What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review রেনবো জেলি’র ঘোতন আসলে ভগবান, মাক্কালি! (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,016
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
UUY4533.jpg


আসলে আমাদের সমাজটা দুষ্টু লোকেদের হাতে। সেটা জানত সোনার কেল্লার মুকুল। আর জানে রেনবো জেলি'র ঘোতন। ঘোতনের মামা গন্ডারিয়া এক জন দুষ্টুলোক। খালি মারে। বাড়ির কাজ করায়। পাড়ার বন্ধুরা ঘোতনকে বলে কাজের লোক। খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসেও। খুব কষ্ট পায় ঘোতন। কান্না আসে। বাবা-মা তো আকাশে থাকে। তাই, রাত্রে ছাদে শোয় ঘোতন। তারা হয়ে যাওয়া বাবা-মা কে সব বলে। তার পর কখন যে ঘুম চলে আসে!

সৌকর্য ঘোষাল বড় মায়া দিয়ে বানিয়েছেন 'রেনবো জেলি'। লীলা মজুমদারকে উৎসর্গ করা এ ছবি ছোটদের। আর তাই আদৌ ছোটদের নয়। বরং বেশি রকম বড়দের গালে থাপ্পর। ঘোতন স্পেশ্যাল চাইল্ড। তার প্রতি অবহেলা আর ভালবাসার ফিল্টারে চার পাশের সমাজের নগ্নতা নিষ্ঠুর ভাবে দেখিয়েছেন সৌকর্য। ছোটদের জন্য আমরা সব ভালবাসা দিই। কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের এম্প্যাথি নেই। কমপ্যাশন নেই। আদ্যন্ত অবদমিত একটা সমাজ। নিজেদের না পারার বোঝা চাপাই তাদের ঘাড়ে। তাদের নাম দিই পাগল। যেমন, ঘোতনের মা-কেও অপয়া বলা হয়েছিল। তার পর তাঁকে মেরে ফেলা হয়। এ ছবির শেষেও ঘোতনকে তাই বলা হয় অপয়া। বলে পাড়ার লোকেরা। ঘোতন কিন্তু জেতে। বাবা-মার স্বপ্ন সত্যিও করে। কী ভাবে সেটা দেখতেই আপনাকে যেতে হবে হলে।

নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্রকার সৌকর্য। ইন্ডাস্ট্রি সেট-আপের ভেতরে থেকে প্রথম ছবি পেণ্ডুলাম থেকেই অন্য ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ইলাস্ট্রেশনের প্রতি বিশেষ আগ্রহের ছাপ এ ছবিতেও স্পষ্ট দেখা যায়। ছবির অ্যানিমেশনের কাজ তারই করা। এ ছবি দেখতে দেখতে মনে পড়বে 'ওপেন টি বায়োস্কোপ'-এর কথা। মনে পড়বে, তারে জামিন পর-এর কথা। পুরনো কলকাতার বাড়ি, কালীঘাটের স্কাইলাইন, নস্টালজিয়া ফিরে ফিরে আসে এ ছবিতে। সেই ঘরানাতেই সচেতন ভাবে থাকতে চান তিনি। কিন্তু বার বারই এ সব কিছু ছাপিয়ে এ ছবি হয়ে ওঠে ঘোতনের ছবি। বড় ভাল অভিনয় করেছে ছোট ছেলেটি। ভাল লেগেছে দামিনী বসুর অভিনয়ও। আর জমিয়ে দেন পরিপিসি শ্রীলেখা মিত্র।

1E7ErSi.jpg


এ ছবি অনেক বেশি জীবনের কঠিন কথা স্পষ্ট ভাষায় বলা।

সহজ শিশুর চিহ্ন এ ছবিতে ফিরে ফিরে আসে। এই চিহ্ন আর তার বিপরীতে একটা মিথ্যা, নকল সমাজ নিয়ে খেলে বেড়ান সৌকর্য। মাঝে মাঝে লড়াই লেগে যায় এই দুই বিপ্রতীপে। চলে অনুভূতির মল্লযুদ্ধ। আর বার বারই জিতে বেরিয়ে আসে সত্য। ঘোতনের মুখে আলো আর হাসি ফুটে ওঠে। গান গায় পরিপিসি। রান্না করে দেয়। খুব রোদ ওঠে সে দিন ঘোতনদের ভাঙা বাড়িতে। ছাদে শুয়ে কবিতা লেখে ঘোতন। পাশের বাড়ির পপিন্সকে নিয়ে লেখা কবিতা। পপিন্সও স্কুলে যাওয়ার সময় আড়চোখে তাকায়। খুব আনন্দ হয় ঘোতনের। জন্মদিনে পপিন্স লেখে, "লিটিল প্রিন্স"। মাথা ঘুরে যায় ঘোতনের। আর দেখে কে তাকে! পরিপিসি বলে রাজকন্যা, রাজপ্রাসাদ জেতার গল্প। রান্না করে রেনবো জেলি। জানায় মামার নাগাল টোপকে কী ভাবে মিলবে পাসওয়ার্ড। ঘোতনের খুব মজা হয়। বাবার চিঠি আবিষ্কার করে ঘোতন। জানতে পারে, বাবা এ পোড়া শহরে বসেই আবিষ্কার করছিলেন অভিনব তত্ত্ব।

WBp2lvr.jpg


অন্যান্য রিভিউতে বার বারই এ ছবিকে স্বপ্নপূরণের গল্প বলা হয়েছে। কিন্তু আমার মতে, এ ছবির কোনও পূরণের দায় নেই কিছুর। বরং এ ছবি অনেক বেশি জীবনের কঠিন কথা স্পষ্ট ভাষায় বলা। অনেকটা লীলা মজুমদারের মতো। বা, বিভূতিভূষণের মতো। তুলনার নামগুলো বড় বলে ফেললাম। কিন্তু উপায় নেই আমার। এ ছবি দেখলে আপনি কেঁদে ফেলবেন। হ্যাঁ, কিয়ারস্তামি, জাফার পানাহির নামগুলোও মনে পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের এই ছবি করিয়েরা যেমন সহজ ঢঙে কঠিন জীবনের গল্প বলেন, সেই অনুপ্রেরণা সৌকর্যের ভিতরে। নিজের ছবির ভাষার পথে এ ছবি আর এক ধাপ। সন্ধ্যেবেলার রিগ্রেসিভ সিরিয়াল, ভোট, ফেসবুক গণপ্রহার আর মিডিয়ার নেগেটিভ খবরাখবর পেরিয়ে যা হাত রাখে আত্মায়। শিশুর আত্মায়। কারণ, এখনও একমাত্র সেখানেই ভগবান আছে। মাক্কালির দিব্বি!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top