What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সিনহা হত্যাকাণ্ড: কল্পকাহিনি হার মানানো এক নির্মম হত্যাকান্ড (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
20SZtbC.jpg


'একজনকে ডাউন করেছি, একজনকে ধরেছি স্যার।'

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার পর এভাবে পুলিশ সুপারকে ঘটনাটি জানান পরিদর্শক লিয়াকত আলী। রাত ৯টা ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের দিকে লিয়াকত এবং প্রদীপ দাশ পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনকে ফোন করেন।

এসপি মাসুদ প্রদীপের কাছে জানতে চান, 'এমন কি হইছে, বলেন'। প্রদীপ দাস অপর প্রান্ত থেকে জানান, পরিদর্শক লিয়াকতকে গুলি করা হয়েছে এবং তিনি সেখানে যাচ্ছেন। প্রদীপ দাসের ভাষ্যমতে, লিয়াকত একটি গাড়িকে সিগন্যাল দিলে গাড়ি থেকে তাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়। প্রদীপ তখন লিয়াকতকে তাড়াতাড়ি পাল্টা গুলি করতে বলেন। এই পর্যায়ে প্রশ্ন আসতেই পারে, পাল্টা গুলির মুখে দাঁড়িয়ে লিয়াকত আলীর পক্ষে আসলেই কি প্রদীপ দাসের সাথে কথা বলা সম্ভব ছিল? আর গাড়ি থেকে গুলি করলে গাড়ির গ্লাস ভাঙার কথা ছিল। কিন্তু তা কি আদতেই হয়েছে? ফোন রাখার আগ মুহুর্তে প্রদীপ দাস মাসুদকে জানান, তিনি এখন সেদিকেই যাচ্ছেন।

পরবর্তীতে লিয়াকত আলী এসপি মাসুদকে যা বলেন, তা হুবুহু তুলে দেয়া হচ্ছে এখানে-

"এখানে একটা প্রাইভেট কার আছে স্যার, ঢাকা মেট্রো লেখা। আর্মির পোশাক টোশাক পরা। তাকে চার্জ করছি, সে মেজর পরিচয় দিয়ে গাড়িতে চলে যেতে চাইছিলো। পরে অস্ত্র তাক করছিলো, আমি গুলি করছি স্যার। একজন ডাউন করছি, আরেকজন ধরে ফেলছি স্যার। স্যার আমি কি করবো স্যার? আমাকে পিস্তল তাক করছে, পিস্তল পাইছি তো স্যার।"

এরপরেই এসপি মাসুদের কথাটি রীতিমতো পিলে চমকানো। তিনি লিয়াকতকে একটি ঘটনা সাজিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। এসপি মাসুদ লিয়াকতকে বলেন-

"আচ্ছা, ঠিক আছে, তোমারে গুলি করছে, তোমার গায়ে লাগে নাই, তুমি যেইটা করছো, সেটা তার গায়ে লাগছে।"

এই দুটো ফোনকলের কথোপকথন থেকে পাঠক হয়ত আঁচ করতে পারছেন কতটা পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে মেজর সিনহাকে। এ এমনই এক নিঁখুত পরিকল্পনা, যা আপনাকে মনে করিয়ে দিবে জেমস রলিন্স কিংবা ম্যাথিউ রাইলির লেখা কোন থ্রিলার গল্পের।

piv3aUS.jpg


সিনহা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী সিফাত

এক দুর্ধর্ষ ত্রিমুখী পরিকল্পনা

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছুদিন ধরে মেজর সিনহা টেকনাফ-কক্সবাজার অঞ্চলের মাদক চোরাচালান নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করছিলেন। সাবেক এই মেজরের সাথে আরও ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী।

হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেল চারটার দিকে টেকনাফের বহুল বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাস সিনহার ডকুমেন্টারির জন্য ভিডিও সাক্ষাৎকার দেন। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ক্রসফায়ারের ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিরা ইয়াবা পাচারের কাজে নিজেদের ভূমিকার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হন। সিনহা তখনই প্রয়োজনীয় সবটুকু তথ্য পেয়ে যান। বাকি ছিল ডকুমেন্টারির উপসংহার। থানা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের গাড়িতে উঠে বসেন তিনি। সেদিন তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতও ক্যামেরা, ট্রাইপড ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে উঠতেই টেকনাফ সদর ছেড়ে তাদের গাড়িটি ছুটতে থাকে বাহারছড়ার পথে। বাহারছড়া সংলগ্ন মারিসঘোণা এলাকাতেই বসবাস করেন চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপ পরিচালনাকারী ইলিয়াস কোবরা। আর এই ইলিয়াস কোবরাকে পুরো ঘটনার সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট বলা চলে। ইলিয়াস কোবরা সেদিন ফোন করে সিনহাকে আমন্ত্রণ জানান তার বাড়িতে।

