What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other টেলি সামাদ : ত্রিকোণ শিল্পী অধ্যায় (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
4RrQRRt.jpg


* আমাকে নায়ক হতে বলেছিল অনেকে। আমি কানে নেই নি। আমি বিশ্বাস করতাম নায়কের অনেক পছন্দের তফাত থাকতে পারে দর্শকের মধ্যে, কেউ এক নায়ককে পছন্দ করে তো অন্য কেউ করে না। কিন্তু একজন কৌতুক অভিনেতা যদি দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারে তাহলে তাকে সব দর্শক মনে রাখে।
* আমাকে স্কুলের শিক্ষক বলতেন-'তুই বড় হয়ে কি হবি রে?' বলতাম-'আমি ত্রিকোণ শিল্পী হবো।' স্যার বলতেন-'এটা আবার কি?' বলতাম-'আমি একইসঙ্গে অভিনয় করব, গান গাইব আর ছবি আঁকব।'
– টেলি সামাদ

একজন টেলি সামাদ তাঁর কৌতুক অভিনেতা হবার আইডিওলজিতে শতভাগ সফল অন্যদিকে ত্রিকোণ শিল্পীও তিনি হতে পেরেছেন। অভিনেতা হয়েছেন বেতার, মঞ্চ, টিভি, চলচ্চিত্র মিলিয়ে। গায়ক হয়েছেন প্রায় ৫০ টি ছবিতে। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন একটিতে। চিত্রশিল্পী হয়েছেন নিজের চেষ্টায়। সব্যসাচী একজন প্রতিভা।

তাঁর জন্ম ৮ জানুয়ারি, ১৯৪৫, মুন্সীগঞ্জ জেলায়। বিয়ে করেছেন দুটি। ছেলে দিগন্ত সামাদ একজন শিল্পী। খুব ডানপিটে স্বভাবের মধ্য দিয়ে শৈশব-কৈশোর পার করেছেন। শৈশবে স্কুল পালাতেন খুব। স্কুল থেকে অভিযোগ আসত। বিড়ি যেদিন ধরেছিলেন পেছন থেকে কান ধরে চড় মেরেছিলেন তাঁর বড়ভাই। চিত্রশিল্পী হবার পেছনে তার স্কুল শিক্ষকের অবদান ছিল।

মূল নাম আবদুস সামাদ। টেলিভিশনে জনপ্রিয় হবার পর বিটিভির ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মাহমুদ একদিন ডাকলেন। বললেন-'তুমি তো খুব জনপ্রিয় হয়েছ টিভিতে তাই তোমার নামের নতুন টাইটেল ঠিক করেছি।' নাম দিলেন 'টেলি সামাদ।' প্রথমে খুব ভয়ে ছিলেন তিনি দর্শক গ্রহণ করবে কিনা সেজন্য। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে এ নামে প্রথম ছবি 'পায়ে চলার পথ' মুক্তির পর সাড়া পড়ে গেল, দর্শক গ্রহণ করলেন তাঁকে। এ ছবিতে মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। মিষ্টি খান আর পয়সা চুরি করেন। মিষ্টি নিয়ে নানা কান্ড ঘটে তাঁর মাধ্যমে। দর্শক ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছিল তাঁর কৌতুক। 'সুজন সখি' ছবিতেও দর্শক তাঁকে খুব গ্রহণ করেছিল। কবরীকে ভালোবাসতেন মনে মনে তাঁর জন্য খানআতার দোকান থেকে স্নো, পাউডার চুরি করে নিয়েন। এ ছবিতে 'শ্যাম পিরিতি আমার অন্তরে' গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। আরেকটি লাইমলাইট ছবি 'নয়নমণি'-তেও দারুণ জনপ্রিয় হয় তাঁর কৌতুক। এটিএম শামসুজ্জামান তাঁকে দল বেঁধে মারতে আসেন গানবাজনা করার কারণে। তখন টেলি সামাদ বলেন-'আমার রাইতে কালাজ্বর আসে আমারে মাইরা কি করবেন!' 'দিলদার আলী' ছবিটি তাঁকে ট্রেন্ড তৈরি করে দিয়েছিল। এ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের পর দর্শক তাঁকে 'দিলদার আলী' বলা শুরু করেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় খানসেনার সামনে পড়েছিলেন। কোনোমতে বেঁচে যান নিজের আর্টিস্টের পরিচয় দিয়ে। যখন চলে যেতে বলে পেছন থেকে তাঁর পিঠ সুড়সুড় করেছিল কারণ মনে হয়েছিল এই বুঝি গুলি করল। এভাবে আরো একবার বেঁচে যান। তিনি মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর নবজন্ম হয়েছিল।

iOQwbzn.jpg


জলরং-এর ছবি আঁকতেন। জলরং-এর অনেক ছবি এঁকেছিলেন নেপালে। বাসা থেকে অনেকে ছবি নিয়ে যেত। স্যুটিং-এর ফাঁকে আঁকতেন। তবে ছবির প্রদর্শনী করা হয়নি কখনো।

