What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other দিতি : কৈশরের ক্যানভাসে এক সাদাকালো সেলুলয়েড কন্যা (1 Viewer)

Placebo

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Jul 31, 2018
Threads
847
Messages
16,671
Credits
181,489
Recipe soup
Onion
XSEFO6o.jpg


নব্বই দশকের শুরু কিংবা মাঝামাঝি। আর আমাদের অনেকেরই শৈশবের শেষ মূহুর্ত। বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনায় গ্রামে ঢুকতে শুরু করলো চারকোণা বক্সের ইলেক্ট্রিক যন্ত্র- টেলিভিশন। আমাদের পাড়াতেও ঢুকলো একটা। সেই সাথে অন্য এক জগতের সন্ধান, তবে সবকিছু সাদাকালো। একি আজব কান্ডরে। পুরো দুনিয়া ছোট্ট একটা বাক্সের ভিতরে। তখনই আমাদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস হল আমেরিকা বলতে কিছু একটা আছে কিংবা লন্ডন বা কালোদের দেশ আফ্রিকা। এতদিন তো রুপকথার কিসসার মতন এগুলো অন্যমুখে শুনতাম। আমাদের বিস্ময় আটকে গেল ঐ আয়তাকার বস্তুতে। হাফপ্যান্টের পকেটে মার্বেলের আওয়াজ থমকে গেল কিংবা জ্যোস্না রাতের 'আয়রে আয় টিয়া' হারালো রাতের উঠোনেই! ধুলোপথে অহেতুক দৌড়াদৌড়ির রহস্যও ঠুটে গেল পা থেকে।

প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী টিলার উপরে ফরেস্ট অফিস, চারিদিকে সবুজের সমাহার। পুরো এলাকার হাতেগনা বিল্ডিংবাড়ির মধ্যে এটা একটি। অনুসন্ধানে জানা গেল এ অফিসেও আছে টেলিভিশন। শুক্রবার নামাজ শেষে কোনরকম খেয়েই হাটাঁর উছিলায় লাপাত্তা হয়ে যেতাম। মা খুব চেক দিয়ে রাখলো সম্ভব হতো না কৈশরের দুরন্তপনাকে রুখতে। নির্দিষ্ট সময়ের ঘন্টা খানেক আগে এসে বসে থাকতাম টেলিভিশনের সামনে। মানে আগেভাগে এসে রুমে জায়গা দখল। তা নইলে জানালার বাইরে দাঁড়ানো দর্শক হতে হবে। জানি না কোথায়, সুন্দর দাদার ঘরে নাকি ফরস্ট অফিসে আমি তার প্রেমে পড়ি। বালিকাসুলভ চাহনী কিংবা ডান গালের বড় তিল কোনটা আমাকে ছুয়ে গেল কিভাবে বলি।

আমরা ঘুরঘুর করতাম সুন্দর দাদার বাড়ি আশেপাশে, আমাদের বাড়ির সামনে ছোট্ট পুকুর, এর ওপারেই দূরসম্পর্কীয় ঐ দাদার ঘর। আগেরপক্ষ গত যাওয়াতে ঘরে দ্বিতীয় বৌ, আমাদের সুন্দরী দাদী। একটাই টিভি পাড়াজুড়ে, তার ঘরে। দিনে রাতে ভিড় লেগেই থাকত সেখানে, কয়েক পাড়া-বাড়িঘরের পুরুষ মহিলা আর আমাদের মতন ইঁচড়েপাকাদের হৈহুল্লুড়ে কী অবস্থা! টিভি দেখার উছিলায় ঐ ঘরের উঠোনে ভান করতাম নানা খেলাখলির। সহজে জায়গা হতো না আমাদের ভিতরে ঢোকার। দরজার খিল এঁটে দিত, এখানে বাচ্চাকাচ্চাদের কাম কি! মসজিদে যে দশা, এখানেও দেখি তাই। নামাজের কাতারের সামনের দিকে থাকলে পিছনে ঠেলে দেয়া হত, এখানেও ঠেলতে ঠেলতে এক্কেবারে দরজার ওপারে। আমরাও উঁকিঝুঁকি মারতাম, সুন্দরী দাদীরে ডাকতাম আহ্লাদী হয়ে। অন্য কেউ ঢুকার সময় ফাঁক দিয়ে গলে গেলে তো গেলাম, টিভির সামনে জড়সড়ো এক কোনায়। নিষ্পাপ, যেন আমাকে কেউ দেখেনি। আর শুক্রবারের দুপুরে তো ঢুকাই যেতো না। উপলক্ষ্য পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। আরেকটা ঝামেলা হয়ে গেল, মোল্লাবাড়ির ছেলে আমি। পাড়ার সব বাড়িতে তালেবে এলেমের ছড়াছড়ি। অতএব সুন্দর দাদার ঘরে যাওয়া অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। শরীয়তের নানা বিধিনিষেধ। আমরা তখন এসব বুঝতাম নাকি, বুঝতাম ছেলেপিলেরা নতুন কিছু করা মানে হচ্ছে বড়দের গা-চুলকানো। তো এখন কী হবে!

