সিগারেট সমাচারঃ
(ফেসবুক হতে সংগৃহীত)
আমার শ্বশুরের মাথা চড়ে গেছে। সকাল সকাল ব্যাপক চিল্লাপাল্লা শুরু করছেন। শাশুড়ী এতোক্ষণ ঝিম ধরে থাকলেও এইমাত্র মেজাজ হারালেন,
- ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছো কেন ?
প্রত্যুত্তরে শ্বশুর বললেন,
- ষাঁড়ের মতো চেঁচাবো না তো গাভীর মতো চেঁচাবো! আমি কি গাভী ? আমাকে কি তোমার বকনা বাছুর মনে হয় ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের রচনামূলক উত্তর!
এক জবাবেই শাশুড়ী ঠান্ডা হয়ে সাইলেন্ট মুডে চলে গেছেন। মেয়ের জামাই বাসায় রেখে শ্বশুরের এমন কর্মকাণ্ড অবিশ্বাস্য। শাশুড়ী হতভম্ব !
রুম থেকে শ্বশুরের হম্বিতম্বি শুনা যাচ্ছে। রিহানের আম্মু 'থ' হয়ে আছে। পিতার এহেন কর্মকাণ্ডে সে বিস্মিত!
আমি রিহানের আম্মুকে বললাম,
- এই যে তোমার মা, বাবাকে ষাঁড় ডাকলো এটা কিন্তু মোটেও উচিত হয়নি! বাবা তো আসলে ঘোড়ার মতো চেঁচাচ্ছেন। ঘোড়ার ডাক হ্রেষা, ময়ূরের ডাক কেকা এই সাধারণ বিষয়গুলোও তোমার মা জানে না, আফসোস।
কথাটা শুনে রিহানের আম্মুর চেহারাটা দেখার মতো হয়েছে। হিংস্র ব্যাঘ্র শিকার ধরার সময় যেভাবে তাকায় আমার দিকে সেভাবে তাকাচ্ছে। তবে কোনো মৌখিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পিতার কাছে চিল্লাচিল্লির কারণ জানতে চাইলো,
- বাবা এভাবে চিল্লাচ্ছেন কেন ?
- শখ করে চিল্লাচ্ছি, তোর কোনো সমস্যা !
- কী হয়েছে ঠান্ডা মাথায় বললেই তো হয়!
- তোর মা আমার সিগারেট ফেলে দিছে!
সাথে সাথে শাশুড়ী অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন,
- আমি কেনো তোমার সিগারেট ফেলতে যাবো, তুমি মরলে আমার কি !
উত্তপ্ত স্বরে শ্বশুর বললেন,
- তাহলে সিগারেট গেল কোথায় ?
রিহানের আম্মু তাঁর অশান্ত পিতাকে বললো,
- সিগারেটের প্যাকেট হারাতেই পারে! আবার আনবেন অসুবিধা কী! এ নিয়ে এতো চিল্লাপাল্লার কী আছে ?
- আবার আনবো কোত্থেকে! এগুলো এদেশে পাওয়া যায় না! আমার বন্ধু আমেরিকা থেকে পাঠাইছে!
- তাহলে সিগারেটের প্যাকেট কে নিবে ?
- হারামি চোর প্যাকেট নেয়নি, সিগারেট নিয়ে গেছে !
- আশ্চর্য আপনার সিগারেট কে নিবে ?
সিগারেট যেকোনো কারণে হারাতে পারে কিন্তু এখন আমাকে দোষ দেয়া হবে। পান থেকে চুন খসলেই আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকানো হয়। রিহানের আম্মুর এ হীন দৃষ্টির তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে।
- এভাবে তাকানোর উদ্দেশ্য কী ? আমি যে গতমাস থেকে সিগারেট টানা ছেড়ে দিছি বিষয়টা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়!
রিহানের আম্মুর দৃষ্টি আগের চেয়ে আরো কঠিন হইছে। আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে শাশুড়ীকে বললাম,
- মা আপনিও তো জানেন। আপনার সামনেই তো সিগারেট না টানার শপথ করলাম!
