মুল লেখক ফেরদৌস সাগরের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত
(বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ৭টি ভিন্ন ঘটনার সংকলন)
১। রাখির ঘটনা
সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোন করেছিলেন রাখি। রাখি একসময় খুলনা শহরে থাকতেন। সেটা বেশ আগের কথা। রাখি বিয়ের পর স্বামীর ঘরে গিয়ে দেখেন প্রতারিত হয়েছেন। স্বামীর আগেই একটা বিয়ে ছিলো ফলে তাকে সতীনের সাথে ঘর করতে হচ্ছিলো। তিনি ছিলেন ঐ বড় বৌ এর চোখের বালি। একটাসময় রাখি হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। নাক দিয়ে এমনি এমনিই রক্ত পড়তো, রক্ত বমি হতো। কোন ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে যখন কোন কাজ হচ্ছিলো না, তখন শীতলাবাড়ির মোহন নামের এক তান্ত্রিকের খোঁজ পান তিনি। মোহন রাখির সব কিছু শুনে বলেন যে তাকে বান মারা হয়েছে। আর কাউকে বান মারলে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকে। তান্ত্রিক বললেন, কে বান মেরেছে তা বলার ক্ষমতা আমার নেই কিন্তু ধরার ক্ষমতা আছে। কিভাবে? মোহন রাখিকে বললেন তার বাম হাতটা সামনে রাখা গামলার পানির ভেতর চুবিয়ে রাখতে। তারপর হালকা স্বরে কিছু একটা পড়ে পানিতে ফুকঁ দিলেন। পানিতে হাত চুবিয়ে রাখার বেশ কিছুক্ষন পর রাখি দেখলেন যে তার কপাল অবিরত ঘামছে। তান্ত্রিক তখন রাখিকে বলেন, আমি বিপরীত বান মেরে দিয়েছি ফলে আপনার ওপরকার জাদুর প্রভাব নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে যে বান মেরেছিলো সে এখন আক্রান্ত হবে।
এরপর থেকে রাখি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে আর তার সতীন অসুস্থ হতে থাকে। রাখি তার অসুস্থ সতীনকে নিয়ে মোহন তান্ত্রিকের কাছে গেলে সেই সতীন সব স্বীকার করে যে সে নিজেই বান মেরেছে। সে তার দাদীর কাছ থেকে এটা শিখেছিলো। তার দাদী কালোজাদুর চর্চা করতো। প্রথমে একটা পেরেক টাইপের গজা লোহা জোগাড় করে সেখানে রাখির নাম, রাখির মা-বাবার নাম, আর জন্ম তারিখ খোদাই করে রাখির মাথার কয়েকটা চুল দিয়ে জড়িয়ে তা জাদু করে একটা বড় কাঠাঁলের মাঝ বরাবর ভরে রেখে দেয়। এদিকে কাঠাঁল দিনকে দিন পচঁতে থাকে আর রাখি অসুস্থ হতে থাকে। কাঠাঁল একদম পচেঁ গেলে রাখি মারা যেত।
অবশেষে রাখি সেই স্বামী আর সতীনের ঘর ছেড়ে চলে আসে এবং পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীকে বিয়ে করে এখন অস্ট্রেলিয়াতেই আছেন।
২। হানিফ ও সানজিদার কেইস
কুমিল্লার ছেলে হানিফ। চিটাগাং ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিল সে। সানজিদা নামের একটা মেয়ের সাথে তার পাচঁ বছরের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এই সম্পর্ক সানজিদার মা মেনে নিতে পারতো না কারণ হানিফদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তাছাড়া সানজিদার মা ছিলো একরোখা বদরাগী টাইপের মহিলা। সানজিদার ভাষ্যমতে তার মায়ের করা মানসিক অত্যাচারের কারণেই তার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। যাইহোক, হানিফ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে সানজিদার মা ফিরিয়ে দেয়। সানজিদার মা ওর বিয়ে ঠিক করে ওর চাইতে দ্বিগুণ বয়সী এক প্রকৌশলীর সাথে। কিন্তু সানজিদাকে কোনোভাবেই হানিফের মন থেকে সরানো যাচ্ছিলো না দেখে মহিলা কালোজাদুর আশ্রয় নেয়।
