What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review মধ্যবিত্তের ছবি ‘দহন’ (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
CyOPkdh.jpg


মধ্যবিত্ত সমাজ যুদ্ধ করে বাস্তবতার সঙ্গে। পৃথিবীর সমস্ত কঠিন বাস্তবতা যেন তাদের ঘিরেই তৈরি হয়। এক অদৃশ্য দেয়াল ঘিরে থাকে তাদের। তারা না পারে হার মানতে, না পারে জয়ী হতে। মধ্যবিত্তরা রয়ে যায় জয়-পরাজয়ের ঠিক মাঝখানটাতে।

ভাগ্য যেন তাদের জালের মধ্যেই রেখে দেয়। এমনই বাস্তবতার; বলতে হয় ঢাকার মধ্যবিত্তদের এমনই টানাপড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে শেখ নিয়ামত আলী রচিত এবং পরিচালিত "দহন" ছবিটিতে।

ছবিটির শুরুই হয় মুনিরের চোখে আটকানো ঢাকার সদ্য গড়ে ওঠা বড় বড় ইমারত দিয়ে। ঢাকায় তৈরি হচ্ছে কালো টাকাওয়ালাদের দেয়াল। যে দেয়ালের তলে চাপা পড়বে মধ্যবিত্তরা। প্রধান চরিত্র মুনির ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে সব। ইট ভাঙছে মহিলা-শিশু। কিংবা মায়ের পাশে শিশু বসে আছে।

আবার রিক্সা চালকের উপর ক্ষোভ ঝারছে কোন এক যাত্রি। কারণ খুবই সামান্য। অধিক ভাড়া চাওয়া রিক্সা চালকের একটা অভ্যাস। চালকের উপর চড়াও হয়ে চড়-থাপ্পর ঢাকার রাস্তার এক অহরহ দৃশ্য। সেই দৃশ্যই উঠে এসেছে ছবিটির একদম শুরুতেই। কাহিনীর শুরুতেই এতসব দৃশ্যপটের প্রদর্শন দর্শকের কাছে অহেতুক মনে হতেও পারে। তবে এককথায় বলতে হয় পরিচালক ঢাকার অভ্যাসগত বেড়ে ওঠাকেই এখানে প্রধান্য দিয়েছেন।

এবার আসি ছবিটির চরিত্রগুলোর দিকে। কেন্দ্রিয় চরিত্র মুনির শিক্ষিত বেকার যুবক। পরিবারে রয়েছেন বৃদ্ধ মামা। যিনি একসময়ের তুখড় রাজনীতিবিদ। পরিবারের সবচাইতে বৃদ্ধ মানুষগুলো অতীত স্মৃতি একটু বেশি আওড়ান। এবং নিজের সময়ের সাথে বর্তমান সময়ের পার্থক্য তুলে ধরাটাও তাদের আচরণের একটি। তাই মুনিরের মামাও ব্যতিক্রম নন। তিনি বলে উঠেন,

… আরে বাপু রাজনীতি করবি মানুষের উপকারের জন্য, দেশের জন্য। তা নয়। সবাই করছে নিজের জন্য। ঐ ত্যাগ-ব্যাগ না করলে দেশ সেবা হয় না। বুঝলি রাবেয়া। সততা, নিষ্ঠা-ফিষ্টা মানুষের মধ্যে না থাকলে রাজনীতি হয় না। এই পোড়া দেশে সৎ মানুষের বড় অভাব। …

সে যাইহোক। মুনিরের মামা ছাড়াও পরিবারে আছে তার মা। ছোট বোন লিনা। অর্থের অভাবে যার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। লিনার ভালোবাসার মানুষের জন্য দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা ছবিটিতে আরেকটি ট্র্যাজেডির তৈরি করে।

মুনির একটি টিউশনি করে সংসার বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। কোনো কোনো দিন সংসারের হাড়িতে ভাত রান্না হয় না। তখন মুড়ি খেয়ে পেটের খিদাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে তারা।

