What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review রানওয়ে ও আজকের জঙ্গিবাদ (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
KgxnAuv.jpg


গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রুহুল। গ্রামের মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারেনি। বাবা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির প্রত্যাশায় গেছে কিন্তু মাসখানেক হয়ে যাবার পরও কোনো খোঁজ-খবর নেই। মা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনে সেই গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। বোন গার্মেন্টসে চাকরি করে। মাঝে মাঝে মামার সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে কম্পিউটার শিখে রুহুল। সেখানে পরিচয় হয় আরিফের সাথে। কিন্তু সে জানে না এই পরিচয় তাকে কোন ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

vaX9Rzw.jpg


'রানওয়ে'র কাহিনী লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন অকাল প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ। একসাথে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন তার ননলিনিয়ার স্টোরিটেলিং-এর মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক সংকট, এনজিওর ঋণ, গার্মেন্টসে অস্থিরতা ও গার্মেন্টস কর্মীদের বেতনভাতা নিয়ে আন্দোলন। এছাড়া রয়েছে ধর্মের নাম করে তরুণ সমাজকে এক ভিন্ন পথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ ও বোমাবাজি। এসব ছোট ছোট দিকগুলো এক করে দৃশায়ন করেছেন অসাধারণ এক গল্পের।

অভিনয়ে ছিল না কোন পরিচিত মুখ। কিন্তু পরিচালক তার নিজের মত গড়ে তুলেছে চরিত্রগুলো এবং তাদের থেকে আদায় করে নিয়েছেন সর্বোচ্চটুকুই। চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র রুহুল, তার মা রহিমা, বন্ধু আরিফ ছিল জীবন্ত যেন আমাদের আশেপাশেই মানুষগুলোই। রুহুলের বোন ফাতেমা ও তার সহকর্মী শিউলি চরিত্রগুলোও ছিল প্রাণবন্ত। পরিচিতদের মধ্যে ছিল দাদার চরিত্রে নাজমুল হুদা বাচ্চু ও মামার চরিত্রে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া বিশেষ চরিত্রে ছিল নুসরাত ইমরোজ তিশা ও আবদুল্লাহ রানার অভিনয় ছিল উল্লেখযোগ্য।

cuaMDUo.jpg


চিত্রগ্রহণে পরিচালক তারেক মাসুদের আরেক সহযোদ্ধা মিশুক মুনীর দিয়েছেন বৈচিত্র্যতার পরিচয়। প্রথম দৃশ্যে বন্দরে অবতরণরত বিমানের শব্দে ঘরের বেড়াসহ ঘরের আসবাবপত্র কাঁপার দৃশ্য, ভোরের আকাশে রঙের খেলা, ছোট-বড় বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণ, বোমা হামলায় সিনেমা হল ধ্বংস, যমুনার চর, যমুনা সেতু, রাস্তার পাশে ইটের ভাটা, জঙ্গি প্রশিক্ষণ, বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত ও তার মাঝে অপ্রশস্ত রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া– সব কিছুতেই ছিল নান্দনিকতার ছাপ। রাস্তায় রুহুল মার খেয়ে আসার পরের দৃশ্যে ছোট কিশোরের বিমানকে উদ্দেশ্য করে গুলতি মারা ছিল ছোটোর উপর বড়ের অত্যাচারের প্রতিবাদের রূপক।

চলচ্চিত্রটির সেট নির্মাণ ও লোকেশনগুলো ছিল অনবদ্য। বিমানবন্দরের কাছে নদীর তীরে একটি ঝুপড়ি ঘর। যেখানে একঘরে থাকে রুহুল, তার মা, বোন ও বৃদ্ধ দাদা। পাশে উপরে চালা দেয়া ছোট্ট গোয়ালঘর। নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরার ভেসেল, নদীর অল্প পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা মুঠোফোনের বিজ্ঞাপন, জঙ্গীদের গোপন আস্তানা – সহজ সাবলীলভাবে নির্মাণ করেছেন শিল্পনির্দেশক শহীদ আহমেদ মিঠু। এছাড়া চরিত্রগুলোর তাদের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী পোশাকের ব্যবহার ও মেকআপ ছিল অনন্য।

পরিচালক তারেক মাসুদ তার নিজের মত আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। জঙ্গি প্রশিক্ষন দৃশ্য, সরিষা ক্ষেতের মাঝে অপ্রশস্ত রাস্তায় আরিফের সাইকেল চালিয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া এবং রুহুলের নিজের সাথে কথা বলার দৃশ্যে ব্যবহৃত আবহ সঙ্গীত এক বিশেষ আবহের সৃষ্টি করে। এছাড়া ব্যবহৃত তিনটি গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তানভির আলম সজীব। তার সঙ্গীতায়োজনের দক্ষতাও ছিল লক্ষণীয়।

IFa3DAW.jpg


আমাদের দেশের আজকের জঙ্গিবাদ, জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও জঙ্গি তৎপরতার বিষয়গুলো আরো বছর ছয়েক আগেই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমাদের সামনে উত্থাপন করে গেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রশিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক তারেক মাসুদ। তার পরিমিত চলচ্চিত্রের জ্ঞান তিনি প্রতিটি অংশে ও বিভাগে কাজে লাগিয়েছেন এবং নির্মাণ করেছেন এই নান্দনিক সৃষ্টিকর্ম।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top