What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পায়ের গোড়ালি ব্যথা: সতর্কতা ও সমাধান (1 Viewer)

8WWGfeg.jpg


আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘদিন পায়ের গোড়ালির ব্যথা নিয়ে ভুগছেন। আজকের লেখায় পায়ের গোড়ালির এই ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব। বরাবরের মতো আজকেও পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ ও এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

গোড়ালি ব্যথা কী?
চিকিৎসকদের ভাষায় এই অবস্থাটির নাম প্লান্টার ফাসাইটিস। এতে পায়ের তলায় বিশেষ করে হিল বা গোড়ালিতে খোঁচা দেয়ার মতো ব্যথা অনুভূত হয়। এতে সাধারণত সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেললে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ব্যথা কমে আসে।

পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ
পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ জেনে নেয়ার আগে এর গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। আমাদের পায়ের সামনের দিকে কিছু ছোট ছোট হাড় পেছনের দিকে গোড়ালি বা হিলের একটি হার এবং মাঝে কিছু হাড় নিয়ে গঠিত। এই হাড়গুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে লিগামেন্টস। সামনের এবং পেছনের হারের সঙ্গে একটি ব্যান্ডের মতো জিনিস দিয়ে সংযুক্ত থাকে। যেটাকে বলে প্লান্টার ফাসা।

আমাদের শরীরের ওজন যেন সরাসরি আমাদের পায়ের হাড়ের ওপরে চাপ প্রয়োগ করতে না পারে এ জন্য এই ব্যান্ডটি আমাদের শক এবজরবারের মতো কাজ করে। এই ব্যান্ডে যদি কোনো ইনফ্লামেশন হয় তাহলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। আমাদের শরীরের ওজন বেশি হলে বা দীর্ঘ মেয়াদী কোনো চাপ থাকলে এই ব্যান্ড বা ফাসাতে ছোট্ট টিয়ার বা ইনজুরি হয়। প্রথমদিকে ব্যথা কম থাকায় এটা অনুভুত কম হয় এবং হাঁটাহাঁটি অব্যাহত থাকে। শুরুর ব্যথা আমলে না নিলে ইনজুরি গভীর হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথায় পরিণত হয়। তখন এটিকে বলে প্লান্টার ফাসাইটিস।

6Awuj4e.jpg


পায়ের গোড়ালি ব্যথা

কারা এই গোড়ালি ব্যথার ঝুঁকিতে থাকেন?
যদিও কারণ ছাড়াও এই ব্যথা হতে পারে। তবে বেশ কিছু ঝুকির কারণ আছে। সেগুলো হলো-
১. বয়স: সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছয় বয়েসের মানুষের মধ্যে এই গোড়ালি ব্যথার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়।
২. যেসব কাজে হিল বা গোড়ালিতে চাপ হয় যেমন: দীর্ঘ সময় দৌড়ানো, যারা নৃত্য করেন অধিক সময় ধরে। এদের এই প্লান্টার ফাসাইটিস হতে পারে।
৩. পায়ের গঠনগত সমস্যা: যাদের পা সমান বা আর্চ থাকে না বা ফ্লাট ফুট সমস্যা। আবার যাদে উঁচু আর্চ থাকে তাদের ক্ষেত্রে হিলে বা গোড়ালিতে চাপ বেশি পড়ে। যে কারণে তাদের এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
৪. মোটা শরীর বা ওজন বেশি: এদের ক্ষেত্রে একই কারণে হিলে বা গোড়ালিতে চাপ বেশি পড়ে প্লান্টার ফাসাইটিস হতে পারে।
৫. পেশা: কিছু কিছু পেশায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হয়। গার্মেন্টস ওয়ার্কার ও ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার এদের এই সমস্যা হতে পারে।
৬. পুরুষদের থেকে নারীদের এই ব্যথার প্রবণতা বেশি থাকে। গর্ভবতী নারীদের শেষের দিকে প্লান্টার ফাসাইটিস হতে পারে।
৭. যারা আরথ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস এ ভুগছেন তাদের এই সমস্যা হতে পারে।
৮. যারা দীর্ঘ দিন শক্ত হিল বিশিষ্ট জুতা ব্যাবহার করেন।

843lSMI.jpg


গোড়ালি ব্যথায় করণীয় কী?
• যেহেতু এটা এক ধরনের ইনজুরি তাই যথাযথ বিশ্রাম দিতে হবে পা কে। পা কে উঁচু টুলের উপর রাখার চেষ্টা করতে হবে।
• পায়ের ব্যথাযুক্ত জায়গায় বরফ বা আইসপ্যাক রাখতে হবে ২০ মিনিট ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর পর।
• পা সকালে ও রাতে হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজেয়ে রাখতে পারেন ২০ মিনিট করে।
• নিজের ওজন কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা।
• প্রশস্ত আরামদায়ক নিচু হিল বিশিষ্ট নরম জুতা ব্যবহার করতে হবে।
• জুতার ভেতরে ইনসোল বা হিলপ্যাড ব্যবহার করতে হবে।
• নিয়মিত আরামদায়ক স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। পায়ের উপর চাপ পরে না এমন এক্সারসাইজ যেমন সাঁতারকাটা যেতে পারে।
• প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।

