What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made ভোরের আলো 🌞☀🌞☀🌞☀🌞☀ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
বিয়ের দুই তিনদিন পরই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার স্বামী রাতুলের মাথায় কিঞ্চিৎ গন্ডগোল আছে । আমরা সাধারণ মানুষ সহজ ভাষায় যাকে পাগল বলি ।



বিয়ের রাতের কথাই প্রথমে বলি । এই রাতটার জন্য সব মেয়েরা যেমন ভালোবাসার ডালি সাজিয়ে রাখে তেমনি আমিও রেখেছিলাম । যদিও এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে । দ্বিতীয় হোক বা প্রথম হোক বাসর রাততো ? আর লোকটা করলো কি ? সে বিয়ের শেরোয়ানি পড়েই ধপ্পাস করে খাটে শুয়ে নাক ডাকা শুরু করলো ? ইচ্ছে করছিলো হাতুরী দিয়ে ঠাটিয়ে মাথায় এক বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে দেই ।



শুধু মনে হচ্ছিলো বললে ভুল হবে , আমি আসলেই আতিপাতি করে খুঁজছিলাম ঘরের কোথাও শক্ত কিছু পাই কিনা ?



এমন সময় তিনি ধড়মড় করে উঠে বসে আমার দিকে কটমট করে তাঁকিয়ে বলেন - আমার ঘরে আপনি কে ? পর পুরুষের ঘরে আপনি কেনো ?



দাতে দাত চেপে রাগ সমলে বলি - আপনার ঘরে হাতুরী আছে ? হাতুরীর বাড়ি মাথায় পরলে বুঝবেন আমি কে ?



তাড়াতাড়ি দুহাতে মাথার তালু ঢেকে বলেন - ভয় দেখান কেনো ? এমনিতেই ঔষধ খেতে ভুলে গেলে আমার কিচ্ছু মনে থাকেনা !



- আজ ঔষধ খেয়েছেন ? নাকি ভুলে গেছেন ?



- ওরা যেনো আমাকে কোথায় নিয়ে গেলো! ফিরে এসে খেতে ভুলে গেছি । টেবিলের নিচের ড্রয়ারে ঔষধ আছে , দিবেন ?



- আর কিছু লাগবেনা ?



- উ উ উ মনে করতে পারছিনা তো !



- আপনি মনে করতে থাকেন ততোক্ষণে আমি চেঞ্জ করে আসি ।



- দাড়ান , দাড়ান মনে পরেছে , একগ্লাস পানিও লাগবে ।



ঔষধ আর পানির গ্লাস হাতে ধরিয়ে বারান্দার চেয়ারে বসে আমি ভাবনায় ডুব দেই ।



মধ্যবিত্ত বাবার আদুরে কন্যা ছিলাম আমি। পড়াশোনার মাঝপথে হঠাৎ বাবার ক্যান্সার ধরা পরার পর তার ইচ্ছেয় আমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয় । বড় মামার ভূমিকা ছিলো সবচেয়ে বেশি। তার পরিচিত এক ঘটকের মাধ্যমে হুট করে আমার বিয়েটাও হয়ে যায় ।



প্রথমদিকে ভালো চললেও সাত বছরেও যখন মা হতে পারলামনা তখনই শুরু হলো বিপত্তি ।



শ্বাশুরী মায়ের ঘরে প্রায়ই গোপন আলোচনার কথা কানে আসে । আলোচনার বিষয় থাকে আমার মা না হওয়ার অপরাধ । ছেলের সাথে পরামর্শ করেন তিনি আবার ছেলের বিয়ে দিয়ে নাতি নাতনির মুখ দেখবেন । আমার স্বামী মারুফও মায়ের সাথে একমত শুনে তাকে একদিন বলেছিলাম - চলো ডাক্তার দেখাই ।



সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে হুঙ্কার দিয়ে বললো - আদিখ্যেতা বাদ দাও । আর অপেক্ষা করার ধৈর্য নেই । আমি আবার বিয়ে করবো এই আমার শেষ কথা ।



- সমস্যাটা আমার না হয়ে যদি তোমার হয় সেই দায়ও আমার নিতে হবে ?



