What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made নারীর পথ চলা 🙎🙎🙎🙎🙎 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
বাসায় ঢুকে ভ্যানিটি ব্যাগটা বিছানার উপর ছুঁড়ে মেরে আমি দৌড়ে গেলাম রান্না ঘরে। চুলোয় গরম পানি বসিয়ে আবার রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মামুনের দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। চাকরিটা এবার আমি ছাড়বোই। ছয়টায় অফিস ছুটি আর হারামজাদা বস ছয়টায় আমাকে বলে কিনা, রোকেয়া বিলের কাজটা আজই একটু রেডি করে দিও ।

মামুন আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি নিশ্চিত ছেলেটা ঘুমিয়েছে নয়তো বাপের সাথে ছেলেটাও হাসতো। মামুন হাসতে হাসতে বলছে, এই এক চাকরি ছাড়ার কথা তোমার মুখে আর শুনতে চাই না। তোমাকে দিয়ে চাকরি আর ছাড়া হবে না।

মামুনের কথা ভীষণ সত্যি। প্রতি মাসের পনের তারিখ গেলেই চাকরিটা আমার শত্রু মনে হয়। মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলি আজ গিয়েই বলবো, আমি আর চাকরি করবো না। কিন্তু বিশ তারিখ যেতেই মনে হয় আর মাত্র কয়েকটা দিন। বেতনটা হাতে পেয়ে নিই তার পর চাকরি ইস্তফা।

এই বেতন পেয়েই যত ঝামেলাটা লাগে। হাতে টাকা পেয়ে কয়েকটা দিন ভালই চলে। চাকরিটা সোনাই সোহাগা মনে হয়। টাকা দিয়ে এটা ওটা করি। নিজেকে খুব সক্ষম মনে হয় তখন। নিজের মত করে টাকা খরচ করার সক্ষমতা কেনজানি নিজের ভেতর একটা বল আর সাহস তৈরী করে। তখন চাকরিটা ছাড়ার কথা মাথায়ও আসে না। বেতনের টাকা শেষ হয়ে আসে মাসের মাঝখানেই অমনি আমার চাকরিটা অসহ্য লাগে। মাস শেষ হতে থাকে আমি অপেক্ষা করতে থাকি। বেতন পেয়ে ইস্তফা আর বেতন পেয়ে আবার সেই গায়ে জোর পাওয়া। জোর পাওয়া মানে চাকরি চলবে। চলবে তো চলবেই।

মিরপুর থেকে মতিঝিল। রোজ রোজ এই পথটা আমার মনে হয় সাহারা মরুভূমি। কিছুতেই শেষ হতে চায় না। অফিস থেকে বের হয়েই দোয়া ইউনুস পড়তে থাকি যাতে মিরপুরের গাড়ি তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়। গাড়িতে বসার একটা সিট পেলে মনে হয় আমি আমেরিকা যাওয়ার লটারি পেয়েছি। গাড়িতে উঠে বুকটা ধুক ধুক করতে থাকে। এই বুঝি সামনে জ্যাম পড়লো। গাড়ি সামনে এগুতে থাকে আমি তাকিয়ে থাকি সামনের দিকে। মাঝে মাঝে মনে হয় ড্রাইভারের স্টিয়ারিং যদি আমার হাতে থাকতো তবে সাই সাই করে আমি গাড়ি চালিয়ে নিতাম। ব্যাটা ড্রাইভার এত আস্তে গাড়ি চালায়।

আমার ছেলেটা অধীর হয়ে বসে আছে। আমি বাসায় গিয়ে ডালপুরি বানাবো। সেই ডালপুরি ছেলেটা সস দিয়ে খাবে। গরম গরম ডালপুরি। ছেলেটা দুপুরে ফোন দিয়ে বলে রেখেছে মা তুমি আজ অফিস থেকে এসে আমাকে ডালপুরি ভেজে দিবে। শাহেদা খালা একটুও ডালপুরি ভাজতে পারে না।

আমি ছেলের কথা শুনে হ্যাঁ হ্যাঁ করি। আমার বাসার কাজের মেয়ে শাহেদার রান্না ছেলেটা একটুও খেতে চায় না। একটু পর পর ছেলেটা ফোন দিয়ে এটা ওটা বলে। আমাকে না পেলে মামুনকে ফোন দেয়। ছেলেটা এমন করে বলে মাঝে মাঝে মনে হয় এক্ষুনি বাসার দিকে দৌড় দিই।

একদিন হলো কি, ছেলেটার জন্মদিন। আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে একটু আগেই বেরিয়ে পড়লাম। ছেলেটা বলে দিয়েছে তার জন্য একটা কার্টুন আঁকা কেক আনতে হবে। মামুন কেক নিয়ে আগেই বাসায় পৌঁছে গিয়েছে। আমি রওনা দিলাম দোয়া পড়তে পড়তে। হায় আল্লাহ কারওয়ান বাজারে গিয়ে গাড়ি আর এগুই না। এগুই না তো এগুই না। বসেই আছি। ছেলেটা বার বার ফোন দিচ্ছে। এক একটা ফোন আসছে আর আমার বুকের ভেতর ধুক করে উঠছে। কারওয়ান বাজারেই ঘন্টা পেরিয়ে গেল। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে হেঁটে রওনা দিই। আমি গাড়িতে লুকিয়ে কাঁদছি। ছেলেটার জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছে। ঐদিন বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় রাত আটটা বেজে গেল। আমার এখনো ঠিক মনে আছে। ঐদিনের কারওয়ান বাজারের সময়টা যে আমার কেমন করে কেঁটেছে আমি আর কল্পনাও করতে চাই না।