শাশুড়ী চুপ করে আছেন, শ্বশুরের কপালে অবিশ্বাসের রেখা। রিহানের আম্মু অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে। বুঝলাম না ব্যাপারটা, সবার সামনে তওবা পড়ে সিগারেট খাওয়া ছাড়লাম অথচ আমাকেই সন্দেহ করছে !
- বাবা আপনিও তো জানেন আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিছি। তাছাড়া আমেরিকান Winston সিগারেটের গন্ধ আমি নিতে পারি না!
কথাটা বলে নিজেই নিজের জিভ কাটলাম।
হায় হায় এটা আমি কী করলাম! শ্বশুরের আমেরিকান Winston সিগারেট হারাইছে এটা তো আমার জানার কথা না। শ্বশুর শ্বাশুড়ী দুজনেই স্তব্ধ। রিহানের আম্মু আমাকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিছে। কঠিন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
- শ্বশুর বাড়ি এসে চুরি করিস তোর কী লজ্জা শরম নাই ?
- আমি সিগারেট চুরি করিনি তো।
- চুপ! একদম চুপ! চোর কোথাকার, সিগারেট কোথায় রাখছিস বল্ ?
এইকথা বলেই রিহানের আম্মু সিগারেট খোঁজা শুরু করছে।
যতোই খোঁজুক সহজে পাবেনা, কঠিন জায়গায় রাখছি। কিন্তু কোথায় যে রাখছি আমি নিজেও মনে করতে পারছি না। এইখানে টেবিলের উপর একটা ব্যাগ ছিল, ব্যাগটা কোথায় গেলো ! আমিও প্রাণপণ সিগারেট খুঁজেছি এমন সময় রিহানের আম্মুর ফোন বেজে উঠলো।
রিহানের স্কুল থেকে ফোন এসেছে। আর্জেন্ট গার্জিয়ান কল। পিতা মাতা দুজনকেই ডেকেছে। রিহান নিশ্চয়ই কোনো গুরুতর অপকর্ম সম্পাদন করেছে।
স্কুলে যেতে আমার ভালো লাগে না। ছোটবেলায় নিজের স্কুলেই খুব একটা যেতাম না এখন ছেলের স্কুলে প্রায়ই যেতে হয়।
রিহানের স্কুলের হেড মিস্ট্রেস অতিকায় দৈত্যাকার এক মহিলা। ঈশ্বর মনে হয় উনাকে জলহস্তী বানাতে চেয়েছিলেন তবে নির্মাণের শেষ দিকে এসে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মানুষ বানিয়েছে। জলহস্তী কথা বলার সময় জানালার থাই গ্লাস কাঁপে। উনাকে দেখলেই আমার বুক ধুকপুক করে। বাচ্চারা কীভাবে টলারেট করে ওনলি গড নোজ।
রিহানের আম্মুর পিছু পিছু হেড মিস্ট্রেসের রুমে ঢুকলাম। গুরুগম্ভীর পরিবেশ, ভয়ানক কিছু ঘটেছে নিশ্চিত।
আমরা রুমে ঢুকার কিছুক্ষণের মধ্যেই সহকারী শিক্ষক জনাব আবেদীন সাহেব আসলেন। হেড মিস্ট্রেস যতো মোটা আবেদীন সাহেব ঠিক ততোটাই চিকন। একেবারে পাটকাঠির মতো, এমন চিকন মানুষ পৃথিবীতে দুই পিস নাই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই পাটকাঠি সাহেব জলহস্তী মেডামের হাজবেন্ড। সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দুইজন মানুষ একে অন্যকে বিয়ে করেছেন।
আবেদীন সাহেবকে নিয়ে আমার প্রায়ই দুশ্চিন্তা হয়। কোন দিন যে শুনি , "ঘুমের ঘোরে জলহস্তীর নিচে চাপা পড়ে আবেদীন সাহেব ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন.. ইন্না-লিল্লাহি ওইন্না আলাইহি রাজিউন।"
যাহোক ঘটনা যতোটা গুরুতর ভাবছিলাম ততোটা না।
রিহানের স্কুল ব্যাগে আমদানি নিষিদ্ধ আমেরিকান Winston সিগারেট পাওয়া গেছে। এই অপরাধে জলহস্তী আমাকে কঠিন শাসানি দিলেন। রিহানের আম্মু বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে, কোন কথা বলছে না। আমি ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বললাম,
- আসলে ম্যাম আমার শ্বশুর বৃদ্ধ মানুষ উনি এই কাজটা করছেন। আমার শাশুড়ী উনাকে সিগারেট খেতে দেয় না তাই তিনি রিহানের স্কুল ব্যাগে লুকিয়ে রাখছেন।
- মি. অনিকেত আমার মনেহয় এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজটি আপনিই করেছেন। এর আগেও আপনি উদ্ভট কর্মকাণ্ড করেছেন। রিহানকে কী সব উল্টা পাল্টা ছড়া কবিতা শিখাচ্ছেন।
আমি কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে বসলাম। আবেদীন সাহেব জব্দকৃত আমেরিকান Winston টেবিলের উপর রাখলেন। হেড মিস্ট্রেসের উপস্থিতিতে এগুলো এখন ধ্বংস করা হবে।
কিন্তু উদ্ধারকৃত সিগারেটের পরিমাণ কম কেন ? সিগারেট থাকার কথা ১০ টি এখানে আছে ৬ টি। বাকি ৪ টি গেলো কোথায় ?
