আনিকার বয়স ৩১ বছর।উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ।বিয়ে হয়েছে ৪ বছর হলো।ছিমছাম গড়নের মিষ্টি একটা মেয়ে আনিকা ।প্রথমদিন আনিকা যখন আমার চেম্বার এ এসেছিলো তখন তার কম্প্লেইন ছিলো এমন -
-১২ বছর আগে ওর একটা ল্যাপারোস্কপি এবং পরে ল্যাপারোটমি করে ওভারীতে চকোলেট সিস্ট এর অপারেশন হয়েছিলো । তারপর ও ৬ মাস দামী ইন্জেকশন (লিউক্রিন ডিপো ) ও নিয়েছে।
- এখন মাসিকের সময় ওর সামান্য ব্যথা হয় , কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রত্যেক মাসে মাসিক ভালো হয়ে যাওয়ার পরও প্রায় ই কিছু কিছু রক্তস্রাব হতেই থাকে ।সাথে ওর শরীর খুব দুর্বল লাগে।
-আর আল্ট্রাসনোগ্রাফী তে বলছে ওর এক ওভারি তে ৫.৩*২.৩ মি.মি সাইজের একটা সিস্ট আছে এবং সম্ভবত: এটা চকোলেট সিস্ট।
আনিকার কোন বাচ্চা নেই ।
আমি খুব অবাক হলাম ওর চার বছর বিয়ে হয়েছে , বয়স ৩১ বছর কিন্তু বাচ্চা হচ্ছে না বা বাচ্চা নিতে চাচ্ছে এটা সে আমাকে কম্প্লেইন হিসাবে বলছে না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম " আনিকা তুমি কী বাচ্চা নেয়ার জন্য পরামর্শ চাচ্ছো না ? শুধুই সিস্ট এর চিকিত্সা চাচ্ছো ?"
আনিকা আমাকে বললো "ম্যাডাম আমার বাচ্চা নেয়ার খুব ইচ্ছা ,কিন্তু আমার হাজবেন্ডের সাথে তো আমার সম্পর্ক ভালো না ।আমি গত কয়েকমাস যাবত সেপারেটেড হয়ে আমার মায়ের সাথে থাকছি ।আপাতত: আপনি আমার সমস্যা গুলোর জন্য কিছু ঔষধ দেন "
আমি তখন ওর বাকী পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজ গুলো পর্যবেক্ষন করে দেখলাম ওর হিমোগ্লোবিন কিছুটা কম । যাই হোক সবকিছু পর্যালোচনা করে আমি ওর জরায়ু মুখের পরীক্ষা দিলাম ( যেহেতু ওর অনিয়মিত মাসিক এর ইতিহাস ) সাথে CA 125 পরীক্ষা আর ওভারীর রিজার্ভ দেখার জন্য এন্টিমুলারিয়ান হরমোন (AMH) পরীক্ষা ও দরকারী আরো কিছু পরীক্ষা করতে দিলাম । যদিও ওর এখন বাচ্চা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই তারপরও AMH করতে দেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো ওর বাচ্চা নেয়ার জন্য ডিম্বাশয় এর রিজার্ভ কতটুকু সেটা পরীক্ষা করা এবং ওর পরবর্তী চিকিৎসার ব্যাপারে একটা প্ল্যান করা।
সবগুলো পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর আনিকা আমার কাছে আসলো। আমি দেখলাম ওর বাকী সব রিপোর্ট ভালো কিন্তু AMH লেভেল .84 ng/ml যেটা স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেক ই কম ।তার মানে ওর ডিম্বাশয়ে ডিম এর রিজার্ভ অনেক কম এবং সেটা হয়েছে ওর এন্ডোমেট্রিওসিস এর সিস্ট এর জন্য ই, যে গুলোর কারনে সাধারণত: বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে।
আমি আনিকা কে জিজ্ঞেস করলাম " তোমার বিয়ের এত বছরে ও যে বাচ্চা হয়নি সেজন্য কোন চিকিত্সা করাওনি?"
