©Grustav Ruhan
বিজ্ঞান সবসময় মানবতার সমাধান দিতে কাজ করে যায়। নিরন্তর এসব গবেষণার ফলে আজকের চিকিৎসাবিজ্ঞান এত দূর এসেছে। অতীতে মহামারীর কবলে পড়ে হাজার হাজার মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেত, কারণ মহামারীর কোনো প্রতিষেধক কারো কাছে ছিল না। গবেষণা থেকেই এসব রোগকে নির্মূল করার উপায় বের করে মানুষ। ফলাফল হিসেবে মানুষ এখন অনেক কঠিন দূরারোগ্য থেকে বেঁচে ফিরছে, যেখানে পুরো কৃতিত্বই চিকিৎসাবিজ্ঞানের। কিন্তু এতসব অবদানের বাইরে চিকিৎসাবিজ্ঞান এমন কিছু বিষয় নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে, যেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়ার পর অমানবিকতার ট্যাগ পেয়েছিল। কেউ হয়তো যুদ্ধের কারণে এমন অমানবিকতার শিকার হয়েছেন, কেউ বা নতুন গবেষণার গিনিপিগ হয়েছেন স্রেফ। দুটো ব্যাপারই মারাত্মক ভয়ঙ্কর, কারণ শুধুমাত্র ফলাফল দেখার জন্য এমন অমানবিক কার্যক্রম কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। আজকের লেখায় এমন কিছু অমানবিক পরীক্ষা এবং সেগুলোর ফলাফল কী হয়েছিল তা-ই জানানো হবে।
১. থ্রি আইডেন্টিক্যাল স্ট্রেঞ্জার
সন্তানদের লালনপালন পদ্ধতির ফলাফল নিয়ে জানতে ১৯৬০-৭০ এর দিকে একদল মনোবিজ্ঞানী একটি গোপন পরীক্ষার আয়োজন করেন। তারা সদ্য জন্মানো জমজ ও ত্রয়ীদের আলাদা করে বিভিন্ন পরিবারে দত্তক দেন। শিশুরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবারে বেড়ে উঠতে থাকে। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই যাচ্ছিল, কিন্তু ঝামেলা বাধে যখন ১৯৮০ সালে ত্রয়ীরা একে অপরকে খুঁজে পায়! তারা একে অপরকে দেখে অবাক হয়ে যায়, কীভাবে দুই পরিবারের দুজন মানুষ দেখতে একরকম হতে পারে! তাদের সামনে আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল তখনও। কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা সত্য উদঘাটনের সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর বেরিয়ে আসে তাদের একইরকম দেখতে হওয়ার রহস্য, তারা যে একই মায়ের সন্তান! জন্মের পর থেকে পুরো ২০ বছর তাদের আলাদা করে রাখা হয়েছিল শুধুমাত্র একটি গবেষণার জন্য।
পরিবারের মানুষগুলো আবার নিজেদের সঙ্গে একত্রিত হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ, ঘৃণা আর হতাশা জমে থাকে তাদের। একসময় বিচ্ছেদের কষ্ট মেনে নিতে না পেরে তিন ভাইয়ের একজন এডওয়ার্ড গ্যালেন্ড ১৯৯৫ সালে আত্মহত্যা করেন।
শিশুদের নিয়ে এই গবেষণা জনসম্মুখে চলে আসে এবং খবরের শিরোনাম হয়ে যায়। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পিটার নিউবাউর এবং ভায়োলা বার্নার্ড। তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন,
গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল আলাদাভাবে বেড়ে ওঠা সন্তানরা কীভাবে নিজের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় সেটা পর্যবেক্ষণ করা।
কিন্তু সবার প্রশ্ন একটাই, কীভাবে আপনি একটি পরিবারের সন্তানদের একে অপরের থেকে আলাদা করে রাখতে পারেন? এটা স্রেফ অমানবিকতা ছাড়া কিছু নয়। এমন কিছু গবেষণার বিষয়বস্তুই হতে পারে না।
আমেরিকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এই গবেষণায় অনুদান দিয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু তারা দাবি করেন, অর্থায়ন করলেও এরকম কোনো গবেষণার ব্যাপারে তাদের জানানো হয়নি।
গবেষণাটির বিস্তারিত আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যে ফাইলগুলো ২০৬৬ সালের আগে খোলার ব্যাপার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
১৯৮০ সালে ত্রয়ীরা একে অপরকে খুঁজে পায়; Image Source: heyalma.com
২. নাৎসি ক্যাম্পের বীভৎসতা
