What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made নীল বেদনা 🛢💘🔮💘▪▫◻🔸🔹🔺 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
স্কেন্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এসেছি একটা অফিসিয়াল কাজে। সুইডেন , আলফ্রেড নোবেলের দেশ। গ্রেটার গার্বো, ইনগ্রিড ব্রাগম্যানের দেশ।এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলে লিখে বর্ননা করা যায় না। আগেও বেশ কয়েকবার এসেছি। স্কেন্ডিনেভিয়ান দেশ গুলোর অপরূপ সৌন্দর্য আমাকে বরাবর খুব টানে।

এবার আসতে হয়েছে তিনদিনের জন্য। আমাদের সফটওয়্যার কোম্পানি এখানকার একটা লোকাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি করেছে, যার জন্য আসতে হলো।

ওয়েদারটা খুব আরামদায়ক এখন। ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং গুলো সেরে বাকি সময় ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দেয়া যাবে ভেবেই দারুন লাগছে শিহাবের।

ক্লান্ত শরীরে লাগেজ এর জন্য অপেক্ষা করছে । হোটেল আগে থেকেই বুকিং করা আছে ওসব নিয়ে চিন্তা নেই।

লম্বা জার্নি ছিল। আটলান্টা থেকে নিউইয়র্ক , নিউইয়র্ক থেকে স্টকহোম। মাঝখানে শিফল এয়ার পোর্টে কিছু সময় যাত্রাবিরতি।

এই মুহূর্তে হোটেলের বিছানাটা বড্ড টানছে শিহাবকে।

হঠাৎ একটু দূরে চোখ পড়তেই বুকের কাছে চিনচিন করে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেলল সে। সত্যিই কি সে ?

নাকি আমার চোখের ভুল?

অবুঝ চোখের আর কি দোষ ,এই মুখ টা কখনো কি ভুলতে দিয়েছে ওর মন।

উনিশ বছর পরেও এমন কোন দিন আসেনি, যেদিন টা শুরু হয়নি এই মুখটার কথা না ভেবে। কোন রাত নেমে আসেনি ওর জীবনে, যে রাতে এই মুখটা ওকে পোড়ায় নি।

আজ কিভাবে চোখের সামনে সেই জলজ্যান্ত মুখটা কে পেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিবে সে?

পনের, বিশ হাত দূর থেকে দেখছে সেই টোল পড়া গাল, দেবী প্রতিমার মতো সুতীক্ষ নাক। ফর্সা গায়ের রং আগের মতই আছে মনে হচ্ছে। শুধু চুল গুলো ছোট হয়েছে।

উনিশ বছরে বয়স বেড়েছে কিছুটা, স্বাস্থ্য আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। লাল রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট এ দারুন মানিয়েছে ওকে।

কোন দিন প্যান্ট পড়া অবস্থায় দেখব কল্পনায় ও আসেনি।

মনের অজান্তেই কখন যে শিহাব হাঁটতে হাঁটতে এত কাছে চলে এসেছে নিজেই টের পায়নি!

হঠাৎ ওকে সামনে দেখে অদিতি যখন বিস্ময় ভরা গলায় 'শিহাব' বলে ডেকে উঠলো তখন খেয়াল হলো ।

তুমি এখানে!

শিহাব ঘোর থেকে বেড়িয়ে নিজেকে সামলে নিলো, আমারো তো সেই প্রশ্ন ?

মুখে পুরোনো হাসি মেখে অদিতি বলে উঠলো, আমার এক বন্ধুর বিয়েতে এসেছি। তুমি?

আমি অফিসের কাজে।

শিহাব খুব চেষ্টা করছে নিজের ভেতরের এত বছরের আবেগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে। কোন ভাবেই প্রকাশ করা যাবে না ,আজ‌ও তার বুকের ভেতরে অদিতি কে দেখলে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।

কেমন আছো?

ভালো আছি অদিতি, তুমি?