আনিকা: ম্যাডাম বিয়ের ২ বছরের মাথায় চিকিত্সা করতে দিল্লী এপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার হাজবেন্ড এর সিমেন পরীক্ষা করে বললো ওর সিমেন এ কোন স্পার্ম নেই ।
আমি : তো Azoospermia (সিমেন এ কোন স্পার্ম না থাকা) হলে তো পরে আরো অনেক পরীক্ষা করে সেটা কন্ফার্ম করা হয় এবং সেটার কারন বের করার জন্য তোমার হাজবেন্ড এর হরমোন পরীক্ষা , ডপলার সনোগ্রাফী , পেসা বা টেসা করে স্পার্ম আছে না কী সেগুলো দেখা হয় ।সেগুলো করা হয় নাই?"
আনিকা : ম্যাডাম আমার হাজবেন্ড এর সিমেন এর রিপোর্ট খারাপ আসার পর সে আর কোন পরীক্ষা করতেই রাজী হয়নি । সোজা আমাকে নিয়ে দেশে চলে আসে আর তার মা বোন দের বলে যে বাচ্চা না হওয়ার জন্য আমি ই দায়ী,আমার ই সব সমস্যা ।এগুলো শুনে আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন মানে আমার শ্বাশুড়ী , ননদ সবাই আমাকে কথায় কথায় খোঁচা দিয়ে মানসিক অত্যাচার করতে থাকে ।আমার হাজবেন্ড সেগুলোর কোন প্রতিবাদ তো করেই না উল্টো আমাকেই বাচ্চা না হওয়ার জন্য দোষী করে তাদের সমর্থন করে। দিনের পর দিন এতোসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমি মা এর বাড়ী তে চলে এসেছি।ছোটবেলায় আমার বাবা মারা যান।এখন মা আর ভাই দের সাথে আমি থাকি।
আমি : তো তুমি তোমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন দের বলনি যে তোমার হাজবেন্ড এর ও রিপোর্ট খারাপ এবং তার সমস্যা টা ই বড় সমস্যা?
আনিকা : আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে না ম্যাডাম , কারন আমার হাজবেন্ড তার সব রিপোর্ট লুকিয়ে ফেলেছে।আর আমার চিকিৎসার কোন খরচ আমার হাজবেন্ড দেয় না, আমার বাবার বাড়ীর থেকে নিতে হয়।
আমি : তো এখন তোমার কী প্ল্যান ?
আনিকা : ম্যাডাম আমি আমার সব রিপোর্ট নিয়ে একটা বড় কর্পোরেট হাসপাতালের (নাম উল্লেখ করলাম না) একজন গাইনীর ম্যাডাম কে দেখিয়েছি , উনি আমার আর্জেন্ট অপারেশন লাগবে বলেছেন এবং আপনি যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ঔষধ দিয়েছেন সেগুলো না কী দরকার নেই।
আমি : ঠিক আছে , একেকজন ডাক্তার এর রোগীর প্রতি মুল্যায়ন একেকরকম।কখনো কোন ডাক্তার ই চায় না তার রোগীর খারাপ কিছু হোক। উনি ভেবেছেন তোমার অপারেশন করলে ভালো হবে তাই তিনি সেটা বলেছেন । আর আমরা যারা বন্ধ্যাত্ব রোগী নিয়ে কাজ করি তারা রোগীর ডিম্বাশয় এ অপারেশন করার আগে হাজারবার চিন্তা করি , অনেকদিক নিয়ে ভাবি । এই যেমন তোমার ডিম্বাশয় এর রিজার্ভ কম , অলরেডি একবার অপারেশন হয়েছে । এখন তোমার ডিম্বাশয়ে আবার অপারেশন করতে গেলে রিজার্ভ আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা , পরবর্তী তে টেস্টটিউব বেবী নিতে গেলে তোমার ডিম্বাশয়ের থেকে হয়তো আর ডিম ই পাওয়া যাবে না , আর ডিম আসলেও সেই ওভারী থেকে ডিম কালেক্ট করা ও কষ্টসাধ্য হবে,সেক্ষেত্রে তোমার তখন হয়তো অন্যের ডিম ধার নিতে হবে যেটা আমাদের দেশে এলাউড না।কিন্তু একবার যদি অনেকগুলো ডিম আসে তাহলে সে থেকে কয়েকটা ডিম প্রিজার্ভ ও করা যাবে।এদিকে তোমার ফ্যামিলি লাইফ ও Uncertain.
