What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review আসুন ভিন্ন চোখে দেখি : সীমানা পেরিয়ে (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
fbHv2up.jpg


জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে নির্জন দ্বীপে আটকে পড়েছে কালু আর টিনা। টিনা (জয়শ্রী কবির) জমিদার বংশের মেয়ে, লন্ডনে পড়তে যাবে শীঘ্রই আর কালু (বুলবুল আহমেদ) জেলে। কিন্তু এই দ্বীপে এসব পরিচয়, বিত্ত কোন কাজেই আসবে না। বাঁচতে হলে একসাথে চলতে হবে। এমনই এক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে আলমগীর কবিরের সীমানা পেরিয়ে। ১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি তিনটি জাতীয় পুরস্কার পায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের সেরা ১০ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রর তালিকাতেও স্থান করে নেয়। আপাত দৃষ্টিতে এটাকে "বড়লোকের মেয়ের সাথে গরীবের ছেলের প্রেম" বিষয়ক চলচ্চিত্রের কাতারে ফেলতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ছবিটি বিবিধ মার্ক্সিস্ট অ্যালিগোরিতে পরিপূর্ণ। আজকের লেখা সেসব ভাবনা নিয়েই। যেহেতু ছবিটার মূল বিষয় নিয়ে কথা বলবো, স্বাভাবিকভাবেই স্পয়লার চলে থাকবে। সিনেমাটি দেখা না থাকলে, আর না পড়াই ভালো।

সীমানা পেরিয়ে নিয়ে বাতচিৎ আগে, এর পরিচালক আলমগীর কবিরকে নিয়ে একটু কথা বলা যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন করে, আলমগীর কবির অক্সফোর্ডে যান ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। সেখান দুটো জিনিস তার জীবনের পুরো গতিপথটাই পাল্টে দেয়- বাম রাজনীতি আর সিনেমা। কবির দেখতে শুরু করেন বিখ্যাত সব ফিল্ম আর দেখা করে আসেন ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে। দেশে ফিরেও তিনি সক্রিয়ভাবে বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। সুতরাং তার ছবিতে কম্যিউনিস্ট সিমিওটিক্স থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

সীমানা পেরিয়ে'র দুই মূল চরিত্র কালু আর টিনা। টিনাকে পুঁজিবাদী (Bourgeoisie) আর কালুকে শ্রমজীবী (Proletariat) শ্রেণীর প্রতিনিধি ধরলে, ছবিটা আরো পরিষ্কার হয়ে যায়। কালু মাটি কেটে রাস্তা বানিয়ে দেয়, দড়ি ফেলে টিনাকে উপরে উঠতে সাহায্য করে। অথচ দ্বীপে যাওয়ার পর থেকে, টিনা সারাক্ষণ ভয়ে থাকে কালু কখন তার কোন ক্ষতি করবে। সম্ভ্রম নিয়ে টিনার এই তটস্থটা যেন ধনিক শ্রেণীর প্যারানয়াকে তুলে ধরে। যাদের চিরাচরিত ভীতি হচ্ছে, "গরীবরা আমার সব কিছু লুটে নেবে"। কিন্তু তারা ভুলে যায়, প্রান্তিক মানুষের তৈরী করা পথ বেয়েই তাদের আজকের এই উত্থান।

আমরা দেখতে পাই কালুর স্পীচ ইমপেডিমেন্ট (তোতলামি) আছে। কথা বলতে গিয়ে এই থেমে যাওয়া বা আটকে যাওয়া, শ্রমজীবী মানুষের পরিপূর্ণ বাক স্বাধীনতার অভাবকে ফুটিয়ে তোলে। ফ্রিডম অফ স্পীচের এহেন রূপক চিত্রায়ন অবশ্য খুব একটা বিরল নয়। মাজিদ মাজিদির বারান, অনুরাগ কাশ্যপের মুক্কাবাজ অথবা শহীদুল ইসলাম খোকনের বাঙলা (কিংবা আহমেদ ছফা'র ওঙ্কার উপন্যাসে) চলচ্চিত্রগুলোতে নারী চরিত্রদের নির্বাক হিসেবে দেখানো হয়েছে (বারান মেয়েটির কোন সংলাপ ছিলো না)। এগুলো আসলে পর্যায়ক্রমে আফগান শরণার্থী, ভারতের উত্তর প্রদেশের নারী ও বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের প্রতীক। বাক স্বাধীনতার এই সমস্যার সমাধান হিসেবে কবির একটা পরামর্শ দিয়েছেন। ছবিতে টিনা কালুর তোতলামি ও কথ্য ভাষা শুধরে দেয়। অর্থাৎ কিনা পুঁজিবাদী সমাজের এই প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে এগিয়ে আসা উচিৎ।

