What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other ভালোবাসার রঙ: সাত বছর আগে যে পরিবর্তন আসে (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
WcUPtgk.jpg


২০১২ সালের কথা। তখনকার সময়ে পোস্টারে অশ্লীলতার ছাপ না থাকলেও বেশিরভাগ পোস্টার যথেষ্ট মানসম্পন্ন হতো না। গদবাধা কয়েক হালি মাথাওয়ালা পোস্টারে ভরা থাকতো অলিগলি রাস্তার দেয়াল, ওভারব্রীজের পিলার, টিনের বেড়া, ইলেকট্রিক খুঁটি ইত্যাদি জায়গা। স্বভাবতই যারা সিনেমাহলের নিয়মিত দর্শক না, তারা ওসব পোস্টার এড়িয়ে যেতো, এখনো অনেকেই এড়িয়ে যায়। কারণ বিগত এক যুগ ধরে তারা বাধ্য হয়ে এটাই করে এসেছে, আর পূর্বের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ পরবর্তীতে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। গুণীজনেরা শুধুশুধু বলেননি, মানুষ অভ্যাস তৈরী করে, পরবর্তীতে অভ্যাস মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ঠিক সে সময়ে জোড়া দুটি মুখ সংবলিত এক অচেনা নায়ক-নায়িকার নান্দনিক রঙিন সব পোস্টার/বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে শহর থেকে গ্রাম। বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শক হোক আর না হোক, রাস্তা দিয়ে চলাফেরার সময় সবাই অন্তত একবার পোস্টারগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। অচেনা-অজানা মুখ দেখে মনেমনে একটা বিশেষণ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ হয়তো আন্দাজ করেছে, নতুন কিছু আসছে…

X5jCVL4.png


ঠিক তাই। ২০১২ সালের ৫ই অক্টোবর "ভালোবাসার রঙ" মুক্তির মাধ্যমে অনেক নবীনের অভিষেক হয়েছে ঢালিউড নামক আমাদের এই ছোট্ট কুঁড়েঘরে। এছবির পোস্টারগুলোর উপরে লেখা ছিল, রেড ক্যামেরায় নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি। এটা নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট বিতর্ক আছে। কেউ বলেন ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত "খোঁজ – দ্য সার্চ" বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি। কেউ বলেন স্বপন চৌধুরী পরিচালিত "লালটিপ" বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি। কেউ বলেন কাজী হায়াতের "ক্যাপ্টেন মারুফ" প্রথম ডিজিটাল ছবি। কারো মুখে শোনা যায় মোহাম্মাদ হোসেন জেমীর "রাজধানী" প্রথম ডিজিটাল ছবি। অনেকে বলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিমের "মনপুরা" এদেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি। অনেকে আবার এস.এ হক অলিকের "হৃদয়ের কথা" কিংবা "আকাশছোয়া ভালোবাসা" এর কথা বলেন। তবে এগুলোর মধ্যে "লালটিপ" কে সর্বাধিক মানুষ গ্রহনযোগ্য মনে করে থাকেন। মোদ্দাকথা, "ভালোবাসার রঙ" মোটেও রেড ক্যামেরায় নির্মিত ডিজিটাল ছবি, কিন্তু প্রথম না।

OlbAGXy.jpg


তবে "ভালোবাসার রঙ" একটা কাজ খুব ভালোভাবে করেছে; ৩৫ মি.মি যুগকে কফিনে ভরে দিয়েছে। পরবর্তীতে মনসুন ফিল্মস এর "নিঃস্বার্থ ভালোবাসা" সেই কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে। ৩৫ মি.মি যুগ নিয়ে কার কি ধ্যান ধারণা তা জানি না, আমি এই লালচে ঝিরঝির পর্দা নিয়া শেষ কয়েক বছর যারপরনাই বিরক্ত ছিলাম। ২০০৫-০৬ থেকেই যখন দেখি দুনিয়াতে ঝকঝকে পর্দার রাজত্ব শুরু হয়ে গেছে, তখন কেন শুধুমাত্র আমরাই ২০১২ এ এসেও এই ঝিরঝির পর্দার ছবি গিলছিলাম, তার কোনো উত্তর পাচ্ছিলাম না। অবশেষে সেই যুগের অবসান হলো। বলাবাহুল্য, আরো ৭-৮ বছর আগে হলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্যেই ভালো হতো, অন্তত এখন হাতে ৪০০ হল এবং দশ-বারো খানা মাল্টিপ্লেক্স থাকতো।

৩৫ মি.মি রিলের মেশিনে একটা ছবি বানানোর পর মুক্তি দিতে অনেক খাটনি করা লাগতো। যদি উপযুক্ত ক্যামেরা দিয়ে শ্যুট করা না হয় তবে একটা ছবিকে সম্পূর্ণ তৈরির পর সেটাকে আবার ৩৫ মি.মির ফর্মেটে পরিবর্তন করা লাগতো। এটা বেশ ভালো খরুচে কাজ। এছাড়া রিলে তে যদি সামান্য কোনো নখের আঁচড় পরে, সেটা বড়পর্দায় বিশাল বড় দাগের সৃষ্টি করতো। আমরা যে আগেরকালের সিনেমার স্ক্রিনে কিছুক্ষণ পরপরই ঝিরঝির দাগের বৃষ্টি হতে দেখি, এটা মূলত ঐ আঁচড়ের ফলাফল। এছাড়া পাইরেসি ছিল একটা বড় সমস্যা। খুব সহজেই সিনেমার ডিভিডি কপি বের করা যেতো, ধরা খাওয়ার চান্স কম ছিল।