প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী টিলার উপরে ফরেস্ট অফিস, চারিদিকে সবুজের সমাহার। পুরো এলাকার হাতেগনা বিল্ডিংবাড়ির মধ্যে এটা একটি। অনুসন্ধানে জানা গেল এ অফিসেও আছে টেলিভিশন। শুক্রবার নামাজ শেষে কোনরকম খেয়েই হাটাঁর উছিলায় লাপাত্তা হয়ে যেতাম। মা খুব চেক দিয়ে রাখলো সম্ভব হতো না কৈশরের দুরন্তপনাকে রুখতে। নির্দিষ্ট সময়ের ঘন্টা খানেক আগে এসে বসে থাকতাম টেলিভিশনের সামনে। মানে আগেভাগে এসে রুমে জায়গা দখল। তা নইলে জানালার বাইরে দাঁড়ানো দর্শক হতে হবে। জানি না কোথায়, সুন্দর দাদার ঘরে নাকি ফরস্ট অফিসে আমি তার প্রেমে পড়ি। বালিকাসুলভ চাহনী কিংবা ডান গালের বড় তিল কোনটা আমাকে ছুয়ে গেল কিভাবে বলি। সে এক দিক-অদিক কিশোরমণ। সদ্য শৈশব পার হওয়া, ঘরের চৌকাঠ পিছনে ফেলে সময়-অসময়ের কাছে সপে দেয়া নিজেকে। ভাড়া-সাইকেলে ছুটে চলা মেঠোপথ আর ক্ষেতের আলে দুপুর হারানো কিংবা বিকেল কুড়ানো। টিভির পর্দায় শুক্রবারের কুশীলব রাজ্জাক, ববিতা, আলমগীর সুচরিতা, জসিম, শাবানা, উজ্জ্বল, রোজিনা প্রমুখদের বুড়িয়ে যাওয়া কিংবা সোমত্ত পার হওয়া বয়সের হুংকার, কান্নাকাটি, আবেগ-ঢলানী, গান-নাচ দেখতে দেখতে কখন এক ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি এসে দোলা দিয়ে গেল কিভাবে বুঝায়। উঠতি কিশোরের মন – এখন কি আর বোঝা যায় তারে! সে তো ফেলে এসেছি পিছনের বারান্দায়। মিলিয়ে গেছে যেন কচুপাতার টলমল পানির মত গড়িয়ে। টানাটানা চোখ আর গালের উপরে গড়িয়ে পড়া এক চিলতে চুল আমাকেও নিয়ে যেত ইলিয়াস কাঞ্চনের মত ঘাসের বিছানায় গড়াগড়িতে। পর্দার সামনে তাঁর সাথে চটুল গানে আমরাও ঠোঁট মিলাতাম- তুমি আজকে যাও বন্ধু/কাল এসো তাড়াতাড়ি/একদিন মনে হবে একটি বছর/করো নাকো একটু দেরি। লাজুক চেহেরায় সহজেই কাঞ্চনপ্রেমে ধরা দেয়া নায়িকা দিতির কাছে কত অভিযোগ তখন – কেন ধরা দিল সে! বাজুক না বাশির সুর আরো। গাছের নীচে ছটফটাক কাঞ্চনমন। এই যে ছটফটানী, এই যে হৃদয়হরণ – এ তো আমারও, আমাদেরও। এও যে বড় উপভোগ্য, এ শেষ মানে ম্রিয় হয়ে যাওয়া অনুভূতি। ফুরিয়ে যাওয়া মধ্যদুপুর আর কাহিনীর সমাপ্তি।