নিচের ঠোঁট টাকে কামড়ে একটু হেসে বলল, আমিও ভালো আছি।

লাগেজ কালেক্ট অদিতির পাশে এসে দাঁড়ালো শিহাব।

তুমি কি একাই এসেছো ? আশেপাশে তাকিয়ে শিহাব প্রশ্ন করলো।

হ্যাঁ আমি একাই এসেছি লন্ডন থেকে। কিছুটা দম নিয়ে অদিতিই বলল, আমার বর ছুটি পায়নি আর বাচ্চাদের স্কুল আছে তাই আসতে পারেনি।

ও আচ্ছা লন্ডনে থাকা হয় ?

হুম , তুমি ইউএসএ তে আছো সে খবর আমি জানি ।

তাই বুঝি?

বেশ কয়েকবছর আগে দেশে গিয়েছিলাম তখন মলি তোমার খবর বলল!

আমি দেশের সঙ্গে সব যোগাযোগ ই কমিয়ে দিয়েছি।

জানি আমি। অবাক হচ্ছো না তোমার খবর নিয়েছি বলে?

শিহাব কিছুই বলল না শুধু তাকিয়ে রইল অদিতির দিকে।

তোমাকে নিতে কি কেউ আসবে?

আসার কথা ছিল কিন্তু আমিই না করে দিয়েছি আমি একাই হোটেলে যেতে পারব বলেছি।

যদি তোমার আপত্তি না থাকে আমি কি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারি অদিতি?

অদিতি শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইল দুই সেকেন্ড তারপর বলল, চলো ।

ট্যাক্সি নিয়ে ওরা দুজন অদিতির হোটেলের উদ্দেশ্যে র‌ওনা হয়েছে।

অনেক বছর আগে ভার্সিটি যখন ছুটি হতো ওরা দুজন এভাবেই বাড়ি ফিরতো।

শিহাবের সেই দিন গুলো মনে পরে গেল।

বাবার চাকরির সুবাদে ময়মনসিংহে থাকতো ওরা। সেনবাড়ি রোডে পাশাপাশি বাসা ছিল ওদের। ছোট থেকেই এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা। দুই পরিবারের সম্পর্ক ছিল দারুন।

এক সঙ্গে খেলতে খেলতে আর পড়াশোনা করতে গিয়েই একদিন দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলল।

কৈশোরের সেই প্রেম ,সেই ভালো লাগা এতটাই প্রগাঢ় ছিল যে দুজন দুই ধর্মের অনুসারী হয়েও ভালোবাসায় তা বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয়ে আসেনি।

দুজন মিলে সার্কিট হাউসের পাশ দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের পাড় ধরে হেঁটে চলে যেতো বহুদূর।

নৌকা ভাড়া করে কখনো দুজনে, কখনো বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে ঘুরতে বের হয়ে যেতো।

সেই মরা ব্রক্ষপুত্রে বর্ষায় যেমন অনেক পানি গড়িয়ে গেছে কৈশোরের প্রেম যৌবনেও এসে পারি জমিয়েছে।

দুজন ভার্সিটিতে পড়তো যখন, স্বপ্ন দেখতো একদিন ধর্মের শিকল ভেঙে ওরা সংসার করবে।

কিন্তু মানুষ ভাবে অনেক কিছু বাস্তবে হয় যা সে কল্পনাও করে না কিংবা করত চায় না।

এক শীতের সন্ধ্যায় অদিতির বিয়ে হয়ে গেল । পরীক্ষা শেষ হয়েছে অদিতি চলে এসেছে ময়মনসিংহ, শিহাব ঢাকায়।

শিহাবের মা ওর খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পাঠালো জরুরি ভিত্তিতে ময়মনসিংহে আসার জন্য।

শিহাব মায়ের খবর পেয়ে ছুটে চলে আসে ময়মনসিংহ।

ভেবেছিল মায়ের হয়তো শরীর খারাপ। কিন্তু আসার আগে ঘুনাক্ষরেও জানতো না সে, মা ওকে ডেকেছে অদিতির বিয়ের আয়োজনে জয়দেব কাকাকে সাহায্য করার জন্য।