বেকার মুনির ঘরে ফিরলে প্রতিদিন মায়ের চিরাচরিত প্রশ্ন, আজ কিছু হলো? মুনিরের সেই একই উত্তর, না, হলো না।

এরপর, সংসার রক্ষার চিন্তায় হতাশাগ্রস্থ মা'র ক্ষোভ যেনো সব বেকার ছেলের উপর-ই পড়ে। মুনির ভাবে। চিন্তায় মগ্ন। রাতের বেলায় ছাদ থেকে দেখে পাশ্চাত্য দেশের সংস্কৃতি কিভাবে এদেশে ঢুকে পড়ছে। একটি জেনারেশেনের উপর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে একটি লিখাও লেখে মুনির। তবে পত্রিকার সম্পাদকের 'মানুষ খাবে না' সুলভ উত্তর মুনিরকে আবার হতাশায় ডোবায়।

লেখার বিষয়বস্তু অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। কিন্তু তা মানুষ পড়বে না।

দহনের রোমান্টিসিজমটা ছিল আরও অসাধারণ। মুনিরের সাথে তার ছাত্রী আইভির চাপানো রোমান্টিকতা ছবিটির মাত্রায় ভিন্নতা আনে। সেই সাথে আইভির সাথে তার কিছু দর্শনের আলোচনা দর্শককে ভাবতেও বাধ্য করবে।

যেমন,

"ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতার জন্য সমাজে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এই পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন লেভেলের মানুষ একেকটা লেভেলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।"

এ যেনো পরিচালকের সামাজিক সিষ্টেমকে ভাঙার এক প্রচেষ্টা। স্পষ্ট হয় মার্কসবাদী চেতনার। যে চেতনা তিনি কৌশলে গুঁজে দিতে চেয়েছেন দর্শকের মস্তিষ্কে। যা হয়ত নতুন চিন্তার উদ্রেক করবে।

বেকার মুনির এক সময় চাকরীর আশা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়ে। এবং এখান থেকেই শুরু হয় আরেক হতাশার। আদম ব্যবসার নামে ভন্ড চক্রের সাথে ব্যবসা শুরু করে সে। আর্কিটেক্ট বন্ধুর থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে আরেক ভন্ড বন্ধুর সাথে ব্যবসার শুরু করে মুনির। আবার হোঁচট খায় মুনির। হতাশায় ঢুবে অবশেষে বলে, ক্রমাগত নিজের কাছে হেরে যাচ্ছি।

ছবিটির বেশকিছু বিচ্ছিন্ন সিকোয়েন্স দর্শককে মুগ্ধ করবেই। রাজনীতিবিদ বৃদ্ধ মামার বাজেট নিয়ে আলোচনা অনেকটাই বাস্তবসম্মত। হঠাৎ করে মামার ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া। মাথায় সমস্যা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা উন্মাদ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান তিনি। আর বলতে থাকেন, 'মানুষকে তুমি দাবার গুটি পেয়েছ?' এ যেনো তিনি শাসকগোষ্ঠির প্রতি কথা বলছেন। তাদের সাবধান করছেন। তিনি সব বোঝেন।

এছাড়াও, লিনার প্রেমিকার বিশ্বাসঘাতকতা তাকে আরও মুষড়ে দেয়। বোনের চোখে পানি দেখে মুনির বলে ওঠে, 'তোর কান্না দেখলে নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারি না।' এক সময় লিনাও ঘর ছেড়ে চলে যায়। বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধে হার মানে লিনা। তাই তার নিরুদ্দেশ যাত্রা মুনির আবারও পরাজিত করে। সবশেষ ট্র্যাজিডির শিকার হয়, আইভির বিয়ে ঠিক হয় জার্মান প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে। ভালোবাসার চাপা বেদনায় বিপর্যস্ত মুনির যেন ক্রমাগত নিজেকে হারিয়ে ফেলছিল। আঘাত আর আঘাত যেন তার ভেতরটাকে তছনছ করে তুলছিল। আর তাই ছবিটির শেষ অংশ আমাকে মুগ্ধ করে তোলে। কাটা তারের বেড়া ভাঙার এক আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে মুনির। রক্তাক্ত হয় তার হাত।

বেদনায় কাতর মুনির ভাঙতে চায় মধ্যবিত্তের শৃঙ্খলকে নাকি তার পরিণতিকে? নাকি দারিদ্র্যকে?

