What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ফিরে আসুক বাবাদের বসন্ত (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
XckicQR.jpg


আবার বসন্ত (২০১৯)
ধরণঃ ড্রামা
পরিচালকঃ অনন্য মামুন
প্রযোজনাঃ ট্রান্স আটলান্টিক মাল্টিমিডিয়া লি.
পরিবেশনাঃ এ্যাকশন-কাট এন্টারটেইনমেন্ট
অভিনয়ঃ তারিক আনাম খান (ইমরান চৌধুরী), অর্চিতা স্পর্শিয়া (তিথি মোস্তফা), ইমতু রাতিশ (ইমরান চৌধুরীর ছেলে), মনিরা মিঠু (ইমরান চৌধুরীর মেয়ে), মুকিত জাকারিয়া (তুষার), করবী মিজান (তিথির মা), আনন্দ খালেদ (ইমরান চৌধুরীর পি.এ) নুসরাত জাহান পাপিয়া (ইমরান চৌধুরীর নাতনী) প্রমুখ।
শুভমুক্তিঃ ৫ই জুন, ২০১৯

🍎 নামকরণঃ
সাফল্য, এমন একটি জিনিস, যার পেছনে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ ছুটে নিজের জীবনের মূল্যবান সময়টুকু হারিয়ে ফেলে। কারণ একটাই, নিজ পরিবারকে সুখে রাখা, শান্তিতে রাখা। বর্তমানের কষ্ট ভবিষ্যতে যেনো না সইতে হয় সেই ব্যবস্থা করা। এই মন্ত্র জপেই দুনিয়ার সব পিতামাতা তাদের সন্তানদের লালনপালন করে, দুধেভাতে রাখে। মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টায় সর্বদা নিয়োজিত থাকে।

সন্তানদের মানুষ বানিয়ে পিতামাতারা চায় বাকি জীবনটা একটু স্বাধৗনভাবে কাটাতে, সবার সাথে মিলেমিশে খুশি থাকতে। কিন্তু আমাদের আধুনিক সমাজ তাদের কপালে সেই সুখটুকু লিখে রাখেনি। অতীতের যৌথ পরিবার ভেঙ্গে বর্তমানে হচ্ছে একক পরিবার। আর বাবা-মা দের ভালো অর্থকড়ি থাকলে তাদের জায়গা হয় একাকী আলিশান বাড়িতে, অর্থকড়ি না থাকলে জায়গা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এমন নিষ্ঠুর সমাজের প্রতিফলন ঘটানো এছবিটির নাম "আবার বসন্ত"-ই যথার্থ! যেখানে এক ষাটোর্ধ্ব বয়সী পিতার জীবনের অতীতের আনন্দগুলো আবার ফিরে আসে।

🍎 কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপঃ
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই নির্মাতা অনন্য মামুনকে, যার মস্তিষ্ক থেকে এমন ভিন্নধর্মী একটি আইডিয়া বেরিয়েছে সিনেমা তৈরির জন্য। ঢালিউডের ইতিহাস ঘাটলে এরকম কনসেপ্টের ছবি হাতেগোনা কয়েকটি পাওয়া যেতে পারে। শুধু ঢালিউডে নয় পুরো দুনিয়াতেই এরকম কনসেপ্টের ছবি চাহিদার তুলনায় কমই পাওয়া যাবে, তাই এগুলি যখনই তৈরী হয়েছে, বেশিরভাগই ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

গল্পে দেখা যায়, ইমরান চৌধুরী একজন সফল বিজনেসম্যান; একটি জুট ইন্ডাস্ট্রির কর্ণধার। দেশব্যাপী ব্যবসায়ী তার ভালো নামডাক রয়েছে। ব্যবসা করার পাশাপাশি একজন পিতা হিসেবেও তিনি সফল। নিজের দুই ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন, তাদের ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র মেয়েকে ভালো একটি ঘরে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার সন্তানেরা বিগত ১৫ বছর যাবৎ তার কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি, তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তাদের কেউ বাবাকে দেখতে দেশে আসেননি। এমন পরিস্থিতিতে তিনি তার জীবনে বড্ড একাকীত্ব ভোগ করেন, সময় কাটানোর মতো উপলক্ষ খুজেঁ পাননা। তাই তিনি ঠিক করেন বিয়ে করবেন, এতে তিনি শেষ বয়সে এসে কিছুটা মানসিক প্রশান্তি পাবেন।

bzS4Wpg.jpg


তবে এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার সন্তানেরা, কারণ পাত্রী হিসেবে তাদের বাবা বাছাই করেন এক ২৫ বছরের চঞ্চল, আবেদনময়ী তরুণীকে। সোস্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তুমুল নিন্দা ছড়ালে তার সন্তানেরা নিজেদের অপমানিত বোধ করে। সন্তানেরা বাবার বিয়ে ঠেকাতে পারে কিনা, ইমরান চৌধুরীর ভালো দিনগুলি ফিরে আসে কিনা, এগুলোই পরবর্তীতে দেখতে পাওয়া যায়।

ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক অনন্য মামুন নিজেই। গল্পের আইডিয়া যে ভালো সেতো আগেই বললাম। চিত্রনাট্যও মোটামুটি গোছানো। তবে চরিত্রগুলো তৈরী করতে চিত্রনাট্য একটু বেশিই সময় নষ্ট করেছে, যার দরুণ গল্প এগিয়েছে প্রচন্ড ধীরগতিতে। তবে ছবির দ্বিতৗয়ার্ধে একটি টুইস্ট রয়েছে, যা চমকে দেওয়ার মতো। ছবির একদম শেষের দিকটা অনেক বেশি ইমোশনাল, বাবারা তাদের সন্তানদের কাছ থেকে সারাজীবনে কী পরিমাণে অসন্তুষ্ট থাকে তা এই গল্পে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হয়েছে।

ছবির ডায়ালগের কাজ মোটামুটি ভালো হয়েছে। কোর্টসিনে কিছু ভালোভালো সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে তারিক আনাম খান সংলাপ দেওয়ার দায়িত্বটি ভালো সামলিয়েছেন।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০।

🍎 অভিনয় ও পরিচালনাঃ
তথাকথিত স্টারের বড্ড অভাব আছে এছবিতে। এরা কেউই বড়পর্দার নিয়মিত মুখ না। তারিক আনাম খান, আনন্দ খালেদ, মনিরা মিঠু এবং মুকিত জাকারিয়াকে বছরে ২/১ টি ছবিতে পাওয়া যায়।

অভিনয়ে তারিক আনাম খান এবং অর্চিতা স্পর্শিয়ার চরিত্রের গুরুত্ব-ই সবথেকে বেশি। স্পর্শিয়ার তিথি মোস্তফা চরিত্রটি এছবির প্রাণ। চঞ্চল স্বভাবের, সাহসী এই চরিত্রটি সমাজের ধার ধারে না, নিজের যা ভালো লাগে সেটাই করে। নবাগতা স্পর্শিয়া এই চরিত্রে খুব ভালো মানিয়ে গেছেন। সেইসাথে তাকে সেইরকম আকর্ষণীয় ও সুন্দর লাগছিল দেখতে।

তারিক আনাম খানের ইমরান চৌধুরী চরিত্রটি তিথি মোস্তফা চরিত্রের একদম বিপরীতধর্মী। তিনি শান্ত স্বভাবের, তার জীবনে তিথি আসার পর থেকেই তিনি তার যুবক বয়সের ফেলে আসা দিনগুলোর ছোঁয়া পেতে থাকেন। তার সাদাকালো জীবন হয়ে ওঠে রঙিন। অভিনয়ের দিক থেকে তারিক আনাম খান এখনো কতটা শক্তিশালী, এছবি দেখলে তার অনেকখানি আন্দাজ পাওয়া যায়। ৬৬ বছর বয়সী এই ভার্সেটাইল অভিনেতার জন্য পারফেক্ট চরিত্র ছিল এটি।

গল্পের বাকি চরিত্রগুলোর গুরুত্ব এবং স্ক্রিণটাইম দুটোই এছবিতে অনেক কম। ইমতু রাতিশকে এর আগে দীপ্ত টিভির একটি সিরিয়ালে অভিনয় করতে দেখেছিলাম, যতদুর মনে পড়ে। নতুন হিসেবে তার অভিনয় মোটামুটি ঠিকঠাক, তবে আরো উন্নতি করতে হবে।

মনিরা মিঠুকে তারিক আনাম খানের মেয়ের চরিত্রে একদমই মানায়নি। উপরন্তু তিনি আবার এখানে টেনে টেনে সংলাপ আওড়াচ্ছিলেন। তার অভিনয় এছবিতে একদমই ভালোলাগেনি।

hkeFAVV.jpg


করবী মিজান, মুকিত জাকারিয়া, আনন্দ খালেদ, নুসরাত জাহান পাপিয়া… এদের কারোরই পর্দায় আলাদাভাবে কিছু দেখানোর সুযোগ ছিল না। তাই তাদের সবার গতানুগতিক অভিনয়ই পেয়েছি। বাকিরা যারা ছিলেন সবাই ছিলেন মোটামুটি।
অনন্য মামুন আমাদের ডিজিটাল চলচ্চিত্রের একদম শুরুর দিকের পরিচালক। অনন্ত জলিলকে নিয়ে "মোস্ট ওয়েলকাম" উপহার দিয়ে অতীতে ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছেন। পরবর্তীতে আরিফিন শুভ, আনিসুর রহমান মিলন, বাপ্পী চৌধুরীকে নিয়েও তিনি কাজ করেছেন। তার পরিচালিত "অস্তিত্ব" এ অভিনয় করে নুসরাত ইমরোজ তিশা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এবারই তিনি প্রথম তথাকথিত স্টারের বাইরে কাউকে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক‌টি কাজ করার সাহস দেখালেন।

তবে "আবার বসন্ত" ছবিতে তার পরিচালনা আমার কাছে ততটা ভালো মনে হয়নি। ছবি চলার সময় গল্পটি বারবার তার দম ছেড়ে দিচ্ছিল। মাঝেমধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি করছিল। পরিচালক গল্পটিকে পোক্ত করে পর্দায় উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

