What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review আত্ম অহংকার: দোলা’র সুখস্মৃতির পর আবার হাজির মৌসুমী-সানী (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
SBgt83a.jpg


বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তখন যৌবনের শেষ প্রান্তে। নবীন প্রবীণ শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক আর কলা কুশলীদের তখন বৃহস্পতি তুঙ্গে। যে ছবি মুক্তি পায় সেই ছবি দেখতেই নতুন প্রজন্মের দর্শক ও সপরিবারে যাওয়া নারী দর্শক সবাই হলে ছুটে যায়। নতুন প্রজন্ম তখন সালমান শাহ-ওমর সানী দুই নবীন নায়কে বিভক্ত। ঠিক সেই মুহূর্তে মুক্তি পেলো 'আত্ম অহংকার' সিনেমাটি। যে দর্শকরা মাত্র কদিন আগে সানী-মৌসুমী জুটির প্রথম সিনেমা 'দোলা' দেখার সুখস্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত সেই দর্শকদের সামনে আবারও সানী-মৌসুমী জুটি হাজির হয়ে গেলো।

এ যেন মেঘ না চাইতেই তুফান পাওয়া অবস্থা। সালমান-মৌসুমী জুটি যখন ভাঙন ধরেছিলো ঠিক তখনই দিলীপ সোম 'দোলা' দিয়ে সানী-মৌসুমী জুটি সৃষ্টি করে আগামীর যুদ্ধের গতিপথ দেখিয়ে দিলেন। অর্থাৎ সপরিবারে উপভোগ্য মিউজিক্যাল রোমান্টিক সিনেমা দোলার ব্যবসায়িক সফলতা সালমান-শাবনূর জুটির বিপরীতে সফল আরেকটি নতুন জুটি দাঁড়ানোর পথটা শুরুতেই মসৃণ করে দিয়েছিল যেখানে আত্ম অহংকার তা প্রতিষ্ঠিত করে দেয়।

ছবির পরিচালক রায়হান মুজিব আমাদের কাছে ভাইজান ও কাজের বেটি রহিমা সিনেমার জন্য আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন। রায়হান মুজিবের এটাই ছিলো নতুন যুগের তারকাদের নিয়ে নতুন যুগের দর্শকদের জন্য প্রথম সিনেমা। ছবিতে দেয়া পোস্টারটি ছিলো 'আত্ম অহংকার' সিনেমার সবচেয়ে বড় পোস্টার। রেডিওর বিজ্ঞাপন শুনে মুক্তির আগেই নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছে তুমুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এরপর পত্রিকার বিজ্ঞাপন ও টেলিভিশনের ট্রেলার প্রকাশের পর আমাদের কাছে তখন 'আত্ম অহংকার' না দেখতে পারলে বিরাট পাপ হবে এমন মনে হলো। সবাই টার্গেট করলাম মুক্তি পাওয়ার প্রথম দিনের মর্নিং শো-তে দেখতেই হবে। প্রথম সপ্তাহ টিকিটের দাম চড়া থাকে (কালোবাজারে), ওপর কাউন্টার থেকে ন্যায্য মূল্য টিকিট কাটতে পারবো না ধরেই আমরা সবাই তখন ঘর থেকে টাকা নেয়ার একটা বুদ্ধি বের করলাম। সবাই যার যার ঘরে গিয়ে বললাম আগামী শুক্রবার এক বন্ধুর বোনের বিয়ের দাওয়াত আছে। কথামতো শুক্রবার সকালেই বন্ধুর বোনের বিয়ের গিফটের চাঁদা বাবদ ১০০টাকা আব্বার কাছ থেকে নিয়ে সকাল সোয়া এগারোটায় পূর্বনির্ধারিত স্থানে গিয়ে হাজির হলাম আমরা সবাই।

