What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other ব্যক্তিত্ব ও কর্মে অপূর্ব বিপাশা হায়াত (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
oy0HOaa.jpg


'তুমি সেই তুলনাহীনা
অপলক আমার এ নয়ন
চেয়ে থাকে শুধু সারাক্ষণ'

নব্বই দশকে শৈশব-কৈশোর পার করা প্রজন্ম 'জনি প্রিন্ট শাড়ি'-র এই বিজ্ঞাপনী জিঙ্গেলটি ভুলবে কি করে! বিজ্ঞাপনে যে মোহিনী মেয়েটি আয়নায় নিজেকে দেখেছিল, একটা ব্রিজ পার হয়েছিল, শরবতের গ্লাস হাতে কপোলে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছিল সে-ই বিপাশা হায়াত। রূপে-গুণে অনন্যা তারকা।

বিপাশা হায়াত একাধারে অভিনেত্রী, স্ক্রিপ্ট রাইটার, চিত্রশিল্পী, উপস্থাপক, সমাজকর্মী। জন্ম ২৩ মার্চ ১৯৭১, ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা-য় পড়াশোনা। বাবা আবুল হায়াত, বোন নাতাশা হায়াত, স্বামী তৌকীর আহমেদ, ছেলেমেয়ে আরিব ও আরিশা, বোনজামাই শাহেদ শরীফ খান। সাংস্কৃতিক পরিবারেই তার বিচরণ।

তৌকীর আহমেদের সাথে তার পরিচয় ঘটে মঞ্চে কাজ করতে গিয়ে। তারা একে অপরের কাজের খবর রাখত এবং প্রশংসা করত। ভালো বন্ধুত্ব থেকে ভালো লাগা এরপর একসময় তৌকীর সিদ্ধান্ত নেয় বিপাশাকে বিয়ে করার জন্য। পারিবারিকভাবেই উদ্যোগ নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় ১৯৯৯ সালের ২৩ জুলাই। 'ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প'-র একটা পর্বে বিপাশা-তৌকীর জুটির লাভ স্টোরি বলা হয়েছে।

টিভিতে প্রথম অভিনয় 'খোলা দুয়ার' নাটকে আশির দশকে ১৯৮৪ সালে। প্রথমবার জনপ্রিয়তা পায় হুমায়ূন আহমেদ-এর 'অয়োময়' নাটকের 'লবঙ্গ' চরিত্রের মাধ্যমে। এ চরিত্রের জনপ্রিয়তার পরে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

TvNPRjv.jpg


অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক/টেলিফিল্ম : রূপনগর, হারজিত, থাকে শুধু ভালোবাসা, অতিথি, নকশী পাঁড়ের মানুষেরা, চেনা অচেনা মুখ, গ্রহণকাল, দ্বৈরথ, অঙ্কুর, অহর্নিশ ভালোবাসে একজন, কথা ছিল, আশিক সব পারে, উজান পাখি, বৃষ্টির দিন, ভুলোমন সেইজন, বিশ্বাসঘাতক, আমি তোমায় ভালোবাসি, হারানো সুর, আকাশের কাছাকাছি, প্রিয়জন, কালো গোলাপের কাব্য, তোমার বসন্ত দিনে, দুই বোন, চখাচখি, সেই ভুবনে, শুরুর কবিতা, অন্যপৃষ্ঠা, বিবর্ণ প্রজাপতি, বীজমন্ত্র, সঙ্গী, কখনো দুজন, অরণ্যে একদা, টেরিবাবু, শঙ্কিত পদযাত্রা, সুখের নিশান, চাই, হেঁট, ভোর হয়ে এলো, একা, লজ্জা, মায়াকুণ্জ, কাগজের বউ, মামলার ফল, প্রত্যাশা, এক জোনাকি, কাদম্বিনী, সম্প্রীতি গাঁথা, নিমরাজি, তোমাকে ছুঁয়ে, প্রতি চুনিয়া, শুধু তোমাকেই জানি, প্রত্যাশা, বেলী, দোলা, অন্যকিছু, সুন্দরী, হাঁসুলী, অচেনা তারা, পদ্মাবতী, চাঁদপোকা ঘুণপোকা, গণ্ডি, উইজা বোর্ড, অস্তিত্ব, স্ত্রীর পত্র, জলছবি, ফিরে যাও, নির্জন স্রোত, একটি নীল জামা, দুই প্রান্তে, লাল রঙের গল্প, পোট্রেট, শেষ বলে কিছু নেই, ডুয়েল প্লে।

নিজের রচিত নাটক প্রায় ৪০টি।
প্রথম লেখা নাটক – শুধু তোমাকেই জানি (১৯৯৭)

নাটকে বিপাশার জুটি ছিল প্রধানত তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসানের সাথে। তৌকীরের সাথে অনেক নাটক হবার পাশাপাশি দর্শক জাহিদ হাসানের সাথে জুটিকেও খুব পছন্দ করত এবং আফসোস করে অনেকে এ জুটি সেভাবে দাঁড় না হওয়াতে। বিপাশা-তৌকীর জুটি দাঁড় হবার পেছনে তাদের বন্ধুত্ব ছিল প্রধান। শিডিউল মেলানোর জন্য দুজনই দুজনের খোঁজ রাখত। ফোন করে জেনে নিত ফ্রি আছে কিনা নতুন নাটকে কাজ করার জন্য।