আমি সবিনয়ে ম্যাডামকে বিষয়টা জানালাম,
জলহস্তী ম্যাডাম উঠে গিয়ে অধস্তন স্বামীর পকেট চেক করে অবশিষ্ট আলামত উদ্ধার করলেন।
Winston সিগারেটের লোভ আবেদীন সাহেব সামলাতে পারেননি। এখন বেটা বুঝবে "হাউ মেনি তামাক হাউ মেনি সিগারেট।"
অফিস রুমে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হেড মিস্ট্রেসের মতিগতি সুবিধার মনে হচ্ছে না। খুব সম্ভবত আবেদীন সাহেবকে কঠিন ডলা দেওয়া হবে।
আমার অবস্থাও বেশি ভালো না। বাসায় না গিয়ে পালাতে পারলে ভালো হতো কিন্তু রিহানের আম্মুর কব্জা থেকে পালানো মুশকিল।
প্লিজ প্রে ফর আস
"সংগৃহীত"
(ফেসবুক হতে সংগৃহীত)
আমার শ্বশুরের মাথা চড়ে গেছে। সকাল সকাল ব্যাপক চিল্লাপাল্লা শুরু করছেন। শাশুড়ী এতোক্ষণ ঝিম ধরে থাকলেও এইমাত্র মেজাজ হারালেন,
- ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছো কেন ?
প্রত্যুত্তরে শ্বশুর বললেন,
- ষাঁড়ের মতো চেঁচাবো না তো গাভীর মতো চেঁচাবো! আমি কি গাভী ? আমাকে কি তোমার বকনা বাছুর মনে হয় ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের রচনামূলক উত্তর!
এক জবাবেই শাশুড়ী ঠান্ডা হয়ে সাইলেন্ট মুডে চলে গেছেন। মেয়ের জামাই বাসায় রেখে শ্বশুরের এমন কর্মকাণ্ড অবিশ্বাস্য। শাশুড়ী হতভম্ব !
রুম থেকে শ্বশুরের হম্বিতম্বি শুনা যাচ্ছে। রিহানের আম্মু 'থ' হয়ে আছে। পিতার এহেন কর্মকাণ্ডে সে বিস্মিত!
আমি রিহানের আম্মুকে বললাম,
- এই যে তোমার মা, বাবাকে ষাঁড় ডাকলো এটা কিন্তু মোটেও উচিত হয়নি! বাবা তো আসলে ঘোড়ার মতো চেঁচাচ্ছেন। ঘোড়ার ডাক হ্রেষা, ময়ূরের ডাক কেকা এই সাধারণ বিষয়গুলোও তোমার মা জানে না, আফসোস।
কথাটা শুনে রিহানের আম্মুর চেহারাটা দেখার মতো হয়েছে। হিংস্র ব্যাঘ্র শিকার ধরার সময় যেভাবে তাকায় আমার দিকে সেভাবে তাকাচ্ছে। তবে কোনো মৌখিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পিতার কাছে চিল্লাচিল্লির কারণ জানতে চাইলো,
- বাবা এভাবে চিল্লাচ্ছেন কেন ?
