What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made মধুর প্রতিশোধ 🎯🎯🎯🎯🎯 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আমি আমার শাশুড়ির কর্মকাণ্ড দেখে অবাক হয়ে গেছি । বাজারে বাজারে বাসা ভর্তি হয়ে গেছে । নানা পদের মাছ, খাসির মাংস, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, সবজি, নানা পদের ফল ,মিষ্টি, দই, আইসক্রিম । অন্তত দশ হাজার টাকার বাজার করে এনেছে ।



- এত বাজার করেছেন কেন মা ?



- আরে তোমার ভাই আকাশ, আজ আসবে না ?



- তার জন্য এত বাজার কেন ? ও তো একমাস থাকবে না ? বিকাল চার পাঁচটার দিকে পৌঁছাবে, রাত দশটার দিকে চলে যাবে ।



- এটা একদিন এর জন্যই । কিন্তু মাত্র একদিনের জন্য কেন মা ? ওকে বলো সপ্তাহ খানেক থেকে যেতে আমাদের বাসায় । সেই আট বছর আগে এসেছে । এর ভিতর তো আর একবার ও আসলো না।



আমি মনে মনে চমকে উঠলাম । আট বছর ! তাই তো হওয়ার কথা । আমার একমাত্র ভাই আট বছর পর আমার বাড়ি তে আসছে ! এমন নয় যে, ও বিদেশে ছিল। ও দেশেই ছিল । কিন্তু বোনের বাড়িতে আসতে ওর রুচি তে বেঁধেছে । আমার ও কখনো ওকে আসতে বলতে ইচ্ছা হয়নি। ও যখন হোস্টেল থেকে বাড়িতে যেতো, তখন কোন কোন সময় আমিও সময় করে বাপের বাড়িতে যেতাম। ওভাবে ই দুই ভাইবোনের দেখা সাক্ষাত হয়েছে গত আট বছর।



আট বছর আগে, আমার তখন সাত মাস হলো বিয়ে হয়েছে । আকাশ ভার্সিটি কোচিং করবে। ঢাকা তে আমি ছাড়া আমাদের আর কোন আত্মীয় স্বজন ছিল না । আমার বাবা আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলো, আকাশ কে দুই মাসের জন্য কোচিং করতে আমাদের বাসাতে পাঠাতে চায়, আমার শাশুড়ির কোন আপত্তি আছে কিনা। আমার ভাই আমার বাড়িতে দুই মাস থাকবে, এতে আমার শাশুড়ির আপত্তি থাকার কি আছে ? আমি বাবা কে বলে দিলাম, কোন সমস্যা নেই ।



আমার ভুল হয়েছিল। শাশুড়ির কাছে জিজ্ঞাসা করে জানানো উচিত ছিল । আকাশ যেদিন বই খাতা নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসলো, সেদিন আমার শাশুড়ির মুখ পুড়ে ছাই হয়ে গেল । আমাকে আলাদা ঘরে ডেকে নিয়ে বললো, " লাগেজ দেখে তো মনে হচ্ছে, সারা জীবনের জন্য আসছে । আমাকে একবার জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন বোধ করলা না ? " আমি অবাক হয়ে গেলাম। ভাই তার বোনের বাড়িতে আসবে, এটাতে জিজ্ঞাসা করার কি আছে ?!! মুখে কিছু বললাম না ।



কিছুদিন আগে আমাদের কাজের মেয়ে রুমা চলে গেছে । স্টোর রুমে একটা চৌকি পাতা আছে। সেটা তে রুমা থাকতো। আমার শাশুড়ি বললো, ওখানে আকাশ কে থাকতে দিতে ! আমি বললাম, " কেন মা ? গেস্টরুমটা তো ফাঁকা পড়ে আছে । ওটা তে দিই ? " শাশুড়ি চিল্লায় বলে উঠলো, " তুমি জানো না, মিতুর বান্ধবীরা আসলে ঐ ঘরে আড্ডা দেয়? " আমি অবাক হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম । আমার ননদ মিতু মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে ! তার আড্ডার জন্য একটা ঘর ফেলে রাখবে ! অথচ আমার ভাইটা কে একটা বদ্ধ ঘরে থেকে পড়তে হবে ! সেদিন, জীবনে প্রথম চাকরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম । মনে হয়েছিল, " আজ যদি আমি চাকরিজীবি হতাম, তাহলে হয়তো আমার মতামতের কোন মূল্য থাকতো। "