প্রথম ছবি 'কার বউ'। প্রথম লাইমলাইটে আসেন 'নয়নমণি' ছবি দিয়ে।উল্লেখযোগ্য ছবি : পায়ে চলার পথ, অবাক পৃথিবী, সোহাগ, গুণাহগার, কার বউ, নয়নমণি, আগুনের আলো, অশিক্ষিত, ফকির মজনু শাহ, পাগলা রাজা, মধুমিতা, হারানো মানিক, মিন্টু আমার নাম, দিন যায় কথা থাকে, নদের চাঁদ, মাটির ঘর, নওজোয়ান, নাগরদোলা, চন্দ্রলেখা, দিলদার আলী, কথা দিলাম, শেষ উত্তর, এতিম, ভালো মানুষ, অভাগী, চাষীর মেয়ে, বন্দিনী, গুণ্ডা, মতিমহল, এখনই সময়, দি ফাদার, আলিফ লায়লা, কলমিলতা, লাল কাজল, নতুন বউ, লাইলী মজনু, নয়নের আলো, মিস ললিতা, ছুটির ফাঁদে, শ্বশুরবাড়ি, মায়ের আঁচল, বন্ধু আমার, দেশ-বিদেশ, মান-অভিমান, মনা পাগলা, সখিনার যুদ্ধ, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, ভাত দে, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, মোঘল-এ-আজম, কে আমি, মায়ের চোখ, রাজা সূর্য খাঁ, জিরো ডিগ্রী।

টলিউডের 'রাখাল রাজা' ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ওখানকার কমেডিয়ানের সাথে তিনিও পর্দা কাঁপিয়েছিলেন। আরেক মাস্টারপিস কমেডিয়ান দিলদারের সাথেও তিনি কমেডিতে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন কিছু ছবিতে।

তাঁর শেষ ছবি অনিমেষ আইচের 'জিরো ডিগ্রী।' অনিমেষের আগের ছবি 'না মানুষ'-এও অভিনয় করেছিলেন কিন্তু ছবিটি মাঝপথে নির্মাণ কাজ থেমে যায়।

নায়করাজের প্রতি তিনি খুব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। লিজেন্ড রাজ্জাক কখনো তাঁকে নাম ধরে ডাকতেন না বলতেন 'টেলি সাহেব।' লিজেন্ড খানআতার সাথেও তাঁর চমৎকার সম্পর্ক ছিল। তুই তোকারি করতেন। আদর করতেন খুব। তাঁর মুখ দেখেই বুঝতেন টেলি সামাদ কোনো সমস্যায় আছেন কিনা। অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকলে নিজের উদ্যোগে টাকা দিয়ে দিতেন। অশোক ঘোষের একটি ছবিতে মেয়ে সাজতে হয়েছিল এবং তিনি নায়িকা শবনমকে মজা করে বলেছিলেন-'দেখেন তো কাকে বেশি সুন্দরী লাগে আপনাকে না আমাকে!'

'প্যাটের খিদায় ইচ্ছা করে
গাড়ির নিচে মারি ঝাঁপ
ক্যান যে বিদ্যাশে আইলাম বাপরে বাপ!'

'দেশ-বিদেশ' ছবিতে রথীন্দ্রনাথ রায়ের এ গানে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছিলেন টেলি সামাদ। ছবিটি আমেরিকায় স্যুট হয়েছিল। মিউজিক্যাল এ ছবির অন্য সব গানের পাশাপাশি এ গানটিও সুপারহিট হয়েছিল।

তিনি গান গেয়েছেন ৫০-এরও বেশি ছবিতে। সঙ্গীত পরিচালকও ছিলেন একটি ছবিতে। তাঁর ছেলে দিগন্ত সামাদও গান করেন। জনপ্রিয় কয়েকটি গান :

শ্যাম পিরিতি আমার অন্তরে – সুজন সখী
দিওয়ানা বানাইয়া – মতিমহল
দিলদার আলী আমার নাম – দিলদার আলী
আমার বড় ভাইয়া – গরিবের বন্ধু
কে বলে পাগল রে তুই – মনা পাগলা
কাউয়া কমলা খাইতে জানে না

টেলি সামাদের কৌতুক অভিনয় ছিল লাইভের মতো। চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি এমন স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। চোখ বড় করে ছোট করে একই সময়ের মধ্যে মুড পরিবর্তন করে সুইচ অন-অফ করে কমেডি করতেন। সাদাকালো থেকে রঙিন সময় পর্যন্ত দর্শক তাঁর কমেডি উপভোগ করেছেন পর্দায়।

00lkBB5.jpg


তিনি নাটক করেছেন বেশকিছু। তার মধ্যে সম্পর্ক, জব্বর আলী, তিন মাথা এগুলো অন্যতম। হানিফ সংকেতের 'ইত্যাদি' এবং ঈদ 'আনন্দমেলা'-তে কৌতুক করতেন একসময়।

ঝাঁকড়া চুলের জন্য তাঁর সহকর্মী ও বন্ধুরা মাইকেল জ্যাকসন বলতেন মজা করে। তাঁকে দেখতেও তেমনই লাগত।

এত সাফল্যের পরেও তাঁর জীবনের বড় আফসোস তাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়া হয় নি। প্রায়ই এ আফসোস করতেন।

পা ও লিভারের সমস্যায় ভুগেছেন দীর্ঘদিন। অবশেষে ৬ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে ঢাকায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

টেলি সামাদ একজন সফল গুণী ব্যক্তিত্ব। নিজের আইডিওলজিতে যে শিল্পচর্চা শুরু করেছিলেন সেই অভিনয়+গান+ছবি আঁকার ত্রিকোণ সব্যসাচী শিল্পী তিনি হতে পেরেছিলেন। নিজের লক্ষ্যকে ঠিক রেখে সাধনা করে যাওয়াতেই তিনি সফল হয়েছেন। তাঁকে দেখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সাধনার শিক্ষাটি পাবে শতভাগ।

টেলি সামাদ নামটি অমর থাকবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top