অর্থে ভাগ্যকে বোঝায়। ওয়েব ফিল্মে তাকদীর একজনের নাম যে লাশবাহী গাড়ি চালায়। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সে একটা পরিস্থিতিতে পড়ে যায় যেখানে তার গাড়িতে একটা লাশ চলে আসে। সেই লাশের ঠিকানা কি হবে এবং পরে তাকে ঘিরে আরো কি কি ঘটনা ঘটতে পারে তার একটা কন্টিনুয়াস প্রসেস দেখানো হয়েছে। ঘটমান বর্তমান বলে যে একটা কাল আছে সেটাই 'তাকদীর'-এ ঘটে চলে কুল থ্রিলারের আমেজে কোনোরকম তাড়াহুড়া ছাড়াই।

A8DUZWH.jpg


আন্তোনিও গ্রামসি-র 'হেজেমনি' বিষয়ক কিছু ব্যাখ্যা আছে। 'হেজেমনি'-কে বাংলায় 'আধিপত্য' বলা যায়। আধিপত্যের বেশকিছু ধরন আছে তার মধ্যে লোকাল হেজেমনি একটা বলয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। আধিপত্যের ধারণাটা এতই শক্তিশালী যে এখানে জয় ছাড়া পরাজয়ের কোনো স্থান নেই বা যারা এর সাথে জড়িত তাদের মধ্যে এটাই চর্চা হয়। এই লোকাল হেজেমনি-র একটা বলয় 'তাকদীর'-এ দেখানো হয়েছে এবং এর সাথে ক্ষমতাবান মানুষদের ক্ষমতার চর্চা ও অসহায়দের অসহায়ত্বই গল্পে প্রধান হয়ে উঠেছে।

লোকাল হেজেমনির একটা চক্রকে 'তাকদীর-এ দেখা যায়। এর শুরুটা ঘটে ফিল্মের প্রথম সিকোয়েন্সেই যেখানে রিকিতা বলছে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। 'আমাগো আর কি আছে কন! ইজ্জতও গেল থাকনের জায়গাটাও নিয়া নিলো' রিকিতার এই সংলাপ সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের দুটি রূপকে দেখায় প্রথমত পেশীশক্তি দ্বিতীয়ত পাশবিক। এখান থেকেই মূলত সাংবাদিক সানজিদা প্রীতির আগমন এবং তার পরিণতি থেকে মূল চক্রের আধিপত্য বেরিয়ে আসে। তাকদীর এবং তার সাথে থাকা কয়েকজন এই চক্রের শিকার। এটাই 'তাকদীর' ওয়েব ফিল্মের জিস্ট।

To view this content we will need your consent to set third party cookies.
For more detailed information, see our cookies page.

মাল্টিস্টারার কনটেন্টের একটা ঝুঁকি থাকে সবখানে সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে কিনা এটা নিয়ে। 'তাকদীর' এটা কতটুকু পেরেছে! মূল চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী নিজের অভিনয়দক্ষতা ঢেলে দিয়েছে। তার অভিনয় কেমন প্রভাব বিস্তার করেছে সেটা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও আলোচিত হচ্ছে। তার গেটআপের মধ্যে যে ক্লান্ত, শ্রান্ত ব্যাপারটা আছে এটাই তাকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে বাকিটা তো তার অভিনয়ক্ষমতাই সই। সোহেল মণ্ডলের চরিত্রটি মানবিক হয়ে উঠেছে তাই বাড়তি একটা অ্যাটেনশন দিচ্ছে। তার চরিত্রে চঞ্চলকে 'ভাইসা' ডাকের মধ্যে থাকা ভ্রাতৃত্ববোধের কারণে পরিণতি পর্যন্ত গিয়ে দর্শক একটা আবেগের জায়গায় চলে গেছে তাকে নিয়ে তাই আলোচিত হচ্ছে তার অভিনয় এবং অভিনয় করেছেও ন্যাচারাল। মনোজ প্রামাণিক দিন দিন নিজেকে অন্য স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে সিলেকশনের গুণে। সানজিদা প্রীতি খুব কাজ করে এবং যথারীতি এখানেও তার অসাধারণ ন্যাচারাল অভিনয় ছিল। বলতে গেলে গল্পটা দানাই বেঁধেছে তার মাধ্যমে। রিকিতা নন্দিতা শিমু 'আন্ডার কনস্ট্রাকশন, মেড ইন বাংলাদেশ' ছবিগুলো দিয়ে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। 'তাকদীর'-এর প্রথম দৃশ্যেই তার অভিনয় মন খারাপ করায়। পার্থ বড়ুয়া ঠিক যেন স্পেশাল একটা চরিত্র এ ফিল্মে। তার ডায়লগ ডেলিভারি যেমন অসাধারণ তেমনি এক্সপ্রেশনও। তার চরিত্রটি থ্রিলারের মজা দিয়েছে। ইন্তেখাব দিনারের জন্য নেতার চরিত্রটি পারফেক্ট ছিল। অন্যান্য চরিত্রও ন্যাচারাল ছিল এবং টোটাল প্যাকেজের অভিনয় ছিল 'তাকদীর'-এ।

'তাকদীর'-এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক সংলাপ আছে। ধরতে গেলে অনেক হবে তবে পার্থ বড়ুয়ার মুখে 'গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা/কুলে একা বসে আছি নাহি ভরসা' এবং 'আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক' সংলাপ দুটি ইন্টারেস্টিং ও আইক্যাচি ছিল। টেকিনিক্যালি সিনেমাটোগ্রাফি, কালার গ্রেডিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সবখানে কাজের হাত দেখিয়েছেন পরিচালক।
'তাকদীর' কি মাস্টারপিস?
নাকি মাস্টারপিস থেকে বঞ্চিত?

এত ভালো কুল থ্রিলারের পরেও খুব সচেতন দর্শক ভাবতেই পারে ঘটনার ঘনঘটা আরো জট পাকানো হলে বোধ করি আরো চোখের শান্তি পাওয়া যেত। এ কাজটি মাস্টারপিস দাবি করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু একটার কমতি আছে যার জন্য হয়ে উঠতে পারেনি। হ্যাঁ, সব কাজ মাস্টারপিস হবার দরকারও নেই কিন্তু যেটা ডিজার্ভ করে সেটা হওয়া উচিত তাই বলা। আজকাল তো যেনতেন কাজকেও ফ্যানবেজ অতি আবেগে মাস্টারপিস বলে সেখানে একটা 'তাকদীর' কেন নয়! কিন্তু মাস্টারপিস যে সর্বোচ্চ কিছুকে মিন করে সেটাও অনেকের জন্য জানা ও বোঝার বিষয়। 'তাকদীর' খুব ভালো কাজ হয়েই থাকুক।

'তাকদীর'-এর কি সিক্যুয়েল হতে পারে?

শেষ দৃশ্যটি মনোযোগ দিয়ে দেখলে হয়তো অনেকের কাছে মনে হতে পারে। সিক্যুয়েল বানাতেই হবে কিনা সেটাও বিষয় কারণ অনেকক্ষেত্রেই সিক্যুয়েলের ক্রেজ ধরে রাখা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রে যে আলোড়ন 'তাকদীর' তুলেছে এ পর্যন্তই ইতি টানা যেতে পারে। আরো আলোচনা-সমালোচনায় 'তাকদীর' টক অফ দ্য টাইম হয়ে থাক।

রেটিং – ৯/১০
 

Users who are viewing this thread

Back
Top