What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review হরিজনঃ অবহেলিত একদল মানুষের গল্প (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
PL8aTxt.jpg


অনেক সাধের ময়না দেখার একদিন পর ময়মনসিংহ সেনা অডিটরিয়ামে দেখলাম হরিজন। "সরকারি অনুদান প্রাপ্ত সিনেমা" ট্যাগ লাগানো এই সিনেমার গায়ে। খুবই আলাদা একটা সাবজেক্ট নিয়ে সিনেমা করেছেন পরিচালক মির্জা সাখাওয়াত হোসেন। সিনেমা কেমন লাগল সেটায় আসছি। আগে একটু বলে নিই "হরিজন" বলতে আসলে আমরা কি বুঝি।

সকালে যদি কেউ মর্নিং ওয়াকে বেরোন দেখবেন কিছু মানুষ ঝাড়ু বেলচা ও ঝুড়ি হাতে নিয়ে রাস্তার চারপাশের ময়লা আবর্জনা সাফ করার কাজে ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে দেখবেন "টয়লেট পরিষ্কার করাইবেনগো!" বলে জোরে হাঁক ছাড়েন কিছু মানুষ। বাজারের পাশে ড্রেনে জমে থাকা কালো হয়ে থাকা দুর্গন্ধময় ময়লা পরিষ্কার করার কাজে নামেন কিছু মানুষ। উচ্চবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক নামকরণকৃত খুবই নিচু ও অস্পৃশ্য গোত্রের এইসব মানুষদেরই সাধারণত "হরিজন" বলে একটু সম্মান দেয়ার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। আসলে এদেরকে অবজ্ঞাভরে ডাকা হয় "মেথর" নামে।

এইসব মানুষেরা সামাজিকভাবে অত্যন্ত অবহেলিত। ভাববেননা যে সোয়া দুই ঘণ্টার সিনেমা দেখে এসেই আমার আবেগ উথলে উঠেছে। আমি আগেও ভেবেছি এদের নিয়ে। মিউনিসিপ্যালিটি বা রেলওয়ের মত বিভিন্ন সরকারী জায়গায় "কলোনী" নামের বরাদ্দকৃত জায়গায় এরা ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করে। মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার সৌভাগ্য এদের খুব কমই জোটে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বড়জোর এরা প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে। কেউ কেউ হাইস্কুলেও ভর্তি হয় কিন্তু অনটনে পড়ে শেষ পর্যন্ত ঝরে পড়ে। অথচ আমাদের দেশের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা সাড়ে তিন শতাংশ এই হরিজনগোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সমাজের অবজ্ঞা, অশিক্ষা বা শিক্ষার সু্যোগের অভাব, কুসংস্কার আর দুবেলা দুইমুঠো ভাতের চিন্তায় এরা উন্নয়নশীল সমাজ থেকে যোজন যোজন দূরে।

ভারতে এইসব মানুষ যাদের জীবন কাটে ঝাড়ুদারি, আবর্জনা সাফ করে বা যারা সমাজের উঁচু জাতের ঘেন্নার পাত্র হয়েছিলেন, মহাত্মা গান্ধী তাদের নাম দেন "হরিজন"। এর মানে হল "ঈশ্বরের সন্তান"। সিনেমায় এই নাম দেয়াকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যারা ঈশ্বরের সন্তান হয় তারা সমাজে এত দুর্ভোগ পোহাবে কেন?

CM3oPZS.jpg


"হরিজন"এর মানে হল "ঈশ্বরের সন্তান"। যারা ঈশ্বরের সন্তান হয় তারা সমাজে এত দুর্ভোগ পোহাবে কেন?