সানজিদার মা গাড়ি নিয়ে চলে যায় শহর থেকে বেশ দূরে এক পরিচিত বদ-কবিরাজের কাছে যে এসবে পারদর্শী। ঐ বদ-কবিরাজ সানজিদার শরীরের রক্ত চায়। সানজিদার মা এতোই ধুরন্ধর আর নিষ্ঠুর যে মেয়ের খাবারের সাথে অচেতন করা ঔষধ মিশিয়ে অচেতন করে শরীর থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত নিয়ে পরদিনই ঐ বদ-কবিরাজকে দিলে আবার দুইদিন পর আসতে বলে। বারবার ওখানে যাওয়ার ব্যপারটা তখন ওদের গাড়ির ড্রাইভারের কাছে রহস্যজনক মনে হয়। দুইদিন পর গেলে কবিরাজ একটা ফল দেয়। ফলের শরীর ফাটা ফাটা লাল রঙের। সে বলে দেয় যে এই ফল নিয়ে একটা বড় নিম গাছের মগডালে বেধেঁ দিতে। এই ফল বাতাসে নড়বে আর ফাটা অংশ দিয়ে ফলের ভেতরের গুড়া যত বের হবে, সানজিদা আর সজীবের সম্পর্ক ততই ক্ষয়ে যেতে থাকবে।
ঐ জাদুর ফলে সত্যি সত্যিই ওদের ফেভিকলের মতো মজবুত জোড়াটা ভেঙ্গে যায়। সানজিদার বিয়ে হয়ে যায় সেই বয়স্ক লোকটার সাথে।
পরবর্তীতে সবকিছু ফাসঁ হয়ে যায় গাড়ির ড্রাইভারের মাধ্যমে। হঠাৎ ওদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে সানজিদার বিয়ে হতে দেখে ড্রাইভারের মনে সন্দেহ জাগে। সে ঐ স্থানে যায় এবং খোজঁখবর নিয়ে জানে সেখানে এক কবিরাজের বাড়ি আছে। পরে বহু কষ্টের মাধ্যমে ড্রাইভার সবকিছু জানতে পারে যে কালোজাদুর কারণেই দুই প্রেমিক-প্রেমিকার জীবনে ট্রাজেডী নেমে আসে। কিন্তু ড্রাইভার তার চাকরী যাবার ভয়ে এবং সানজিদার সংসার ভাঙতে পারে এই ভয়ে কাউকে জানায় না কিছু। এই ঘটনা ঐ ড্রাইভারই আমাকে সর্বপ্রথম জানায় আমার কালোজাদু লেখাটা পড়ে।
৩। বৃষ্টির সাথে কালোজাদু
যশোরের মেয়ে বৃষ্টি। বয়স মাত্র সতেরো। কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে হঠাৎ তার কি হলো, সে রাতে কি দিনে কখনোই ঘুমাতে পারতো না সাথে প্রচন্ড মাথাব্যথা। ওর চোখে ঘুম বলে কিছু ছিলো না। ডাক্তার দেখিয়ে, চোখে চশমা লাগিয়ে, কড়া ঘুমের ঔষধ খেয়েও লাভ হয়নি। এভাবেই দুই আড়াই মাস কাটে। এক সময় ওর বড় মামীর মনে সন্দেহ জাগে যে বৃষ্টিকে কেউ জাদু করে ক্ষতি করলো কিনা। বৃষ্টির মামী বৃষ্টিকে তার গ্রামের এক চাচী সম্পর্কীয় বৃদ্ধার কাছে নিয়ে গেলো। সেই বৃদ্ধার নাকি কিছু ক্ষমতা ছিলো। গ্রামের মানুষ বলতো তার ঘাড়ে নাকি জ্বিন আছে। যাইহোক, সেই বৃদ্ধা বৃষ্টিকে প্রথমে একটা টুলে বসতে বলে। নিজেও সামনাসামনি আরেকটা টুলে বসে ওর চোখের দিকে টানা তাকিয়ে থেকে দোয়া পড়ে ওর শরীরে ফুকঁ দিতে থাকে। এরপর বৃদ্ধা বৃষ্টিকে বিছানায় শুতে বলে আর চুল গুলা মেঝের দিক ছেড়ে দিতে বলে। বৃদ্ধা পড়া তেল আর পানি একসাথে মিশিয়ে তা বৃষ্টির চুলে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় চুলে জট ধরে চুলের রঙ কিছুটা বাদামী লাল হয়ে গেছে। পাশে বসে থাকা বৃষ্টির মামীকে উদ্দেশ্য করে বৃদ্ধা তখন বলে, "তোর ভাগ্নীরে তো জাদু করা হইছে, আর কয়েকদিন গেলে মাইয়াডার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাইতো।" এরপর তিনি বৃষ্টির মামীকে দুইদিন পর আবার বৃষ্টিকে নিয়ে আসতে বলেন। দুইদিন পর গেলে বৃদ্ধা বলেন বৃষ্টিকে জাদু করার পেছনে এক তান্ত্রিক, এলাকার একটা ছেলে আর বাড়ির কাজের মেয়ের হাত রয়েছে।
