What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review চিরন্তন আভিজাত্যের শাবানা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Kb00EPH.jpg


'আমি ভাত চুরি করি নাই তো। খিদা লাগে, খাই।'

'ভাত দে' চলচ্চিত্রের এই সংলাপটা শেষভাগে যখন আসে ততক্ষণে ভাগ্যের পরিহাসে এলোমেলো জরির জীবনের গল্পটা জানা হয়ে গেছে সবার। একমুঠো ভাতের জন্য জন্ম থেকে যুদ্ধ করে ফেরা শ্রমিক শ্রেণী এবং শোষক–শোষিতের সংঘাতের অপূর্ব সম্মিলন এই চলচ্চিত্রে এনেছিলেন পরিচালক ও কাহিনীকার আমজাদ হোসেন। তবে অভিষেকের ২০ বছর পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের এই চরিত্রের জন্য বাড়তি নজর কাড়েন শাবানা।

হ্যাঁ, শাবানা; বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস লিখতে বসলে যার অনেকখানি অংশজুড়ে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে এই শক্তিশালী ও মোহনীয় রূপের অধিকারিণী অভিনেত্রীর নাম।

দুরন্ত শৈশব

টাইপিস্ট ফয়েজ চৌধুরী এবং গৃহিণী ফজিলাতুন্নেসার ঘর আলো করে ১৯৫২ সালের ১৫ জুন জন্ম হয় আফরোজা সুলতানা রত্নার। চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের ডাবুয়া গ্রামে জীবনের প্রথম দিকটা কাটান তিনি। ছোটবেলায় নানার বাড়ি খুব কাছে থাকায় জীবনে সেদিককার প্রভাবটাই পড়েছে বেশি। ছোট খালার বেশ ন্যাওটাও ছিলেন।

গেণ্ডারিয়া স্কুলে খুব বেশিদিন পড়াশোনা করা হয়নি শিশু রত্নার। মাত্র ৯ বছর বয়সেই পাট চুকিয়ে ফেলেন এই অধ্যায়ের। বাবার খালাতো ভাই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এহতেশামের আগ্রহেই ১৯৬১ সালে চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে নাম লেখান তাঁরই পরিচালনার ছবি 'নতুন সুর'-এ। এর পরপরই নিয়মিত না হলেও ১৯৬৬ সালে ইবনে মিজানের 'আবার বনবাসে রূপবান' ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে এবং মুস্তাফিজের 'ডাক বাবু' ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে ডাক পান। প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতার সময়ে রত্না হিসেবে পরিচিত হলেও চাচা এহতেশামই পরে নাম দেন শাবানা।

রূপালি জগতের ডাক

১৯৬৭ সাল, বাংলা চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটলো এক নতুন অভিনেত্রীর। উর্দু ছবি 'চকোরী' তে প্রধান নারী চরিত্রে নায়ক নাদিম বেগের বিপরীতে লাস্যময়ী তরুণীর অভিনয় বেশ নজর কাড়লো দর্শকদের। ৮১ সপ্তাহ ধরে চলা এই ছবিতে চকোরী চরিত্রে শাবানাকে প্রথমেই ভাল লেগে যায় । সে বছরই 'কুলি', 'ছোট সাহাব' মুক্তি পায়। এরপর দুবছর উর্দু ছবি 'চান্দ অউর চান্দনি', 'পায়েল', 'আনাড়ি', দাঘ' এ অভিনয় করেন তিনি।

রাজ্জাক–সুচন্দা জুটির জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। কবরী, সুচন্দার পাশে যে আরেকজনের নামও ডাকা হবে সামনের দিনে সে আঁচটা প্রথম ছবিতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই নবীনা। ১৯৬৯ সালে তিনি অভিনয় করেন 'বিজলী' ছবিতে। চার্লস ডিকেন্সের অনবদ্য সৃষ্টি 'অলিভার টুইস্টে'র ছায়া অবলম্বনে তৈরি এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় করে সুনাম কুড়ান শাবানা। এরপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

সাফল্যের অন্যনাম

১৯৭০ এ মুস্তাফিজের সাথে 'একই অঙ্গে এত রূপ' সহ কাজী জহিরের সাথে প্রথমবার কাজ করেন 'মধুমিলনে'। এর মাঝেই সাফল্য ধরা দিয়েছে শাবানার হাতে। অভিজাত সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে বক্সঅফিসের সাথে দর্শকের মনেও জায়গা করে নিয়েছে ততদিনে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পরপর '৭২ সালটি ছিল শাবানার জন্য সোনালি সময়ের আরম্ভ। কাজী জহিরের অবুঝ মন, জমিদার কন্যা কিংবা চাষি নজরুল ইসলামের 'ওরা ১১ জনে'র মিতা– সব চরিত্রেই চূড়ান্ত প্রতিভার সাক্ষর রাখেন তিনি।

PtvOTjO.jpg


'অমর প্রেমে' জুটি বাঁধেন রাজ্জাকের সাথে; Source: Dungulie

'কার হাসি কে হাসে', 'চৌধুরী বাড়ি', 'স্বীকৃতি', ' ঝড়ের পাখি', 'চোখের জলে', 'অভাগী', 'চাষির মেয়ে', 'চাপা ডাঙ্গার বউ', ' পালাবি কোথায়', 'লুটেরা', 'দুঃসাহস', 'বিরোধ', 'সখি তুমি কার' ইত্যাদি আছে শাবানার অভিনীত ছবির তালিকায়।