নাটকে 'অয়োময়'-এর লবঙ্গ জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত চরিত্র। 'রূপনগর' নাটকে সমূহ বিপদে থাকা তৌকীরকে বিপাশা দিয়েছিল মানসিক সাপোর্ট। চমৎকার একটি চরিত্র ছিল। 'থাকে শুধু ভালোবাসা' নাটকে ফেরদৌসের বিপরীতে বিপাশার করুণ প্রেমের অভিনয় দর্শক আজও মনে করে। 'তোমাকে ছুঁয়ে' নাটকে নিজের সময়ের আর একজন তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করে অসাধারণ অভিনয় করেছে। এমন অনেক নাটক আছে বিপাশার যেগুলো কালজয়ী।

মা তার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। নাটক প্রচারের পর মায়ের সমালোচনা থাকতই। কোন চরিত্রটি কিভাবে করলে আরো বেটার হত পরামর্শ দিতেন।

বিজ্ঞাপনে নব্বই দশকের পর অন্যান্য সময়েও দেখা গেছে। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে। যেমন –
জনি প্রিন্ট শাড়ি, লাক্স, এসেমসি ওরস্যালাইন, ভ্যাসলিন, প্রাণ পাউডার মিল্ক, চপস্টিক নুডলস, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেন্জ, ফ্রেশ লবণ, সিঙ্গার ওয়াশিং মেশিন।

NWgPPIa.jpg


বিপাশা চলচ্চিত্রে খুব কম কাজ করেছে। এত অসাধারণ একজন অভিনেত্রী মাত্র তিনটি ছবিতে কাজ করা দুঃখজনক। হয়তো নির্মাতারা তাঁকে কাজে লাগাতে পারেননি চলচ্চিত্রে। অবশ্য তারও আগ্রহ কতটা ছিল দেখার বিষয়। অনেকে হয়তো জানে না ১৯৯৩ সালে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবিতে তৌকীর আহমেদকে প্রথমবার নায়কের প্রস্তাব দেয়া হলে বিপরীতে নায়িকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বিপাশাকেই।

অভিনীত ছবি – আগুনের পরশমনি, জয়যাত্রা, বৃষ্টি।
পোস্টার ডিজাইন করেছে 'হালদা, ফাগুন হাওয়ায়' ছবির।
কণ্ঠশিল্পী ছিল 'রূপকথার গল্প' ছবিতে।

চলচ্চিত্রে চরিত্রায়ণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য 'আগুনের পরশমনি।' মুক্তিযুদ্ধে একটি অবরুদ্ধ বাড়িতে মা-বাবা ও বোনের সাথে বাস করে। মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূরের সাথে তার দেখা হয়। চরিত্রটি ছিল স্বাধীনতাপ্রিয়, মুক্তিযোদ্ধাকে মানসিকভাবে উৎসাহ দেয়ার। অসাধারণ অভিনয় ছিল। 'জয়যাত্রা' ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় সন্তান ফেলে যেতে হয় বিপাশাকে। করুণ সে দৃশ্যে তার ডুকরে কাঁদার অভিনয় অনবদ্য ছিল। এরপর নৌকায় আশ্রয় নেবার পর অন্যের সন্তানকে নিজের মমতায় বেঁধে নেয়। অসাধারণ অভিনয় ছিল।

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় 'আগুনের পরশমনি' (১৯৯৪) ছবিতে।
মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার (দর্শক জরিপ)- ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০০।
এছাড়া ইউনেস্কো, অন্যদিন পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, যায় যায় দিন-সহ আরো পুরস্কার পেয়েছে।

বিটিভিতে বিপাশা গান গেয়েছিল বাউল দলের সাথে 'আজই ভালো কইরা বাজাও রে দোতারা / সুন্দরী কমলা নাচে।' বহুরূপী গুণের অধিকারী প্রমাণ দিয়েছে।

উপস্থাপনাতেও বিপাশা উদাহরণ তৈরি করেছে। 'বিপাশার অতিথি' নামে একটি অনুষ্ঠান তার উপস্থাপনায় জনপ্রিয় হয়েছে। কিছুদিন আগে তৌকীর আহমেদের 'ফাগুন হাওয়ায়' ছবির প্রচারণা করতে 'ফাগুন হাওয়ায় বিপাশার সাথে' নামের অনুষ্ঠানেও উপস্থাপনা করেছে। আবৃত্তিকার হিসেবেও তার নাম আছে।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন-সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে বিপাশার চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। ২০১৬ সালে শিল্পকলা একাডেমি থেকে চিত্র প্রদর্শনীর উপরে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। এসিড আক্রান্ত নারীদের সাহায্যের জন্য আয়োজিত প্রদর্শনীতে নিজের আঁকা ছবি দিয়েছিল। কলামও লিখেছে পত্রিকায়। বাবা আবুল হায়াতকে নিয়ে 'বাবা দিবসে' প্রকাশিত তার একটি লেখা ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। লেখাটি বাবাকে ঘিরে প্রতিটি মেয়ের অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট।

তার মধ্যে মার্জিত ব্যক্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজেকে খুব সহজ-সরলভাবে তুলে ধরাতেই তার তৃপ্তি কাজ করে।

বিপাশা হায়াত এভাবেই রূপ ও গুণের পূর্ণাঙ্গ একজন তারকা। ব্যক্তিত্ব ও কর্ম দিয়ে নিজের প্রজন্মে গর্বের সাথে বিচরণের পর আগামী প্রজন্মের কাছেও হয়েছে সার্থক দৃষ্টান্ত।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top