What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected পিছুটান থাকতে নেই (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে ঘরের যাবতীয় টাকা-পয়সা, স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে পালিয়ে গেল নেহাল।

নেহালের স্ত্রী দ্যুতি তখন ঘুমিয়ে ছিল। আজকে হয়তো বেঘোরেই ঘুমাচ্ছিল। তাই এতকিছু ঠাওর করতে পারেনি৷ অথবা এসব জল্পনাকল্পনাতেও আসেনি, নিজের স্বামীর জন্য এমন আজগুবি চিন্তাভাবনা আসবেই-বা কীভাবে! ভালোবেসেছিল তো। তবে সে ভালোবাসায় নিশ্চয়ই কোনো ফাঁকা ছিল। না হলে কী এভাবে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে চলে যাবে সে! তবুও নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে অপেক্ষা করছিল নেহালের জন্য। নিশ্চয়ই চোর টোর এসেছিল ঘরে। কিন্তু নেহাল কোথায় যাবে! ওর পাশেই তো শুয়ে ছিল। সারা বাড়ি খুঁজেও নেহালের হদিস মিললো না। ফোন নাম্বার বন্ধ। কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসে রইল দ্যুতি। ওর মা চিন্তিত হয়ে বসে আছে ওর পাশেই। চোর কখন আসলো ঘরে! টের পর্যন্ত পেল না। আর নেহাল গেল-ই-বা কোথায়! মনের খচখচানিটা ক্রমাগত বেড়েই চলছে তবে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আপাতত কিছু বলতে পারছে না। শুধু নীরব হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

দ্যুতি নিশ্চুপ হয়ে হাঁটুর ভাঁজে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে নোনাজল ঝরছে। কণ্ঠস্বর দিয়ে কথা বলার উপায় নেই যে তার। আল্লাহ সেই সৌভাগ্য দেয়নি দ্যুতিকে৷ এতটাই অভাগা। বেশ কিছুক্ষণ পরে হাঁটুর ভাঁজ থেকে মাথা তুলে ওর মায়ের দিকে তাকিয়েই কেঁদে উঠল দ্যুতি। আকারে-ইঙ্গিতে বুঝাচ্ছে, ওর ভাগ্য এমন কেন! সব সময় ওর সাথেই এমন হয় কেন! মেয়ে হয়ে জন্মেছে এর জন্য! না-কি বোবা হয়েছে এরজন্য।
মেয়ের কান্না দেখে দ্যুতির মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। একটুও দেরি না করে দ্যুতিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেন। চকিতেই হেসে দেয় দ্যুতি। হাসি-কান্না মিলিয়ে সে ক্ষণ পাড় করে। ওর মা অসহায় ভঙ্গিতে মেয়ের দিকে তাকায়। দ্যুতি খাটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে জানালার পানে তাকাল। স্থির দৃষ্টি৷ পেটে হাত রেখে ঠোঁট চেপে ধরে। ক্ষণিকের জন্য সবকিছু ঝাপসা হয়ে এলো। চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। ভালোবেসেছিল তো! এক বছরের সংসারে নিজের সমস্ত দিয়ে নেহালকে আগলে রাখতো। শুধু না পাওয়ার মধ্যে গলার মিষ্টি স্বর শুনাতে পারেনি। কীভাবেই-বা পারবে! আল্লাহ সে ক্ষমতা দেয়নি। তবুও বোবা থাকা সত্ত্বেও এতদিনে নেহালেরও কোনো খারাপ আচরণ চোখে পরেনি। তাহলে হঠাৎই এমন করল কেন! এসবের কোনো উত্তর নেই দ্যুতির কাছে।