বাসায় এসে কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে স্বীকার না করলেও পরে জানের ভয় দেখালে সব স্বীকার করে। ছেলেটা ছিলো এলাকারই একটা বখাটে ছেলে। বৃষ্টি যখন স্কুলে যেতো, প্রায়ই এসে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। কিন্তু কখনোই বৃষ্টি রাজি হয়নি বলে ছেলেটা বৃষ্টির এই ক্ষতি করে। প্রথমে কাজের মেয়ে বৃষ্টির মাথার কয়েকটা চুল, হাত পায়ের নখ আর ব্যবহৃত জামার অংশ সংগ্রহ করে ঐ ছেলেকে দেয়। সেগুলো সেই তান্ত্রিকের কাছে দিলে সে সেগুলো সুতা দিয়ে একসাথে বাধেঁ। তারপর জাদু করে মোম গলিয়ে মোম এর ভেতর ভরে ছেলেটাকে দিয়ে দেয়। ছেলেটা সেটা আবার কাজের মেয়েকে দিয়ে বলে বৃষ্টির বালিশের ভেতর ঢুকিয়ে সেলাই করে দিতে। কাজের মেয়েটাও ঠিক সেভাবে কাজ করে বিনিময়ে ভালো অংকের টাকাও পায়। সব জানার পর সেই মোম বালিশ থেকে বের করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। বৃষ্টিও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়। কাজের মেয়ে আর বখাটে ছেলেটাকে পরবর্তীতে এলাকা ছাড়া করা হয়।
৪। রিনা ও তার হাজব্যন্ড
এখন যে ঘটনাটি লিখছি, এটা আরো ৪৫ বছর আগের একটি ঘটনা। যার সাথে ব্যাপারটা ঘটেছিলো তার বয়স এখন ৬০বছর। তিনি নিজেই ফোন করে সবকিছু বলেছিলেন।
১৯৬৮ সাল। ১৩ বছরের দুরন্ত কিশোরী রিনা। উচ্ছল হাসিখুশি রিনা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। রিনা সারাদিন মন মরা হয়ে বসে থাকে, একা একা কান্নাকাটি করে, একা বসে আনমনে কি ভাবে, ধীরে ধীরে ওর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, চোখে রক্ত জমাট বাধঁতে থাকে। রিনাকে সারা রাজশাহীর ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েও লাভ হয়না। ফলে অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। এক সময় দেখা যায় রিনার নাভীতে পচন ধরেছে আর রাত হলেই বলে মাথার ভেতর যন্ত্রণা করে।
একদিন রিনার মা মেয়ের মাথা ব্যথার কথা শুনে মাথা টিপে দিতে থাকে, হঠাৎ তার হাতে শক্ত কিছু বাধেঁ। বের করে দেখেন খুব ক্ষুদ্র একটা তাবিজ। ব্যস, রিনার মা বুঝে যান যে মেয়েকে কেউ তাবিজ করেছে। পরদিনই মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে আনা হয়। ইমাম সাহেব এসে সব ঘর, আসবাবপত্র বিছানা ভালো করে খুজঁতে বলেন। রিনার ঘর থেকে প্রচুর তাবিজ পাওয়া যায়। ইমাম সাহেব বললেন যে এখানে বাড়ির মানুষের বা পরিচিত কারো হাত রয়েছে।
সব তাবিজ বিশেষ কায়দায় পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইমাম সাহেব যখন জানতে পারেন যে রিনার নাভীতে পচন ধরেছে, তখন তিনি বলেন যে এই জাদুতে বদ জ্বীনেরও হাত আছে। সেদিন বিকেলেই ইমাম এক শিঙ্গা নিয়ে আসেন। শিঙ্গা রিনার মায়ের কাছে দিয়ে বলেন যে মেয়ের নাভীতে যেখানে পচন ধরেছে, আমি দোয়া পড়ে শেষ করার সাথে সাথে সেখানে জোরে জোরে ফুঁক দিবেন।
(বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ৭টি ভিন্ন ঘটনার সংকলন)
১। রাখির ঘটনা
সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোন করেছিলেন রাখি। রাখি একসময় খুলনা শহরে থাকতেন। সেটা বেশ আগের কথা। রাখি বিয়ের পর স্বামীর ঘরে গিয়ে দেখেন প্রতারিত হয়েছেন। স্বামীর আগেই একটা বিয়ে ছিলো ফলে তাকে সতীনের সাথে ঘর করতে হচ্ছিলো। তিনি ছিলেন ঐ বড় বৌ এর চোখের বালি। একটাসময় রাখি হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। নাক দিয়ে এমনি এমনিই রক্ত পড়তো, রক্ত বমি হতো। কোন ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে যখন কোন কাজ হচ্ছিলো না, তখন শীতলাবাড়ির মোহন নামের এক তান্ত্রিকের খোঁজ পান তিনি। মোহন রাখির সব কিছু শুনে বলেন যে তাকে বান মারা হয়েছে। আর কাউকে বান মারলে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকে। তান্ত্রিক বললেন, কে বান মেরেছে তা বলার ক্ষমতা আমার নেই কিন্তু ধরার ক্ষমতা আছে। কিভাবে? মোহন রাখিকে বললেন তার বাম হাতটা সামনে রাখা গামলার পানির ভেতর চুবিয়ে রাখতে। তারপর হালকা স্বরে কিছু একটা পড়ে পানিতে ফুকঁ দিলেন। পানিতে হাত চুবিয়ে রাখার বেশ কিছুক্ষন পর রাখি দেখলেন যে তার কপাল অবিরত ঘামছে। তান্ত্রিক তখন রাখিকে বলেন, আমি বিপরীত বান মেরে দিয়েছি ফলে আপনার ওপরকার জাদুর প্রভাব নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে যে বান মেরেছিলো সে এখন আক্রান্ত হবে।
এরপর থেকে রাখি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে আর তার সতীন অসুস্থ হতে থাকে। রাখি তার অসুস্থ সতীনকে নিয়ে মোহন তান্ত্রিকের কাছে গেলে সেই সতীন সব স্বীকার করে যে সে নিজেই বান মেরেছে। সে তার দাদীর কাছ থেকে এটা শিখেছিলো। তার দাদী কালোজাদুর চর্চা করতো। প্রথমে একটা পেরেক টাইপের গজা লোহা জোগাড় করে সেখানে রাখির নাম, রাখির মা-বাবার নাম, আর জন্ম তারিখ খোদাই করে রাখির মাথার কয়েকটা চুল দিয়ে জড়িয়ে তা জাদু করে একটা বড় কাঠাঁলের মাঝ বরাবর ভরে রেখে দেয়। এদিকে কাঠাঁল দিনকে দিন পচঁতে থাকে আর রাখি অসুস্থ হতে থাকে। কাঠাঁল একদম পচেঁ গেলে রাখি মারা যেত।
অবশেষে রাখি সেই স্বামী আর সতীনের ঘর ছেড়ে চলে আসে এবং পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীকে বিয়ে করে এখন অস্ট্রেলিয়াতেই আছেন।
২। হানিফ ও সানজিদার কেইস
কুমিল্লার ছেলে হানিফ। চিটাগাং ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিল সে। সানজিদা নামের একটা মেয়ের সাথে তার পাচঁ বছরের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এই সম্পর্ক সানজিদার মা মেনে নিতে পারতো না কারণ হানিফদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তাছাড়া সানজিদার মা ছিলো একরোখা বদরাগী টাইপের মহিলা। সানজিদার ভাষ্যমতে তার মায়ের করা মানসিক অত্যাচারের কারণেই তার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। যাইহোক, হানিফ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে সানজিদার মা ফিরিয়ে দেয়। সানজিদার মা ওর বিয়ে ঠিক করে ওর চাইতে দ্বিগুণ বয়সী এক প্রকৌশলীর সাথে। কিন্তু সানজিদাকে কোনোভাবেই হানিফের মন থেকে সরানো যাচ্ছিলো না দেখে মহিলা কালোজাদুর আশ্রয় নেয়।