আকাশ দুই মাসের জন্য এসেছিল । কিন্তু মাত্র ষোল দিন থেকে, তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল । এই ষোল দিনে আমার শাশুড়ির হাজারটা অভিযোগ । সবার প্রথমে, আকাশ আসাতে খরচ বেড়ে গেছে । আমি মন খারাপ করে নিজে মাছ, মাংস খেতাম না । আকাশকেও সামান্যই দিতাম। কিন্তু তারপরও শাশুড়ির অভিযোগের শেষ নেই । একদিন পড়তে পড়তে আকাশের মাথা যন্ত্রণা করছিল। মাথায় তেল দিলো। পরের দিন শাশুড়ি চিল্লায় বাড়ি মাথায় তুললো। সোফায় নাকি তেলের দাগ লেগেছে । আকাশ শুনে ফেললো। লজ্জায় মনে হচ্ছিলো, " মাটি তুমি ভাগ হও, আমি ঢুকে যাই।"



মিতু মাঝে মাঝেই আকাশের রুমে যেয়ে ভাইয়া ভাইয়া বলে আড্ডা জমানোর চেষ্টা করতো। আকাশ সারাজীবন একটু পড়ালেখায় সিনসিয়ার টাইপের ছেলে । আমাকে বললো, " আপু, মিতু এসে আমার অনেক সময় নষ্ট করে দেয় রে। " আমি মিতু কে ভালো ভাবে বুঝিয়ে বললাম , " মিতু, আকাশের জীবনে, এই দুইটা মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ । এখন ওর রুমে বেশি যেও না প্লিজ । " মিতু আমার সামনে বললো, " আচ্ছা । " কিন্তু আমার শাশুড়ির কাছে যেয়ে কি লাগালো আল্লাহ্ ই জানে । আমার শাশুড়ি ক্ষেপে যেয়ে বললো, " তোমার এত বড় সাহস ? এখনই খবরদারি করো ? এই বাড়ি আমার নামে। আর আমার মেয়ে কে তুমি নিষেধ করো কোনো ঘরে না যাইতে ? কাল ই তোমার ভাই কে আমার বাড়ি থেকে বের করবা। যত সব ফকিরের ঘরে ছেলের বিয়ে দিয়েছি। "



জীবনে এত কষ্ট কোন দিন পাইনি। আমার শ্বশুরদের অবস্থা, আমার বাবার থেকে ভালো । কিন্তু আমার শ্বশুর কূলে শুধু আমার স্বামী ই উচ্চ শিক্ষিত এবং চাকরিজীবি। বাকি সবাই অর্ধ শিক্ষিত, অশিক্ষিত । ব্যবসা বাণিজ্য করে বড়লোক হয়েছে। যেটা বিয়ের পরে টের পেয়েছি। অথচ আমার বাবা একজন সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা । আকাশ কে দিব্যি রুম ভাড়া করে দিয়ে কোচিং করাতে পারতো। কিন্তু আমি এখানে আছি বলেই বোধ হয়, সে চিন্তা করেনি। সেদিন আমি সারারাত কাঁদলাম। সবচেয়ে দুঃখ পেয়েছিলাম, আমার স্বামীর আচারণে। তাকে যখন ঘটনাটা বললাম, তখন সে নির্বিকার থাকলো। যেন আমার শাশুড়ি ঠিক ই বলেছে।



পরের দিন আকাশ কে বললাম, " তোর জন্য একটা মেস দেখে দিই। সেখানে থেকে কোচিং কর। " আমার কথা শুনে, আকাশ অবাক হলো না । সম্ভবত আমার শাশুড়ি যখন চিল্লায় চিল্লায় কথাগুলো বলেছে, তখনই কথাগুলো তার কানে গেছে । আকাশ বললো, " আপু, এখন মেসে গেলে বাবা মা টের পেয়ে যাবে, তুই সুখে নেই। খুব কষ্ট পাবে। আমি বরং বাড়িতে চলে যাই। বাবা মা কে বলবো, বাড়ি ছেড়ে থাকতে পারছি না । " আমি বললাম, " তোর কোচিং এর কি হবে ? তোর তো খুব শখ, ঢাকা ভার্সিটিতে পড়বি। " আকাশ বললো, " আমাদের ওখানে যে লোকাল কোচিং আছে, সেখানে কোচিং করবো । আর ঢাকা এসে, ঢাকা ভালো লাগছে না । তাই ঢাকা ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট দেবো না । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। "



আকাশ চলে গেলো। আকাশ ছোট বেলা থেকেই আমাকে খুব পছন্দ করে । হয়তো তাই, যে শহরে এসে তার আপু খুব কষ্ট পাচ্ছে, সেই শহরটাকেই সে অপছন্দ করা শুরু করলো। হোক না, সে শহরে তার স্বপ্নের ভার্সিটি। যে শহর আপু কে কষ্ট দিয়েছে, সে শহরেই সে আর আসবে না ।



আমি বহুদিন, এ শোক সহ্য করতে পারতাম না । লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম। জীবনে বিয়ে একবার ই করতে হয়, এই ধারণা মনের ভিতরে ছিল বলেই, ও রকম একটা পরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। বছর খানেক পরে আমি ব্যাংক এ একটা ভালো চাকরি পেলাম। আমার শ্বশুর, শাশুড়ি চাকরি করতে দিতে চায়নি । কিন্তু আমি জোর করেই সেটা করেছি। আমার এখন দুই ছেলে মেয়ে । ভালোই আছি।