পরিচালক মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের একটা সাক্ষাৎকার পড়ে জানতে পারলাম ১৯৯০ সাল থেকেই তিনি এই হরিজনদের নিয়ে সিনেমা বানাতে চাইছিলেন। আমার প্রশ্ন, এতগুলো বছর ধরে তার মাথায় ঘুরে চলা প্ল্যানকে তিনি এতটা হালকা করে পর্দায় তুলে ধরলেন কীভাবে? তার মাথায় কি আসেনি যে তিনি ক্যামেরাবন্দী করে একটা অবহেলিত জনপদের জীবনধারাকে সিনেমার মোড়কে সবার হাতে তুলে দিতে চাইছেন? আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল তার। সিনেমা না বলে এটাকে ডকুমেন্টারি বলাই ভাল। তাতে ভুল ধরার সুযোগ দেয়া হবেনা কাউকে। তবে তার চেষ্টাকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। একমত হই "রোমান্টিক সিনেমার দাপটে জীবননির্ভর সিনেমা ব্যবসা করতে পারবে না এটা তো সত্যি কথা। হলমালিকরা এসব সিনেমা চালাতে চান না ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায়। তবে কাউকে না কাউকে তো এসব সিনেমা বানাতেই হবে। স্বল্পসংখ্যক হলে চললেও দর্শকের কাছে এসব সিনেমা পৌঁছে দিতে হবে।" এই মন্তব্যের সাথে।

আমি যখন সিনেমার টিকিট কাটছিলাম তখন পাশে তাকিয়ে দেখি আমাদের ময়মনসিংহের নতুনবাজার হরিজনপল্লীর প্রায় ত্রিশজনের একটা দল টিকিট কাটার জন্য সাধারণ সীটের কাউন্টারে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা দেখে আমিও তাদের সাথেই টিকিট কাটলাম। কারণ হল এই মানুষগুলো দেখতে এসেছে যে কীভাবে তাদেরকে সেলুলয়েডে তুলে ধরা হল। তাদের প্রতিক্রিয়া কি হয় আমার জানার কৌতূহল হল। তাদের পাশেই বসলাম। ডিরেক্টর চেষ্টা করেছেন এবং খানিকটা সফল হয়েছেন তা বুঝতে পারলাম পাশে বসা সমাজের নোংরা সাফ করে চলা মানুষগুলোর চোখে পানি চিকচিক করে উঠতে দেখে।

টাঙ্গাইল জেলার এক হরিজনপল্লীতে শ্যুটিং হয়েছে এই সিনেমার। মূল চরিত্রে ছিলেন রোকেয়া প্রাচী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মামুনুর রশীদ, সাজ্জাদ হোসাইন খান ও আরো অনেকে। উনাদের চরিত্রগুলোর রূপায়নের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের দুর্দশার কথা, বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের অভিশাপ, সুদখোর মহাজনি ব্যবসার নীলচিত্র, হাঁড়িছাড়া চুলার গল্প।

সিনেমা কেমন হয়েছে? আমি বলব হলে গিয়েই দেখুন। সিনেমা শেষে হল মালিক/হল অপারেটরের সাথে কথা বলা আমার একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। জবাব কিন্তু পেয়েছি মির্জা সাখাওয়াত হোসাইনের "রোমান্টিক সিনেমার দাপটে জীবননির্ভর সিনেমা ব্যবসা করতে পারবে না এটা তো সত্যি কথা। হলমালিকরা এসব সিনেমা চালাতে চান না ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায়। তবে কাউকে না কাউকে তো এসব সিনেমা বানাতেই হবে। স্বল্পসংখ্যক হলে চললেও দর্শকের কাছে এসব সিনেমা পৌঁছে দিতে হবে।" এই মন্তব্যের মতই।

যাক, জীবনধর্মী সিনেমা বাংলা চলচ্চিত্রে প্রায় হারাতেই বসেছে। আমরা দুখাই, পোকা-মাকড়ের ঘরবসতি ও ভাত দে'র মত সিনেমা দেখেছি। আরেকটা নাহয় দেখলামই।

[বিঃদ্রঃ গাছ বাঁচলে ফল পাব একদিন নিশ্চিত। কিন্তু গাছটাকে তো আগে বাঁচানো লাগবে। তাই বলব সিনেমা হলে যান। আগে হল বাঁচান। হল না থাকলে ভাল সিনেমা দূরে থাক সিনেমাই দেখতে পাবনা হয়ত আমরা।]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top