ইন্ডিয়ান প্যারানর্মাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা এবং বিখ্যাত ভুত বিশেষজ্ঞ গৌরব তিওয়ারি এর ভৌতিক মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছিল বিশ্বের সব প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞদের। ৩২ বছরের এই তরুণকে তার নিজের বাড়ির বাথরুমে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, তাঁকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। কি ঘটেছিল গৌরবের? ভুত প্রেত নিয়ে গবেষণা করা এই ব্যক্তি কি তবে কোন অশরীরীর হাতে মারা গেলেন? আসুন জেনে নেই এই রহস্য সম্পর্কে…
গৌরব তিওয়ারি কে?
গৌরব তিওয়ারি ভূতপ্রেত নিয়ে চর্চা করতেন। সুনামও কুড়িয়েছেন এই জন্য। তার নেশা ছিল ভূত খোঁজা। সেই নেশাকেই পেশায় পরিণত করেছিলেন গৌরব। জানা গেছে, প্রায় ৬ হাজারের বেশি 'ভৌতিক বাড়ি'-তে রাত কাটান তিনি। বাড়িতে ভূত থাকার লক্ষন দেখলেই গৌরব ছুটে যেতেন সেখানে। লক্ষ্য ছিল, মানুষের মন থেকে ভূতের ভয়কে নির্মূল করা। ভৌতিক জায়গা বলে পরিচিত বাড়িগুলির সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেশ করা। এই ভাবনা থেকেই ২০০৯ সালে তিনি গড়ে তোলেন ইন্ডিয়ান প্যারানর্মাল সোসাইটি। প্রসিদ্ধ সব ভুতুড়ে বাড়িতে কন্ডাকটেড ট্যুরের আয়োজনও করতে হত গৌরবের ওই সংস্থাকে।
কিন্তু কীভাবে মৃত্যু হল গৌরব তিওয়ারি এর?
তিনি নিজ বাড়ির বাথরুমে ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা আচমকা একটি বিকট শব্দ শুনতে পান। তারা ছুটে যান। দরজা ভেঙে বাথরুমে ঢুকে তাঁরা দেখেন, মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছেন গৌরব। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, বাঁচানো যায়নি তাঁকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তাঁর ঘাড়ের ঠিক নীচে সরু একটা কালো দাগ রয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান- গৌরব আত্মহত্যা করেছেন। যদিও, সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। তাঁদের মতে, গৌরব ভীষণই হাসিখুশি প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তাই, তাঁর এভাবে আত্মহত্যা করার কোনো কারণ নেই।
তাহলে কীভাবে মারা গেলেন গৌরব তিওয়ারি?
এই ব্যাপারে গৌরবের স্ত্রীর কথা শুনলে চমকে উঠবেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে গৌরব একটি ভুতুড়ে বাড়িতে গিয়ে ভুতের সঙ্গে কথা বলেন। ইউটিউবে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ভুতের সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেখে অনেকেই চমকে ওঠেন। সেই ঘটনার পর থেকেই গৌরবের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। তার স্ত্রী জানান- সাম্প্রতিককালে, গৌরবকে বারবার বলতে শোনা গেছে, কোনো 'অশুভ' শক্তি তাঁকে টানছে। আর সেই শক্তিকে তিনি নিয়স্ত্রণ করতে পারছেন না। স্বামীর এই কথাকে তিনি গুরুত্ব দেয়নি বলে গৌরবের স্ত্রী। উল্টো তাঁর মনে হয়েছিল, কাজের চাপের কারণে তাঁর স্বামী হয়ত এমন সব কল্পনা করছে।
গত সাত বছরে গৌরব ভারতের প্রায় ছয় হাজার ভৌতিক বাড়িতে গিয়েছেন। ভূতপ্রেত নিয়ে চর্চাও করেছেন। সেই সব বাড়িতে আদৌ ভূত আছে কি না, তা নিয়ে 'তদন্ত'ও করেছেন। সেই ভূত-সন্ধানীর এমন ভাবে মৃত্যু অবাক করে দিয়েছে সকলকে! গৌরবের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের মত সব প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটরদের সব ভাবনা-চিন্তাই পাল্টে দিয়েছে। সারা জীবন মানুষকে 'ভূতের ভয়' থেকে মুক্ত করার প্রয়াস করে গিয়েছেন যে গৌরব, তাঁর 'ভৌতিক' মৃত্যুর রহস্যভেদে আজ সকলেই দিশেহারা।