এদিকে সিনহা থানা থেকে বেরিয়ে যেতেই প্রদীপ ফোন করেন কক্সবাজারের এসপি মাসুদকে। দুজনেই তখন বেশ উদ্বিগ্ন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়, সমঝোতা নয় বরং চিরতরে সরিয়ে ফেলা হবে সিনহাকে।

মূলত একটি ত্রিমুখী পরিকল্পনা করা হয়। এসপি-ওসি এমনভাবে মার্ডার মিশন সাজিয়েছিল- সেই ফাঁদ থেকে সিনহার প্রাণে বাঁচার কোন সুযোগ ছিল না। বরং যা হয়েছে তা ছিল কেবল সময়ের হিসেবে কিছুটা দেরি।

তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইলিয়াস কোবরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, নানা কৌশলে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিনহাকে পাহাড়ি গ্রামে আট্কে রাখার। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে বেশ পরিচিতি থাকলেও, ইলিয়াস কোবরা ইদানিং ‌‍ক্রসফায়ারের তালিকায় নাম থাকার গুজব ছড়িয়ে অসংখ্য মানুষকে গোপনে ওসি প্রদীপের সঙ্গে সমঝোতা করিয়ে দেয়ার এক অভিনব ব্যবসায় নেমেছিলেন। বিভিন্ন অনুসন্ধান আর এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা যায়, ক্রসফায়ারের কবল থেকে জীবন বাঁচানোর সমঝোতায় ওসি প্রদীপ হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত। আর কমিশন হিসেবে ইলিয়াস কোবরা মাথাপিছু এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেতেন।

ওসি প্রদীপেরর অনুগত কোবরা ঠিকই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মারিসঘোণায় নিজের বাগানবাড়িতে নানা কৌশলে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নির্জন পাহাড়েই আটকে রেখেছিলেন সিনহাকে। এ সময়ের মধ্যে সিনহার অবস্থান, কতক্ষণ পর কোন রাস্তায় কোথায় যাবেন সেসব তথ্য জানিয়ে কোবরা ৯টি এসএমএস পাঠান ওসিকে।

tGD58Sh.jpg


প্রদীপ কুমার দাস

কিলিং মিশন

পরিকল্পনা মাফিক সন্ধ্যা ৭টার আগেই ওসি প্রদীপ তার দুই এসআই ও দুই কনস্টেবল নিয়ে নিজের গাড়িতে এবং আরো ৫/৭ জন পুলিশ সদস্যকে অপর একটি মাইক্রোবাসে নিয়ে দ্রুতই মেরিন ড্রাইভওয়ে ধরে উত্তর দিকে ছুটতে থাকেন। ওসি বাহিনী বাহারছড়া-কক্সবাজারের পথে শামলাপুর পুলিশ ক্যাম্পে যাওয়ার পথেই ইলিয়াস কোবরা নতুন খবর দেন তাকে। কোবরা ওসি প্রদীপকে ফোন করে জানান, এ মুহূর্তে মেজর সিনহা ও সিফাত মারিসঘোণার পাহাড় চূড়ায় উঠছেন।

ইলিয়াস কোবরাইই ফোনে ওসিকে জানান, সিনহা পাহাড় থেকে নেমে কিছু সময়ের জন্য মেরিন ড্রাইভওয়ে ব্যবহার করে টেকনাফের দিকে যেতে পারেন। এবং সেখান থেকে হিমছড়ির রিসোর্টে। এসব তথ্য ইলিয়াস বাগানবাড়িতে সিনহার থেকে আগেই আদায় করে নিয়েছিলেন। যাহোক, এই ফোনকলের পরেই ওসি প্রদীপ তার পরিকল্পনায় ব্যাপক রদবদল করেন। মারিসঘোণা থেকে তিন কিলোমিটার দূরের বড়ডিল নামক স্থানে ওসি ও তার সঙ্গীদের দুটি মাইক্রো থামিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতিতে অপেক্ষমাণ থাকেন সবাই।

অন্যদিকে ওসি প্রদীপ মারিসঘোণা এলাকার দুই জন সোর্স ছাড়াও ক্রসফায়ার বাণিজ্যে তার বেশ কজন সঙ্গীকে ফোন করে জানান, মারিসঘোণা পাহাড়ের চূড়ায় বেশ কয়েকজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়েছে। পাহাড় থেকে নামার চেষ্টা করলেই যেন এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ডাকাত ডাকাত চিৎকার জুড়ে দেয়া হয় এবং যাদের পাওয়া যাবে তাদেরকে যেন গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়। বাকি সবকিছু ওসি দেখবেন।