শিহাব আকাশ থেকে পড়লো খবর টা শুনে। ছুটে গিয়েছিল অদিতিদের বাড়ি। অদিতি ছিল না বাসায়।

অদিতির মা বাণী কাকিমা শিহাবকে ডেকে উঠানে নিয়ে আসেন।

নিজের দুটো হাত জোড় করে মিনতি করে বলল, বাবা আত্মীয় স্বজন সবাই একে একে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছে আমি আর তোমার কাকা, বাপ দাদার ভিটে ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকতে পারব না তাই যেতে পারিনি। এই দেশটাই তো আমাদের দেশ, দুটো মেয়ে নিয়ে সন্মানের সঙ্গে থাকতে চাই বাবা।

আমি জানি তোমার আর অদিতির সম্পর্কের কথা। অদিতিই বলেছে আমাকে কিন্তু বাবা আমি আর তোমার কাকার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না তাহলে।

আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীরা সন্মান করে আমাদের ,যদি তোমার আর অদিতির মধ্যে কিছু আছে এটা পাঁচ কান হয় তাহলে মানুষের সামনে মুখ দেখাবো কিভাবে বলো?

তোমার বাবা মা ও কোন দিন অদিতি কে ছেলের ব‌উ হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে পারবে না শিহাব। আমার মেয়েটা সারাজীবন শ্বশুরবাড়িতে অবাঞ্চিত হয়ে থাকবে।

কাকিমা আমি অদিতিকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলে যাব আমার স্কলারশিপ হয়ে গেছে আমি কানাডা চলে যাচ্ছি।

শিহাব, তুমি আর অদিতি না হয় চলে গেলে কিন্তু তোমাদের দুজনের দুটো পরিবার কে এখানে লজ্জা, অপমান মানুষের কথা শোনার জন্য রেখে যেতে চাও ? তোমরা কি শুধু তোমাদের নিজেদের কথা ভাববে ? তোমার কাকা কিছু জানেন না এখনো , মানুষটা সহ্য করতে পারবে না কখনো শিহাব!

শিহাব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

অদিতির পিসি একটা সম্বন্ধ এনেছে ছেলে ইন্জিনিয়ার ঢাকায় নিজেদের বাড়ি আছে । ওরা দুইদিন পর আশির্বাদ করতে আসবে তারপর এই সপ্তাহে বিয়ে । ছেলের দিদা খুব অসুস্থ, শিহাব বাবা তুমি কথা দাও আমাকে তুমি আমাদের মান সন্মান হানি হয় এমন কিছু করবে না।

সেদিন শিহাব বাণী কাকিমার কথা শুনে সারা রাত ঘুমোতে পারেনি ছটফট করেছে যন্ত্রণায় ।

অদিতি পরদিন জেনেছে শিহাব এসেছে। মায়ের নজরদারি পার হয়ে দেখা করার কোন সুযোগই সে পায়নি।

আশির্বাদ হয়নি ছেলের দিদার অসুস্থতার জন্য। ওরা খবর পাঠিয়েছে দুই দিন পর সরাসরি বরযাত্রা নিয়ে আসছে।

অদিতিদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।

এর মাঝে অদিতি চিঠি পাঠিয়েছিল ছোটবোন অর্পাকে দিয়ে।

পালিয়ে যেতে চায় সে শিহাবের সঙ্গে।

শিহাব‌ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল । কিন্তু সেদিন রাতে ওদের বাসায় দাওয়াত দিতে এসে জয়দেব কাকা শিহাবের হাত ধরে বলল, আমি একা বিয়ের সব কিছু সামলাতে পারব না শিহাব ,তুমি তো আমার ছেলের মতো তুমি আমাকে সাহায্য করো বাবা। মেয়েটার এত বড় ঘরে বিয়ে দিচ্ছি ওদের কোন অযত্ন হলে সারাজীবন আমি আর অদিতি ছোট হয়ে থাকব।

তুমি আমার সঙ্গে থাকবে তো বাবা?