আনিকা : ম্যাডাম আমার মা ভাই রা চাচ্ছে আমি আমার হাজবেন্ড এর কাছে ফিরে যাই , কারন আমার বাচ্চা হওয়ার চান্স কম। এদিকে আমার হাজবেন্ড এর ও সমস্যা। তার ফ্যামিলি এবং সে ও আমাকে দোষারোপ করছে বাচ্চা না হওয়ার জন্য । আমি মানসিকভাবে নির্যাতিত ।ওখানে টিকতে পারছি না।
আমি: আমার মনে হয় এই ব্যাপারটা নিয়ে তুমি ও তোমার হাজবেন্ড আলোচনা করো ,পরে পারিবারিকভাবে আলোচনা করো। দুজনের চিকিত্সা করালে একটা বাচ্চা হতেও পারে, সেক্ষেত্রে তোমার সংসার জীবনের সবকিছু হয়তো আবার স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে ।আর বাচ্চা হওয়াটা জীবনে সুখী হওয়ার নিয়ামক না। বেশীর ভাগ সন্তানরা ই বড় হওয়ার পর মা এর কাছ থেকে দুরে সরে যায় , তারা তখন নিজেরা নিজেদের সংগী আর সুখ খুঁজে নেয়।
আনিকা : এমন একটা জটিল অবস্থায় আমি কী করবো বুঝতে পারছি না ম্যাডাম।আমি ডিপ্রেস্ ড।
আনিকা আমার চেম্বার থেকে চলে যাবার পর ওর জীবনের ঘটনাগুলো নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি।আমি নিজেও ওর জীবনের সব জটিল সমীকরন গুলো মেলাতে পারছিলাম না।একটা বাচ্চা হচ্ছে না বলে একটা মেয়ের জীবন,সংসার ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে।এ তো ক্যান্সার এর মতোই যন্ত্রনাদায়ক ।
শুধু ক্যান্সার এর যন্ত্রনা চোখে দেখা যায় বা দৃশ্যমান , বন্ধ্যাত্বের যন্ত্রনা দেখা যায় না । ভেতরে ভেতরে পুড়িয়ে মারে ।
(সমাপ্ত)
-১২ বছর আগে ওর একটা ল্যাপারোস্কপি এবং পরে ল্যাপারোটমি করে ওভারীতে চকোলেট সিস্ট এর অপারেশন হয়েছিলো । তারপর ও ৬ মাস দামী ইন্জেকশন (লিউক্রিন ডিপো ) ও নিয়েছে।
- এখন মাসিকের সময় ওর সামান্য ব্যথা হয় , কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রত্যেক মাসে মাসিক ভালো হয়ে যাওয়ার পরও প্রায় ই কিছু কিছু রক্তস্রাব হতেই থাকে ।সাথে ওর শরীর খুব দুর্বল লাগে।
-আর আল্ট্রাসনোগ্রাফী তে বলছে ওর এক ওভারি তে ৫.৩*২.৩ মি.মি সাইজের একটা সিস্ট আছে এবং সম্ভবত: এটা চকোলেট সিস্ট।
আনিকার কোন বাচ্চা নেই ।
আমি খুব অবাক হলাম ওর চার বছর বিয়ে হয়েছে , বয়স ৩১ বছর কিন্তু বাচ্চা হচ্ছে না বা বাচ্চা নিতে চাচ্ছে এটা সে আমাকে কম্প্লেইন হিসাবে বলছে না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম " আনিকা তুমি কী বাচ্চা নেয়ার জন্য পরামর্শ চাচ্ছো না ? শুধুই সিস্ট এর চিকিত্সা চাচ্ছো ?"