ছবিটিতে মুনিরের বোন লিনার নিরুদ্দেশ যাত্রার ঘটনা আমার কাছে অনেকটাই অমূলক মনে হয়েছে। বাস্তবতার নির্মমতা থেকে মানুষ কখনও পালাতে পারে না। জীবনের নির্মমতা সামনে থেকে দেখতে হয় মানুষকে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত সমাজকে। আর তা যদি হয় ইট-পাথরে ঘেরা ঢাকার অভ্যন্তরে তবে তা হবে আরও নির্মম গল্পে ঘেরা।

জটিল জীবনের জটিল সব হিসেব-নিকেশ মানুষকে কষতেই হবে। মৃত্যুই তাকে নিস্তার দিতে পারে। তবে তা পরাজিত মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই নয়। পরাজয় নিয়ে বেঁচে থাকার পর অন্তত মৃত্যটাকে সার্থক করে তোলা মানুষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। অথবা, পরাজয়ের পরও জয়ের স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া মানুষের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

দহন- এ পরিচালক শেখ নিয়ামত আলী খুঁজেছেন মুক্তির পথ। মানুষের জীবনের সকল ফ্যাক্টসকে তিনি তুলে এনেছেন।

দহন ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায়। এটি রাষ্ট্রীয় অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র। মোহাম্মদ শামী নিবেদিত এই ছবিটির কাহিনী ও চিত্রনাট্য পরিচালনা করেছেন শেখ নিয়ামত আলী।দহন ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন আমানুল হক।

পরিচালকের নিজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শেখ নিয়ামত আলী প্রডাকশন্স এর ব্যানারে নির্মিণ করা হয় ছবিটি।

ছবির প্রধান প্রধান চরিত্র গুলোতে অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, হুমায়ুন ফরীদি, শর্মিলী আহমেদ, প্রবীর মিত্র, ডলি আনোয়ার, রওশন জামিল, আবুল খায়ের, সাইফুদ্দিন, আসাদুজ্জামান নূর ও সৈয়দ আহসান আলী।

এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করেছেন ফকরুল হাসান বৈরাগী, আশিষ কুমার লোহ, জহীর চৌধুরী, খায়রুল বাশার, হুমায়ুন খালেদ, মিনু রহমান সহ আরও অনেকে। ছবিটি তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং দশটি বিভাগে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে।

সম্মাননা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ পরিচালকঃ শেখ নিয়ামত আলী
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারঃ শেখ নিয়ামত আলী
শ্রেষ্ঠ পার্শ চরিত্র অভিনেতাঃ আবুল খায়ের

বাচসাস পুরস্কার

শ্রেষ্ঠ পরিচালকঃ শেখ নিয়ামত আলী
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারঃ শেখ নিয়ামত আলী
শ্রেষ্ঠ রচয়িতাঃ শেখ নিয়ামত আলী
শ্রেষ্ঠ অভিনেতাঃ হুমায়ুন ফরীদি
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীঃ ববিতা
শ্রেষ্ঠ পার্শ চরিত্র অভিনেতাঃ আসাদুজ্জামান নূর
শ্রেষ্ঠ পার্শ চরিত্র অভিনেত্রীঃ শর্মিলী আহমেদ
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকঃ আনামুল হক
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশকঃ মাসুক হেলাল

শ্রেষ্ঠ চিত্ত স্মপাদকঃ সাইদুল আনাম টুটুল
 

Users who are viewing this thread

Back
Top