যে বিষয়গুলো করা যাবে না:
• প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আইবুপ্রফেন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না।
• অধিকক্ষণ হাটা বা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।
• হাইহিল বা টাইট পয়েন্টি জুতা ব্যবহার করা যাবে না।
• শক্ত চপ্পল বা স্লিপার ব্যবহার করা যাবে না।
• খালি পায়ে বা শক্ত বা উঁচু নিচু জায়গায় হাঁটা যাবে না।

icar7qT.jpg


পায়ের গোড়ালি

রোগ নির্ণয় পদ্ধতি:
মূলত ব্যথা নিয়ে যারা কাজ করেন সেই সব চিকিৎসক দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন। তবে হাড় ভাঙা ও অন্যান্য কারণ অলাফা করার জন্য এক্স রে ও এম আর আই করা যেতে পারে।

গোড়ালি ব্যথায় চিকিৎসা পদ্ধতি:
প্রাথমিক চিকিৎসা
RICE
R- Rest
I – Ice pack
C- Compression
E- Elevation
ঔষধ: প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে ৫-৭ দিন।

দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথার চিকিৎসা:
যে সব প্লান্টার ফাসাইটিসের ব্যথা প্রাথমিক চিকিৎসা ও সতর্কতা এর মাধ্যমে যায় না, তাদের ক্ষেত্রে ট্রিগার পয়েন্ট ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে ব্যথা কমানো যায়।
ফিজিওথেরাপি: বেশ কিছু ফিজিওথেরাপি এখানে কাজ করে যেমন আল্ট্রাসাউন্ড, ESW থেরাপি ও ম্যাসেজ। এসব ক্ষেত্রে ব্যথা নিরাময়ে কিছু সময় লাগে।

তবে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পায়ে রক্ত চলাচল বাড়ে। লিগামেন্ট ও ফাসাগুলো নিউট্রিশন পায়। নিয়মিত সপ্তাহ খানিক ফিজিওথেরাপি করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

পিআরপি: দীর্ঘ মেয়াদী ও জটিল প্লান্টার ফাসাইটিস এর ক্ষেত্রে পিআরপি খুবই ভালো কাজ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিয়ে মেশিনে দিয়ে রক্ত কণিকা আলাদা করে এই পিআরপি তৈরি করা হয়। এই পিআরপিতে প্রচুর পরিমাণে গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে যা দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতপূরণে সহায়তা করে। এটি একটি স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি।

epwIMju.jpg


পায়ের গোড়ালি ব্যথা

গোড়ালি ব্যথায় কার্যকরী ব্যায়াম:
যারা ঝুঁকিতে আছেন বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন তারা নিয়মিত কিছু এক্সারসাইজের মাধ্যমে গোড়ালির এই ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।

১. ফ্লোরে বা চেয়ারে বসে হাঁটু লক করে যে কোনো এক পা সোজা রাখুন। এবার একটি বড় ফিতা পায়ের পাতার সামনের দিকে আটকে দিয়ে দুই প্রান্ত দুই হাত দিয়ে হালকা চাপে রাখুন বা টানুন ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে প্রক্রিয়াটি উভয় পায়ে করুন।
২. একটি আধা লিটার পানির বোতল পুরোপুরি বড়ফ জমাট করে পায়ের নিচে রেখে রোল করতে হবে ৩০ সেকেন্ড।
৩. হাত দিয়ে পায়ের পাতায় ম্যসেজ করে দিতে হবে। কেন্দ্র থেকে বাহিরের দিকে।
৪. সিঁড়িতে পায়ের পাতার সামনের দিকের অংশ রেখে বাকি অংশ বাইরে রেখে যে কোনো এক পায়ের উপর ভারসাম্য রেখে দাঁড়াতে হবে ৩০ সেকেন্ড।

ব্যথা আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। আমাদের আশান্তির কারণগুলোর মধ্যে ব্যথা অন্যতম। তাই ব্যথামুক্ত জীবন সকলেরই প্রত্যাশা। এই ব্যথামুক্ত জীবন যাপন করতে হলে ব্যথাকে জানতে হবে। চিনতে হবে। ব্যথা হওয়ার আগেই সতর্ক হতে হবে। আজকের আলোচনা থেকে সবাই গোড়ালি ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে পারেন এই প্রত্যাশায় শেষ করছি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

লেখক: কনসালটেন্ট ও পেইন ফিজিশিয়ান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top