What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review পোড়ামন ২ : অপ্রত্যাশিত কিন্তু যৌক্তিক পরিণতি (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
5IwIJzU.jpg


নাম: পোড়ামন ২
ধরন: রোম্যান্টিক ড্রামা
পরিচালক: রায়হান রাফি
কাস্ট: সিয়াম আহমেদ (সুজন শাহ), পুজা চেরি (পরী তালুকদার), বাপ্পারাজ(নওশের/সুজনের ভাই), ফজলুর রহমান বাবু (কাফিল মিয়া), সাঈদ বাবু (মোকছেদ তালুকদার), আনোয়ারা বেগম (পরীর দাদী), নাদের চৌধুরী (বদরুল তালুকদার), রেবেকা রউফ (পরীর মা), পিয়াল আহমেদ, চিকন আলী প্রমুখ।
ভাষা: বাংলা

♦ নামকরণ: মন দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রেমের উথান হয়। আর সেই প্রেমের ব্যর্থতাই মন কে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়। বস্তুত এটিই গল্পের বিষয়বস্তু। এছাড়াও, এটি ২০১৩ সালের সুপারহিট মুভি "পোড়ামন" এর সিক্যুয়েল। তাই নামকরণ হিসেবে "পোড়ামন ২" যথার্থ।

♦কা.চি.স (কাহিনী+ চিত্রনাট্য+সংলাপ): ২০১৩ সালের 'পোড়ামন' ছিল তামিল 'ময়না' ছবির রিমেক।কিন্তু 'পোড়ামন ২' কোনো ছবির রিমেক নয়। তবে গল্প তেমন আহামরিও কিছু না; সহজ-সরল দুজন তরুণ-তরুণীর প্রেম এবং পরিবেশের কারণে তাদের সাথে সংঘটিত ঘটনাবলীই এর মূল থিম। এই টাইপের গল্পকে চিরসবুজ বা 'এভারগ্রিন কন্সেপ্ট' বলা হয়; যেগুলোর চাহিদা সময় পরিবর্তন হলেও শেষ হয় না। তাই এখানে দেখার বিষয় থাকে কে কত সুন্দরভাবে গল্পটাকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে। আর এখানে পরিচালক রায়হান রাফি সফল। কারণগুলো আস্তে-ধীরে বিশ্লেষণ করা হবে। তাই সবাই পুরো রিভিউটি পড়বেন।

চিত্রনাট্য এখানে বড় একটি ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করেছে। অনেক সুন্দর এবং গোছানো হয়েছে কাজটি। স্পেশালি শুরুর দিকের ক্লাইম্যাক্স এবং ছবির শেষের ক্লাইম্যাক্স একদম ইমোশনাল হওয়ার মতো। যদিও ছবির মাঝের অংশে একটু দূর্বলতা ছিল; গল্প এগুনোর গতি হঠাৎ করে কমে যায়। তবে শেষের ক্লাইম্যাক্স গুলো এই ছবির স্ক্রিণপ্লের দূর্বল দিকগুলো রিককভার করে দেয়।

ছবির ডায়লগ গুলো বেশ ভালো ছিল। অতিরঞ্জিত তেমন কোনো ডায়লগ ছিল না। সাঈদ বাবু স্ক্রিণে আসার সাথে সাথেই হলভর্তি দর্শক "ভাল্লাগছে, খুব ভাল্লাগছে" বলতে থাকে। শেষের সিনগুলোতে তার ডেয়ারিং ফেইস দেখার মতো ছিল। তবে ছবিটি যেহেতু মেহেরপুরে শ্যুট করা, আঞ্চলিক ভাষার প্রতি একটু বিশেষ নজর নেওয়া উচিত ছিল। এক্ষেত্রে সিয়ামের সময় সমস্যা বেশি নজরে পড়েছে। তিনি কিছু কিছু জায়গায় শুদ্ধ বাংলা ভাষায় ডায়লগ দিয়ে ফেলেছেন। ভুলগুলো ছোট, তাই নতুন পরিচালক হিসেবে এগুলো মাফ করা যায়। বাট, নজর দেওয়া উচিত।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