তিন দশকেরও বেশি সময়ে অভিনয়ের ক্ষেত্রে জুটি হিসেবে কাজ করেছেন নাদিম, রাজ্জাক, ফারুক, জসিম, জাভেদ, সোহেল রানা প্রমুখের সাথে। তবে তার অভিনীত ২৯৯ টি ছবির মাঝে সবচাইতে বেশি জুটি বেঁধেছেন আলমগীরের সাথে, ১৩০ টি ছবিতে। 'ভাত দে', 'মরণের পরে', 'মায়ের দোয়া' সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে শাবানা–আলমগীর জুটির অনবদ্য রসায়নের কথা যেকোনো চলচ্চিত্রপ্রেমীই মনে করতে পারবেন।

KMJbV6J.jpg


চলচ্চিত্রের এক অমর জুটি শাবানা-আলমগির; Image Source: Facebook

পুরস্কারের ফুলঝুরি

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সাথে বেশ সখ্যতাই ছিল শাবানার। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে মোট ১০ বার জয় করে নেন এই সম্মাননা। তবে প্রথমবার ১৯৭৭ সালে প্রত্যাখ্যান করেন 'জননী' ছবিতে পার্শ্বচরিত্রের জন্য পাওয়া এই পুরস্কারটি। ১৯৮০–৮৪ সালে টানা জয় করেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। এর মাঝে ১৯৯০ সালে সেরা প্রযোজক হিসেবেও জয় করেন এটি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।

এছাড়াও শাবানা পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার (১৯৮২ ও ১৯৮৭), আর্ট ফোরাম পুরস্কার (১৯৮৪, ১৯৮৮), সায়েন্স ক্লাব পুরস্কার (১৯৮৪) , কথক একাডেমী পুরস্কার (১৯৮৯), নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৮৮) , প্রযোজক সমিতি পুরস্কার (১৯৯১), কামরুল হাসান পুরস্কার (১৯৮৭), নাট্য নিকেতন পুরস্কার (১৯৮৫), ললিতকলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮৫)। শাবানার ঝুলিতে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, রুমানিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরো বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতাও আছে।

আচমকা বিদায়

বিয়ে হওয়ার মানে যে ফুরিয়ে যাওয়া নয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শাবানা। ১৯৭৩ সালে এক সুতোয় জীবন বাঁধেন সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিকের সাথে। পরবর্তীতে দুজনের প্রচেষ্টায় তৈরি করেন 'এস এস প্রডাকশন'। ১৯৮৮ সালেও সন্তান জন্মের পর পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় অনন্য দৃষ্টান্ত রাখেন তিনি। সেটে সর্বদা ৯ টার মাঝেই উপস্থিত থাকতেন তিনি, ব্যত্যয় ঘটেনি কোনদিন।

ZARNbKH.jpg


প্রয়াত হুমায়ূন ফরিদির সাথেও স্ক্রিন ভাগ করে নেন ১৯৯৭ এর 'পালাবি কোথায়' ছবিতে ; Image Source: Youtube

১৯৯৭ সালে রূপালি জগতকে পুরোপুরি বিদায় জানান এই নায়িকা। সে বছরই 'পালাবি কোথায়' ছবিটি মুক্তি পায়, তবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি এতে। অনেকের মতে সময়ের চাইতে অনেক এগুনো ছিল এই ছবি। আজিজুর রহমান পরিচালিত 'ঘরে ঘরে যুদ্ধ' ছবিই তাঁর অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে সপরিবারে থিতু হন । তাঁর পরিবারে স্বামী ছাড়াও আছেন বড় কন্যা সুমি ইকবাল, ছোট মেয়ে ঊর্মি সাদিক ও পুত্র নাহিন সাদিক।

তবুও ভালোবাসা

চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকলেও এর প্রতি ভালোবাসার যে একটুও কমতি নেই সেটা প্রবাস থেকেই জানান দেন নিয়মিত। ঢাকাই ছবিপাড়ার খোঁজও রাখেন সবসময়। অভিনেতা ফারুক এক সাক্ষাৎকারে জানান, 'এতদূর থেকেও শাবানা প্রায়ই খোঁজ রাখেন এদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে। এতদিন পরেও তাঁর মধ্যে যে ভালোবাসা দেখতে পাই সেটা অনন্য।' মাঝে বেশ কয়েকবার দেশে ফিরলেও নতুন করে কাজ করার কোন আগ্রহ দেখান নি এই কিংবদন্তী অভিনেত্রী।

সরল নারী, চটপটে পকেটমার, দক্ষ কর্মী, উদ্যমী আধুনিকা কিংবা স্বামী ভক্ত স্ত্রী – ভিন্নধর্মী সব চরিত্রেই মানানসই এক নাম শাবানা। বাংলা চলচ্চিত্রের অনন্য নক্ষত্র হিসেবে বরাবরই অনুকরণীয় এই সুহাসিনী। দোর্দণ্ড প্রতাপে কাজ করে চলা এই অভিনেত্রীকে নিয়ে গবেষণা ধর্মী কোন কাজ বা ডকুমেন্টরি আজও তৈরি হয়নি। বাংলা চলচ্চিত্রে এটাই হয়তো সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি–গুণীর যোগ্য কদর বড় দেরিতে দেই আমরা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top