সানজিদার মা গাড়ি নিয়ে চলে যায় শহর থেকে বেশ দূরে এক পরিচিত বদ-কবিরাজের কাছে যে এসবে পারদর্শী। ঐ বদ-কবিরাজ সানজিদার শরীরের রক্ত চায়। সানজিদার মা এতোই ধুরন্ধর আর নিষ্ঠুর যে মেয়ের খাবারের সাথে অচেতন করা ঔষধ মিশিয়ে অচেতন করে শরীর থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত নিয়ে পরদিনই ঐ বদ-কবিরাজকে দিলে আবার দুইদিন পর আসতে বলে। বারবার ওখানে যাওয়ার ব্যপারটা তখন ওদের গাড়ির ড্রাইভারের কাছে রহস্যজনক মনে হয়। দুইদিন পর গেলে কবিরাজ একটা ফল দেয়। ফলের শরীর ফাটা ফাটা লাল রঙের। সে বলে দেয় যে এই ফল নিয়ে একটা বড় নিম গাছের মগডালে বেধেঁ দিতে। এই ফল বাতাসে নড়বে আর ফাটা অংশ দিয়ে ফলের ভেতরের গুড়া যত বের হবে, সানজিদা আর সজীবের সম্পর্ক ততই ক্ষয়ে যেতে থাকবে।
ঐ জাদুর ফলে সত্যি সত্যিই ওদের ফেভিকলের মতো মজবুত জোড়াটা ভেঙ্গে যায়। সানজিদার বিয়ে হয়ে যায় সেই বয়স্ক লোকটার সাথে।
পরবর্তীতে সবকিছু ফাসঁ হয়ে যায় গাড়ির ড্রাইভারের মাধ্যমে। হঠাৎ ওদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে সানজিদার বিয়ে হতে দেখে ড্রাইভারের মনে সন্দেহ জাগে। সে ঐ স্থানে যায় এবং খোজঁখবর নিয়ে জানে সেখানে এক কবিরাজের বাড়ি আছে। পরে বহু কষ্টের মাধ্যমে ড্রাইভার সবকিছু জানতে পারে যে কালোজাদুর কারণেই দুই প্রেমিক-প্রেমিকার জীবনে ট্রাজেডী নেমে আসে। কিন্তু ড্রাইভার তার চাকরী যাবার ভয়ে এবং সানজিদার সংসার ভাঙতে পারে এই ভয়ে কাউকে জানায় না কিছু। এই ঘটনা ঐ ড্রাইভারই আমাকে সর্বপ্রথম জানায় আমার কালোজাদু লেখাটা পড়ে।
৩। বৃষ্টির সাথে কালোজাদু
যশোরের মেয়ে বৃষ্টি। বয়স মাত্র সতেরো। কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে হঠাৎ তার কি হলো, সে রাতে কি দিনে কখনোই ঘুমাতে পারতো না সাথে প্রচন্ড মাথাব্যথা। ওর চোখে ঘুম বলে কিছু ছিলো না। ডাক্তার দেখিয়ে, চোখে চশমা লাগিয়ে, কড়া ঘুমের ঔষধ খেয়েও লাভ হয়নি। এভাবেই দুই আড়াই মাস কাটে। এক সময় ওর বড় মামীর মনে সন্দেহ জাগে যে বৃষ্টিকে কেউ জাদু করে ক্ষতি করলো কিনা। বৃষ্টির মামী বৃষ্টিকে তার গ্রামের এক চাচী সম্পর্কীয় বৃদ্ধার কাছে নিয়ে গেলো। সেই বৃদ্ধার নাকি কিছু ক্ষমতা ছিলো। গ্রামের মানুষ বলতো তার ঘাড়ে নাকি জ্বিন আছে। যাইহোক, সেই বৃদ্ধা বৃষ্টিকে প্রথমে একটা টুলে বসতে বলে। নিজেও সামনাসামনি আরেকটা টুলে বসে ওর চোখের দিকে টানা তাকিয়ে থেকে দোয়া পড়ে ওর শরীরে ফুকঁ দিতে থাকে। এরপর বৃদ্ধা বৃষ্টিকে বিছানায় শুতে বলে আর চুল গুলা মেঝের দিক ছেড়ে দিতে বলে। বৃদ্ধা পড়া তেল আর পানি একসাথে মিশিয়ে তা বৃষ্টির চুলে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় চুলে জট ধরে চুলের রঙ কিছুটা বাদামী লাল হয়ে গেছে। পাশে বসে থাকা বৃষ্টির মামীকে উদ্দেশ্য করে বৃদ্ধা তখন বলে, "তোর ভাগ্নীরে তো জাদু করা হইছে, আর কয়েকদিন গেলে মাইয়াডার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাইতো।" এরপর তিনি বৃষ্টির মামীকে দুইদিন পর আবার বৃষ্টিকে নিয়ে আসতে বলেন। দুইদিন পর গেলে বৃদ্ধা বলেন বৃষ্টিকে জাদু করার পেছনে এক তান্ত্রিক, এলাকার একটা ছেলে আর বাড়ির কাজের মেয়ের হাত রয়েছে।