♦ টিমওয়ার্ক: প্রথমেই বলতে হয় এছবির লিড রোলে থাকা সিয়াম আহমেদ এবং পুজা চেরির কথা। সিয়াম আহমেদ কে অনেক বেশি ওভারএ্যাকটিং করতে দেখা গেছে। কিন্তু এছবিতে তার চরিত্র হলো সালমান শাহ এর অন্ধভক্ত, তাই চরিত্রটি কিছুটা ওভারএ্যাকটিং দাবি করে। তবে ছবির ২য় তার অভিনয়ের প্রতি ডেটিকেশন মুগ্ধ করার মতো। অনেক বেশি কষ্ট এবং পরিশ্রম করেছেন তিনি এই চরিত্রটির জন্য, তা দেখলেই বোঝা যায়। বলা যায় প্রথম পরীক্ষায় বেশ ভালোভাবেই উতরে গেছেন তিনি। আর ছোট হোক কিংবা বড়, তার যে একটা দর্শক ক্রেজ আছে তা ছবিতে তার এন্ট্রি সিনে হলভর্তি দর্শকের শোরগোলের মাধ্যমেই বোঝা গেছে। ঠিক রাস্তায় চলতে পারলে তিনি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারবেন।

1o9upNd.jpg


পুজা চেরিকে দিনকে দিনকে যতই দেখছি সে তত বেশি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। তার অভিনয় দেখে কেউ ধরতেই পারবে না, এটা তার ২য় ছবি। এর আগে তার 'নূরজাহান' কান্নার সিনে দূর্বলতা খুঁজে পেয়েছিলাম। এবার বেশ খানিকটাই সে দূর্বলতা কাটিয়ে উঠেছেন। এছাড়াও সিয়াম-পুজার ছোটবেলার চরিত্রে যারা ছিল তারা অমেক সাবলীল অভিনয় করেছেন। তাদের অভিনয়ও অনেক সুন্দর হয়েছে, পর্দায় যতক্ষণ ছিলেন ভালোই লাগছিল তাদের।

ছবির নেগেটিভ চরিত্রে আছেন নাদের চৌধূরী এবং সাঈদ বাবু। নাদের চৌধুরী অনেক সিনিয়র অভিনেতা; তার অভিনয় জ্ঞান নিয়ে খুত ধরার মতো কিছুই নেই। সাঈদ বাবু মোকছেদ তালুকদারের চরিত্রে জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছেন। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, ডায়লগ ডেলিভারি… সব কিছুই রাফ & টাফ ছিল। আর শেষের ক্ল্যাইম্যাক্স গুলোর কথা আর কী বলবো। আমি কোনো স্পয়লার দিতে চাচ্ছি না। এটি দেখেই এর আনন্দ উপলব্ধি করতে পারবেন।

অনেকদিন পর বাপ্পারাজ একটি ভালো চরিত্রের মাধ্যমে কামব্যাক করলেন। আর যাই হোক, স্যাকক্রিফাইসিং চরিত্রে তার চেয়ে বেটার কেউ নেই এটা তিনি একদম প্রমাণ করে ছাড়লেন। সবচেয়ে বড় কথা স্ক্রিপ্টরাইটার তার চরিত্রটা সঠিক ভাবে লিখেছিলেন। একজন বড় ভাই তার ছোট ভাইকে মানুষ করার জন্য, তার শখ-আহ্লাদ মিটানোর জন্য, তার ভবিষ্যৎ সুখের রাখার জন্য কী রকম অপমান সহ্য করতে পারেন; তার সবকিছুই দেখানো হয়েছে এই চরিত্রটির মাধ্যমে। গ্রামের সহজ-সরল নঁওশের এর ক্যারেক্টারে তিনি একদম মিশে গিয়েছিলেন। তার এই অভিনয় অনেকদিন মনে দাগ কেটে থাকবে।

ছবির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করা ফজলুর রহমান বাবু সম্পর্কে যতই প্রশংসা করি সেটাই কম হয়ে যাবে। একজন সন্তান হারা পাগল বাবার চরিত্র করেছেন তিনি। আর ছবির একদম শুরুতে মরা লাশ দিয়ে তিনি যে এ্যাকটিং টা করেছেন, ঐ সিনটা একদম দর্শকদের ইমোশনাল করে দিয়েছে।

আনোয়ারা বেগম, রেবেকা রউফ নিজ নিজ চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করেছেন। তবে চিকন আলী এবং পিয়াল আহমেদের কমেডি টা ঠিক জমেনি। একটু ভাঁড়ামো টাইপ অভিনয় হয়ে গিয়েছে। কমেডি সিক্যুয়েন্স গুলো আরেকটু নজর দেওয়া উচিত ছিল।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