- শখ করে চিল্লাচ্ছি, তোর কোনো সমস্যা !
- কী হয়েছে ঠান্ডা মাথায় বললেই তো হয়!
- তোর মা আমার সিগারেট ফেলে দিছে!
সাথে সাথে শাশুড়ী অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন,
- আমি কেনো তোমার সিগারেট ফেলতে যাবো, তুমি মরলে আমার কি !
উত্তপ্ত স্বরে শ্বশুর বললেন,
- তাহলে সিগারেট গেল কোথায় ?
রিহানের আম্মু তাঁর অশান্ত পিতাকে বললো,
- সিগারেটের প্যাকেট হারাতেই পারে! আবার আনবেন অসুবিধা কী! এ নিয়ে এতো চিল্লাপাল্লার কী আছে ?
- আবার আনবো কোত্থেকে! এগুলো এদেশে পাওয়া যায় না! আমার বন্ধু আমেরিকা থেকে পাঠাইছে!
- তাহলে সিগারেটের প্যাকেট কে নিবে ?
- হারামি চোর প্যাকেট নেয়নি, সিগারেট নিয়ে গেছে !
- আশ্চর্য আপনার সিগারেট কে নিবে ?
সিগারেট যেকোনো কারণে হারাতে পারে কিন্তু এখন আমাকে দোষ দেয়া হবে। পান থেকে চুন খসলেই আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকানো হয়। রিহানের আম্মুর এ হীন দৃষ্টির তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে।
- এভাবে তাকানোর উদ্দেশ্য কী ? আমি যে গতমাস থেকে সিগারেট টানা ছেড়ে দিছি বিষয়টা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়!
রিহানের আম্মুর দৃষ্টি আগের চেয়ে আরো কঠিন হইছে। আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে শাশুড়ীকে বললাম,
- মা আপনিও তো জানেন। আপনার সামনেই তো সিগারেট না টানার শপথ করলাম!
শাশুড়ী চুপ করে আছেন, শ্বশুরের কপালে অবিশ্বাসের রেখা। রিহানের আম্মু অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে। বুঝলাম না ব্যাপারটা, সবার সামনে তওবা পড়ে সিগারেট খাওয়া ছাড়লাম অথচ আমাকেই সন্দেহ করছে !
- বাবা আপনিও তো জানেন আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিছি। তাছাড়া আমেরিকান Winston সিগারেটের গন্ধ আমি নিতে পারি না!
কথাটা বলে নিজেই নিজের জিভ কাটলাম।
হায় হায় এটা আমি কী করলাম! শ্বশুরের আমেরিকান Winston সিগারেট হারাইছে এটা তো আমার জানার কথা না। শ্বশুর শ্বাশুড়ী দুজনেই স্তব্ধ। রিহানের আম্মু আমাকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিছে। কঠিন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
- শ্বশুর বাড়ি এসে চুরি করিস তোর কী লজ্জা শরম নাই ?
- আমি সিগারেট চুরি করিনি তো।
- চুপ! একদম চুপ! চোর কোথাকার, সিগারেট কোথায় রাখছিস বল্ ?