ডিজিটালে ঐ ঝামেলা নাই। প্রথমত, এখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সিনেমা প্রদর্শিত হয়। কোনো রিল স্থাপন-প্রতিস্থাপনের ঝামেলা নাই, রিলের ফিতায় প্যাঁচ লাগার টেনশন নাই। সবকিছু আগেই গোছানো অবস্থায় রেডি করা থাকে, প্রজেকশন রুমে বসে আপনি শুধু একটি বোতাম টিপে প্রদর্শন শুরু করবেন। মাঝে ইন্টারভাল আসলে পজ (pause) করবেন। ১০ মিনিট পর আবার চালু করবেন। পর্দায় দেখতে পাবেন ঝকঝকে-তকতকে সিনেমা। পাইরেসি হওয়ার কোনো চান্সই নাই, যদি সরাসরি হল থেকে পাইরেসি না হয়। কারণ সিনেমাটি রেডি করে পেনড্রাইভে দেওয়ার আগে একটি সফটওয়্যার দিয়ে লক করে দেওয়া হয়, যার পাসকোর্ড শুধুমাত্র হলসংশ্লিষ্টরা জানে। সিনেমা চলার মাঝে যদি পর্দার ওপর কোনো ক্যামেরার লেন্স পড়ে তবে প্রজেকশন রুমে সাথেসাথে একটি সফট সিগনাল যায়, যেকারণে দেখবেন বলাকা কিংবা মধুমিতার মতো বিশাল হলে কেউ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গেলে গেটের কাছে থাকা হলকর্মকর্তা খুব কম সময়েই টের পেয়ে যান, এবং ঐ ক্যামেরা খুজেঁ বের করেন। ডিজিটাল প্রজেক্টরের আরেকটা সুবিধা হলো এর মাধ্যমে চাইলে এনালগ প্রযুক্তির ছবি, ১৬ মি.মি কিংবা ৮ মিমি এর ছবিও প্রদর্শন করা সম্ভব; যেটা পূর্বের রিলে মেশিনে সম্ভব ছিল না।

0tvYGx8.jpg


"ভালোবাসার রঙ" আমাদের সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোতে ঝকঝকে ছবি ও ক্লিয়ার সাউন্ড উপহার দিয়েছে। এর আগে যত ডিজিটাল ছবি মুক্তি পেয়েছে তার কোনোটাই সফলভাবে ডিজিটালি সিঙ্গল স্ক্রিনে চলেনি, শুধুমাত্র স্টার সিনেপ্লেক্সের দর্শকরা সেই মজা উপভোগ করতে পেরেছিল। এছবি মুক্তির আগে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া সারাদেশে ভালোভালো ৫০ টি হলে ডিজিটাল প্রজেক্টর বসায়। এটা নিয়েও কম বাকবিতন্ডা ও নোংরা পলিটিক্স হয়নি। হলমালিকরা রাজি হচ্ছিল না প্রজেক্টর নিতে। সেব্যাপারে অন্য আরেকদিন আলোচনা করা যাবে।

সেসময়ের যুগল পরিচালক শাহীন-সুমন এছবিটি পরিচালনা করেন, তাদের ক্যারিয়ারের প্রথম ডিজিটাল ছবি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিষেক হয় এই সময়ের প্রভাবশালী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার। নতুন জুটির অভিষেক হয়, বাপ্পী চৌধুরী ও মাহিয়া মাহির। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় হালের ক্রেজ পুজা চেরির। ভিলেন হিসেবে প্রথমবারের মতো বড়পর্দায় পদার্পণ করে অমিত হাসান তার ডুবতে থাকা ক্যারিয়ার যথেষ্ট সাহায্য পায়। আইটেম গানের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বড়পর্দায় পা রাখেন বিপাশা কবির, পরবর্তীতে নায়িকা তকমা অপেক্ষা আইটেম কন্যা তকমাতেই তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন। এতো এতো নতুনত্ব জড়িয়ে আছে এক সিনেমার সাথে, সেই সিনেমাকে বাংলা সিনেমাপ্রেমীরা ভুলে থাকবে কিকরে?

সিনেমার গল্পে অবশ্য তেমন নতুনত্ব নেই। তেলেগু ছবি "বাভা" এর সাথে এছবির গল্পের কিছুটা মিল পাওয়া যায়। (জাজ থেকে পরে বলা হয়, মাসুদ রানা সিরিজের একটি বইয়ের ছায়া অবলম্বনে) অভিনয়েও বাপ্পী-মাহি জুটি আহামরি মুগ্ধতা ছড়াতে পারেননি। তবুও ছবিটিকে আপামর জনসাধারণ গ্রহণ করেছেন। কারণ মেকিং এ এছবি এদেশীয় মাস অডিয়েন্সকে "লার্জার দ্যান লাইফ" ফিল দিয়েছে। এমন ঝকঝকে পরিষ্কার পর্দা আগে কখনো দেখেননি, এমন অভিব্যক্তি বহু মানুষের মুখে শুনেছি।

২০১২ সালের ৫ই অক্টোবর "ভালোবাসার রঙ" মুক্তি পায়। গতকাল এছবিটির ৭ বছর পূর্ণ হলো। এছবি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা, ডিজিটাল ছবির পথযাত্রাকে ত্বরান্বিত করার জন্যে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top