____________

দ্যুতির বাবা বিদেশ থাকেন। দ্যুতিকে নিয়ে ওর মা এই শহরের পাকা বাড়িতে থাকেন। গ্রামে আত্নীয়-স্বজন থাকলেও মেয়ে নিয়ে সেখানে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই৷ বোবা মেয়ে। এরজন্য তিন বছর বয়স থেকেই কথা শোনার পাত্রী হতে হয়। মনে হয়েছিল ও নিজ থেকেই কথা শোনার জন্য বোবা হয়েছে। তখনকার ছোট দ্যুতি এতকিছু না বুঝলেও ওর বাবা-মা ঠিকই বুঝে। সরাসরি কেউ কথা শোনায় না। আকারে-ইঙ্গিতে বুঝায়। দ্যুতি বোবা। এমন মেয়েকে নিয়ে সামনের পথগুলো কীভাবে চলবে! সেদিন দ্যুতির বাবা এক মুহূর্তের জন্যও আত্নীয়-স্বজনদের সামনে দাঁড়ায়নি। হনহন করে দ্যুতিকে কোলে নিয়ে ওর মায়ের হাত ধরে বেড়িয়ে আসেন। ঢাকার নারায়ণগঞ্জের মেস বাসায় উঠেন। ঢাকাতে তাঁর চাকরি আছে। ভাগ্য ভালো ছিল। তখন মেস বাসার সবাই নিজনিজ বাড়িতে অবস্থানরত ছিল৷ আপাতত ক্ষণিকের জন্য সেখানেই আশ্রয় নেন সহধর্মিণী ও মেয়েকে নিয়ে। তারপরে সে কলোনিতেই ভাড়া বাসায় উঠে। বেশ সুখী পরিবার ছিল। ধীরে ধীরে সেখানেই জমি কিনে বাড়ি করেন। তাদের থাকার জন্য তিনটে পাকা রুম করেন। এক তলার ছোটো ঘর৷ তার পাশেই টিনের ছোটো তিনটি রুম করেন। টিনের ঘরগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা থাকে। বেশ ভদ্র স্বভাবের ছেলেমেয়েদেরই রাখেন।
দ্যুতি বাবা বিদেশে যান। সে ক্ষণে যাবতীয় কাজ-কর্মে একটু সমস্যা হলেও তা সেড়ে উঠতে পারেন। টিনের ঘরে থাকা একটা ছেলের জন্য। সবকিছু বেশ দায়িত্ব নিয়ে গুছিয়ে দেয়। নাম ছিল নেহাল। বেশ ভদ্র স্বভাবের ছেলে। টিউশন করানোর পরে সারাক্ষণ বইয়ের পেছনে দৌঁড়াত। জোরে জোরে শব্দ করে বই পড়তো। বাইরে থেকে শোনা যেত ওর কণ্ঠধ্বনি। কাজকর্ম, পড়াশোনা, চালচলনের জন্য বেশ ভালো লাগতো ছেলেটিকে। এভাবে প্রায় বছর কেটে গেল। দ্যুতি দশম শ্রেণিতে পড়ে। নেহালের অনার্স শেষ। হাতের কাছে ভালো ছেলে পেয়ে হাতছাড়া করতে চায়নি, দ্যুতির মা। মেয়ে বোবা থাকায় ভয়ে ভয়ে নেহালকে সম্বন্ধ দিলেন। তিনি আশঙ্কায় ছিলেন তাকে ফিরিয়ে দিবে নেহাল। কিন্তু এর বিপরীত হল। নেহাল বিয়েতে রাজী। বেশ ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়। খুব সহজেই দ্যুতিকে মেনে নিল নেহাল। দ্যুতির কোনো ভাই-বোন না থাকায় সমস্ত দায়িত্বভার নেহালের উপরেই দেয়। দ্যুতির মা বিশ্বাস করেই নেহালকে দায়িত্ব দেন। তারা বুড়ো-বুড়িরা আর ক'দিনই-বা থাকবে। মেয়ের সংসার ভালো থাকলেই হল। এই বিশ্বাসের মর্যাদা যে সবাই রাখতে জানে না এটা জানা ছিল না দ্যুতির মায়ের। টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পত্তি দেখলেই মাথা এলোমেলো হয়ে যেতে পারে কিছুকিছু মানুষের। নেহালের বেলায়ও এর বিপরীত হল না। দ্যুতি অন্তঃসত্ত্বা। সামনা-সামনি নেহাল হাসিখুশি মুখ দেখালেও ভেতরটা ও নিজেই জানে। এভাবেই হঠাৎ একদিন সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিল। নিজের পাওনা তো মিটিয়েই নিয়েছে। টাকা-পয়সা, স্বর্ণমুদ্রা সবকিছু নিয়েই বিদায় নিয়েছে। তার বিপরীত পাশের মানুষগুলোর কথা ভাবেনি। ভাবেনি তার সহধর্মিণী ও সন্তানের কথা। এভাবে সময়টা চলে যায়।

_________

দ্যুতি লেখাপড়া চালিয়ে গেল। পিছুটান নেই। এক পুত্র সন্তানের জননী সে৷ সবকিছু ওর মুখের দিকে তাকালেই ভুলে যায়৷ হয়তো সম্পূর্ণ ভুলতে পারে না, শুধুই অভিনয়ে থাকতে হয়। তবুও সে সম্পূর্ণই ভুলতে চায়। যে ওর কথা ভাবেনি, তার কথা ভেবে ও নিজে অথবা ওর সন্তানকে কষ্ট দিতে চায় না।
যদিও একটা সময়ে অনেক খুঁজছিলো নেহালকে। কিন্তু কোনো হদিস পায়নি। তাই সেই সময়টা সেখানেই থামিয়ে দেয়।
প্রথমে ভেঙে পরলেও পরবর্তীতে পরিবারের অনুপ্রেরণায় নিজেকে শক্ত করে। নিজ অবস্থানে ঠিক থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যায়৷