জার্মানির কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মানুষ নিয়ে গবেষণাটি সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম গবেষণা। সময়টা ১৯৪০ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনী তখন অপরাজেয়। প্রতিনিয়ত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে মানুষদের ধরে আনা হচ্ছিল। বন্দিদের নিয়ে জোসেফ মেঙ্গেলা নামক এক চিকিৎসক ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা করলেন। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলাফল জানতে বন্দিদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন বলে ভাবলেন তিনি।
গবেষণার প্রথম পর্বেই অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করে; Image Source: time.com
তারপর শুরু হলো অমানবিকতার এক নতুন যাত্রা। যেসব মানুষের উপর মেঙ্গেলা পরীক্ষা চালিয়েছেন তাদের ভেতর বেশিরভাগই ছিল ইহুদি। এছাড়াও রোমানি, সিনটি, পোলিশ এবং বিকলাঙ্গ জার্মান নাগরিকদের বাছাই করা হয়েছিল। তাদের উপর শুরু হয় মেডিকেল টর্চার, যার ফলশ্রুতিতে প্রথম পর্বেই অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর ভেতর অনেকে বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন, কেউ বা শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গ হারান। কিছু কিছু বন্দিকে অত্যধিক নিম্ন তাপমাত্রায় এবং নিম্নচাপের পরিবেশে রাখা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এরকম পরিবেশে জার্মান সৈন্যরা বেঁচে থাকতে পারে কি না সেটা যাচাই করা।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই অমানবিক গবেষণার জন্য মেঙ্গেলা ও তার সহকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়, কিন্তু জোসেফ মেঙ্গেলা সুযোগ পেয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে যান। এই গবেষণাটি সবচেয়ে বিতর্কিত হওয়ার কারণ এখানে নারী-পুরুষদের যেমন ব্যবহার করা হয়েছিল, তেমনি শিশুরাও বীভৎসতা থেকে রেহাই পায়নি! মেঙ্গেলা বহু মৃত মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন পরবর্তীতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।
বিজ্ঞান সবসময় মানবতার সমাধান দিতে কাজ করে যায়। নিরন্তর এসব গবেষণার ফলে আজকের চিকিৎসাবিজ্ঞান এত দূর এসেছে। অতীতে মহামারীর কবলে পড়ে হাজার হাজার মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেত, কারণ মহামারীর কোনো প্রতিষেধক কারো কাছে ছিল না। গবেষণা থেকেই এসব রোগকে নির্মূল করার উপায় বের করে মানুষ। ফলাফল হিসেবে মানুষ এখন অনেক কঠিন দূরারোগ্য থেকে বেঁচে ফিরছে, যেখানে পুরো কৃতিত্বই চিকিৎসাবিজ্ঞানের। কিন্তু এতসব অবদানের বাইরে চিকিৎসাবিজ্ঞান এমন কিছু বিষয় নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে, যেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়ার পর অমানবিকতার ট্যাগ পেয়েছিল। কেউ হয়তো যুদ্ধের কারণে এমন অমানবিকতার শিকার হয়েছেন, কেউ বা নতুন গবেষণার গিনিপিগ হয়েছেন স্রেফ। দুটো ব্যাপারই মারাত্মক ভয়ঙ্কর, কারণ শুধুমাত্র ফলাফল দেখার জন্য এমন অমানবিক কার্যক্রম কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। আজকের লেখায় এমন কিছু অমানবিক পরীক্ষা এবং সেগুলোর ফলাফল কী হয়েছিল তা-ই জানানো হবে।
১. থ্রি আইডেন্টিক্যাল স্ট্রেঞ্জার
সন্তানদের লালনপালন পদ্ধতির ফলাফল নিয়ে জানতে ১৯৬০-৭০ এর দিকে একদল মনোবিজ্ঞানী একটি গোপন পরীক্ষার আয়োজন করেন। তারা সদ্য জন্মানো জমজ ও ত্রয়ীদের আলাদা করে বিভিন্ন পরিবারে দত্তক দেন। শিশুরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবারে বেড়ে উঠতে থাকে। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই যাচ্ছিল, কিন্তু ঝামেলা বাধে যখন ১৯৮০ সালে ত্রয়ীরা একে অপরকে খুঁজে পায়! তারা একে অপরকে দেখে অবাক হয়ে যায়, কীভাবে দুই পরিবারের দুজন মানুষ দেখতে একরকম হতে পারে! তাদের সামনে আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল তখনও। কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা সত্য উদঘাটনের সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর বেরিয়ে আসে তাদের একইরকম দেখতে হওয়ার রহস্য, তারা যে একই মায়ের সন্তান! জন্মের পর থেকে পুরো ২০ বছর তাদের আলাদা করে রাখা হয়েছিল শুধুমাত্র একটি গবেষণার জন্য।
