What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review তুমি ছুঁয়ে দিলে মন – মনে রবে আজীবন… (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
pKkeQ2b.jpg


মন আজ আকাশের মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ে উড়ে গাইছে যেন-

আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে ,তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে…

তবে ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও…

খান সাহেবের মেয়ে নীলাকে ভালবাসে আবীর। ছোটবেলার ভালবাসা নানা বাধা-বিঘ্নেও বড়বেলায় এসে হারায় না। মাঝে বিভেদ হিসেবে জিইয়ে থাকে ক্ষমতার দম্ভ ও জাত্যভিমান। তাই নীলার বিয়ে ঠিক হয় খারাপ মানুষ ড্যানির সঙ্গে। এ কাহিনী শিহাব শাহীন পরিচালিত 'ছুঁয়ে দিলে মন' চলচ্চিত্রের। কাহিনী পরিচিত মনে হতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে দুই-একটা চমৎকার ইঙ্গিত আছে। এই যেমন- পুরনো আর নতুন দিনের সিনেমা, ভাবাবেগের সরলতা, অর্থনীতি ও রাজনীতি। পুরনো জিনিসকে কিভাবে দেখা হয় এবং তা আসলে কিভাবে থাকে— তার ভাল নজির এ সিনেমা।

এক শর্তে আবীর নীলাকে বিয়ে করতে পারবে। সেটা হলো খান সাহেবের বাবার একটি মূর্তি উল্টে পড়ে আছে, সেটা ঠিক করে বসাতে হবে। ভাবছেন বিষয়টা তো শিরির বাবার শর্ত মতো ফরহাদের পাহাড় কাটার সঙ্গে মিলে যায় নাকি? খানিক সে রকমই। কারণ প্রয়াত খানের হাতেই হৃদয়পুরের গোড়াপত্তন। তার তৈরি কারখানার মাধ্যমে এ শহরের সমৃদ্ধি। কিন্তু এক সময় হৃদয়পুরের মাঝে প্রবাহিত নদীর দুই পাড়ের মানুষের শত্রুতার জেরে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আছে বিবদমান দুটি দল। এ দুটি আবার দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে হাজির হয় আবীর। ছোটবেলায় নীলার সঙ্গে প্রেমের অজুহাতে যাকে হৃদয়পুর ছাড়া করা হয়।

নীলার বাবার শর্ত আবীর মেনে নেয়। মূর্তি সোজা করতে গিয়ে দেখে বিবদমান দুই দলের মাঝে পড়ে গেছে। এখন কী করবে? আবীরকে সোজা পথে না গিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। যা হওয়ার কথা। অবশেষে আবীর মূর্তিটি সোজা করেন। কিন্তু মূর্তির হাতে থাকা বাজপাখিটি ভেঙ্গে পড়ে। খান সাহেবের কাছে বাজপাখি হলো ক্ষমতার প্রতীক। এ কারণে তিনি বেঁকে বসেন। নীলাও বেঁকে বসেন, তবে অন্য কারণে।

এখানে আমরা শুধুমাত্র পুরনো মূর্তি নিয়ে কয়েকটি কথা বলব। বাংলাদেশের অবস্থাটা চিন্তা করুন। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি সিনেমায় পুরনো দিন মানে স্বর্ণযুগ। পুরনো নেতা ভাল ছিলেন। এমন কথা অহরহ পাবেন। সে ক্ষেত্রে খান সাহেবের অহং পুরানা মূর্তির মধ্যে থাকতে পারেই। কারণ আমাদের চারপাশটা এমনই। পুরানা সম্পর্ককে নতুন করে ভাবা বা মূল্যায়ন অনুপস্থিত। ফলে নীলার বাবার কাছে হৃদয়পুরের কী হল, না হল— এর চেয়ে মূর্তিটা গুরুত্বপূর্ণ, বাজপাখিটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাজপাখির প্রতীকী মূল্যের বাইরে সমাজ ও চিন্তার গুণগত রূপান্তরের ধারণাটি তার মাথায় নেই। যেহেতু জগত গতিশীল, অথচ নীলার বাবার চিন্তা গতিহীন— তাই তাকে হারতে হয়। আবার এ অর্থে নয় পুরানা চিন্তা মানেই খারাপ, এ অর্থে যে চিন্তা চলমান প্রক্রিয়া। শান না দিলে তাতে মরচে পড়ে। ফলে খান সাহেবকে হারতে হয় আবীরের কাছে— প্রেমের কাছে। মারা পড়ে তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকেন্দ্রিক ধ্যান-ধারণা।