ওসির কাছ থেকে পাওয়া এমন খবর তার সেই বিশ্বস্ত কর্মীরা এই খবরটি পাহাড় সংলগ্ন চারপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ছড়িয়ে দিয়ে পূর্ণ সজ্জিত হয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু চৌকস সেনা কর্মকর্তা সিনহা পাহাড়ের চুড়ায় থাকাবস্থায়ই চারপাশে সাজ সাজ রব দেখে সতর্ক হয়ে উঠেন এবং পেশাগত জীবনের সবটুকু দক্ষতা দিয়ে সঙ্গীকে নিয়ে নেমে আসেন। বেশ কিছুসংখ্যক গ্রামবাসী ডাকাত ডাকাত চিৎকার জুড়ে দিয়ে তাদের চারপাশ থেকেই ধাওয়া দিতে থাকে। কিন্তু অভিজ্ঞ মেজর সিনহা প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা পেরিয়ে পাকা সড়কে পৌঁছে যান এবং দ্রুত নিজের গাড়িতে উঠে হিমছড়ির দিকে রওনা হন।

বাহারছড়ার মারিসঘোণা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরেই শামলাপুরের সেই পুলিশ চেকপোস্ট। ওসির নির্দেশে যেখানে এসআই লিয়াকতসহ একদল পুলিশ আরো আগে থেকেই ওৎ পেতে অপেক্ষায় ছিল- সেখানেই পৌঁছে যায় মেজর সিনহার গাড়িটি। গাড়িটির খুব কাছে অস্ত্র তাক করে লিয়াকত সিনহা ও সিফাতকে হাত তুলে সামনের দিকে মুখে করে নেমে আসার নির্দেশ দেন। আর গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই অব্যর্থ নিশানায় লিয়াকত পর পর চারটি বুলেটে বিদ্ধ করেন মেজর সিনহার দেহ।

পরবর্তীতে ওসি প্রদীপ এই চেকপোস্টে পৌঁছেই সিনহার লুটিয়ে পড়া দেহখানাকে পা দিয়ে চেপে ধরে আরো দুটি গুলি করেন। সেই সাথে ইয়াবা সমেত আটক দেখানো হয় সিফাতকে।

দুই বাহিনীর বক্তব্য

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হাবার পর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং পুলিশের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য বেশ শোরগোল সৃষ্টি করে। এরই প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল কক্সবাজারেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং পুলিশ আইজিপি বেনজির আহমেদ। বৈঠক শেষে দুই বাহিনীর দুই শীর্ষ কর্মকর্তা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।

জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, "যে ঘটনাটা হয়েছে সেটা নিয়ে নিয়ে অবশ্যই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আমরা মর্মাহত এবং পুলিশ বাহিনীর সবাই মর্মাহত।"

সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে এও উল্লেখ করেন, যে ঘটনা ঘটেছে সেটার সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে সেটার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। এর দায়-দায়িত্ব কোন প্রতিষ্ঠানের হতে পারে না।

এই ঘটনায় দুই বাহিনীর মাঝে পারস্পরিক দ্বন্দের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, "এই ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যাতে কোন ধরণের সম্পর্কে চিড় ধরানো বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার কোন প্রয়াস যাতে কেউ না চালায় সেজন্য সবাইকে অনুরোধ করবো।"

প্রায় একই সুরেই পুরো ঘটনাকেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং তাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় সৃষ্টি করবে না বলে নিজের বক্তব্য প্রদান করেন পুলিশ আইজিপি বেনজির আহমেদ।

মামলার ছড়াছড়ি

এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ৩ টি। সবচেয়ে চমকপ্রদ মামলা করেছে টেকনাফ পুলিশ। তাদের মামলার সংখ্যা দুটি। টেকনাফ থানা পুলিশের দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় পুরো ঘটনার দায় সিনহা এবং তার সাথে থাকা সিফাতের ওপর চাপানো হয়েছে। একটি মামলা করা হয়েছে মাদক এবং অস্ত্র আইনে।

অন্যদিকে সিনহার পরিবারের পক্ষ থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাস এবং এসআই লিয়াকতসহ নয় জনকে আসামি করে আদালতের মাধ্যমে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাটিও আদালতের নির্দেশে থানায় রেকর্ড হয়েছে। সিনহার বোনের দাবী, থানায় মামলা করলে তা দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এবং একারণেই মামলা করা হয়েছে আদালতে। আর এর তদন্তভার ন্যস্ত হয়েছে র‍্যাবের উপর।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top