UGMuR7x.jpg


সহশিল্পী আফজাল হোসেনের সাথে পারভীন সুলতানা দিতি

তখন টিভির পর্দায় প্রায়ই বাংলা ছায়াছবি শুরুতে লেখা থাকতো –রঙ্গিন। আমরা বুঝতাম না। পরে শহরে এক দাদার বাড়ীতে বেড়াতে এসে কালারফুল পর্দায় দেখে বুঝে গেলাম রঙ্গিন রহস্য। আমরা জানতামই না সাদাকালোর বাইরে টেলিভিশনে অন্য রঙের সমাহার ছিল। এরপরেও সাদাকালো পর্দা আমারে কেন যেন টানতো। এখনো। কিশোরকালেই স্বপরিবারে উঠে আসা শহরের বাসাতে একমাত্র চাচা যখন নতুন বউ নিয়ে আসলেন। তখন ছোট মা'র সাথে সাথে চলে আমাদের টেলিভিশন। তাও সাদাকালো। নিজের ঘরেই টেলিভিশন। নিজের ঘরেই সিনেমা। ডিসের বহু চ্যানেলের বিষয় আশয় আমরা বুঝছি অনেক পরে। আমাদের কাছে টিভি মানে সাদাকালো, চ্যানেল মানেই বিটিভি। এখানেও অন্যান্যদের সাথে হাজির লাবন্যময়ী কন্যা দিতি। কখনো 'লেডি ইন্সপেক্টর' হয়ে ছুটছেন গুন্ডা নায়কের পিছনে, কখনো 'রুপনগরের রাজকন্যা' হয়ে প্রেমে বাধা পড়ে যাওয়া অচেনা রাজকুমারের কাছে, কখনো 'লুটতরাজ'র বিরুদ্ধে কলেজের ছাত্র সংসদের নেত্রীর জ্বালাময়ী বক্তৃতায় নায়িকা দিতিরে দেখতাম সাদাকালো টিভি পর্দায়। কখনো আফজাল হোসেন, কখনো জাফর ইকবাল, কখনো সোহেল চৌধুরী, কখনো নায়ক মান্না কখনো বা তরুন অমিত হাসান। নায়ক সোহেল চোধুরীর বিড়াল টাইপের চোখে জীবনের তরে ধরা পড়ারে ভাল লাগতো। আবার খারাপ লাগতো ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্য। তারেই মনেই হত দিতির জন্য পারফেক্ট। সোহেল চৌধুরী খুনের পর আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, এবার নিশ্চয় কাঞ্চনের সাথে একটা কিছু হওয়ার সুযোগ আছে। কাঞ্চনের তখন স্ত্রী মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। সে সময় তার সিনেমার শুরুতে লেখা থাকতো – নিরাপদ সড়ক চাই। যাক, হয়েও গেল সে মিলন। কিন্তু সিনেমার পর্দার মত বিচ্ছেদের অনলে পুড়ে আমাদের সেই আশা ঠুটে গেল অল্পদিনেই। ততদিনে আমরা বেশ বড় হয়ে গেছি অবশ্যই। এর আগে সালমান শাহ'র পর্দা জোয়ারে মন ভাসিয়ে চলে গিয়েছিলাম বহুতদূর। সে আরেক কাহিনী।

না ফেরার দেশে চলে গেলেও আমাদের চোখে ভাসে কিশোরের ক্যানভাসে সাদাকালো সেই রূপ-কুমারী। স্মৃতির মেঠোপথে দেখি ফেলে আসা পায়ের ছাপ। ফেলে আসা মধ্যদুপুরের ঘুমচুরি। যেন 'দুই জীবন' সিনেমার সমুদ্র সৈকতে দুরুন্ত সেই ষোড়শীর– একদিন তোমায় না দেখিলে তোমার/তোমার মুখের কথা না শুনিলে/পরান আমার রয়না পরানে- গেয়ে যাওয়া কথাগুলো হৃদয়ে টুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি ফরেস্ট অফিসের পাহাড়ি পথ বেয়ে, মায়ের চোখ রাঙ্গানির ভয়ে ভয়ে…পরবর্তী সপ্তাহের সেই সিনেমাবারের দুপুরে তারে দেখার, তার মুখের কথা শোনার ইচ্ছামতি হয়ে !

MuSArpI.jpg


নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও পারভীন সুলতানা দিতি

টেলিভিশন নাটকে নায়িকা দিতি বয়সের সাথে সাথে নিজেরে ব্যস্ত থাকলেও আমাদের দেখা পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্রের সেই রুপসী নায়িকা ছলে-বিছলে উঁকি দিত মনে। ক্যান্সারের সাথে লড়ে যাওয়া দিতিরে দেখতাম সেই কিশোরকালের সাহসী কন্যা, ভিলেনের গায়ে ঘুষি দিয়ে সামনে এগিয়ে চলা। কিন্তু জীবনে এগিয়ে চলারও শেষ আছে, মরণব্যাধির সাথে পারলেন না তিনি। আশির দশকে পর্দায় আসা চিত্রনায়িকা জীবনস্পন্দনের শেষ রেখা টেনে দিলেন অবশেষে।

না ফেরার দেশে চলে গেলেও আমাদের চোখে ভাসে কিশোরের ক্যানভাসে সাদাকালো সেই রূপ-কুমারী। স্মৃতির মেঠোপথে দেখি ফেলে আসা পায়ের ছাপ। ফেলে আসা মধ্যদুপুরের ঘুমচুরি। যেন 'দুই জীবন' সিনেমার সমুদ্র সৈকতে দুরুন্ত সেই ষোড়শীর – একদিন তোমায় না দেখিলে তোমার/তোমার মুখের কথা না শুনিলে/পরান আমার রয়না পরানে- গেয়ে যাওয়া কথাগুলো হৃদয়ে টুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি ফরেস্ট অফিসের পাহাড়ি পথ বেয়ে, মায়ের চোখ রাঙ্গানির ভয়ে ভয়ে…পরবর্তী সপ্তাহের সেই সিনেমাবারের দুপুরে তারে দেখার, তার মুখের কথা শোনার ইচ্ছামতি হয়ে !
 

Users who are viewing this thread

Back
Top