মামুন অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে। আমি অফিসে। কাজের মেয়ে শাহেদা ফোন দিয়ে বলে, আপা বাবু কয়েক বার বমি করছে। গায়ে দেখছি জ্বর। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।

শাহেদার কথা শুনে আমি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম। সিএনজি নিয়ে যাচ্ছি বাসার দিকে। মনে মনে ভাবি ইশ কেন যে আজ অফিসে আসলাম। সকালে ছেলেটা কয়েকবার বলেছে মা, আমার ভালো লাগছে না। আমি ভেবেছি হয়তো তেমন কিছু না। তারপরও অফিস এসে মনের মধ্যে কেমনজানি খচখচ করছিলো। শাহেদার ফোন পেয়ে নিজের উপর খুব রাগ হলো। আমি সিএনজিতে বসে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় যাচ্ছি। ছেলে আমার ফোন দিয়েছে। আমার কান্না শুনে বললো,আমার কিচ্ছু হয়নি মামনি। আমিতো খুব ভাল আছি। ছেলের কথা শুনে আমার মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়।

এমন ঘটনা নিত্য নতুন। আজ খেলতে গিয়ে ঠোট কেটেছে, কাল হাতে ব্যথা পেয়েছে। আমি অফিসে এসব খবর পেয়ে অস্থির হতে থাকি। তখন অফিসের সময়গুলো যে কেমন করে কাটে তা বলে বুঝানো যাবে না। মাঝে মাঝে আমি অফিসে লুকিয়ে কাঁদি। রোজ রোজতো আর ছুটি নেওয়া যায় না। তখন মনে মনে ভাবি এই মাসেই চাকরিটা ছেড়ে দিব। আল্লাহ যা রাখে কপালে। চাকরি আমি আর করবো না।

শেষ পর্যন্ত আমার চাকরিটা ছাড়া হয় না। হবে কি করে।

মামুন মোটামুটি টাইপের একটা চাকরি করে। যা বেতন পায় তা দিয়ে সংসারটা টেনেটুনে চলে যায়। আমার চাকরি নিয়ে মামুনের কোন বিধি নিষেধ নেই। আমি জানি আমার চাকরিটা চললে তার কিছুটা স্বস্তি হয়। সংসারে নানা খরচ। আমার নিজের হাত খরচটা একটু লম্বা। একটু বেহিসাবী। চাইলেই কমাতে পারিনা। তাছাড়া মাস দুয়েক পর পর আব্বার চিকিৎসার জন্য আমাকে কিছু টাকা পাঠাতে হয়। আব্বা না করেন। তারপরও আমি পাঠায়। মেয়ে হয়ে আব্বার জন্য কিছু একটা করতে পারছি ভাবলে নিজের ভেতর ভালো লাগা কাজ করে। ছেলেটা বড় হচ্ছে। সামনে খরচ বাড়বে। মানুনের বেতন দিয়ে সংসার টেনেটুনে চললেও সঞ্চয় কিছুই হচ্ছে না।

তাছাড়া আমার বেতনের টাকার সাহস করে এই বাসাটা নিয়েছি। আগের বাসার চেয়ে তিন হাজার টাকা বেশি। মামুন খুব করে না করেছিল। শুধু শুধু নতুন করে তিন হাজার টাকা বেশি দিতে হবে। কিন্তু বাসাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। একটা রুম বেশি। মাঝে মাঝে আব্বা আম্মা আসেন বাড়ি থেকে। তখন থাকার ভীষণ কষ্ট হয়। বাড়তি তিন হাজার টাকা আমার বেতন থেকেই দিই।

মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে ছোট ভাইটা ফোন দেয়। আবদার করে বলে, বুবু কলেজ থেকে সবাই পিকনিকে যাচ্ছে। আমাকে কিছু টাকা দিবে।

ভাইটার আবদার ফেলতে পারি না। ইচ্ছে করেই আরো দুশো টাকা বেশি দিয়ে বলি, দেখিস পিকনিকে বেশি দুষ্টামি করবি না। সাবধানে থাকবি।

মাঝে মাঝে মামুনের হাত খুব খালি যায়। প্রতি মাসে বাবা মার জন্য বাড়িতে টাকা দেওয়া ছাড়াও এটা ওটা খরচ লেগেই থাকে। গত মাসে আমার শশুরের একটা অপারেশন হল। মানুনের খুব মন খারাপ। অনেক কষ্টে আমি আর মানুন মিলে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা দিলাম। কিছু সঞ্চয় হলেই বড় একটা খরচ দাঁড়িয়ে যায়।

সময় পেরুতে থাকে। চাকরিটা আমার ইস্তফা দেয়া হয়ে উঠে না। এখনতো খরচ অনেক বেড়েছে। রোজ রোজ সংসার অফিস এসবে হাঁপিয়ে উঠি। এখন প্রতি বছর শুরুতে সিদ্ধান্ত নিই এই বছরই শেষ। এই বছর চাকরিটা করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে ছেড়ে দিব। বছর যায় কিন্তু আমার চাকরিটা ইস্তফা দেওয়া আর হয়ে উঠেনা।

সময় যত পেরুতে থাকে আমাদের মত মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে সংসারের কাজ ছাড়াও চাকরিটা ভীষণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত দ্বিধা, চিন্তা, কষ্ট আর নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আঁকড়ে থাকতে হয় চাকরিতে। এই আঁকড়ে থাকার সাথে জড়িয়ে থাকে পরিবারের প্রতি আমার ভালোবাসা, সহযোগিতা আর একজন কর্মজীবি নারীর সম্মান।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top