🍎 কারিগরিঃ
মাঝেমধ্যে দেখা যায়, ছবি স্বল্পবাজেটের হলেও সেটা পর্দায় তেমন একটা ফুটে ওঠে না দক্ষ হাতের কল্যাণে। আফসোস, এছবিতে তেমনটি আর হয়নি। বরং এই টেকনিক্যাল সাইড ছবিটিকে মানের দিক থেকে আরো পিছিয়ে দিয়েছে।

ছবির এডিটিং সবথেকে বেশি খারাপ লেগেছে। একদম চোখ বন্ধ করে এছবি থেকে ২০ মিনিট কেটে ফেলে দেওয়া যেতো। এতে চরিত্র গঠনের কোনো সমস্যাই হতো না, বরং এই ২০ মিনিটের জায়গায় আরো বিশেষ কিছু দেখানো যেতো। হয়তো বাজেটের অভাবে সেগুলো আর করা যায়নি।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফি একদম সাদামাটা। কোনোরকমের কারুকার্য দেখানো হয়নি, একদমই সমতল। বাজে ক্যামেরাওয়ার্ক ছবিটিকে আরো বোরিং করে তুলেছে।

কালার কারেকশনের কাজটি মোটামুটি ভালো ছিল। ছবিটিতে উজ্জ্বল বর্ণের ছোঁয়া লাগানো হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ ছবির শুরুতে প্রতিশ্রুতিশীল মনে হলেও মাঝপথেই কেমন যেনো হারিয়ে গেলো। এই অংশটিও মন মতো হয়নি। পুরো ছবিটি শ্যুট করা হয়েছে ঢাকায় এবং ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। লোকেশনগুলি ভালো ছিল।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫০।

🍎 বিনোদন ও সামাজিক বার্তাঃ
ছবিতে দেখানো ইমরান-তিথির ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলি ভালো বিনোদন দিয়েছে। তাদের মধ্যে যেরকম একটা জেনারেশনের ব্যবধান আছে সেটাকে সঙ্গে নিয়েই তাদের মজাদার খুনসুটিগুলো তৈরী হয়েছে।

ছবিতে মোট গান রয়েছে দুটি। চিশতী বাউলের কন্ঠে "মিলন হবে কত দিনে" গানটিকে অনেকটা নতুন আঙ্গিকে শোনানো হলো। গানটি বেশ ভালো হয়েছে। এছাড়া ছবির অন্য গান "বেপরোয়া মন" ও বেশ ভালো হয়েছে। ভারতের দোলান মইনাক দুটি গানেই দারুণ সুর দিয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই পিতামাতারা আমাদের লালন-পালন করতে জীবনের বহু শখ-আহ্লাদ জলাঞ্জলি দিয়ে দেয়। সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার পর তারা একটা জিনিসই আমাদের কাছ থেকে আশা করে, শেষ জীবনে যেনো তারা আমাদের হাত ধরে আনন্দে দিন পার করতে পারে। এর থেকে বেশি কিছু তারা চায়না। কারণ জীবন তাদের শেখায় অর্থকড়ি ক্ষণস্থায়ী, ভালোবাসা চিরস্থায়ী। তাই আমাদের অবশ্যই পিতামাতার ভালোমন্দের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত,তাদের সেবা করা উচিত। পাশাপাশি কোনো পিতামাতার শেষ আশ্রয় যেনো বৃদ্ধাশ্রম না হয় সেবিষয়ে আমাদের সমাজকে সচেতন করা উচিত। এছবিতে সেরকম সামাজিক বার্তাই প্রদান করা হয়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০।

🍎 ব্যক্তিগতঃ
অসম প্রেমের গল্পটি গল্পকার, পরিচালক এবং প্রযোজক অনন্য মামুন কীভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন, সেটিই ছিল এছবি দেখার প্রধান বিষয়। ঈদে মুক্তি পাওয়া অন্য দুইটি ছবি থেকে সম্পুর্ন ভিন্নধারার ছবি এটি, তাই দর্শক সমাগমও কিছুটা কম ছিল। তবে ছবিটি স্বল্প বাজেটের হওয়ায় আমি মনে করি এভাবে রেসপন্স পেলেই এছবির লগ্নি উঠে যাওয়ার কথা।

সবমিলিয়ে যদি বলি, গল্পকার অনন্য মামুন দারুণ, পরিচালক অনন্য মামুন মোটামুটি, প্রযোজক অনন্য মামুন বেদনাদায়ক। ভালো গল্পের ছবিকে শেষ পর্যন্ত তিনি যথাযথভাবে দাঁড় করাতে পারলেন না।

রেটিংঃ ৬/১০

🍎 ছবিটি কেন দেখবেনঃ

একটু ভিন্নধারার ছবি যারা পছন্দ করেন, গল্প দেখতে যারা বেশি আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি ভালো সিনেমা আড়াই ঘণ্টা সময় ব্যয় করার জন্য। পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের এছবি থেকে শিক্ষা নেওয়ার বহু বিষয় আছে। সবাই হলে গিয়েই ছবিটি দেখে আসুন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top