আনিকা আমাকে বললো "ম্যাডাম আমার বাচ্চা নেয়ার খুব ইচ্ছা ,কিন্তু আমার হাজবেন্ডের সাথে তো আমার সম্পর্ক ভালো না ।আমি গত কয়েকমাস যাবত সেপারেটেড হয়ে আমার মায়ের সাথে থাকছি ।আপাতত: আপনি আমার সমস্যা গুলোর জন্য কিছু ঔষধ দেন "
আমি তখন ওর বাকী পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজ গুলো পর্যবেক্ষন করে দেখলাম ওর হিমোগ্লোবিন কিছুটা কম । যাই হোক সবকিছু পর্যালোচনা করে আমি ওর জরায়ু মুখের পরীক্ষা দিলাম ( যেহেতু ওর অনিয়মিত মাসিক এর ইতিহাস ) সাথে CA 125 পরীক্ষা আর ওভারীর রিজার্ভ দেখার জন্য এন্টিমুলারিয়ান হরমোন (AMH) পরীক্ষা ও দরকারী আরো কিছু পরীক্ষা করতে দিলাম । যদিও ওর এখন বাচ্চা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই তারপরও AMH করতে দেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো ওর বাচ্চা নেয়ার জন্য ডিম্বাশয় এর রিজার্ভ কতটুকু সেটা পরীক্ষা করা এবং ওর পরবর্তী চিকিৎসার ব্যাপারে একটা প্ল্যান করা।
সবগুলো পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর আনিকা আমার কাছে আসলো। আমি দেখলাম ওর বাকী সব রিপোর্ট ভালো কিন্তু AMH লেভেল .84 ng/ml যেটা স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেক ই কম ।তার মানে ওর ডিম্বাশয়ে ডিম এর রিজার্ভ অনেক কম এবং সেটা হয়েছে ওর এন্ডোমেট্রিওসিস এর সিস্ট এর জন্য ই, যে গুলোর কারনে সাধারণত: বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে।
আমি আনিকা কে জিজ্ঞেস করলাম " তোমার বিয়ের এত বছরে ও যে বাচ্চা হয়নি সেজন্য কোন চিকিত্সা করাওনি?"
আনিকা: ম্যাডাম বিয়ের ২ বছরের মাথায় চিকিত্সা করতে দিল্লী এপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার হাজবেন্ড এর সিমেন পরীক্ষা করে বললো ওর সিমেন এ কোন স্পার্ম নেই ।
আমি : তো Azoospermia (সিমেন এ কোন স্পার্ম না থাকা) হলে তো পরে আরো অনেক পরীক্ষা করে সেটা কন্ফার্ম করা হয় এবং সেটার কারন বের করার জন্য তোমার হাজবেন্ড এর হরমোন পরীক্ষা , ডপলার সনোগ্রাফী , পেসা বা টেসা করে স্পার্ম আছে না কী সেগুলো দেখা হয় ।সেগুলো করা হয় নাই?"
আনিকা : ম্যাডাম আমার হাজবেন্ড এর সিমেন এর রিপোর্ট খারাপ আসার পর সে আর কোন পরীক্ষা করতেই রাজী হয়নি । সোজা আমাকে নিয়ে দেশে চলে আসে আর তার মা বোন দের বলে যে বাচ্চা না হওয়ার জন্য আমি ই দায়ী,আমার ই সব সমস্যা ।এগুলো শুনে আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন মানে আমার শ্বাশুড়ী , ননদ সবাই আমাকে কথায় কথায় খোঁচা দিয়ে মানসিক অত্যাচার করতে থাকে ।আমার হাজবেন্ড সেগুলোর কোন প্রতিবাদ তো করেই না উল্টো আমাকেই বাচ্চা না হওয়ার জন্য দোষী করে তাদের সমর্থন করে। দিনের পর দিন এতোসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমি মা এর বাড়ী তে চলে এসেছি।ছোটবেলায় আমার বাবা মারা যান।এখন মা আর ভাই দের সাথে আমি থাকি।
আমি : তো তুমি তোমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন দের বলনি যে তোমার হাজবেন্ড এর ও রিপোর্ট খারাপ এবং তার সমস্যা টা ই বড় সমস্যা?
আনিকা : আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে না ম্যাডাম , কারন আমার হাজবেন্ড তার সব রিপোর্ট লুকিয়ে ফেলেছে।আর আমার চিকিৎসার কোন খরচ আমার হাজবেন্ড দেয় না, আমার বাবার বাড়ীর থেকে নিতে হয়।
আমি : তো এখন তোমার কী প্ল্যান ?