আকাশ আজ পর্যন্ত বাবা মাকে সেই ষোল দিনের ঘটনা বলেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে। এবার বি সি এস পাশ করে এ এস পি হয়েছে । ওর সিলেটে পোস্টিং হয়েছে। যশোর থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারতো। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পরে, আমার সাথে দেখা হয়নি। আর আমিও ছুটি পাচ্ছি না । তাই ব্রেক জার্নি করে যাবে। মাঝখানে কয়েক ঘণ্টা ভাগ্নে ভাগ্নি আর বোনের সাথে কাটিয়ে যাবে । গত সপ্তাহে সে কথাই বলেছিলাম, আমার শাশুড়ি কে। গত এক সপ্তাহ ধরে আমার শাশুড়ি ঘর দুয়ার গোছাচ্ছে। পর্দা গুলো চেন্জ করেছে। হাতিল থেকে নতুন সোফা এনেছে। আমি কারণটা বুঝতে পারছিলাম না । এখন মনে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসা করলাম,



- মা, ঘর দুয়ার গুলো কি আকাশ আসছে দেখে চেন্জ করেছেন ?



- হ্যা । হাজার হোক, আমরা চৌধুরী পরিবার। তোমার ভাই বড় অফিসার হয়েছে । এসে পুরানো আমলের সোফা দেখবে। আমাদের একটা মান সম্মান আছে না ?



মনটা কেন জানি, হঠাৎ করেই বিতৃষ্ণায় ভরে গেল । কিছু কিছু ক্ষত সারাজীবন থেকে যায় । বুঝতে পারলাম, আমার ক্ষতটা ও আট বছরে শুকিয়ে যায় নি ! আমি বেশ ঝাঁঝের সাথেই বললাম, " আমি এত কিছু রান্না করবো না । একটা মাংস আর একটা সবজি হলেই হয়ে যাবে। " আমার শাশুড়ি বললো, " তোমার কিছু করতে হবে না । তুমি তোমার ঘরে যাও। যা করার আমিই করবো। " মনটা খারাপ করেই ঘরে আসলাম। আমার ও কিছু রান্না করতে ইচ্ছা করছে না আজ।



ঘরে এসে অনেক দিন পর, আবার কাঁদলাম। আকাশ সন্ধ্যার দিকে পৌঁছালো। খাবার সময় দেখি, আমার শাশুড়ি খাবারে টেবিল ভরে ফেলেছে । আকাশ তেমন কিছুই খেলো না।



আকাশ আমার ঘরে ভাগ্নে, ভাগ্নিদের নিয়ে খেলছে। ওকে বললাম, " এবার তো তোর বিয়ের সময় হলো । পছন্দের কোন মেয়ে আছে নাকি? " আকাশ বললো, " তুই তো জানিস, আমি একটু আঁতেল টাইপের ছেলে । পড়ালেখার বাইরে ওসব চিন্তা কখনো আসেনি। তুই একটা শাকচুন্নী দেখে আমার বিয়ে দিয়ে দিস। "



আকাশ রাত দশটার দিকে চলে গেল । আকাশ চলে যাওয়ার পরে, আমার শাশুড়ি পানের বাটা নিয়ে আমার ঘরে ঢুকলো।



- আকাশ তো দেখতে এখন অনেক সুন্দর হয়েছে বউমা ।



- জ্বি ।



- নাও, পান খাও। ( আমার শাশুড়ি একটা পানের খিলি বানিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিলো। )



- না, মা। আপনি তো জানেন, আমি পান খাই না ।



আমার শাশুড়ি, পানটা রেখে দিলো। তারপর আবার মুখটা হাসিতে উজ্জ্বল করে বললো,



- আকাশের সাথে আমাদের মিতুর বিয়ে দিলে কেমন হয় মা ?



এতক্ষণে চৌধুরী পরিবারের মান সম্মানের ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকলো। তিনবার এইচ এস সি ফেল করা মিতুর জন্য অনেক দিন থেকেই পাত্র খোঁজা হচ্ছে । কিন্তু তেমন পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না । তাই তো আমার শাশুড়ির এত আয়োজন !



আমি শাশুড়ির পানের বাটা থেকে পান নিয়ে, মুখে পুরে খেতে খেতে বললাম, " আকাশের তো ভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকেই প্রেম আছে মা। বছর খানেকের ভিতরেই ওদের বিয়ে হয়ে যাবে। " দেখি, আমার শাশুড়ির মুখ ধীরে ধীরে কালবৈশাখী মেঘের মত হয়ে যাচ্ছে । আর আমার আট বছরের ক্ষতটা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে ।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top