এইকথা বলেই রিহানের আম্মু সিগারেট খোঁজা শুরু করছে।
যতোই খোঁজুক সহজে পাবেনা, কঠিন জায়গায় রাখছি। কিন্তু কোথায় যে রাখছি আমি নিজেও মনে করতে পারছি না। এইখানে টেবিলের উপর একটা ব্যাগ ছিল, ব্যাগটা কোথায় গেলো ! আমিও প্রাণপণ সিগারেট খুঁজেছি এমন সময় রিহানের আম্মুর ফোন বেজে উঠলো।
রিহানের স্কুল থেকে ফোন এসেছে। আর্জেন্ট গার্জিয়ান কল। পিতা মাতা দুজনকেই ডেকেছে। রিহান নিশ্চয়ই কোনো গুরুতর অপকর্ম সম্পাদন করেছে।
স্কুলে যেতে আমার ভালো লাগে না। ছোটবেলায় নিজের স্কুলেই খুব একটা যেতাম না এখন ছেলের স্কুলে প্রায়ই যেতে হয়।
রিহানের স্কুলের হেড মিস্ট্রেস অতিকায় দৈত্যাকার এক মহিলা। ঈশ্বর মনে হয় উনাকে জলহস্তী বানাতে চেয়েছিলেন তবে নির্মাণের শেষ দিকে এসে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মানুষ বানিয়েছে। জলহস্তী কথা বলার সময় জানালার থাই গ্লাস কাঁপে। উনাকে দেখলেই আমার বুক ধুকপুক করে। বাচ্চারা কীভাবে টলারেট করে ওনলি গড নোজ।
রিহানের আম্মুর পিছু পিছু হেড মিস্ট্রেসের রুমে ঢুকলাম। গুরুগম্ভীর পরিবেশ, ভয়ানক কিছু ঘটেছে নিশ্চিত।
আমরা রুমে ঢুকার কিছুক্ষণের মধ্যেই সহকারী শিক্ষক জনাব আবেদীন সাহেব আসলেন। হেড মিস্ট্রেস যতো মোটা আবেদীন সাহেব ঠিক ততোটাই চিকন। একেবারে পাটকাঠির মতো, এমন চিকন মানুষ পৃথিবীতে দুই পিস নাই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই পাটকাঠি সাহেব জলহস্তী মেডামের হাজবেন্ড। সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দুইজন মানুষ একে অন্যকে বিয়ে করেছেন।
আবেদীন সাহেবকে নিয়ে আমার প্রায়ই দুশ্চিন্তা হয়। কোন দিন যে শুনি , "ঘুমের ঘোরে জলহস্তীর নিচে চাপা পড়ে আবেদীন সাহেব ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন.. ইন্না-লিল্লাহি ওইন্না আলাইহি রাজিউন।"
যাহোক ঘটনা যতোটা গুরুতর ভাবছিলাম ততোটা না।
রিহানের স্কুল ব্যাগে আমদানি নিষিদ্ধ আমেরিকান Winston সিগারেট পাওয়া গেছে। এই অপরাধে জলহস্তী আমাকে কঠিন শাসানি দিলেন। রিহানের আম্মু বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে, কোন কথা বলছে না। আমি ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বললাম,
- আসলে ম্যাম আমার শ্বশুর বৃদ্ধ মানুষ উনি এই কাজটা করছেন। আমার শাশুড়ী উনাকে সিগারেট খেতে দেয় না তাই তিনি রিহানের স্কুল ব্যাগে লুকিয়ে রাখছেন।
- মি. অনিকেত আমার মনেহয় এই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজটি আপনিই করেছেন। এর আগেও আপনি উদ্ভট কর্মকাণ্ড করেছেন। রিহানকে কী সব উল্টা পাল্টা ছড়া কবিতা শিখাচ্ছেন।
আমি কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে বসলাম। আবেদীন সাহেব জব্দকৃত আমেরিকান Winston টেবিলের উপর রাখলেন। হেড মিস্ট্রেসের উপস্থিতিতে এগুলো এখন ধ্বংস করা হবে।
কিন্তু উদ্ধারকৃত সিগারেটের পরিমাণ কম কেন ? সিগারেট থাকার কথা ১০ টি এখানে আছে ৬ টি। বাকি ৪ টি গেলো কোথায় ?
আমি সবিনয়ে ম্যাডামকে বিষয়টা জানালাম,
জলহস্তী ম্যাডাম উঠে গিয়ে অধস্তন স্বামীর পকেট চেক করে অবশিষ্ট আলামত উদ্ধার করলেন।
Winston সিগারেটের লোভ আবেদীন সাহেব সামলাতে পারেননি। এখন বেটা বুঝবে "হাউ মেনি তামাক হাউ মেনি সিগারেট।"
অফিস রুমে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হেড মিস্ট্রেসের মতিগতি সুবিধার মনে হচ্ছে না। খুব সম্ভবত আবেদীন সাহেবকে কঠিন ডলা দেওয়া হবে।
আমার অবস্থাও বেশি ভালো না। বাসায় না গিয়ে পালাতে পারলে ভালো হতো কিন্তু রিহানের আম্মুর কব্জা থেকে পালানো মুশকিল।
প্লিজ প্রে ফর আস
"সংগৃহীত"