cxXU9S2.jpg


আরিফিন শুভ ও জাকিয়া বারী মম

চলচ্চিত্র হিসেবে 'ছুঁয়ে দিলে মন' বাংলা চলচ্চিত্রের পুরনো-নতুন দিনের বিভেদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের সিনেমায় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঘটছে। নানান ফর্মের আমদানি হচ্ছে। কিন্তু এ দেশের সিনেমার ধারাবাহিকতার সঙ্গে তার যোগ কোথায়! এটা এ অর্থে যে এফডিসিকেন্দ্রিক সিনেমা তার ৫০ বছর পার করছে। ফলে এখানে মুভি ইন্ডাস্ট্রি বলতে যা আছে— তা তো এ এফডিসির। এ লেখায় নিতান্ত গল্পের ধারাবাহিকতা অর্থে 'ছুঁয়ে দিলে মন' এর অবস্থানের কথা বলছি। খেয়াল করলে দেখবেন এখানকার গল্প গুটিকয়েক রোমান্টিক, ড্রামা, এ্যাকশন ঘরানার মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং এখানে যখন একজন পরিচালক নিজেকে নতুন বা শিক্ষিত দাবি করে সিনেমা বানান তিনি কিন্তু যা বলে আসেন তা করেন না। ঘুরে ফিরে সে গল্পটাই বলেন— যেটা এ ইন্ডাস্ট্রিতে আগে বলা হয়েছে। কারণ তিনি রিস্ক নিতে চান না। আবার গল্পটা তার বিশ্বাসও হয় না। তাই ডিজিটাল বা নানান গালগপ্পো চলে। কিন্তু দর্শক হলে গিয়ে দেখেন আধখেচড়া কিছু হচ্ছে। সেখানে 'ছুঁয়ে দিলে মন' নতুন কিছু নয়। কিন্তু শিহাব শাহীনের বৈশিষ্ট্য হল— পুরনো গল্পকেই এ যুগের আদলে বলেছেন। এটা দরকার। কারণ প্রতিটি প্রচলিত গল্পকেই নতুন সময়ের নিরিখে কমপক্ষে একবার ব্যাখ্যাত হতে হয়। এ সিনেমাও তা করেছে।

বাস্তব জগতে এমন কিছু ঘটে কিনা— সে অর্থে নয়, সিনেমার গল্প অর্থে 'ছুঁয়ে দিলে মন' বিশ্বাসযোগ্য বটে। অন্তত খান সাহেবের বাবার হাতের বাজপাখির মূল্য যে শুধু প্রতীকী— নবায়নযোগ্য নয় বা ওইটা তার মূল্য হারিয়েছে। সমাজ বা অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সকল সম্পর্কের রূপান্তরের যুগে এ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এফডিসিকেন্দ্রিক সিনেমা বা সিনেমার গল্পের রূপান্তরের এ দিকটি ভাবার মতো। তবে এটা বলতে হয়— 'ছুঁয়ে দিলে মন' এর মাধ্যমে আপাতত প্রেমের এমন স্টোরিওটাইপ রূপায়নের সমাপ্তি ঘটল। প্রেমের গল্প নিয়েও আমাদের অনেক ভাবার আছে।

XrUfkzC.jpg


'ছুঁয়ে দিলে মন' চলচ্চিত্রের অনেক রিভিউ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। মোটামুটি ইতিবাচকই ছিল। আমাদের উপরের কথাগুলোও ইতিবাচক, বাকিগুলোও তাই হোক। প্রেমের সিনেমার হিসেবে এটি উতরে গেছে। গল্প, অভিনয়, লোকেশন ও মিউজিকের চমৎকার কম্পোজিশন ছিল পুরো সিনেমায়। এ কথাগুলো বারবার বলা হয়েছে। আমাদের আর নতুন করে বলার কিছু নেই। শুধু একটা কথা বলব— এ সিনেমায় অনেক কিছু ছিল; কিন্তু মানুষ ছিল না। এ অর্থে যে, অনেক দৃশ্যে মূল চরিত্রগুলোকে রেলস্টেশন বা অন্য জায়গায় উপস্থিত করে সাসপেন্স তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মনে হয়নি তারা ওই পরিবেশে আছেন। তাদের হাসি-কান্না কোনো কিছুর সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক ছিল না। এমনকি নায়িকা কাঁদছে— তার দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। বাংলাদেশ এখনো অনেক ইন্টারএক্টিভ— এটা আমাদের ভাবতে হবে। আরও ভাবতে হবে সিনেমা মানে শুধু নাটকীয়তা বা টুইস্ট নয়, যে সময় বা যার গল্প বলছি— তাকে সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সামগ্রিকভাবে তুলে আনা জরুরি।

ছুঁয়ে দিলে মন
কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা : শিহাব শাহীন
অভিনয় : আরিফিন শুভ, জাকিয়া বারী মম, মিশা সওদাগর, সুষমা সরকার, আনন্দ খালেদ, আলীরাজ ও ইরেশ যাকের
সঙ্গীত : সাজিদ সরকার ও হাবিব ওয়াহিদ
চিত্রগ্রহণ : রিঙ্কন খান
সম্পাদনা : রাকিব রানা
ব্যানার : মনফড়িং ও এশিয়াটিক ধ্বনিচিত্র
সিনেমা হলে মুক্তি : ১০ এপ্রিল ২০১৫

রেটিং : ৩.৫/৫
 

Users who are viewing this thread

Back
Top