খুব নিকটেই সে মাহেন্দ্রক্ষণ। নিজ দক্ষতায় সম্মুখে এগিয়ে গেল দ্যুতি। ওর ছেলের দেখাশোনা ওর মা করে। দ্যুতি ছেলের ভবিষ্যতের দেখাশোনা করে। তাকে ভালো রাখার দিকগুলোর দেখাশোনা করে। বাবা নেই তো কী হয়েছে! দ্যুতিই বাবা-মা হয়ে থাকবে। ব্যাংকের হিসেব রক্ষক। কোনো পিছুটান না থাকায় সম্মুখে এগিয়ে গেল। পরিবারের অনুপ্রেরণা ও নিজ মনোবলের জন্য আজ এই অবস্থানে আসতে পেরেছে৷ কলিগরাও বেশ সাহায্য করে। এখন আগের কথা মনে উঠলে হাসে এবং নিজেই বাহবা দেয়। হয়তো একজন ধোঁকাবাজের দেখা না মিললে নিজেকে এতদূরে দাঁড় করানোর প্রতিজ্ঞা করতো না। এতদূরে পৌঁছাতেও পারতো না। এসব ভেবেই নিজের মনোবলকে শক্ত করেছে।

সে মাহেন্দ্রক্ষণে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা মিললো। সাহায্য করতে ভালো লাগে দ্যুতির। দুই শত চল্লিশ টাকা দিয়ে সাহায্য করলো।
তবে সাহায্য পাওয়া ব্যক্তিটির থমথমে মুখ। কাঁপা-কাঁপা হাতে কাগজপত্র ধরে ক্যাশিয়ারের দিকে তাকাল। চকিতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। দ্যুতিও বেশ শান্তভাবে তাকে পানি দিয়ে আবারও সাহায্য করলো। সে ব্যক্তিটি ঢকঢক করে পানি খেয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেল৷ ব্যাংক থেকে বেরিয়ে কল দিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল," ফরম পূরণ করা হয়েছে। টোটাল কত টাকা লাগবে সেসব হিসেব করে পাঠাতে হয়৷ বলেছ, তিন হাজার টাকা লাগবে কিন্তু এখানে এসে দেখি তিন হাজার দুই শত চল্লিশ টাকা। টানটান হাতে কোথাও গেলে সবকিছু হিসেব করে নামতে হয় জানো না?"

নেহালের রাগী কথা গুলো শুনে ভড়কে গেল ওর মা। আজকেই ফরম পূরণের শেষ দিন ছিল। কয়েক মাস হল নেহালের চাকরি নেই। কিন্তু ওর বোনের এইচএসসির পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করতে হবে। না হলে পরীক্ষা দেওয়া হবে না। অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও নিমিষেই এলোমেলো হয়ে গেল। রূপালী ব্যাংকে এসে টাকা জমা দেওয়ার পরে জানতে পারলো টাকার সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে এক টাকাও বাড়ানো সম্ভব নয় নেহালের পক্ষে। তবুও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল একজন। নিজের টাকা দিয়েই ফরম পূরণের টাকা জমা দিল। মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ছিল তাঁর। কিন্তু এমন অবস্থায়, এমন জায়গায়, এমন একজনকে দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না নেহাল। দ্যুতির উপস্থিতি এমন জায়গাতে হবে কল্পনা করতে পারেনি। পিছনের কথা মনে পড়ায় অনুশোচনায় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলল। গেটের সামনে এসে সমস্ত রাগ মায়ের উপরে ঝাড়ল। অটোতে উঠে কাগজপত্র গুলো দেখার সময়ে আঁতকে উঠল নেহাল। ছোট একটা কাগজের টুকরোতে লেখা,
" অসহায় দের সাহায্য করতে ভালোবাসি। "

এই এক লাইনের বাক্যের সারমর্ম ছিল বেশ গভীর। এটা যে কেউ বুঝতে পারবে। রাগে-দুঃখে নেহালের শরীর কাঁপুনি দেয়। সাথে অনুশোচনা। তার কাজের জবাব সে বেশ ভালো ভাবেই পেয়েছে৷
সে তো ভালোই ছিল। তাহলে হঠাৎই এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করতে হল কেন! বিশ্বাসঘাতকতার সাথে সাথে সহধর্মিণী ও সন্তানকেও হারিয়ে ফেললো। একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে অটো দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়া আর কিছুই নেই ওর ভাণ্ডারে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top