আনিকা : ম্যাডাম আমি আমার সব রিপোর্ট নিয়ে একটা বড় কর্পোরেট হাসপাতালের (নাম উল্লেখ করলাম না) একজন গাইনীর ম্যাডাম কে দেখিয়েছি , উনি আমার আর্জেন্ট অপারেশন লাগবে বলেছেন এবং আপনি যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ঔষধ দিয়েছেন সেগুলো না কী দরকার নেই।
আমি : ঠিক আছে , একেকজন ডাক্তার এর রোগীর প্রতি মুল্যায়ন একেকরকম।কখনো কোন ডাক্তার ই চায় না তার রোগীর খারাপ কিছু হোক। উনি ভেবেছেন তোমার অপারেশন করলে ভালো হবে তাই তিনি সেটা বলেছেন । আর আমরা যারা বন্ধ্যাত্ব রোগী নিয়ে কাজ করি তারা রোগীর ডিম্বাশয় এ অপারেশন করার আগে হাজারবার চিন্তা করি , অনেকদিক নিয়ে ভাবি । এই যেমন তোমার ডিম্বাশয় এর রিজার্ভ কম , অলরেডি একবার অপারেশন হয়েছে । এখন তোমার ডিম্বাশয়ে আবার অপারেশন করতে গেলে রিজার্ভ আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা , পরবর্তী তে টেস্টটিউব বেবী নিতে গেলে তোমার ডিম্বাশয়ের থেকে হয়তো আর ডিম ই পাওয়া যাবে না , আর ডিম আসলেও সেই ওভারী থেকে ডিম কালেক্ট করা ও কষ্টসাধ্য হবে,সেক্ষেত্রে তোমার তখন হয়তো অন্যের ডিম ধার নিতে হবে যেটা আমাদের দেশে এলাউড না।কিন্তু একবার যদি অনেকগুলো ডিম আসে তাহলে সে থেকে কয়েকটা ডিম প্রিজার্ভ ও করা যাবে।এদিকে তোমার ফ্যামিলি লাইফ ও Uncertain.
আনিকা : ম্যাডাম আমার মা ভাই রা চাচ্ছে আমি আমার হাজবেন্ড এর কাছে ফিরে যাই , কারন আমার বাচ্চা হওয়ার চান্স কম। এদিকে আমার হাজবেন্ড এর ও সমস্যা। তার ফ্যামিলি এবং সে ও আমাকে দোষারোপ করছে বাচ্চা না হওয়ার জন্য । আমি মানসিকভাবে নির্যাতিত ।ওখানে টিকতে পারছি না।
আমি: আমার মনে হয় এই ব্যাপারটা নিয়ে তুমি ও তোমার হাজবেন্ড আলোচনা করো ,পরে পারিবারিকভাবে আলোচনা করো। দুজনের চিকিত্সা করালে একটা বাচ্চা হতেও পারে, সেক্ষেত্রে তোমার সংসার জীবনের সবকিছু হয়তো আবার স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে ।আর বাচ্চা হওয়াটা জীবনে সুখী হওয়ার নিয়ামক না। বেশীর ভাগ সন্তানরা ই বড় হওয়ার পর মা এর কাছ থেকে দুরে সরে যায় , তারা তখন নিজেরা নিজেদের সংগী আর সুখ খুঁজে নেয়।
আনিকা : এমন একটা জটিল অবস্থায় আমি কী করবো বুঝতে পারছি না ম্যাডাম।আমি ডিপ্রেস্ ড।
আনিকা আমার চেম্বার থেকে চলে যাবার পর ওর জীবনের ঘটনাগুলো নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি।আমি নিজেও ওর জীবনের সব জটিল সমীকরন গুলো মেলাতে পারছিলাম না।একটা বাচ্চা হচ্ছে না বলে একটা মেয়ের জীবন,সংসার ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে।এ তো ক্যান্সার এর মতোই যন্ত্রনাদায়ক ।
শুধু ক্যান্সার এর যন্ত্রনা চোখে দেখা যায় বা দৃশ্যমান , বন্ধ্যাত্বের যন্ত্রনা দেখা যায় না । ভেতরে ভেতরে পুড়িয়ে মারে ।
(সমাপ্ত)