What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ধর : এই সমাজের এক নির্মম বাস্তবতার ছবি (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,654
Messages
117,056
Credits
1,241,720
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
9kKKEm6.jpg


বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের মুক্তিপ্রাপ্ত আমার দেখা অনেক চলচ্চিত্র নিয়ে আমি রিভিউ লিখেছিলাম। কিন্তু আজ এমন একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নিয়ে লিখছি যে চলচ্চিত্রের গল্পটির মতো আর কোন চলচ্চিত্র মূলধারা ও বিকল্পধারা কোন ধারাতেই পাইনি। গল্পটি নেয়া হয়েছে আমাদের সমাজ থেকেই অর্থাৎ গল্পটি সম্পূর্ণ মৌলিক ও নির্মম এক বাস্তবতা যে বাস্তবতার সম্মুখীন আমাদের শিক্ষিত সমাজ কখনও মাথায় আনে না।

"এই হলো ঢাকা শহরের ব্যস্ততম মগবাজারের চৌরাস্তা। এই চৌরাস্তার মোড়ে আইল্যান্ডের পাশে একটি শিশু কোলে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা পাগলীটিকে নিশ্চয়ই সবাই দেখেছেন। একটু সাহায্যের আশায় আমাদের অনেকের কাছে চলার পথে সে হাত পেতেছে। কেউ দিয়েছে, কেউ দেয়নি। কোথায় তার ঠিকানা। কোথায় তার পরিবার, থায় সে রাতে থাকে আমরা কেউ জানি । তার কোলের শিশু সন্তানটির পিতা কে আমরা কেউ জানি । কিছুদিন আগে তাকে যুবতী দেখেছিলাম, একদিন তাকে অন্তঃসত্ত্বা দেখলাম আর এখন এই শিশুটিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি । যতটুকু বুঝতে পারি যে তার কোন বিয়ে হয়নি। তবে কে এই শিশু সন্তানটির পিতা ? কী তার পরিচয়? তার জীর্ণশীর্ণ রুগ্ন শরীর দেখে বুঝা যায় যে সে আর বেশিদিন বাঁচবে না । তাহলে এই শিশু সন্তানটির কি হবে? কোন ধনী ব্যক্তি বা বিদেশি সাহায্য সংস্থার কেউ কি এই শিশুটিকে কোলে তুলে নিবে? সে কি বড় হতে পারবে গুলশান বনানীতে? সে কি লিখাপড়া করতে পারবে ইংস্লিশ মিডিয়াম স্কুলে? অনেক প্রশ্ন , অনেক জিজ্ঞাসা যার উত্তর আমরা জানিনা। তবে এইটুকু বুঝতে পারি যে এমন কিছুই হবে না । তাহলে কি হতে পারে তার ভবিষ্যৎ ?''

… ঠিক অনেকটা এইরকম ভাবেই 'ধর' ছবির গল্পটির একটি ধারণা দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন পরিচালক কাজী হায়াৎ। ছবির শুরুতেই তিনি গল্পটির প্রেক্ষাপট খুব দারুণভাবে তুলে ধরেছিলেন। ঢাকা শহরের এক পাগলীর সন্তান এর গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন 'ধর' ছবিটি। ছবিতে মান্না হলো পাগলীর গর্ভে জন্মে নেয়া এক জারজ সন্তান যে জন্মের পর থেকেই নাম পরিচয়হীনভাবে রাস্তায় রাস্তায় বড় হয়েছে। যাকে কেউ টোকাই বলে যার বাপ মা দেয়ার কোন নাম নেই, কেউ কোন সুন্দর নামে কোনদিন ডাকে না। সেই মান্না একদিন মিরপুর বস্তির এক মাস্তান বাবুর কাছে ( ডিপজল) আশ্রয় চেয়ে পেয়ে যায়। ডিপজল মান্নার নাম রাখে 'অপূর্ব' যা ডিপজলের সাথে থাকা এক কবি নামটি রাখার প্রস্তাব দেয়। শুরু হয় মান্নার নতুন আরেক জীবন।

