What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected গোরস্থান : করোনা কালের কবিতা (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
করোনার ভয়ে গোটা পৃথিবীই হয়ে পড়েছে হঠাৎ করে
মহাগোরস্থান। একেকটা বাড়ি যেন একেকটা জীবন্ত কবর;
সে-কবরে ফিসফিস করে বলছে সবাই শুধু দুঃসংবাদের
কথা। মৃত্যু আর দুর্ভিক্ষের কথা ভেবে কেঁপে কেঁপে উঠছে তারা
ভয়ে। হায়, এই লোকগুলো কবে বেঁচেছিল? এদের প্রেতাত্মা
সেই কবে পৃথিবীর পথেঘাটে হাঁটতে দেখেছি আমি। দেখে
'ভূত! ভূত!' বলে চীৎকার করে উঠতেই, হো হো করে
হেসে উঠেছিল জারজ সভ্যতা।
#
চারদিকে খা খা অন্ধকার। নিশছিদ্র নিরব অন্ধকারের ভিতর
মৃত লোকগুলো জেগে উঠছে বারবার, তারা বেঁচে আছে কিনা,
তা দেখার জন্যে। কেউ কেউ মারছে বাইরে উঁকি জানলায় মুখ
রেখে। বাঘের চোখের মতো জ¦লজ¦ল করছে তাদের চোখ।
বুঝি পড়েছে অতিষ্ঠ হয়ে তারা ইসরাফিলের প্রলয়শিঙার
শেষ ফুঁ শোনার জন্যে! কত আর থাকা যায় ঘুমিয়ে কবরে!
কত আর জীবনের যন্ত্রণায় গলাকাটা মোরগের মতো
লাফালাফি করা যায় বিদঘুটে ভয়ের ভিতর!
#
হাঁটতে হাঁটতে আমি ভাবতে লাগলাম, কোথায় রয়েছি আমি?
যে-পৃথিবী প্রত্যাখ্যান করে পালিয়ে এসেছিলাম একদিন
ভূত চরা রাতে, সেখানেই খাচ্ছি কি ঘুরপাক আজও
লাটিমের মতো? আমি তাদেরকে বললাম, "তোমরা তো
আছো এক উদ্ভট ডাকাতদের গ্রামে! কেমন সীমান্ত খুলে দিয়ে
ঢুকিয়ে নিয়েছো ঘরের ভিতর চোর-দস্যু-গুÐা-বদমাশ।
কী করে মানুষ, হায়, থাকে এই জাহান্নামে? "
#
তারা দা-বল্লম নিয়ে তাড়া করলো আমাকে। আমি
ছুটতে ছুটতে উঠে গিয়ে দাঁড়ালাম হিমালয়ের চূড়ার
উপর। দাঁড়িয়ে পৃথিবীবাসীর উদ্দেশ্যে চীৎকার করে
উঠলাম, "ভাইসব! তোমাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসে আছে
এক একচক্ষু দৈত্য। সে কখনো গণতন্ত্র, কখনো সমাজতন্ত্র,
কখনো ধর্মের নাম নিয়ে বশ করে রাখছে তোমাদের।
কি-কৌশলে সুঁই ফুটিয়ে ফুটিয়ে তোমাদের সমস্ত শরীর থেকে
শুষে শুষে খাচ্ছে সে রুধির! যে-পৃথিবী বলিষ্ঠ কর্মঠ
উৎপাদনশীল মানুষকে বানিয়েছে প্রজা আর পরগাছার মতো
বসে বসে খাওয়া বুদ্ধিজীবীদের একচক্ষু সেই দৈত্যের দোসর;
যে-পৃথিবী কুকুরের মতো দেহপ্রদর্শনকারী বেহায়াদেরকে
বসিয়েছে সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে আর মেরেছে তেনার
মতো ছুঁড়ে সব লজ্জাশীল বিজ্ঞ তাপসকে অবজ্ঞার ডাস্টবিনে;
যে-পৃথিবী সব সৎ ও সত্যবাদীকে নিয়ে নেকড়ের মতো করে
খেলা; তোমরা সানন্দে প্রত্যাখ্যান করো তাকে, প্রত্যাখ্যান করে
ছুটে আসো, আমরা সবাই একসাথে চলে যাই গভীর জঙ্গলে।"
আমার আহ্বান শুনে "পাগল! পাগল!" বলে হাসাহাসি
করতে করতে ফিরে গেল তারা সুন্দর তাদের লোহার খাঁচায়।
#
আমি ভাবি, যে-জগৎ এতো প্রাণঘাতী ভাইরাসে ভরা;
যেখানে সত্যের মূল্য নেই এক পাইও; যেখানে কেবলি
প্রতারণা, রোগশোক, মৃত্যু, ক্ষুধা, জালিমের অট্টহাসি
কেউটে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে ফণা তুলে;
যেখানে বাতাসে বিষ, পানিতে পাপের ফেনা, মৃত্তিকায়
মহামারি, মানুষে পশুত্ব আর নারীতে নষ্টামি; হায়,
সে-জগৎ নিয়ে মানুষেরা কেন এত বিচলিত আর এত
দিশেহারা? না-মরেও মানুষ কিভাবে কবরজীবন আজ
করছে যাপন! তবু বুকে কোনো প্রেম নেই, চোখে কোনো
জল নেই যেন মরা কোনো খাল; অনন্ত জীবনে-
পুনরুত্থানে-বিচারদিবসে বিশ্বাস নেই এক তিলও; শুধু
চোখজুড়ে, বুকজুড়ে কামে গিজগিজ করা জীবনের লোভ
ও মৃত্যুর নীল ভয়। ইন্দ্রিয়ের সুখে পশুদের মতো এরা
অন্ধ হয়ে থাকে অষ্টযাম। "হায়, এইসব সুখ, এইসব
খ্যাতি আর অর্থ বিত্ত গাড়ি বাড়ি বিপুল ক্ষমতা ফেলে রেখে
ফকিরের মতো খালি হাতে হিমশীতল মৃত্যুর হাত ধরে
কোন্খানে যেতে হবে শেষমেশ? কোথায় ঠিকানা জীবনের
তবেÑ সে-জীবন, যে-জীবন নেশার তাড়ির মতো
মত্ত করে রাখে শুধু দুনিয়ার মোহে?" তারা ভাবে।
#
আমি ভাবি, কখনো কি এইসব জীবন্মৃত জীবগুলো
ফিরে পাবে প্রকৃত জীবন, যে-জীবনে সত্য আছে,
ত্যাগ আছে, প্রেম আছে, আত্মা আছে, যে-আত্মায়
অশান্ত নদীর মতো ছলাৎ ছলাৎ করে বিশ্বাসের ঢেউ,
যার ধ্বনি শুনে অনন্তের পাড় হতে ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসে
লাল ঠোঁট প্রশান্তির পাখি, যারা গানে গানে ভরে তোলে
পৃথিবীর গ্রাম-জনপদ?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top