সবার ভেতর কী টানটান উত্তেজনা! ৯ জন মিলে যোগাড় হয়ে গেলো ১৪০০ টাকা। অর্থাৎ সিনেমা দেখে ফেরার পথে চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে ঘরে ফিরতে কোন অসুবিধা নাই। তিন রিক্সা করে দিলাম মণিকা সিনেমার দিকে ছুট।হলের সামনে গিয়ে দেখি আমাদের মতো বন্ধুর বোনের বিয়ে খেতে আসা কয়েক শো দর্শক উপস্থিত। এ যেন বিশাল কমিউনিটি সেন্টার!!! কাউন্টার তো দুরের কথা, কালোবাজারেও টিকেট পাবো কিনা সেই চিন্তায় গলা শুকিয়ে গেলো। অবশেষে অনেক ঝক্কিঝামেলা শেষে হলের ভেতর প্রবেশ করলাম। ভেতরে ঢুকে চেয়ার পাওয়া নিয়ে আরেক টেনশন। সেদিন মনে হলো এইদেশে সবাই ইনু মেনন হইতে চায়। একটা পোলাপাইনও জুম্মার নামাজ পাইবো না তা নিয়া কোন টেনশন নাই। যাই হোক সিনেমা দেখতে আসছি সেটা নিয়েই টেনশনে থাকি আপাতত, আগামী শুক্রবারে জুন্মা পড়ে পুষিয়ে দিবো এমন একটা ভাব সবার মনে। আবার কারো কারো ভাবে মনে হইলো আজ যে শুক্রবার সেটা সিনেমা হলে ঢুকার পরে মনে হলো এবং জুম্মা বাদ যাবে এই লজ্জায় হলের সিটের নিচে মাথা ঢুকিয়ে চিপা দিয়ে মরে যাই এমন অবস্থা!!!!

sdoPCj7.jpg


সিনেমা শুরু হয়ে গেছে- জমিদার গোলাম মোস্তফা বনে পাখি শিকারে গিয়েছেন। মুস্তাফার দেহরক্ষী প্রবীর মিত্র বনের বাহিরে বসে বসে মোস্তফার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাহারা দিচ্ছে। এদিকে মোস্তফার আরেক চাকর হূমায়ূন ফরীদির মা ভীষণ অসুস্থ। হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার জন্য কিছু নাই তাই প্রবীর মিত্রের কাছে অনুরোধ করে মুস্তাফার খাটিয়া চেয়ার চেয়ে নিলো। ফরীদির দুই ভাই কাঁধে চেয়ার তুলে তাদের মাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। পথিমধ্যে মুস্তাফা দেখে ফেললে ফরীদির ভাইদের গুলি করে। দুই ভাই পালিয়ে যায় আর মা মারা যায়।

মুস্তাফার কাছে পুরো ঘটনা প্রকাশ করে দিতে যাওয়ার পথে ফরীদির হাতে প্রবীর মিত্র খুন হয়। ফরীদি তার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিবে মুস্তাফাকে তার চাকর বানিয়ে এই সংকল্প করে……এভাবেই আত্ম অহংকার সিনেমার গল্প শুরু হয়। পরর্তীতে প্রবীর মিত্রের ছেলে সানী আর জমিদার মোস্তফার মেয়ে মৌসুমীর প্রেম, ধনী গরিবের দ্বন্দ্ব সংঘাত আর মনিব ভক্ত চাকর ফরীদির নানা কুট কৌশলের পরাজয় শেষে সানি মৌসুমীর মিলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় 'আত্ম অহংকার '

ধনী-গরীবের গতানুগতিক প্রেম সংঘাত টাইপ গল্প হলেও গল্পের উপস্থাপন ও ক্লাইম্যাক্স ছিলো একদম আধুনিক। গল্পটি সানি মৌসুমীর প্রেম কাহিনী থেকে মোড় নেয় প্রতিশোধের নেশায় মত্ত সুচতুর মনিবভক্ত ভৃত্য ফরীদির সংকল্প পুরনের সংঘাতের দিকে যেখানে সানি মৌসুমীর প্রেম ও সংঘাত ছিল শুধুমাত্র সাধারণ উপাদান। পরিচালক রায়হান মুজিব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আলাদা দুই সংঘাতকে একই সুতোয় বাঁধতে পেরেছিলেন। পরিচালকের গল্প বলার ধরন, চিত্রনাট্য ও ফরীদির দুর্দান্ত অভিনয়ের কারণে কখনও কখনও মনে হয়েছিল গল্পটি ফরীদিকে নিয়ে। গোলাম মুস্তাফা ছবির শেষ দৃশ্যর আগে একবারও বুঝতে পারেননি তার অতি বিশ্বস্ত ভৃত্য ফরীদির আসল চরিত্র। পুরো ছবিতে ফরীদির ড্রেস ও মেকাপ ছিলো খুবই সাধারণ। একটা টি শার্ট, শর্টস ও কাঁধে গামছা ঝুলিয়ে থাকা ফরিদী দর্শকদের পুরো সিনেমায় প্রচুর আনন্দ দিয়েছিলেন।

জামান আখতারের কাহিনী, আহমেদ জামান চৌধুরীর লিখা চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান এবং আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে 'আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা', 'জাগো জাগো প্রিয়তমা' গানগুলো ছিল দারুণ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top