ডিপজলের প্রশ্রয় পেয়ে মান্না বেপরোয়া হয়ে উঠে। ডিপজল কাউকে ধরে আনতে বললে মান্না তাকে খুন করে ফেলে। মান্নার সাহস দেখে ডিপজলও বিস্মিত হয়। ডিপজলের দাসি হিসেবে আছে বিহারি পল্লির এক নারী ববিতা। ববিতা ও একা দুই বোন যারা বিহারী। ববিতার সাথে দৈহিক সম্পর্কের কারণে এক সময় ববিতা গর্ভবতী হয়ে যায়।

…এভাবে গল্পটি নতুন ভাবে মোড় দেয়। ডিপজল ববিতাকে সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেয় কিন্তু ববিতা তাতে রাজী হয় না। মান্না ববিতার পাশে দাঁড়ায় । মান্না তার মতো আরেকটা জারজ সন্তানকে এই সমাজে চায় না তাই ডিপজলকে চাপ দেয় ববিতাকে বিয়ে করে ববিতাও তার সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে। ডিপজলের সাথে মান্নার দ্বন্দ্ব শুরু হয় এই কারণে। মান্না ডিপজলের দল ত্যাগ করে। ডিপজল ববিতাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু মান্না তা রুখে দাঁড়ায়।

ববিতা ও একাকে বিহারী পল্লি থেকে নিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় দেয় মান্না। ডিপজলের বিরুদ্ধে মান্না ডিপজলের গডফাদার ও অসৎ রাজনীতিবিদ মিজু আহমেদের কাছে বিচার দেয় এবং মিজু আহমেদ ডিপজলকে ববিতাকে বিয়ে করতে বলে। ডিপজল ববিতা ও একাকে খুঁজে বের করে একাকে জোর করে তুলে আনে বিয়ে করতে। মান্না এসে বাঁধা দেয় এবং মান্নার হাতেই ডিপজলের মৃত্যু হয়।

2D7GyJb.jpg


… পুরো ছবি জুড়ে এমন সব দৃশ্য আছে যা সম্পূর্ণ বাস্তবতার সাথে মিলে যায়। কাজী হায়াৎ গল্পের গাথুনি ও সংলাপকে পুরো বাস্তবতার সাথে মিল রেখে অসাধারনভাবে নির্মাণ করেছিলেন । মান্না ও ডিপজলের অভিনয় ছিল অসাধারণ। ডিপজলের পোশাক পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে সংলাপ হুবহু বস্তির মাস্তানদের মতো। ছবিটা দেখলেই বুঝা যায় এই ছবির পেছনে ডিপজলের অনেক শ্রম আছে এবং বাস্তবতার সাথে মিল রাখতে ডিপজল অনেক কিছু যোগ করেছে।

চলচ্চিত্রটাকে অনেক সুশীল দর্শক সংলাপের কারণে অশ্লীল সিনেমা বলে বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে পারে কিন্তু যারা সত্যিকারের চলচ্চিত্র বুঝে তাঁরা কেউই ধর চলচ্চিত্রটাকে ফেলে দিবে না বরং জীবন ঘনিষ্ঠ এক অসাধারণ চলচ্চিত্র বলে আখ্যায়িত করবে বলে আমি নিশ্চিত। সমাজের এমন একটি নির্মম নিদারুণ বিষয়টিকে কোন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রকার আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি যা কাজী হায়াৎ দেখিয়েছেন।

মান্নার অভিনীত সেরা চলচ্চিত্রগুলোর একটি চলচ্চিত্র হলো ধর। মান্না এতো দারুণভাবে চরিত্রের সাথে মিশে গিয়েছিলেন যে অনেক দৃশ্য সিনেমা হলের দর্শকদের চোখে জল এনেছিলেন এবং দীর্ঘশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সংলাপ থেকে শুরু করে মান্নার প্রতিটি দৃশ্য অভিনয় এতো নিখুঁত ছিল যে মনে হয়েছে সত্যিকারের কোন এক জারজ সন্তানের প্রতিদিনকার ঘটনা গোপনে পরিচালক ক্যামেরাবন্দি করেছেন। আজো যদি কেউ ধর সিনেমা পুনরায় নির্মাণ করার কথা ভাবে তাহলে মান্নার বিকল্প হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে না। রাস্তার একটি পাগলীর শিশু সন্তান নিয়ে একটি ছবি বানানো যায় সেটা কাজী হায়াৎ

দারুণভাবে দেখিয়েছিলেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top