- আবোল তাবোল শোনার সময় আমার নেই ।



আর মায়া বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করিনি ! ফিরে এলাম বাবার বাড়ি । ততোদিনে ছোট সব ভাইবোনের কোল আলো করে আসা সন্তানেরাও বেশ বড় হয়ে গেছে ।



সেটাও ছয় বছর আগে ।



এই ছয়বছরে কোলেপিঠে করে বড় করা ভাইবোনের কথার হুলে আমার কলিজা ছিন্নভিন্ন ! আচ্ছা কলিজা চিড়ে দেখানো যায়না কেনো ? যদি যেতো তবে আমার কলিজাটা ওদের হাতে তুলে দিয়ে বলতাম - এই যে হাজার হাজার ক্ষতচিহ্ন দেখছিস এগুলো গুণে শেষ করতে পারবি তোরা ? এই ক্ষতগুলো তোদের তৈরী ! পারবি মুছে দিতে এই ক্ষতচিহ্নগুলো ?



আমার করুণ অবস্থা রাব্বানী চাচার সইতে কষ্ট হচ্ছিলো । তার পছন্দেই রাতুলের সাথে বিয়ে ।



হঠাৎ মাথায় কার যেনো স্নেহের ছোঁয়া পেয়ে বাস্তবে ফিরে আসি । ততোক্ষণে ফজরের আজান শুরু হয়েছে । চমকে উঠে তাঁকিয়ে দেখি আমার নতুন শ্বাশুরীমা । মিষ্টি করে বলেন - চলো মা একসাথে নামাজ পড়ে নেই ।



আমরা একসাথে ফজর আদায় করে চুপচাপ বসে আছি । নিরবতা ভেঙে তিনি বলেন - বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা । আমি চাইনি রাতুলের এই অবস্থায় কোন মেয়ে ওর সাথে জড়াক । দেখো ভাগ্যের কি খেলা কেমন করে তুমি জড়িয়ে গেলে !



- রাতুলের সমস্যা কি মা ?



- একটা সড়ক দূর্ঘটনা !



- মানে ?



রাতুল তার বউ ছেলে নিয়ে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে বন্ধুর বিয়েতে যাচ্ছিলো । উল্টোদিক থেকে আসা একটা ট্রাকের ধাক্কায় বউমা স্পট ডেড ! মাথায় আঘাত পেয়ে রাতুল তিন মাস হাসপাতালে থাকার পর জানতে পারে মীরা নেই ! সেই থেকে রাতুলের এই অবস্থা ।



- রাতুলের ছেলেটার কি হলো ?



- সারা শরীর থেতলে গেছিলো । মাস দেড়েক চিকিৎসার পর সুস্থ হলে ওর খালা নিয়ে যায় । বয়সের কারণে নিজের কাছে রাখার সাহস পাইনা! ছেলেটা যে কদিনের জন্য খালার সাথে এই বাড়ি আসে সেই কদিন রাতুল সুস্থ থাকে । চলে গেলেই আবার অসুস্থ হয়ে যায়। ঠিকমতো ঔষধ না খাওয়ালে অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায় । একা সামলাতে পারিনা দেখে আমার দেবর তোমার সাথে রাতুলের বিয়ের ব্যাবস্থা করলো ! আমি বড় অসহায় মা ! স্বার্থপরের মতো রাতুলের বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম ! একটা অসুস্থ মানুষের সাথে তোমাকে জড়িয়ে দিলাম !



এতো আদর করে অনেকদিন কেউ আমার সাথে কথা বলেনা ! বাবা মা চলে যাওয়ার পর আর কেউ না ! মায়ের কথা শুনে টপটপ করে চোখ বেয়ে নোনাজল বইতে থাকলো ।



রাতুলের সাথে ওর ছেলেটার জন্যও মন খারাপ হয়ে গেলো । একটা দূর্ঘটনা রাতুলের সাথে সাথে ওর ছেলেটার জীবনও কেমন উলট পালট করে দিলো ! রাতুলের আজ স্ত্রী পুত্র নিয়ে একটা সাজানো সংসার থাকার কথা ছিলো ! সেই জায়গায় স্ত্রী পুত্রের শোকে রাতুল আজ পাগল ! ওর ছেলেটাও বাবা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্যের ঘরে অবহেলায় বেড়ে উঠছে !



মাকে বলি - আমরা যদি রাতুলের ছেলেটাকে চাই তবে ওর খালা আমাদের কাছে ওকে ফিরিয়ে দিবে মা ?



- মাগো সময় সবার একরকম যায়না ! বেচারী রোজীও রাতুলের ছেলে শুভর জন্য ওর ছেলে বউদের কম কথা শোনেনা ! আমার যদি সাধ্যি থাকতো তবে কবেই নিয়ে আসতাম !



