What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review চিলেকোঠা’ ভাবাল, কিন্তু চাহিদা পূরণ করল কি? (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,016
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
MOJN8qs.jpg


চিলেকোঠা

পরিচালনা: প্রেমাংশু রায়

অভিনয়: ব্রাত্য বসু, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী

যা দূরে ছিল, তা আজ এসেছে অনেক কাছে। প্রযুক্তি সারা বিশ্বকে এনে দিয়েছে ঘরের মধ্যে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, হাতের মুঠোয়। কিন্তু তাতে কি মানুষে মানুষে সত্যিকারের দূরত্ব কমেছে? আপনজনেরা কি আগের মতোই আপন আছেন? নাকি আজ তাঁদের মধ্যেকার ভৌগোলিক দূরত্ব নিমেষেই দূর করা গেলেও মানসিক ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে? প্রেমাংশু রায়ের নতুন ছবি 'চিলেকোঠা' দেখলে এই সব প্রশ্ন মনে আসে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবলুপ্ত হয়ে যায় অনেক কিছুই। অনেক স্মৃতি, অনেক সম্পর্ক। আজকের ফ্ল্যাটবাড়ির যুগে চিলেকোঠার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে প্রয়োজন ফুরিয়েছে অনেক সম্পর্কেরও। ফুলকাকা, রাঙাপিসি এ সব সম্বোধন ভবিষ্য‏‏‏ত প্রজন্ম মনে রাখবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সঙ্গত কারণেই। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন ভাবাই যেত না, এই সব কিছু এক দিন হারিয়ে যাবে।

ar1TNRN.jpg


যেমন এই চিলেকোঠাই যে কত রকম আশ্রয় দিয়েছে একটা পরিবারের কতজনকে! পাশের বাড়ির কারও সঙ্গে লুকিয়ে প্রেমই হোক, লুকিয়ে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক ইস্তেহার পড়াই হোক বা বিষণ্ণ মনে একাকী আশ্রয়ই হোক, চিলেকোঠা যৌথ পরিবারের সামগ্রিকতার মধ্যেও যে ব্যক্তিগত পরিসর তৈরি করেছিল তা ফেলে আসা সময়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

সেই সময়টার গল্পই বলতে চেয়েছেন পরিচালক। বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া অনিমেষ (ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়) বৃদ্ধ বয়সে একা কলকাতায়। তাঁর ছেলে পরিবার নিয়ে বিদেশে। এক দিন তিনি স্মৃতিতে ডুব দিয়ে ফিরে যান নিজের ছোটবেলায়। যা কেটেছিল উত্তর কলকাতার এক যৌথ পরিবারে। নিজের তরুণ বয়সের (ঋত্বিক চক্রবর্তী) সঙ্গে কথোপকথন চলে বৃদ্ধ অনিমেষের। সেই কথার সূত্রেই এগোয় ছবির গল্পও।

একটি চরিত্র বা একটি পরিবারের মধ্যে দিয়েই পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন কয়েক দশকের একটা জার্নি। মন্বন্তর, স্বাধীনতা, দেশভাগ। সেই দেশভাগের সময়েই বাংলাদেশ থেকে মাকে নিয়ে অনিমেষের পরিবারে আসেন তার ফুলকাকা (ব্রাত্য বসু)। ফুলকাকার হাত ধরেই অনিমেষ পায় জীবনের স্বাদ। নাটক, সিনেমা, ফুটবল, রাজনীতি থেকে শুরু করে হাসি-কান্না-পড়াশোনা-প্রেম সবেরই সাক্ষী থাকেন ফুলকাকা।

Ebr8A6j.jpg


'চিলেকোঠা' ছবির একটি দৃশ্যে ব্রাত্য বসু।

ফুলকাকা কোনও দিনই দেশ ছেড়ে, দেশের মানুষদের ছেড়ে বিদেশে গিয়ে থাকা সমর্থন করতেন না। কিন্তু নকশাল আন্দোলনের সময় ঘটনার ফেরে বিদেশেই পড়তে চলে যায় অনিমেষ। নিজের সঙ্গে কথোপকথনের সময় তাই তাঁর তরুণ সত্তা বৃদ্ধ অনিমেষকে ক্ষোভ জানায়, তাকে, সেই আদর্শবাদী অনিমেষকে হত্যা করার অভিযোগ তুলে।

অনিমেষের নিজের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব, এই প্রশ্নগুলোই দর্শকদের সামনে তুলতে চেয়েছেন পরিচালক। সেই সঙ্গে নস্টালজিয়ার মোড়কে হাজির করেছেন পুরনো কলকাতার ফুটবলে ঘটি-বাঙাল রেষারেষি, দুর্গাপুজো, পাড়ার প্রেম। কিন্তু এত কিছু বিষয় এক সঙ্গে দ্রুত এগোনোর ফলে কোনও জিনিসই গভীরে গিয়ে ছুঁতে পারে না। ছবিতে গল্প এগোয় সেই সময়কার নানা আইকনিক ছবির পোস্টার দেখিয়ে, তা নিয়ে সংলাপের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই বড় সময়ের বদলাতে থাকা ক্যানভাসে চরিত্রদের প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তন আনা দরকার ছিল। তা চোখে পড়ে না। ছবিতে যুবক অনিমেষ, ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর দিদি, বোন বা পাড়ার প্রেমিকার বয়সের ফারাকও চোখে লাগে।

Nqb04d7.jpg


'চিলেকোঠা' ছবির একটি দৃশ্য।

অনিমেষ কী ভাবে যৌথ পরিবারে বড় হয়েছে, কী ভাবে যৌথ পরিবার সবাই এক সঙ্গে আনন্দ, দুঃখ ভাগ করে নেয় তা পরিচালক দেখিয়েছেন ছবির প্রায় পুরোটা জুড়েই। বৃদ্ধ অনিমেষের ছেলের পরিবারের অস্তিত্ব কেবল কয়েক মিনিটের ভিডিও কলে কথা বলার। কিন্তু অনিমেষ বিদেশে পড়ার পরে কলকাতায় কবে ফিরে এসেছেন, শেষ বয়সে ছেলের কাছে না গিয়ে একা আছেনই বা কেন, কীভাবেই বা অনিমেষের ছেলের পরিবার তার থেকে আলাদা হয়ে যায়, সে সব জানার আগ্রহ থেকে যায়।

অভিনয়ে ধৃতিমান, ব্রাত্য বসু, ঋত্বিক সকলেই যথাযথ। অরিন্দম ভট্টাচার্যের ক্যামেরায় ব্রাত্য-ঋত্বিক বা ব্রাত্য-ধৃতিমানের কিছু কিছু দৃশ্য মনে রাখার মতো। অন্য সব চরিত্রেই অভিনয় উচ্চমানের। লম্বা টাইমস্প্যানে গল্প চলতে থাকলেও অতনু ঘোষের সম্পাদনায় কখনওই তা দীর্ঘায়িত মনে হয় না। ছবিতে অন্য মাত্রা যোগ করে সাত্যকি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানগুলি।

ছবির গল্প কেবল নস্টালজিয়া নির্ভর হতে চাইলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু এই ছবি তা থেকে বেরিয়ে আজকের সত্তার সঙ্গে সেই সময়ের সত্তার একটা দ্বন্দ্বের পরিবেশ তৈরি করে। দর্শকের মনে সেই দ্বন্দ্বের চাহিদাও তৈরি হয়। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণ না হয়েই হল ছাড়তে হয় দর্শককে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top