পরিবারের মানুষগুলো আবার নিজেদের সঙ্গে একত্রিত হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ, ঘৃণা আর হতাশা জমে থাকে তাদের। একসময় বিচ্ছেদের কষ্ট মেনে নিতে না পেরে তিন ভাইয়ের একজন এডওয়ার্ড গ্যালেন্ড ১৯৯৫ সালে আত্মহত্যা করেন।
শিশুদের নিয়ে এই গবেষণা জনসম্মুখে চলে আসে এবং খবরের শিরোনাম হয়ে যায়। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পিটার নিউবাউর এবং ভায়োলা বার্নার্ড। তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন,
গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল আলাদাভাবে বেড়ে ওঠা সন্তানরা কীভাবে নিজের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় সেটা পর্যবেক্ষণ করা।
কিন্তু সবার প্রশ্ন একটাই, কীভাবে আপনি একটি পরিবারের সন্তানদের একে অপরের থেকে আলাদা করে রাখতে পারেন? এটা স্রেফ অমানবিকতা ছাড়া কিছু নয়। এমন কিছু গবেষণার বিষয়বস্তুই হতে পারে না।
আমেরিকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এই গবেষণায় অনুদান দিয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু তারা দাবি করেন, অর্থায়ন করলেও এরকম কোনো গবেষণার ব্যাপারে তাদের জানানো হয়নি।
গবেষণাটির বিস্তারিত আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যে ফাইলগুলো ২০৬৬ সালের আগে খোলার ব্যাপার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
১৯৮০ সালে ত্রয়ীরা একে অপরকে খুঁজে পায়; Image Source: heyalma.com
২. নাৎসি ক্যাম্পের বীভৎসতা
জার্মানির কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মানুষ নিয়ে গবেষণাটি সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম গবেষণা। সময়টা ১৯৪০ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনী তখন অপরাজেয়। প্রতিনিয়ত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে মানুষদের ধরে আনা হচ্ছিল। বন্দিদের নিয়ে জোসেফ মেঙ্গেলা নামক এক চিকিৎসক ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা করলেন। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলাফল জানতে বন্দিদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন বলে ভাবলেন তিনি।
গবেষণার প্রথম পর্বেই অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করে; Image Source: time.com
তারপর শুরু হলো অমানবিকতার এক নতুন যাত্রা। যেসব মানুষের উপর মেঙ্গেলা পরীক্ষা চালিয়েছেন তাদের ভেতর বেশিরভাগই ছিল ইহুদি। এছাড়াও রোমানি, সিনটি, পোলিশ এবং বিকলাঙ্গ জার্মান নাগরিকদের বাছাই করা হয়েছিল। তাদের উপর শুরু হয় মেডিকেল টর্চার, যার ফলশ্রুতিতে প্রথম পর্বেই অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর ভেতর অনেকে বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন, কেউ বা শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গ হারান। কিছু কিছু বন্দিকে অত্যধিক নিম্ন তাপমাত্রায় এবং নিম্নচাপের পরিবেশে রাখা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল এরকম পরিবেশে জার্মান সৈন্যরা বেঁচে থাকতে পারে কি না সেটা যাচাই করা।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই অমানবিক গবেষণার জন্য মেঙ্গেলা ও তার সহকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়, কিন্তু জোসেফ মেঙ্গেলা সুযোগ পেয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে যান। এই গবেষণাটি সবচেয়ে বিতর্কিত হওয়ার কারণ এখানে নারী-পুরুষদের যেমন ব্যবহার করা হয়েছিল, তেমনি শিশুরাও বীভৎসতা থেকে রেহাই পায়নি! মেঙ্গেলা বহু মৃত মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন পরবর্তীতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।