wVvoufC.jpg


এই সিনেমায় আলমগীর কবির আরেকটা বিষয় সামান্য সময়ের জন্য স্পর্শ করেছেন। এক পর্যায়ে টিনার মা (মায়া হাজারিকা) টিনাকে বলে, "বিয়ের পরে তোর বাবা আমাকে রেপ করেছে"। স্ত্রীর কাছ থেকেও যে কনসেন্ট নিতে হবে, এই বিষয়টি আগে-পরের কোন বাংলা সিনেমায় পাইনি। উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রে প্যাট্রিয়ার্কি ও সোশ্যিয়ালিস্ট ফেমিনিজমের রূপায়ন নিয়ে অন্য কোন দিন আলাপ করা যাবে। সীমানা পেরিয়েতে ফিরে যাই।

সিনেমার শুরুতে টিনাকে ধনী এক ছেলে বিয়ে করতে চায়, কিন্তু টিনা রাজি হয় না। কালুর পাশাপাশি সেই ছেলেটির চরিত্রেও অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ। আমার মনে হয়েছে, দুটো চরিত্রেই বুলবুলকে নিয়ে কবির একটা বাহ্যিক সমান্তরালতা (প্যারালালিজম) তৈরী করেছেন। স্যুট-টাই পড়া বুলবুলকে ফিরিয়ে দিলেও, জেলে বুলবুলকে টিনা আপন করে নেয়। পোশাকের সাথে যে পরিচয়ের একটা সংযোগ আছে আর তা যে দ্বৈততার জন্ম দেয়, সেটা তো শেখ সাদীর কল্যাণে ইতোমধ্যে আমাদের জানা আছে। এটা মনে করিয়ে দেয় মৃণাল সেনের ভুবন সোম সিনেমাটির কথা। যেখানে উৎপল দত্ত পাখির খোঁজে সাহেবী পোশাক ছেড়ে গ্রামীণ পোশাক পড়েন, গাছের মাঝে লুকিয়ে থাকেন (প্রকৃতির কাছে ফিরে যান), কিন্তু (সুখ) পাখি তো অধরা। আর ইন্টারভিউ সিনেমাতে ধুতি-পাঞ্জাবী পড়ার কারণে রঞ্জিত মল্লিকের কর্পোরেট চাকরিটা হাতছাড়া হয়ে যায়। এখানে বলে রাখি, মৃণাল সেনের ছবিগুলোও কিন্তু বাম ঘরানার মতাদর্শে নির্মিত।

অনেকেই সীমানা পেরিয়ের গল্পের সাথে ভিয়ার স্ট্যাকপুলের "ব্লু ল্যাগুন" উপন্যাসের মিল পেলেও, আলমগীর কবির '৭০-এর জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী একটা নিউজপেপার আর্টিকেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমাটি লিখেছিলেন। পরিচালক নিজেই এটিকে ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন। টিনা আর কালু জানে না কিভাবে তারা দ্বীপটিতে এসে উপস্থিত হলো। জলোচ্ছ্বাসের সময় ভূপেন হাজারিকা (যিনি নিজেও সারাজীবন সাম্যের জন্য গান করেছেন)-এর কণ্ঠে মেঘ থম থম করে গানটা শোনা যায়। গানের কথাগুলো ছিলো এরকম :

"পুরনো সব নিয়ম ভাঙ্গে অনিয়মের ঝড়
ঝড়ো হাওয়া ভেঙ্গে দিও মিথ্যে তাসের ঘর

ভাঙ্গনের যে নেই পারাপার
তুমি আমি সব একাকার।"

টিনা আর কালু যে সীমানা পেরোয়; সেটা যতটা না সামাজিক বা ভৌগোলিক সীমানা, তার চেয়েও অনেক বেশি করে অর্থনৈতিক শ্রেণীর সীমানা। আর একটা তীব্র (রাজনৈতিক বিপ্লবের) জলোচ্ছ্বাস বোধ হয় পারে, সব শ্রেণীকে একই সমতলে নিয়ে আসতে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top