- আর দেরী কেনো মা ? চলেন কালই আমরা শুভকে নিয়ে আসি ।



- রাতুল একটু সুস্থ হোক !



পাশের ঘর থেকে রাতুলের হৈ চৈ শোনা যাচ্ছে - কাল রাতে যে মেয়েটাকে দেখলাম সে কই মা ? কেনো যে এলো আবার চলেও গেল বুঝতে পারছিনা কেনো ?



পাশের ঘর থেকে জবাব দেই - চলে যাইনি , এই যে আসছি ।



- তাড়াতাড়ি আসেন ।



রাতুলের পাশে গিয়ে দাড়ালাম - কিছু লাগবে ?



- হ্যা গোসলের জন্য গরম পানি লাগবে । ও হ্যা আপনি কে তা তো বললেননা ?



- বলতেই হবে ?



- বললে ভালো হয় । দরকারের সময় নইলে আপনাকে কি বলে ডাকবো ?



- আমি মীরা । আপনার নার্স ।



- মীরা , মীরা , মীরা ওহ্ মনে করতে পারছিনা কেনো ? আরো একজন মীরা যেনো কে ছিলো ? আচ্ছা ঠিকাছে মনে হলে একসময় বলবো ।



এক নিমেষেই আমি মৌরী থেকে মীরা হয়ে গেলাম!



রাতুলের নার্সের ভূমিকায় অভিনয় করে আরো দুইমাস কাটিয়ে দিলাম । সেবা যত্নে রাতুল এখন বেশ সুস্থ । আমাকে কিছুক্ষণ না দেখলেই মীরা মীরা চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলে । মনে শান্তির দোলা পাই । রাতুল পুরোপুরি সুস্থ হলে আমরা স্বামী স্ত্রীর আসল জীবন শুরু করবো । একটা সুন্দর সংসারের লোভ আমাকে আবারো পেয়ে বসেছে । স্বামী সন্তান নিয়ে একটা লোভী সংসারের খুব লোভ হয় ইদানিং ।



শুভকে কাল রাতে তার খালার কাছ থেকে ফিরিয়ে এনেছি । রোজী আপা চোখের পানি আড়াল করে শুভকে আমার কোলে তুলে দেন । আড়াই বছরের শুভটা কি বুঝে আমার গলা আঁকড়ে ধরে আধো বোলে আমাকে তাড়া দেয় - মা আমলা বাবাল কাতে দাবো ।



শুভকে বুকে জড়িয়ে রাতুলের খাটে কুন্ডলি পাকিয়ে কখন শুয়েছি রাতুল টের পায়নি । পাশের ঘরে শুভকে ঘুম পাড়িয়ে পা টিপে টিপে রাতুলের পাশে ঘুমিয়ে গেছি।



শুভকে নিয়ে আজই প্রথম আমি রাতুলের খাটে শুয়েছি । আগে ঘুমাতাম রাতুলের পাশের ঘরে । ঐ ঘর থেকে বারে বারে উঁকি দিয়ে রাতুলকে দেখে যেতাম ।



সূর্য্যের আলোয় চারিদিক ফর্সা হয়ে এলে শুভর ঘুম ভেঙে আমার গাল টিপে বলে - মা , ও মা আল ঘুমাবোনা । তলো আমলা ছাদে দাই ।



- উহু বাবা আরেকটু ঘুমাও । কথা বললে তোমার বাবা জেগে যাবেন ।



- বাবাকেও নিয়ে দাবো । তলোনা মা ।



শুভর কথার শব্দে রাতুল জেগে উঠে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের মতো জানালা মেলে দিয়ে বলে - মীরা , এই মীরা আরো এদিকে এসে শোও । ছেলেকে নিয়ে এতো কিনারায় শুয়েছ কেনো ? পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবেতো !



রাতুলের এহেন স্বাভাবিক আচরণে আমি অবাক হওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলি ! এও কি সম্ভব ? বিধাতা সত্যি সত্যি আমার ইচ্ছে পূরণ করেছেন ?



- রাতুল তুমি ঠিক আছতো ?



- আমি আবার বেঠিক ছিলাম কবে মীরা ! তোমার মাথায় কি গন্ডগোল দেখা দিলো নাকি ? হা হা হা ।



আজকের সূর্য্যটা আসলেই অন্যরকম !



আজকের সূর্য্য আমার জন্য একটা শুভদিন বয়ে এনেছে । এই সূর্য্যটার জন্য আমি কতোকাল অপেক্ষা করেছি !



কতোকাল !!!!!!!!!!



(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top