What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review চিত্রা নদীর পারে : একটি পরিপূর্ণ অর্থের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
ZlRM8Ck.jpg


ছবির নাম : চিত্রা নদীর পারে
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : তানভীর মোকাম্মেল
শ্রেষ্টাংশে : মমতাজউদ্দীন আহমেদ, আফসানা মিমি, তৌকির আহমেদ, রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, আমীরুল ইসলাম ও অন্যান্য।
মুক্তির সাল : ১৯৯৯

সময়টা ১৯৪৭, তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের ছোট্ট জেলা নড়াইল। শশীভূষণ সেনগুপ্ত নামের এক হিন্দু উকিল (মমতাজউদ্দীন আহমেদ) থাকতেন তার বিধবা বোন অনুপ্রভা (রওশন জামিল), এবং দু'টি ছোট ছেলে-মেয়ে মিনতি ও বিদ্যুৎকে নিয়ে। বাড়ির পাশেই বয়ে চলা নদী চিত্রা। ততদিনে শুরু হয়ে গেছে হিন্দু-মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেশভাগ। পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এ অবস্থায় শশীভূষণের উপরেও দেশত্যাগের চাপ আসতে শুরু করে, কিন্তু তিনি বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে পরদেশে পাড়ি না জমানোর সিদ্ধান্তে অনড়। কিন্তু তার ছোট ছেলে বিদ্যুৎ মুসলমান বন্ধুদের দ্বারা উৎপীড়িত হয়ে কোলকাতা চলে যাবার বায়না শুরু করে। অগত্যা বিদ্যুৎকে পড়াশোনার জন্য কোলকাতা পাঠিয়ে দেন শশীভূষণ। এরপর কিছু সময় কেটে যায়।

১৯৬৪ সাল, শশীভূষণের মেয়ে মিনতি (আফসানা মিমি) ততদিনে বড় হয়ে গেছে। ছোট বেলার খেলার সাথী বাদলের (তৌকীর আহমেদ) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিনতির। বাদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে মার্শাল'ল বিরোধী আন্দোলনে। একদিন মিছিলে পুলিশের অতর্কিত গুলিতে মারা যায় বাদল। এরমধ্যে চারিদিকে শুরু হয়ে যায় হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।

সেই দাঙ্গার শিকার হন শশীভূষণের বিধবা ভাতিজি বাসন্তী। ধর্ষিত হয়ে চিত্রা নদীর পারে আত্মাহুতি দেয় সে। ঘটনাটি শশীভূষণকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। অসুস্থ শশীভূষণ সেই চিত্রা নদীর পাড়েই তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিয়তির নির্মম পরিহাসে অবশেষে দেশ ছেড়ে কোলকাতায় পাড়ি জমায় মিনতি ও অনুপ্রভা।

q2RhmrN.jpg


বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল তার সুনিপুণ হাতে নির্মাণ করেছেন এ ছবিটি। শিল্পী নির্বাচন ও সেই যুগের চিত্র সার্থকভাবে তুলে আনতে পরিচালক যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। প্রতিমা বিসর্জন, মুড়ির টিন বাস, মার্শাল'ল বিরোধী আন্দোলনের প্লাকার্ড, উত্তম-সুচিত্রার ছবির রিকশাযোগে প্রচারণা, চিত্রা নদীর বুকে পালতোলা নৌকা এ সবকিছুই আমাদেরকে দেশ বিভাগের সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

প্রধান চরিত্রসমূহে স্বভাবজাত পাগলাটে ধাঁচের মঞ্চ কাপানো অভিনেতা মমতাজউদ্দীন আহমেদের নির্লিপ্ত অভিনয় ছিল দেখার মতো। সাথে এক পশলা বৃষ্টির মত ছবিতে স্নিগ্ধতা ছড়িয়েছে তৌকীর আহমেদ এবং বিশেষত আফসানা মিমি। রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, আমীরুল ইসলাম, রামেন্দ্র মজুদারের চরিত্রগুলো অপ্রধান হলেও প্রত্যেকে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন।

চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন, শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ ও পোশাক পরিকল্পনায় থাকা চিত্রলেখা গুহ যথেষ্ঠ প্রশংসার দাবীদার। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন সৈয়দ সাবাব আলী আরজু।

Dr4TNMn.jpg


তবে ছবিটির কিছু কিছু দৃশ্যায়নে অসংগতি চোখে পড়েছে। ১৯৪৭ এ রওশন জামিলের বয়স ও ১৯৬৪ সালের বয়স একই মনে হয়েছে। তাছাড়া নড়াইল অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা (বৃহত্তর খুলনার ভাষা) বড়দের মুখে বলতে শোনা গেলেও মিনতি, বাদলের ছেলেবেলায় ওদেরকে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। যদিও পরবর্তীতে এরা বড় হলেও এদের ভাষা শুদ্ধই বজায় থেকেছে। আর চিত্রা নদীর কিছু লংশট দেখানোর খুব দরকার ছিল। দর্শক হিসেবে এটি খুব মিস করেছি।

চিত্রা নদীর পারে ১৯৯৯ সালে ৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করে। ক্যাটগরিগুলো হল- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গল্প, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশনা, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ মেকআপ। এছাড়া ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা সর্বকালের সেরা ১০ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের সমালোচক ও দর্শকপ্রিয়তা উভয় ক্যাটাগরিতেই রয়েছে এ ছবিটি।

vfPWDGF.jpg


বাংলাদেশী চলচ্চিত্র হওয়া উচিত এমনি। কে বলেছে বাণিজ্যিক ছবি মানেই পাত্র-পাত্রীর দৌড়-ঝাপ-নাচা-গানা-ক্লাইমেক্সে ভরপুর হতে হবে। দেশ যেহেতু গতানুগতিক বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণে বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে সেক্ষেত্রে এমন অফ ট্রাককেই মূলধারা বানিয়ে নেয়া উচিত, এমন ধারার চলচ্চিত্র হিসেবে আদর্শ ধরা যেতে পারে চিত্রা নদীর পারে ছবিটিকে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top