শিহাব তাকিয়ে দেখে চোখ ছলছল করছে জয়দেব চৌধুরীর ।

শিহাবের মা ওদের পাশে এসে বলল, দাদা আপনি চিন্তা করছেন কেন শিহাবের বন্ধুর বিয়ে ও থাকবে । আমরা পুরো পরিবার আপনার পাশে আছি চিন্তা করবেন না।

বৌদি আমাদের ধর্মে কন্যাদান অনেক পূর্ণের ব্যাপার একজন বাবার কাছে, আবার সবচেয়ে নাজুক একটা ব্যাপার ও । সামান্য ভুল হয়ে গেলে কেউ ক্ষমা করে না ।

সব ধর্মেই দাদা খুব নাজুক বিষয় এটা। আদর যত্ন করে বড় করে উপযুক্ত পাত্রের কাছে পাত্রস্থ করা বাবা মায়ের কর্তব্য। আপনি খুব সুন্দর ভাবে সেই দ্বায়িত্ব পালন করছেন। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আমরা সবাই থাকব অদিতির বিয়েতে।

জয়দেব কাকার চোখের পানি আর দুই পরিবারের কথা চিন্তা করেই শিহাব পারেনি অদিতিকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে।

অবাক হয়েছিল অদিতি কোন ঝামেলা ছাড়াই ওর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে শুনে।

বিয়ের প্রতিটি আচার অনুষ্ঠানে জয়দেব চৌধুরী র সঙ্গে থেকে তাকে সাহায্য করেছে শিহাব। তবে অদিতির সামনে আসেননি সে।

কিন্তু যখন মন্ডপে নিয়ে এলো পিঁড়িতে বসিয়ে অদিতিকে, তখন দূর থেকে দেখেছে তার সেই প্রিয় মানুষটাকে।

লাল বেনারসি, সোনার গয়না, মাথায় সোলার টোপর, ফর্সা হাত দুটোতে শাখা,পলা পড়া অদিতি। যেন থানারঘাট মন্দিরের দূর্গা প্রতিমা।

একে একে বিয়ের সব আচার পালন করেছে অদিতি। একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ অদিতির সিঁথিতে নারকেল দিয়ে সিঁদুর পড়িয়ে নিজের অধিকার রচনা করে দিলো সেই রাতে।

পরদিন ভোরেই শিহাব চলে এসেছে ঢাকায়। অদিতির বিদায় তখন‌ও হয়নি।

এর কিছুদিন পর কানাডা। আর পিছন ফিরে দেখেনি সে।

বাবা মা ছিল ময়মনসিংহে ই। তারপর ছোটবোনের কাছে অস্ট্রেলিয়া চলে গেল। কেউ অদিতির খবর দিতে পারে , সেরকম কারো সঙ্গে যোগাযোগ ই ছিল না ওর।

হঠাৎ অদিতির ডাকে বাস্তবে ফিরলো শিহাব।

তোমার ব‌উ বাচ্চা কেমন আছে ?

শিহাব হাসলো।

কি হাসছো কেন বলো?

আমি বিয়ে করতে পারিনি অদিতি ।

অদিতি চুপ হয়ে গেল।

একটুপর অদিতির হোটেলে ওরা পৌঁছে গেল। চেক ইন করার পর অদিতি বলল, চলো একটু কফি খাই ।

চলো!

ওরা পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে বসলো।

কফি অর্ডার করে চুপচাপ বসে আছে অদিতি । দুজনের কেউই কথা বলছে না।

নিরবতা ভেঙ্গে অদিতিই প্রথম কথা বলল, কেন বিয়ে করলে না ?