♦ কারিগরি: ছবির সিনেমাটোগ্রাফি এবং DOP এর কাজটা যিনি করেছেন তাকে আমার পক্ষ থেকে একটি স্যালুট। মেহেরপুরের আসল সৌন্দর্য কেমন, কতটা সুন্দর, সবকিছুই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। গ্রামের আধপাকা রাস্তা দিয়ে বাসের ছুটে চলা কিংবা নদীর বাধে নেওয়া দৃশ্য – সবগুলো দৃশ্যের ক্যামেরা এংগেল জোশ ছিল। এডিটিং এবং কালার গ্রেডিং কাজও ভালো হয়েছে। তবে ছবির শুরুর কিছু অংশে যে ফ্ল্যাশব্যাক দেখানো হয়, সেখানে স্ক্রিন অনেক বেশি ঘোলা ছিল। আরেকটু ভালো করা যেতো এই জায়গায়। ছবির লোকেশন ছিল দূর্দান্ত। প্রথমবারের মতো মেহেরপুরে কোনো ছবির শ্যুটিং হলো। সবগুলো লোকেশনই বেশ সুন্দর ছিল। ছবির গানগুলোর কোরিওগ্রাফি বেশ ভালো হয়েছে। পুজা চেরি অনেক সুন্দর নেচেছেন। সিয়ামের নাচে একটু দূর্বলতা রয়েছে। এটি ভবিষ্যৎ এ কাটিয়ে উঠতে হবে। ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট যারা ছিলেন তারা সবাই অনেক কষ্ট করেছেন ছবির আবেগ কে ফুটিয়ে তোলার জন্য। ছবিতে সবমিলিয়ে একটি ফাইট সিন আছে আর ওটা তেমন একটা গুরুত্ব বহন করে না।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭৫।

♦ বিনোদন: ট্রেইলারে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যতটা খারাপ লেগেছে ছবিতে সে তুলনায় অনেক বেশি ভালো লেগেছে। ছবিতে মোট ৬ টি গান রয়েছে। সবগুলো গানই শ্রুতিমধুর। কোরিওগ্রাফি উপভোগ করার মতো। ছবির মাঝের দিকে একটু স্লো হয়ে তাতে বোরিং লাগে নি। কিছু টুইস্ট এন্ড টার্ণ রয়েছে যা সবার অনেক ভালো লাগবে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৬৫।

♦ ব্যক্তিগত: এটা সিয়ামের প্রথম কাজ, পুজা র ২য় কাজ, পরিচালক রায়হান রাফির প্রথম কাজ, স্বাভাবিকভাবেই আমি কোনোপ্রকার এক্সপেকটেশন নিয়ে ছবিটি দেখিনি। নতুন রা কেমন করে সেটাই ছিল দেখার বিষয়।

ছবিতে কিছু ভুল ছিল। কিছু সিন হালকা লেইম ছিল। তবে নতুনরা নতুন ভবিষ্যৎ এর ইঙ্গিত দিলো। বিশেষত রায়হান রাফি আমাদের একজন নতুন সম্ভাবনাময় ডিরেক্টর। ছবি আর যাই হোক, প্রথমার্ধের ২০-২৫ মিনিট এবং শেষার্ধের ৩০ মিনিট দেখে মনটা একদম ভরে গেছে। এন্ডিং টা এমন হবে এটা আমার মতো অনেকেই ভাবেনি। সবচেয়ে বড় কথা এন্ডিং টা লজিক্যাল ছিল। ভিলেনকে মেরে নায়ককে মরতে হবে কিংবা নায়ক-নায়িকা কে আত্নহত্যার হিড়িক লাগাতে হবে, এমন কিছু নেই। একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখানো হয়েছে যেটা অনেক বেশি ভালো লেগেছে।

রেটিং:- ৩.৫/৫

♦ ছবিটি কেন দেখবেন: 'পোড়ামন' দেখে যদি আপনার চোখের কোনে জল এসে থাকে এছবি অর্থাৎ 'পোড়ামন ২' আপনার জন্যে মাস্টওয়াচ। এছবি আপনাকে সিউর কাঁদাবে। আপনি যদি সিয়াম কিংবা পুজার ওপর ক্রাশ অবস্থায় থাকেন তাহলে আপনার জন্যেও ছবিটি মাস্টওয়াচ, ভালো লাগবে। যারা গ্রামবাংলার গন্ধে মাখা রূপ সৌন্দর্য দেখতে পছন্দ করেন তারাও ছবিটি দেখতে পারেন জোশ সিনেমাটোগ্রাফির কারণে। যারা রোম্যান্টিক ড্রামা মুভি দেখতে পছন্দ করেন তাদেরও এছবি ভালো লাগবে। সর্বপরি, বাপ্পারাজের ডাই হার্ড ফ্যানদের জন্য এছবি ঈদের সেরা উপহার।

সবার ঈদ ভালো কাটুক, সময় হলে হলে গিয়ে একবার ছবিটি দেখে আসুন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top