সম্প্রতি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের মেসেঞ্জার অ্যাপে ডার্ক মোড যুক্ত করে। এটা নিয়ে ফেসবুকে অনেক মিম এবং ট্রল আমরা দেখেছি। যদিও মেসেঞ্জারের এই ডার্ক মোড ফিচারের মাধ্যমেই বাংলাদেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের অনেকেই প্রথমবারের মতো ডার্ক মোড এর সাথে পরিচিত হন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ডার্ক মোড ব্যাপারটা কিন্তু আদৌ নতুন কিছু নয়।
আগে বলা উচিত ডার্ক মোড ব্যাপারটা কি। আসলে ডার্ক মোড হলো কোন অপারেটিং সিস্টেম বা কোন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ারের ইউজার ইন্টারফেসের বিশেষ ডিজাইন কৌশল যার মাধ্যমে ইউজার ইন্টারফেসে থাকা কোন লেখা বা ছবি বাদে ব্যাকগ্রাউন্ড এর সব জিনিসকে গ্রে বা ব্ল্যাক করে দেয়া হয়।
আমরা জানি সাদা বা উজ্জ্বল রঙ বেশি আলো বিকিরণ করে। অন্যদিকে কালো রঙ আলো বিকিরণ করে না বললেই চলে। যারা মূলত রাতে ফোন বা পিসির ডিসপ্লে ব্যবহার করেন তাদের কথা চিন্তা করেই আসলে ডেভেলপার ও ডিজাইনাররা ইউআই তে ডার্ক মোড যুক্ত করেন।
এন্ড্রয়েড ললিপপ এর আগের ভার্সনগুলোতে ডিফল্টভাবে ইউজার ইন্টারফেসে ডার্ক মোড ছিল। কিন্তু ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন চালু করার পর এন্ড্রয়েড ডিজাইনাররা লাইট থিম এর দিকে ঝুঁকে পড়ে। তবে খুব শীঘ্রই তারা এন্ড্রয়েড কিউ এর ইউজার ইন্টারফেসে ডার্ক মোড নিয়ে আসবেন।
তবে মিইউআই সহ বিভিন্ন কাস্টম রমে থার্ড পার্টি থিম ব্যবহার করে ইউজার ইন্টারফেস ডার্ক করে নেয়া যায়। ইতিমধ্যে গুগল তাদের প্রত্যেকটি অ্যাপ এর সেটিংস এ ডার্ক মোড যুক্ত করে ফেলেছে।
পিসি ব্যবহারকারীদের জন্যই মূলত প্রথমদিকে ডার্ক মোড জনপ্রিয়তা পায়। এর কারণ হচ্ছে যারা রাত জেগে ফ্রিল্যান্সিং, ডিজাইন, লেখালেখি বা কোডিং করেন তাদেরকে অন্ধকার রুমে পিসির উজ্জ্বল সাদা আলোর সামনে বসে থাকতে হয়। দেখতে সাদা হলেও এর সাথে ক্ষতিকর ব্লু লাইট নিঃসরিত হয়।
উইন্ডোজ ১০ এর আগের ভার্সন কিংবা ম্যাক এর ক্ষেত্রে মোহাভে এর আগের ভার্সনগুলোতে ডিফল্ট কোন ডার্ক মোড ছিল না। তবে থার্ড পার্টি সফটওয়ার কিংবা আলাদা আলাদা অ্যাপ এ আলাদাভাবে এড অন ইন্সটল করে ডার্ক মোড এনাবল করে চোখকে স্বস্তি দেয়া যেত।
তবে উইন্ডোজ ১০ আসার সাথে সাথে মাইক্রোসফট তাদের পুরো ইউআই তেই ডার্ক মোড ইমপ্লিমেন্ট করে। সেই সাথে তাদের ডেভেলপ করা সব অ্যাপেই ডার্ক মোড পাবেন।
ডার্ক মোডের উপকারীতার কথা চিন্তা করে বড় বড় ডেভেলপাররা তাদের স্মার্টফোন অ্যাপেও ডার্কমোড যুক্ত করা শুরু করেছেন। এখন প্রায় সব অ্যাপ এর সেটিংস চেক করলেই ডার্ক মোড চালু করার কিংবা থিম ব্ল্যাক করার অপশন পাবেন। ইতিমধ্যে মেসেঞ্জারে ডার্ক মোড অনেকেই ব্যবহার করছেন।
শোনা যাচ্ছে আস্তে আস্তে ফেসবুক ফ্যামিলির সব অ্যাপেই তারা ডার্ক মোড নিয়ে আসবে। এমনকি যেসব অ্যাপে ডার্ক মোড সাপোর্ট করে না সেসব অ্যাপেও আপনি ফোন রুট করে থিম ব্যবহারের মাধ্যমে ডার্ক করে নিতে পারবেন।
আগেই বলা হয়েছে ডার্ক মোড মূলত রাতের বেলা চোখকে স্বস্তি দেয়ার জন্য ইউআই তে যুক্ত করা হতো। আবার অনেকে তাদের ব্যক্তিগত রঙ পছন্দের ক্ষেত্রে তাদের ডিসপ্লেতে সবসময় কালো রঙ দেখতে পছন্দ করেন। তবে এটার আরেকটা উপকারী দিক হচ্ছে এটা আপনার স্মার্টফোন এর ব্যাটারির চার্জ বাঁচাবে। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এদের ডিসপ্লে অনেক চার্জ খরচ করে।
কিন্তু ডার্কমোড এর মাধ্যমে চার্জ বাচিয়ে উপকার পেতে হলে আপনার ডিসপ্লেকে এমোলেড প্যানেল হতে হবে। কারণ এমোলেড প্যানেলগুলো আলাদা আলাদা পিক্সেলকে আলাদাভাবে চালু বা বন্ধ করে রাখতে পারে।
এর ফলে আপনি ডার্ক মোড চালু করলে ইউজার ইন্টাফেসের ডার্ক এরিয়াগুলোর পিক্সেল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে চার্জ অনেক কম খরচ হয়। তবে সাধারণ ডিসপ্লের ক্ষেত্রে এর সুফল যে একেবারে পাবেন না তেমনটিও নয়। সাধারণ ডিসপ্লেতে ও ডার্ক মোড লাইট মোড অপেক্ষা কিছু কম ব্যাটারি খরচ করবে।
নাইট মোড বা ব্লু লাইট ফিল্টারঃ সম্প্রতি ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে রাতে ব্যবহারের সময় চোখের ক্ষতি রোধ করতে আরেকটি ফিচার এসেছে যাকে নাইট মোড বা ব্লু লাইট ফিল্টার বলা হচ্ছে।
ডিসপ্লে থেকে যে ক্ষতিকর নীলাভ রশ্মি বের হয় এটি সেটিকে ফিল্টার করে দেয়। মানে ডিসপ্লের কালার টেম্পারেচার বাড়িয়ে ডিসপ্লেতে একটি লালচে ভাব নিয়ে আসে এটি। চোখের জন্য এই ফিচারটিই বেশি উপকারী। প্রায় সব স্মার্টফোন এমনকি উইন্ডোজ পিসিতেও ডিফল্টভাবে কুইক সেটিং টগল থেকে এই ফিচার চালু করতে পারবেন।