বাসায় এসে কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে স্বীকার না করলেও পরে জানের ভয় দেখালে সব স্বীকার করে। ছেলেটা ছিলো এলাকারই একটা বখাটে ছেলে। বৃষ্টি যখন স্কুলে যেতো, প্রায়ই এসে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। কিন্তু কখনোই বৃষ্টি রাজি হয়নি বলে ছেলেটা বৃষ্টির এই ক্ষতি করে। প্রথমে কাজের মেয়ে বৃষ্টির মাথার কয়েকটা চুল, হাত পায়ের নখ আর ব্যবহৃত জামার অংশ সংগ্রহ করে ঐ ছেলেকে দেয়। সেগুলো সেই তান্ত্রিকের কাছে দিলে সে সেগুলো সুতা দিয়ে একসাথে বাধেঁ। তারপর জাদু করে মোম গলিয়ে মোম এর ভেতর ভরে ছেলেটাকে দিয়ে দেয়। ছেলেটা সেটা আবার কাজের মেয়েকে দিয়ে বলে বৃষ্টির বালিশের ভেতর ঢুকিয়ে সেলাই করে দিতে। কাজের মেয়েটাও ঠিক সেভাবে কাজ করে বিনিময়ে ভালো অংকের টাকাও পায়। সব জানার পর সেই মোম বালিশ থেকে বের করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। বৃষ্টিও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়। কাজের মেয়ে আর বখাটে ছেলেটাকে পরবর্তীতে এলাকা ছাড়া করা হয়।
৪। রিনা ও তার হাজব্যন্ড
এখন যে ঘটনাটি লিখছি, এটা আরো ৪৫ বছর আগের একটি ঘটনা। যার সাথে ব্যাপারটা ঘটেছিলো তার বয়স এখন ৬০বছর। তিনি নিজেই ফোন করে সবকিছু বলেছিলেন।
১৯৬৮ সাল। ১৩ বছরের দুরন্ত কিশোরী রিনা। উচ্ছল হাসিখুশি রিনা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। রিনা সারাদিন মন মরা হয়ে বসে থাকে, একা একা কান্নাকাটি করে, একা বসে আনমনে কি ভাবে, ধীরে ধীরে ওর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, চোখে রক্ত জমাট বাধঁতে থাকে। রিনাকে সারা রাজশাহীর ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েও লাভ হয়না। ফলে অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। এক সময় দেখা যায় রিনার নাভীতে পচন ধরেছে আর রাত হলেই বলে মাথার ভেতর যন্ত্রণা করে।
একদিন রিনার মা মেয়ের মাথা ব্যথার কথা শুনে মাথা টিপে দিতে থাকে, হঠাৎ তার হাতে শক্ত কিছু বাধেঁ। বের করে দেখেন খুব ক্ষুদ্র একটা তাবিজ। ব্যস, রিনার মা বুঝে যান যে মেয়েকে কেউ তাবিজ করেছে। পরদিনই মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে আনা হয়। ইমাম সাহেব এসে সব ঘর, আসবাবপত্র বিছানা ভালো করে খুজঁতে বলেন। রিনার ঘর থেকে প্রচুর তাবিজ পাওয়া যায়। ইমাম সাহেব বললেন যে এখানে বাড়ির মানুষের বা পরিচিত কারো হাত রয়েছে।
সব তাবিজ বিশেষ কায়দায় পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইমাম সাহেব যখন জানতে পারেন যে রিনার নাভীতে পচন ধরেছে, তখন তিনি বলেন যে এই জাদুতে বদ জ্বীনেরও হাত আছে। সেদিন বিকেলেই ইমাম এক শিঙ্গা নিয়ে আসেন। শিঙ্গা রিনার মায়ের কাছে দিয়ে বলেন যে মেয়ের নাভীতে যেখানে পচন ধরেছে, আমি দোয়া পড়ে শেষ করার সাথে সাথে সেখানে জোরে জোরে ফুঁক দিবেন।