হুম, তোমার মতো কাউকে পাইনি বলে । কথাটা বলেই হো হো করে হেসে উঠলো শিহাব।

সময় করে উঠতে পারিনি বুঝলে।

আমি অনেক বছর তোমার উপর অনেক অভিমান করে ছিলাম শিহাব।

থাকার‌ই কথা ।

সাত বছর আগে মা মারা গেছেন। মা অনেক অসুস্থ ছিল। আমি তখন গিয়ে ছিলাম মায়ের সাথে। তখন একদিন হঠাৎ মা বলল, তোমাকে কিভাবে অনুরোধ করেছে পিছিয়ে যাওয়ার জন্য । তোমাকে পালিয়ে যাব বলেও আমি কেন পিছিয়ে গিয়েছিলাম জানো? মা আমাকে এসে বলেছে, তোমার মা আমাদের সম্পর্কের কথা শুনে মা কে হাত ধরে অনুরোধ করেছে অদিতির বিয়ে তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়ার জন্য। তাই মা আমার বিয়ে ওরকম হুট করে দিচ্ছে। সেদিন রাতে মায়ের ওসব কথা , কান্নাকাটি শুনে আমিও আর পালানোর কথা চিন্তা করতে পারিনি শিহাব। তুমি হয়তো কষ্ট পেয়ে ছিলে।

কিন্তু বহুবছর পর মারা যাওয়ার আগে মা বলল , তোমার মা আসলে কিছুই জানতেন না মা ই আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার জন্য এসব কথা বলেছিল।

ওসব কথা এখন বলে কি লাভ বলো অদিতি? তুমি তো অনেক সুখে আছো ,ভালো আছো। জীবন আমাদের জন্য এটাই নির্ধারণ করে রেখেছে।

কিন্তু তুমি তো ভালো নেই শিহাব! ছলছল চোখে অদিতি বলল।

কে বলেছে ,আমি অনেক ভালো আছি। একা থাকার মজাটা তারা‌ই জানে যারা একা থাকে।

বিয়েটা করতে পারতে ।

পারতাম কিন্তু ..

অদিতির মোবাইল বেজে উঠলো । স্ক্রিনে ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর স্বামী ফোন দিয়েছে। অদিতি কথা বলছে ।

শিহাব তাকিয়ে দেখছে একজন পুরোদস্তুর সংসারী অদিতিকে।

তিন মিনিট কথা বলে ফোন কেটে বলল,

পৌঁছে ফোন দেয়া হয়নি তাই অস্থির হচ্ছিল ওরা।

হঠাৎ করেই শিহাব উঠে দাঁড়ালো , অনেক লম্বা জার্নি করে এসেছি এখন হোটেলে ফিরতে হবে তুমিও রেস্ট নাও অদিতি।

চলে যাবে ?

অনেক আগেই চলে গিয়েছিলাম অদিতি, মৃদু স্বরে শিহাব বলল।

অদিতি তাকিয়ে আছে শিহাবের মুখের দিকে।

ওরা হেঁটে হোটেলের দরজায় এসে দাঁড়ালো।

আসি আমি ।

আমি চারদিন থাকব স্টোকহোমে শিহাব।

আমার সিডিউল খুব টাইট তুমি বিয়ে এনজয় করো অদিতি, আমার জন্য অপেক্ষা করো না । ভালো থেকো।

শিহাব তার লাগেজ টা নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো সামনে।

বললে না কেন বিয়ে টা করোনি , পেছন থেকে অদিতি বলে উঠলো?

ঘুরে দাঁড়িয়ে শিহাব কোন উত্তর দিলো না, কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল তারপর সামনে এগিয়ে গেল। টেক্সিতে উঠে মনে মনে বলল, অদিতি তোমার স্মৃতি গুলো নিয়েই তো বেশ আছি। তোমার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে ভালো লাগছে। বিয়ে করলেও কি তোমাকে ভুলতে পারতাম। একটা মুহূর্ত তোমাকে তো ভুলতে পারিনা।

এত বছর সে খুব চাইতো অদিতিকে একবার দেখতে । কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে , না দেখা হলেই ভালো হতো। আবার সেই পুরনো কষ্ট, পুরনো যন্ত্রনা বুকের ভেতর হাহাকার করছে।

চলন্ত গাড়ি থেকে আকাশের দিকে তাকালো শিহাব, রাতের স্টকহোমের আকাশে এক অদ্ভুত আলো। অরোরা বরিয়েলিসের দেশ । পৃথিবীর সব দেশের আকাশ হয়তো একরকম হয় না কিন্তু সব মানুষ কষ্টের সময় আকাশের দিকে কেন তাকিয়ে থাকে ?


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top